মুখ হা করে ঘুমানোর মানে হল, নাকের চাইতে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়া হচ্ছে বেশি। এর ফলে শুধু নাক ডাকা নয়, ঠিক মতো ঘুমও হয় না বলে উঠে এসেছে গবেষণায়। আর বিষয়টি হাতেকলমে পরীক্ষার জন্য নিজের নাসারন্ধ্র বা নাকের ফুটার অর্ধেকের মতো অংশ সিলিকন ও সার্জিক্যাল টেপ দিয়ে ১০দিন আটকে রেখেছিলেন স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক জেমস নেস্টর।
এই কাজ তিনি ‘ব্রেথ: দি নিউ সায়েন্স অফ এ লস্ট আর্ট’ বই লেখার সময় গবেষণার জন্য করেন।
সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নেস্টর বলেন, “বিষয়টা ভালো কিছু নয় সেটা আমরা আগেই জানতাম। কারণ মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নিলে শারীরিক যেসব সমস্যা দেখা দেয় সেগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আগে থেকেই রয়েছে।”
এই গবেষণা চলার সময়ই দেখা গেছে, নেস্টরের রক্তচাপ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩ পয়েন্ট, যা কিনা উচ্চ রক্তচাপের প্রাথমিক পর্যায়। হৃদস্পন্দন গণনা করে দেখা গেছে চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই সাথে দেখা দিচ্ছে মানসিক অসড়তার অনুভূতি।
রাতে তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুমের মধ্যে নাক ডেকেছেন, দেখা দিয়েছে ‘অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’ বা ঘুমের মধ্যে বারবার শ্বাস বন্ধ হওয়া আবার খোলা। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণও কমতে দেখা গেছে।
এছাড়াও অভিজ্ঞতা থেকে নেস্টর জানান, মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার ফলে ভালো ঘুম হওয়ারও বারোটা বেজেছে।
ঘুমের সময় মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার কারণ
“ঘুমিয়ে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়ার কারণের তালিকা দীর্ঘ”, সিএনএন’কে বলেন নিউ ইয়র্ক’য়ের ঘুমের ওষুধ-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও শল্যচিকিৎসক ডা. স্টিভেন পার্ক।
তার কথায়, “এরমধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল নাক বন্ধ থাকা। সেটা হতে পারে অ্যালার্জির কারণে, কিংবা নাকের মধ্যপর্দার একপাশে বেশি চেপে থাকা- যাকে বলে ‘ডিভিয়েটেড সেপ্টাম’। এছাড়া অনেক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও নাক বন্ধ হতে পারে।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “যখন শুয়ে থাকা হয় তখন নাকের ভেতরের রক্তবাহী নালীগুলোতে রক্ত এসে ভরে যায়। ফলে দেখা দেয় সংকোচন ও প্রসারণ। এটা একটা স্বাভাবিক অবস্থা। তবে এই সময়ে নাক দিয়ে সহজে শ্বাস নিতে না পারলে, মুখ হা হয়ে যায়।”
মনে হতে পারে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়াটা ভালো। তবে বিষয়টা আসলে বিপরীত।
মুখ হা করার ফলে, জিহ্বা পেছনের দিকে ঘুটিয়ে যায়, ফলে বাতাস চলাচলে বাধা তৈরি হয়। এমনকি ঘুমের সমস্যা না থাকলেও এক্ষেত্রে অল্প মাত্রায় ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ বা ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রস্বাসে সমস্যা দেখা দেয়।
রাতে মুখ হা করে ঘুমানোর লক্ষণ
“যদি সঙ্গী থাকে তবে সেই বলে দিতে পারবে, রাতে আপনি মুখ হা করে ঘুমাচ্ছেন কিনা”, বলেন ডা. পার্ক।
তবে নিজে বোঝার কৌশলও আছে। যদি ঘুম থেকে ওঠার পর মুখ শুষ্ক লাগে এবং দীর্ঘদিন ধরে সেটা মনে হওয়ার পাশাপাশি ঘুম থেকে ওঠার পরও ক্লান্তিবোধ কাজ করে তবে সাবধান হতে হবে।
এছাড়া ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ হওয়ার বিষয় থাকলে বারবার বাথরুমে যাওয়ার তাগিদ অনুভূত হবে। এটা আরেকটি লক্ষণ।
ডা. পার্ক বলেন, “শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হলে হৃদপিণ্ডে চাপ পড়ে। ফলে এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ ঘটে যা মূত্রের পরিমাণ বাড়ায়।”
মুখে নিঃশ্বাস নেওয়া বন্ধ করতে
যদি ওপরের লক্ষণগুলো নিজের ক্ষেত্রে দেখা দেয় তবে সমস্যা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হল নাকের শুশ্রূষা করা।
এই ক্ষেত্রে নেস্টার পরামর্শ দেন, “প্রথমেই যেটা করতে হবে সেটা হল, ঠিক ঘুমের আগে আগে খাওয়া বাদ দেওয়া। কারণ শুয়ে থাকার কারণে পাকস্থলীর রস নাক, সাইনাস, কান, মুখে চলে এসে প্রদাহ ও বাধা তৈরি করতে পারে।”
এছাড়া নাক পরিষ্কারের জন্য লবণ-পানি দিয়ে নাক ঝাড়ার পরামর্শ দেন, নেস্টার। এছাড়া নাকের নানান ড্রপ ও স্প্রে পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
যিনি হা করে ঘুমান, অনেক সময় তার সঙ্গী মুখের হা হাত দিয়ে বন্ধ করে দেন।
তবে যাদের ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ বা ঘুমের মধ্যে থেমে থেমে নিঃশ্বাস নেন তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টা বিপজ্জনক হতে পারে বলে সাবধান করেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া’র ‘ক্যাক স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজ গুপ্তা।
তিনি বলেন, “মুখের হা এভাবে বন্ধ করে দেওয়াতে তেমন কোনো সুবিধা নেই। বরং এই কাজ করার আগে সাবধান হতে হবে।”
তাই এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে নাক-কান-গলার ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন ডা. গুপ্তা।
ঠিকানা/এসআর
এই কাজ তিনি ‘ব্রেথ: দি নিউ সায়েন্স অফ এ লস্ট আর্ট’ বই লেখার সময় গবেষণার জন্য করেন।
সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নেস্টর বলেন, “বিষয়টা ভালো কিছু নয় সেটা আমরা আগেই জানতাম। কারণ মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নিলে শারীরিক যেসব সমস্যা দেখা দেয় সেগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আগে থেকেই রয়েছে।”
এই গবেষণা চলার সময়ই দেখা গেছে, নেস্টরের রক্তচাপ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩ পয়েন্ট, যা কিনা উচ্চ রক্তচাপের প্রাথমিক পর্যায়। হৃদস্পন্দন গণনা করে দেখা গেছে চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই সাথে দেখা দিচ্ছে মানসিক অসড়তার অনুভূতি।
রাতে তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুমের মধ্যে নাক ডেকেছেন, দেখা দিয়েছে ‘অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’ বা ঘুমের মধ্যে বারবার শ্বাস বন্ধ হওয়া আবার খোলা। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণও কমতে দেখা গেছে।
এছাড়াও অভিজ্ঞতা থেকে নেস্টর জানান, মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার ফলে ভালো ঘুম হওয়ারও বারোটা বেজেছে।
ঘুমের সময় মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার কারণ
“ঘুমিয়ে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়ার কারণের তালিকা দীর্ঘ”, সিএনএন’কে বলেন নিউ ইয়র্ক’য়ের ঘুমের ওষুধ-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও শল্যচিকিৎসক ডা. স্টিভেন পার্ক।
তার কথায়, “এরমধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল নাক বন্ধ থাকা। সেটা হতে পারে অ্যালার্জির কারণে, কিংবা নাকের মধ্যপর্দার একপাশে বেশি চেপে থাকা- যাকে বলে ‘ডিভিয়েটেড সেপ্টাম’। এছাড়া অনেক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও নাক বন্ধ হতে পারে।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “যখন শুয়ে থাকা হয় তখন নাকের ভেতরের রক্তবাহী নালীগুলোতে রক্ত এসে ভরে যায়। ফলে দেখা দেয় সংকোচন ও প্রসারণ। এটা একটা স্বাভাবিক অবস্থা। তবে এই সময়ে নাক দিয়ে সহজে শ্বাস নিতে না পারলে, মুখ হা হয়ে যায়।”
মনে হতে পারে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়াটা ভালো। তবে বিষয়টা আসলে বিপরীত।
মুখ হা করার ফলে, জিহ্বা পেছনের দিকে ঘুটিয়ে যায়, ফলে বাতাস চলাচলে বাধা তৈরি হয়। এমনকি ঘুমের সমস্যা না থাকলেও এক্ষেত্রে অল্প মাত্রায় ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ বা ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রস্বাসে সমস্যা দেখা দেয়।
রাতে মুখ হা করে ঘুমানোর লক্ষণ
“যদি সঙ্গী থাকে তবে সেই বলে দিতে পারবে, রাতে আপনি মুখ হা করে ঘুমাচ্ছেন কিনা”, বলেন ডা. পার্ক।
তবে নিজে বোঝার কৌশলও আছে। যদি ঘুম থেকে ওঠার পর মুখ শুষ্ক লাগে এবং দীর্ঘদিন ধরে সেটা মনে হওয়ার পাশাপাশি ঘুম থেকে ওঠার পরও ক্লান্তিবোধ কাজ করে তবে সাবধান হতে হবে।
এছাড়া ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ হওয়ার বিষয় থাকলে বারবার বাথরুমে যাওয়ার তাগিদ অনুভূত হবে। এটা আরেকটি লক্ষণ।
ডা. পার্ক বলেন, “শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হলে হৃদপিণ্ডে চাপ পড়ে। ফলে এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ ঘটে যা মূত্রের পরিমাণ বাড়ায়।”
মুখে নিঃশ্বাস নেওয়া বন্ধ করতে
যদি ওপরের লক্ষণগুলো নিজের ক্ষেত্রে দেখা দেয় তবে সমস্যা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হল নাকের শুশ্রূষা করা।
এই ক্ষেত্রে নেস্টার পরামর্শ দেন, “প্রথমেই যেটা করতে হবে সেটা হল, ঠিক ঘুমের আগে আগে খাওয়া বাদ দেওয়া। কারণ শুয়ে থাকার কারণে পাকস্থলীর রস নাক, সাইনাস, কান, মুখে চলে এসে প্রদাহ ও বাধা তৈরি করতে পারে।”
এছাড়া নাক পরিষ্কারের জন্য লবণ-পানি দিয়ে নাক ঝাড়ার পরামর্শ দেন, নেস্টার। এছাড়া নাকের নানান ড্রপ ও স্প্রে পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
যিনি হা করে ঘুমান, অনেক সময় তার সঙ্গী মুখের হা হাত দিয়ে বন্ধ করে দেন।
তবে যাদের ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ বা ঘুমের মধ্যে থেমে থেমে নিঃশ্বাস নেন তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টা বিপজ্জনক হতে পারে বলে সাবধান করেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া’র ‘ক্যাক স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজ গুপ্তা।
তিনি বলেন, “মুখের হা এভাবে বন্ধ করে দেওয়াতে তেমন কোনো সুবিধা নেই। বরং এই কাজ করার আগে সাবধান হতে হবে।”
তাই এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে নাক-কান-গলার ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন ডা. গুপ্তা।
ঠিকানা/এসআর