মানবদেহে বিশেষ গন্ধে আকৃষ্ট হয় মশা: গবেষণা

প্রকাশ : ২১ মে ২০২৩, ১০:৪৪ , অনলাইন ভার্সন
 নতুন গবেষণায় কার্বোক্সিলিক অ্যাসিড নামের একটি রাসায়নিক চিহ্নিত করা হয়েছে, যার কারণে কিছু নির্দিষ্ট মানুষের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয় মশা। মশাকে আকৃষ্ট করতে মানুষের শরীরের গন্ধের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই উঠে এসেছে।

গত শুক্রবার প্রকাশিত এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা নির্দিষ্ট করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন, আমাদের শরীরে গন্ধ তৈরিতে যেসব রাসায়নিকের ভূমিকা রয়েছে, তার মধ্যে কোনটি মশাকে বেশি টানে।

নতুন গবেষণায় কার্বোক্সিলিক অ্যাসিড নামের একটি রাসায়নিক চিহ্নিত করা হয়েছে, যার উপস্থিতির তারতম্যের কারণে কিছু নির্দিষ্ট মানুষের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয় মশা। 

মাছিগোত্রীয় এই পতঙ্গটি মূলত বিভিন্ন ধরনের রস পান করে বাঁচে। তবে স্ত্রী মশাদের ডিম উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন হয় অতিরিক্ত প্রোটিন, যা পাওয়া যায় রক্তে।

মশার মাধ্যমে যেসব রোগ ছড়ায় তার মধ্যে অন্যতম মারাত্মক হচ্ছে ম্যালেরিয়া। ম্যালেরিয়া মূলত রক্তবাহিত একটি রোগ। অনুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না, এমন একটি পরজীবী এই রোগের কারণ। আর এই পরজীবীটি মূলত রক্তের লোহিত কণিকা আশ্রয় করে বাঁচে। যখন একটি মশা ম্যালেরিয়া আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে দংশন করে, তখন সেটি ওই পরজীবীসহই রক্ত পান করে।

বাল্টিমোরের জন্স হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ এবং জন্স হপকিন্স ম্যালেরিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মলিক্যুলার মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলোজি সহকারী অধ্যাপক কনর ম্যাকমেনিম্যান বলেন, মশার পাকস্থলীতে পুষ্ট হয়ে ওঠা ওই পরজীবী লালাগ্রন্থিতে স্থানান্তরিত হয় এবং ওই মশা পরে কোনো সুস্থ মানুষকে দংশন করলে সেই জীবাণু ওই মানুষটির ত্বকে লেগে যায়।

ঘরের জানালায় পর্দা ঝুলিয়ে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র আর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে ম্যালেরিয়া দূর করা সম্ভব হলেও বিশ্বের অনেক স্থানে এখনওে এই রোগটি বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিচ্ছে।

কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত ওই নতুন সমীক্ষার গবেষক ড. ম্যাকমেনিম্যান বলেন, “ম্যালেরিয়ার কারণে এখনও বছরে ছয় লাখ মানুষের মৃত্যু হয়, এর মধ্যে বেশিরভাগই পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু এবং অন্তঃসত্ত্বা নারী। এতেই বোঝা যায় বিশ্বজুড়ে কতটা ভোগান্তির কারণ এটি। এই গবেষণার মূল বিষয়ই ছিল ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহক মশা কীভাবে মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়, তা খুঁজে বের করা।”

ব্লুমবার্গের গবেষক ড. দিয়েগো গিরাল্দো এবং স্টিফেন র‌্যাংকিন-টার্নারকে নিয়ে ড. ম্যাকমেনিম্যান মূলত সাব-সাহারা অঞ্চলে সক্রিয় অ্যানোফিলিস গাম্বিয়া প্রজাতির মশা নিয়ে গবেষণা করেন। এই কাজে সহযোগী হিসেবে ছিল জাম্বিয়ার মাশা রিসার্চ ট্রাস্ট, যেটি পরিচালনা করেন ড. এডগার সিমুলুন্দু।

ম্যাকমেনিম্যান বলেন, “আমরা এমন একটি পদ্ধতি গড়ে তুলতে আগ্রহী ছিলাম, যেখানে আফ্রিকার ম্যালেরিয়াবাহী মশার পরিচিত পরিবেশে তাদের আচরণগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা করতে পারি।”

মশা কীভাবে মানুষের শরীরের গন্ধের ভিন্নতা টের পায়, তা নির্ণয়ের পাশাপাশি ৬৬ ফুট (২০ মিটার) দূর থেকে পতঙ্গের ঘ্রাণশক্তি এবং রাত ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত মশার সক্রিয় থাকার বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করেন।

এজন্য তারা জাল দিয়ে ঘেরা স্কেটিং ফ্লোরের মতো বিশাল একটি স্থাপনা তৈরি করেন। এর চারদিকে জাল দিয়ে ঘেরা ছয়টি তাঁবু বসানো হয়। গবেষণায় অংশ নেওয়া মানুষজন এসব তাঁবুতে ঘুমাতেন। এসব তাঁবু থেকে তাদের নিঃশ্বাস বায়ু এবং শরীরের গন্ধ লম্বা পাইপের মাধ্যমে গিয়ে জমা হত বড় গবেষণাগারে সংরক্ষিত এক ধরনের প্যাডে। এই প্যাডগুলো তাঁবুর ঘুমন্ত মানুষের মতোই কার্বন ডাই অক্সাইড দিয়ে উষ্ণ করে রাখা হত।

২০ মিটার বাই ২০ মিটারের মূল গবেষণাগারে ছিল শত শত মশা। প্রতিটি নমুনার উপর মশার উড়াউড়ি নজরদারি করা হত ইনফ্রারেড ক্যামেরা দিয়ে। গবেষণায় যেসব মশা ব্যবহার করা হয়, সেগুলো ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী ছিল না এবং সেগুলো ওইসব ঘুমন্ত মানুষের কাছেই যেত না।

গবেষকরা দেখেছেন, পিকনিকে থাকা অনেক লোকজন স্বীকার করেছেন, কারও কারও প্রতি মশারা বেশি আকৃষ্ট হয়।

গবেষণায় তাঁবুগুলোর বাতাসের রাসায়নিক বিশ্লেষণেও দেখা গেছে, মশাদের এই আকর্ষণের পেছনে মানুষের শরীরে গন্ধ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন রাসায়নিকের উপস্থিতি কিংবা সেগুলোর ঘাটতির একটা ভূমিকা রয়েছে।

দেখা গেছে, মশারা বায়ুবাহিত কার্বোক্সিলিক অ্যাসিড ও বুটিরিক অ্যাসিডে বেশি আকৃষ্ট হয়। লিমবার্গারের মতো গন্ধযুক্ত পনীরে এই বুটিরিক এসিডের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এই কার্বোক্সিলিক এসিড মানবত্বকে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা তৈরি হয় এবং সাধারণত যা কোনো ব্যক্তি বুঝতে পারেন না।

বিভিন্ন মানুষের শরীরে গন্ধ সৃষ্টকারী রাসায়নিকের উপস্থিতি এবং সেই গন্ধের প্রতি মশাদের আকৃষ্ট হওয়ার মধ্যে একটি সম্পর্ক খুঁজে পাওয়াকে ‘খুবই আকর্ষণীয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ’ বলছেন ড. সিমুলুন্দু।

“গবেষণার এই তথ্য মশা তাড়ানোর পদ্ধতি উন্নয়ন এবং ম্যালেরিয়ার প্রবণ অঞ্চলে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগবে।”

মশা নিয়ে আরেক গবেষক হাওয়ার্ড হিউজ মেডিকেল ইন্সটিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. লেসলি ভোসহল এই গবেষণাকে দারুণ অর্জন বলে উল্লেখ করেছেন।

“আমি মনে করি, এটি দারুণ একটি গবেষণা হয়েছে। গবেষণাগারের বাইরে এ ধরনের গবেষণা এটিই প্রথম হল,” বলেন এই নিউরো বায়োলজিস্ট।

ভোসহল ও তার সহযোগীদের গবেষণা ছিল ডেঙ্গু, জিকা ও চিকুনগুনিয়া রোগের জীবাণুবাহী মশা নিয়ে। গতবছর ‘সেল’ জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণায়ও বলা হয়, মানুষের ত্বকে যে তৈরি হওয়া কার্বোক্সিলিক এসিডের দ্বারা আকৃষ্ট হয় মশা।

একই ধরনের রাসায়নিকের প্রতি দুই প্রজাতির মশার আকৃষ্ট হওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক মনে করছেন ভোসহল। তিনি বলেন, এতে মশা তাড়ানোর ওষুধ ও ফাঁদ তৈরি সহজ হবে।

“মশারা কীভাবে আমাদের কাছে আসছে এবং আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সেটা বোঝার জন্য নতুন এই গবেষণা ভালো কিছু উপায় বাতলে দিয়েছে,” বলেন তিনি।

ঠিকানা/এসআর


 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041