মাকে মনে পড়ে 

প্রকাশ : ২১ মে ২০২৩, ১৪:৫৮ , অনলাইন ভার্সন
মা। এক অক্ষরের একটি মধুর শব্দ। কিন্তু এর তাৎপর্য ব্যাপক। জগতে মায়ের সঙ্গে অন্য কাউকে তুলনা করা যায় না। মায়ের স্নেহ ও পরশমাখা আঁচলে সন্তান বেড়ে ওঠে। বড় থেকে হয়ে ওঠে অনেক বড়। আমৃত্যু স্নেহ ও মমতার পরশে মা সন্তানকে আগলে রাখেন, জড়িয়ে রাখেন। মায়ের সঙ্গে সন্তানের যত রকম স্মৃতির ডালি এবং সন্তানকে নিয়ে মায়ের অমলিন অতুলনীয় স্মৃতির শেষ নেই। সন্তানের ভালো-মন্দ এবং আসন্ন যেকোনো বিপদের আগাম দ্রষ্টা হলেন মা।

এক অসাধারণ অতুলনীয় মমত্ববোধ এবং ভালোবাসার নির্যাসিত অনুভব ও উপলব্ধিতে মা সন্তানের সমূহ বিপদ সম্পর্কে জ্ঞাত হতে পারেন। বলা হয়ে থাকে, সন্তানের বিপদ সম্পর্কে আর কেউ না জানলেও আগে মা কীভাবে যেন বুঝতে পারেন। অর্থাৎ ‘পাড়া-পড়শির সবার চেয়ে আগে জানেন মা।’ আমাদের শিশুকাল, শৈশব ও কৈশোর কিংবা জীবনের প্রতি পরতে মায়ের জীবদ্দশার কত স্মৃতি হৃদয়ে বহমান। স্মৃতির ভিন্নতা থাকলেও প্রত্যেকের মাঝে মায়ের স্মৃতি জড়িয়ে থাকে। অন্যদের মতো আমার মায়ের সঙ্গেও রয়েছে অনেক অনেক স্মৃতি।

আমার কিশোরবেলার এমন একটি স্মৃতি এখনো চোখে ভাসে। ছোটবেলায় বাড়ি থেকে মক্তব ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়া শেষ হলে বাবা হয়তো ভেবেছিলেন, বাড়িতে এত কোলাহলের মধ্যে পড়ালেখা করা যায় না। আমার লেখাপড়ার বিঘ্ন ঘটবে বিধায় প্রথমে গজারিয়া বাজারের একটি ঘরে এবং পরবর্তী সময়ে ভোলায় থাকতে হয়েছে। সে কারণে বলা যায়, ১২ বছর বয়স থেকেই আমি বাড়িছাড়া। প্রথমে বাবা বুঝিয়ে-শুনিয়ে আমায় রেখে যেতেন। কিন্তু একদম মন বসত না। মায়ের স্নেহ-পরশের আশায় আকুল হয়ে থাকতাম। খুব কান্না করতাম। প্রায়ই সপ্তাহের ছুটিতে বাড়ি চলে আসতাম। ভোলা শহর থেকে আমাদের গ্রামের বাড়ির দূরত্ব ৫০ মাইল। প্রথমে রিকশা কিংবা হেঁটে, অতঃপর গজারিয়া থেকে বাসে করে (যাকে বলে মুড়ির টিন) ভোলায় যাতায়াত করতে হতো।

ছুটিতে বাড়ি এলে মায়ের খুশির সীমা থাকত না। যখন আবার যাওয়ার সময় হতো; মা আমার বিমর্ষ ও বিষণ্ন হয়ে উঠতেন। মুখে কিছু বলতেন না। কারণ, তিনি জানতেন, এই আটপৌঢ়ে গ্রামে পড়ে থাকলে আমার লেখাপড়া হবে না।

একবার কোনো এক মেঘলা আবহাওয়ার মধ্যেই আমার ভোলা যাওয়ার বিষয়ে মা আমাকে বারণ করেছিলেন। বলেছিলেন পড়ের দিন যেতে। কিন্তু আমি তবুও (মাকে বুঝিয়ে, ম্যানেজ করে) ভোলার উদ্দেশে রওনা হলাম। বাড়ি থেকে যথারীতি বের হয়ে গজারিয়া থেকে বাসে ওঠার পর থেকেই মনটা কেমন যেন অস্থির ও বিচলিত হয়ে উঠল। কাঁচা রাস্তার দীর্ঘপথে যাত্রি ওঠা-নামার জন্য পথে পথে বিভিন্ন স্টেশনে বাস থামছে আবার ছেড়ে যাচ্ছে। আমি নিরাসক্ত ভঙ্গিতে অনেকটা অন্তর্মুখী নিঃশব্দ ভাবনার রাজ্যে দোলদোলায়মান। এরই মধ্যে প্রায় ২৫ মাইল অতিক্রম করার পর আমাদের বাস বুরহানুদ্দীন বাজারে এসে থামল।
ভোলা-চরফ্যাশন রুটে এটি একটি জংশন। এখানে দুদিক থেকে যানবাহন (গাড়ি) থামে। বিরতির পর আবার যথাযথ গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এরই ফাঁকে অনেকেই চা-নাশতা ও ধূমপানের কাজ সেরে নিতে পারেন। সাধারণত এটি আমিও করে থাকি। আমি যখন রেস্টুরেন্টে বসলাম, কিছুক্ষণ পর দেখলাম, বিপরীত দিক থেকে চরফ্যাশনগামী একটি বাস এসে স্টেশনে থেমেছে। উভয় বাসের চালক ও হেলপার সবাই আমাকে চেনেন। ফলে আমার জন্য ড্রাইভারের পাশের সিটটি (প্রায়ই) খালি করে দেওয়া হয়। কখনো সিটের অসুবিধা হয় না। রেস্টুরেন্টে বসেই হঠাৎ আমি মাইন্ড চেঞ্জ করলাম। চা-পর্ব শেষ করে বাসে গিয়ে ব্যাগটি নিয়ে ড্রাইভারকে বলে বাড়িমুখী অন্য বাসটিতে গিয়ে উঠলাম।

পুনরায় গজারিয়ায় পৌঁছানোর পর আমার বন্ধুরা অবাক হলো। এরই মধ্যে একটি খবর ছড়িয়ে পড়ল, আমরা যে গাড়িতে যাচ্ছিলাম, সেই বাসটি অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে! প্রায় সব যাত্রীই আহত হয়েছেন। তবে কয়েকজন যাত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনাস্থলে তিনজন মারা গেছেন! কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও কয়েকজন মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছেন। এতক্ষণে আমার অন্তর্দ্বন্দ্বের গভীরতর ক্ষতসমূহ চাঙা হয়ে উঠল। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম, আমার মা কেন দ্বিধান্বিত ছিলেন এবং নিষেধ করেছেন।

হ্যাঁ! মা কীভাবে যেন সন্তানের আসন্ন বিপদের কথা বুঝতে পারেন। মা যদি মনে করেন এটা ঠিক নয়, তা আসলেই ঠিক নয়। মায়ের নৈতিকতা, বুদ্ধি ও বিবেকবোধ সব সময় সন্তানের কল্যাণেই নিবেদিত থাকে। অতএব, মা-ই শ্রেষ্ঠ। মায়ের কোনো তুলনা নেই। পৃথিবীতে মায়ের ভালোবাসাই সকল কল্যাণের পথকে সুগম করে।

মা অতুলনীয়। মহান আল্লাহ পাক মাকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে মর্যাদা ও সম্মান প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনের অন্যতম বাণী হচ্ছে, ‘যে মা তোমাকে গর্ভে ধারণ করে তোমাকে বড় করেছেন, সেই গর্ভধারিণী মায়ের প্রতি কর্তব্য পালন করো এবং তার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা নিবেদন করো।’

বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, ‘মা হচ্ছেন সমগ্র জাহানের শ্রেষ্ঠ সম্মানীয় নিয়ামত। মাকে কখনো কষ্ট দেওয়া যাবে না, অসম্মান করা যাবে না।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও পাপিষ্ঠ সে ব্যক্তি; যে তার মাকে কষ্ট দেয়, মাকে অসম্মান করে, সে অবশ্যই অভিশপ্ত।’ সন্তানের প্রতি মায়ের স্নেহ ও ভালোবাসা অকৃত্রিম। পৃথিবীর কোনো কিছুর সঙ্গে মায়ের মায়া-মমতার তুলনা হয় না। অর্থাৎ মহামহিম আল্লাহ ও রাসুলে পাকের পরই মায়ের স্থান। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মায়ের পদতলেই সন্তানের বেহেশত।’ অতএব, মর্যাদাগতভাবে দুনিয়া-জাহানে মায়ের সমকক্ষ আর কেউ নয়। মায়ের তুলনা মা-ই। আমরা যেহেতু বিশ্বাসী মানুষ, বিশ্বস্রষ্টার মা বিষয়ক গুরুত্বটি আমাদের জ্ঞাত হওয়া জরুরি।

বিশ্বচরাচরে মায়ের মর্যাদাকে উচ্চকিত রাখার তাগিদ হচ্ছে মানবধর্মের অন্যতম শিক্ষা। মাকে যেন অবহেলা না করা হয়। ইসলামে মাতা-পিতার প্রতি অসম্মান ও অবহেলা প্রদর্শন মহাপাপ। এটি ক্ষমাহীন অপরাধ। মাতা-পিতার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার তাগিদে পৃথিবীর সকল ধর্ম এবং মনীষীদের অসংখ্য উক্তি আছে। এ মুহূর্তে রাধারানী দেবীর একটি উক্তি মনে পড়ছে, ‘মা মা-ই। মায়ের সঙ্গে পৃথিবীর আর কিছুর তুলনা চলে না।’ এ ব্যাপারে নেপোলিয়নের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে। তিনি বলেছেন, ‘একটি দেশের পুনরুজ্জীবনের জন্য বিশেষ কিছুরই দরকার হয় না, কেবল দরকার হয় কিছুসংখ্যক সু-মাতার।’

পৃথিবীতে সৌভাগ্যবান তিনি, যিনি মায়ের আদর, মায়া-মমতা ও স্নেহ-পরশে বড় হয়েছেন এবং মাকেই সবকিছুর ঊর্ধ্বে মর্যাদা দিয়েছেন। আবার এমন অনেক সন্তান আছেন, যারা শিশুকালে মা হারিয়েছেন। মায়ের আদর ও স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন কিন্তু বড় হয়ে কখনো মাকে ভুলে যাননি। জীবনভর মায়ের মর্যাদাকে বক্ষে ধারণ করে ধন্য হয়েছেন।

মহানবী (সা.) জন্মের আগেই পিতৃহারা হয়েছিলেন এবং জন্মের চার বছরের মাথায় প্রাণপ্রিয় মাকে হারিয়েছেন। মাতা-পিতার আদর-স্নেহবঞ্চিত নিদারুণ দুঃখবোধ, অন্তর্জ্বালা নিয়ে মা-বাবার আবাল্য অস্ফুট স্মৃতিকে বক্ষে ধারণ করেই তিনি মহামহিমের নৈকট্যের পূর্ণ প্রাপ্তির মাধ্যমে জগতের সকল মায়ের প্রতি অপার শ্রদ্ধাবোধ ও সম্মান প্রদর্শনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। মহানবীর চিরকালের নির্দেশনা হচ্ছে, ‘জগতের সকল মায়ের মর্যাদাকে সমুন্নত রাখতে হবে। এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ-অসিদ্ধ সন্তানই দুর্ভাগা এবং সে অভিশপ্ত।’
মায়ের দুঃখ-কষ্ট ও বেদনা মোচনে সর্বাগ্রে সন্তানকেই এগিয়ে আসতে হবে। মাকে অসন্তুষ্ট রেখে কিংবা অবহেলা করলে দুনিয়ায় অভিশপ্ত জীবন আর পরকালে ক্ষমাহীন কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে।

এ পৃথিবীর কোনো কোনো মা সন্তানের নিকট অবহেলার শিকার হয়েছেন। মা অভিশাপ না দিলেও পাপিষ্ঠ সন্তানের ভাগ্যে জুটেছে জগদ্ধিক্কৃত অভিশাপ নিয়ে নিষ্প্রদীপ জীবনপাতের ঘটনা।

মায়ের খুশি ও সন্তুষ্টির ওপর সন্তানকে দায়িত্ববান ও সদা সচেতন থাকতে হবে। যাদের মা বেঁচে আছেন, তাদের অবশ্যই দুঃখিনী মায়ের কষ্টবোধকে বিদূরিত করার জন্য (সন্তানকে) সচেষ্ট থাকতে হবে।

বড় পীর আবদুল কাদির জিলানির (রহ.) শিশুকালের একটি ইতিহাস বিখ্যাত ঘটনা হলো, যিনি কোরআন হাফেজ অবস্থায় জন্মেছিলেন। একবার রাতে তাঁর মমতাময়ী মা শুয়ে ছিলেন এবং আদরের শিশুর কাছে পানি চাইলেন। শিশু আবদুল কাদির পানি নিয়ে এসে দেখেন, মা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তিনি পানির গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে রইলেন। রাত পোহানোর আগে মা ঘুম থেকে উঠে দেখেন, তাঁর সন্তান পানির গ্লাস হাতে নিয়ে কম্পিত শরীরসহ দণ্ডায়মান! সারা রাত আবদুল কাদির পানি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন!

দৃশ্যটি অবলোকন করে মা তো হতভম্ব! শিশুটির তুলতুলে পা দুটি ফুলে গেছে এবং সারা শরীর কাঁপছে। বাচাধনকে বুকে টেনে মা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। মায়ের ঘুমের ব্যাঘাত হবে এবং মায়ের কষ্ট হবে ভেবে তিনি মাকে জাগাননি। সেই মহীয়সী মায়ের দোয়ায় বড় পীর আবদুল কাদির জিলানি আজ জগদ্বিখ্যাত।

তেমনি মমতাময়ী মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এক মহাদুর্যোপূর্ণ ঝড়-বৃষ্টির ঘোরতর অন্ধকার রাতে বহুদূর থেকে রওনা হয়েছিলেন। ঝড়ের রাতে যখন নদীপাড়ে গেলেন, তখন অনেক রাত। কোনো নৌকা বা যানবাহন নেই। কিন্তু তাকে তো এই নদী পার হতেই হবে। মায়ের স্নিগ্ধ টানে কিশোর ঈশ্বরচন্দ্র জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গভীর স্রোতোবহা নদী সাঁতরে পার হয়েছেন এবং কঠিন কষ্টের মধ্য দিয়ে মায়ের সান্নিধ্যে পৌঁছেছিলেন এবং জগদ্বিখ্যাত হয়েছেন। মায়ের প্রতি কর্তব্য ও দায়িত্ববোধের এমন বহু দৃষ্টান্ত আছে।

সন্তানের জন্য, সন্তানের সুখের লাগি মায়ের ত্যাগ ও কষ্টের কোনো তুলনা নেই। সমগ্র জাহানের কোনো কিছুর সঙ্গে মায়ের অবদানের তুলনা করা যাবে না। হাদিসে আছে, ‘মাতা-পিতার আনন্দ-খুশিতে খোদার আনন্দ ও খুশি এবং পিতা-মাতার অসন্তুষ্টিতে খোদা অসন্তুষ্ট।’

গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, ‘মা যেমন তার নিজ পুত্রকে-সন্তানকে নিজের জীবন দিয়ে রক্ষা করে, তেমনি সকল প্রাণীর প্রতি অপরিমেয় মৈত্রীভাব পোষণ করবে।’
মায়ের গুরুত্ব নিয়ে পৃথিবীর অনেক মনীষীর উক্তি আছে। আব্রাহাম বলেছেন, ‘যার মা আছে সে কখনো গরিব নয়।’ আর জর্জ ওয়াশিংটন বলেছেন, ‘আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা হলেন আমার মা।’

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, ‘মা হলো পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক, যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ, কষ্ট জমা রাখি এবং বিনিময়ে নিই বিনা সুদে অকৃত্রিম ভালোবাসা।’

অতএব, মাকে কখনো অবজ্ঞা করা যাবে না। অসম্মান করা যাবে না। মায়ের অধিকার রক্ষা করেই আমরা সকল মহত্ত্ব অর্জন করতে পারি। পৃথিবীতে মহৎ মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে একজন সুমাতার অবদানই সবচেয়ে বেশি। শ্রেষ্ঠ মানুষেরা কখনো তাদের মাকে অমর্যাদা করেননি।

পৃথিবীতে মা নিয়ে যত গল্প-কবিতা ও গান আছে, তার সব কটিতেই মায়ের মর্যাদা রক্ষার তাগিদ আছে। আর কিছুতে তা নেই। সকল ভাষা, সকল ধর্ম আর সকল জাতির মুখে মা নামটি একযোগে যেমন উচ্চারিত হয়, তেমনটি আর কিছুতে হয় না। জগতে একমাত্র মায়েরই কোনো প্রতিশব্দ নেই। মা মা-ই। সবাই সকল ভাষায় মাকে মা বলেই ডাকে। মায়ের চিরত্ব ও মর্যাদার জন্য এমন বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত আর কোনো কিছুতে নেই।

সূর্য যেমন অনন্তকাল পৃথিবীতে আলো ছড়ায়; তেমনি মায়ের মমতা ছেয়ে থাকে সমগ্র বিশ্বময়। মায়ের শূন্যতা কোনো কিছুতেই পূরণ হওয়ার নয়। আমরা যারা মা-হারা, তারা মায়ের মর্মচিন্তা উপলব্ধি করে ব্যাকুল-বিষণ্ন হয়ে উঠি। শয়নে-স্বপনে সর্বদা মাকে খুঁজি। কিন্তু মাকে পাই না। কিন্তু যাদের মা আছেন, তারা মায়ের অধিকার রক্ষার মাধ্যমে নিজেদের সৌভাগ্যের পরশকে আরও মহিমান্বিত করতে পারেন। মায়ের যথাযোগ্য মর্যাদা প্রদান করে, পরম যত্নে মাকে নিজেদের সঙ্গে রেখেই ধন্য হতে পারেন। নিজের জীবনের আলোকমালা দিয়ে সমাজকে করে তুলতে পারেন সমুজ্জ্বল ও আলোকিত।

কখনো কোনো অবস্থাতেই আমরা যেন আমাদের মাকে ভুলে না যাই। মায়ের স্মৃতিছায়া আর মমতা-মায়ায় সর্বদা আমাদের সজাগ থাকতে হবে। এ মুহূর্তে আঠারো শতকের কবি জ্যোতিন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুটি লাইন মনে পড়ছে, ‘জাগ জাগ সবে ভারত সন্তান/ মাকে ভুলি কতকাল রহিবে শয়ান।’ মায়ের প্রতি যারা অবজ্ঞা করে তাদের উদ্দেশে ভারতবর্ষের পঙ্কজিনী বসু নামের এক বালিকা কবি আঠারো শতকে লিখেছিলেন : “নাহি লজ্জা, নাহি ভয়/ মা’য়ে সবে ‘দাসী’ কয়/ তবু ঘুমায়ে আছ, তোরা কুলাঙ্গার।” মাত্র ষোলো বছর বেঁচেছিলেন তিনি। তেমনি মানবতার মা তেরেসা সমগ্র বিশ্বে খ্যাতিমান হয়েছিলেন মা-হারা এতিম সন্তানদের লালন-পালন, ভরণ-পোষণ এবং মানুষ করার দায়িত্ব পালন করে। মায়ের শূন্যতা উপলব্ধির মধ্য দিয়ে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে সমাজের অনাথ, দুস্থ, অসহায় মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার মধ্য দিয়ে পুণ্যময়তা অর্জন করতে হবে।

এই প্রকৃতিমাতার অভ্যন্তরে আমরা যারা আছি যেন মাকে ভুলে না যাই। এই সবুজ-শ্যামল প্রান্তর, সুনীল আকাশের ছায়ায়, পৃথিবীর মায়ায় আপন আলয় থেকে বিচ্ছিন্ন-বিচ্ছেদের আগ পর্যন্ত কখনো যেন মাকে ভুলে না যাই। প্রতিক্ষণ প্রতি মুহূর্তে মহামহিমের শেখানো দোয়া যেন করি, ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি ছাগিরা।’ (হে প্রভু! পরম যত্ন-ছায়ায় আমার মাতা-পিতাকে দেখে রেখো, যেমনটি যত্ন-ছায়ায়, কোমল মায়ায় তারা দেখেছেন আমায়)।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুটি লাইন মনে পড়ছে, ‘আমারে ফিরায়ে লহ অয়ি বসুন্ধরে/ কোলের সন্তানে তব কোলের ভিতরে বিপুল অঞ্চল-তলে। ওগো মা মৃন্ময়ী/ তোমার মৃত্তিকা মাঝে ব্যাপ্ত হয়ে রই।’

চিরায়ত বাংলার আরেকটি গান, ‘সবাই বলো মা, মায়ের দাম কি হয়? পৃথিবীতে মায়ের নেই তুলনা/ মাগো তোমার নেই তুলনা।’ কিংবা ‘মা জননী নাইরে যাহার ত্রিভুবনে তাহার কেহ নাইরে/ মায়ের মতো আপন কেহ নাই।’

অতএব, আমরা যেন সেই মমতাময়ী মাকে ভুলে না যাই। মনের শিখায় আলোর দীপ্তিতে সদা-সর্বদা মা যেন সমুজ্জ্বল থাকেন সর্বক্ষেত্রে সর্বময়। পৃথিবীর সকল মা ভালো থাকুন। সকল বাবা ভালো থাকুন। এ কামনাই হোক আমাদের সকলের।
আসলে এই নশ্বর পৃথিবী অনেক কঠিন। সবাই সবাইকে ছেড়ে যায়, সবাইকে ভুলে যায়, যিনি যান না, তিনি হলেন মা।

বাংলা ভাষার একটি বিখ্যাত গানের কলি দিয়ে আজকের লেখার ইতি টানছি :
‘মধুর আমার মায়ের হাসি চাঁদের মতো ঝরে/ মাকে মনে পড়ে আমার মাকে মনে পড়ে।’

লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078