নিশুতি রাতের কান্না

প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪:২৫ , অনলাইন ভার্সন
তাপস কুমার বর

‘ভয়’ এমন একটা আতঙ্ক, মনের কোণে যদি একবার বসে যায়, সে বারবার দাঁত বের করে নিজেকে প্রহসনে পরিণত করে তোলে। সে প্রহসন হাসির নয়, আতঙ্কের...

‘কে ওখানে? কেউ নেই, হঠাৎ নিশুতি রাতের কান্না। রক্তের মধ্যে ঠান্ডা প্রবাহ বইছে!’
ভূত, প্রেতাত্মা, ডাইনি, ভ্যাম্পায়ার-এসব ভৌতিক রহস্য আমরা বিভিন্ন বইতে পড়ে আসছি। কিন্তু মানুষের কল্পনাশক্তি কতটা প্রখর হলে সেই কল্পনা ‘আরব্য রজনী’র মতো কল্পনা, যা মানুষকে জীবন্ত ও প্রাণদীপ্ত করে তুলতে পারে, তার ইতিহাস আমরা সবাই জানি। এসব ইতিহাস আমরা বিভিন্ন বইতে শুনে আসছি। কিন্তু এই ভয়ংকর পরিস্থিতির সম্মুখীন কি কেউ হয়েছেন? সেই পরিস্থিতি কলমকেও কাঁপিয়ে তোলে। আজ সেই রকম একটা ঘটনার কথা বলতে যাচ্ছি।

সালটা ছিল ১৯৯৭, ২৪ জানুয়ারি। শীতটাও জেঁকে পড়েছে এবারে। সেদিন অভিরাম অফিসের খাতাপত্রের কাজ সেরে অফিস থেকে বেরোতে বেরোতে ঘড়িতে প্রায় সন্ধ্যা পৌনে আটটা বাজতে চলল। অভিরাম অফিসের দারোয়ান শ্যামচরণকে অফিসের চাবিটা দিয়ে সাইকেল নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিল। চারদিকে রাস্তাঘাট যেন আজ সুনসান লাগছে। আজকের রাতটা যেন বেশি অন্ধকার লাগছে অভিরামের কাছে, চারদিক কুয়াশায় আচ্ছন্ন। প‍্যাডেল মেরে ক্রিং ক্রিং শব্দে এগিয়ে চলেছে অভিরাম সাইকেল নিয়ে। রাস্তার দুই পাশে তাল ও ঝাউগাছের সারি। এই অন্ধকারে তালগাছগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে, শতাব্দীর রাক্ষসগুলো বুক চিতিয়ে দাঁত বের করে হাসছে। ঠান্ডা বাতাসের হালকা হাওয়া বারবার শরীরটাকে কাঁপিয়ে তুলছে!

অভিরাম দ্রুতগতিতে সাইকেল চালাতে থাকল। কিছুটা দূরে শ্মশান। এর পাশ দিয়ে অভিরাম যেই একটু জোরে সাইকেলের প্যাডেল করতে যাবে হঠাৎ সাইকেলের টায়ার গেল ফেটে। অভিরাম সাইকেল থেকে নেমে টায়ারের দিকে চোখ যেতেই বুঝতে পারল টায়ার গেছে ফেটে। এখনো তাকে আরও প্রায় এক ঘণ্টার পথ যেতে হবে। এই জঙ্গলের পাশ দিয়ে সে একা একা এভাবে সাইকেল গড়িয়ে নিয়ে যাবে ভাবতে গায়ে শিহরণ দিয়ে উঠল অভিরামের। এবার একটু ভয় ভয় করতে লাগল। আশপাশে কোনো বাড়ি নেই। হঠাৎ শ্মশানের বটগাছের তলায় কাউকে দেখে অভিরাম চিৎকার করে বলল, ‘কে ওখানে?’ কিন্তু সাড়া নেই।

অভিরাম রীতিমতো ভয় পেয়ে গেছে। আজ এ রকম বিপদের দিনে বন্ধু সমরেশকে ভীষণ মনে পড়ছে। বেশ কিছুদিন অফিসে আসছে না। সে থাকলে দুজনের কোনো সমস্যা হতো না। বটগাছের তলা থেকে একটা শব্দ শোনা গেল। একটা লোক তার কিছুটা কাছে এল। অভিরাম প্রথমে তাকে দেখে ভয়ে চেঁচিয়ে উঠেছিল। সামনে আসতেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেল। সে একজন সাধু। অভিরামকে সে জিজ্ঞাসা করল, এত রাতে এখানে কেন? অভিরাম সাধুকে সব কথা খুলে বলল। সাধু শুনে প্রথমে একটু চুপ থাকল। তারপর অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।

অভিরাম সাধুর কথাগুলো প্রথমে বিশ্বাস করতে চায়নি। কারণ আধুনিক সভ‍্যতায় এ রকম কুসংস্কার সে মানতে চায় না। অভিরাম বিজ্ঞানের ছাত্র। বরাবর সে প্রমাণ ছাড়া কোনো কিছু মানতে চায় না। সাধুকে ভণ্ড বলে মনে হয়েছে অভিরামের। কিন্তু আজও কত তথ্য কুসংস্কারে পড়ে আছে, যা গোপনীয়তার আড়ালে সত‍্যমুখী করে তোলে। কিন্তু তার সম্মুখীন হওয়া মৃত্যুর সমান।

নিশুতি রাতের ডাকে অজানা দুটো চোখ বারবার শিকারির মতো তাকিয়ে আছে।

এদিকে তখন ঘড়িতে প্রায় নয়টা বাজতে চলল। কখন সে বাড়ি ফিরবে? এখানে আর বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। হঠাৎ অভিরাম সাধু বাবাকে ওখানে আর দেখতে পেল না। এটুকু সময়ের মধ্যে কোথায় গেল? অভিরাম দুবার সাধু বাবাকে ডাকল কিন্তু কোনো সাড়া নেই। এখন সত্যিই অভিরামের ভয় আরও বেশি জাপটে বসেছে। হঠাৎ শ্মশান থেকে দুটো কালো বেড়াল চেঁচাতে চেঁচাতে ডান দিকের জঙ্গলের দিকে দৌড়ে পালিয়ে গেল। অভিরামের মনে একটা প্রশ্ন জাগল, এতক্ষণ তার সঙ্গে যে কথা বলেছিল, সে কে? হঠাৎ জঙ্গলে হায়েনার শব্দে অভিরামের শরীরে হাড়-হিম-করা ভয় বারবার ফুসফুসকে আঘাত করছে। নিঃশ্বাস এখন দীর্ঘশ্বাসে পরিণত হয়েছে। কিছুটা দূরে কেউ যেন বসে বসে কাঁদছে। অভিরামের মাথা ঠিক নেই। হঠাৎ এই জঙ্গলের মধ্যে কে কাঁদছে? তালগাছের সারি দিয়ে কিছুটা পথ এগিয়ে সেই সাধুটাকে দেখতে পেল।

হঠাৎ অভিরাম চমকে উঠল। তার মাথায় এখন একটাই চিন্তাÑএই ভুতুড়ে জায়গা থেকে যেমন করেই হোক বেরোতে হবে!

সেই সাধু এখন একটা ভয়ংকর ‘অঘোরী’ বেশে চিৎকার করে ডাকছে :
‘আয় সারা জনমের তপস্যা। তোকে হত্যা করে আমি রক্ত পান করব।’ অঘোরীর সে কী অট্টহাসি!
জাদুশক্তির বলে অভিরাম নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে না। কিন্তু তার জ্ঞান ও হুঁশ আছে। জঙ্গলে একটা নিশুতি রাতের কান্না ভেসে আসছে বারবার। অভিরাম প্রথমে একটু ঘাবড়ে গেল। হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। অঘোরীর সামনে কত কঙ্কালসার মুণ্ডুমালা পড়ে আছে। সামনে যোগ্যের অর্ঘ্য ডালা। অঘোরীর সামনে যে প্রদীপটা জ্বলছে, ওটাকে যেমন করেই হোক নেভাতে হবে। অভিরাম তার হাতের টর্চলাইট সজোরে ওই প্রদীপের দিকে ছুড়ে মারল। সঙ্গে সঙ্গে প্রদীপটি গেল নিভে।

অঘোরীর সে কী হিংস্র চিৎকার!

সঙ্গে সঙ্গে অভিরাম জঙ্গলের ভেতর দিয়ে দৌড় মারল প্রাণপণে। তাল ও ঝাউগাছের সারি দিয়ে প্রাণ হাতে নিয়ে একটা অবলা প্রাণীর মতো দৌড়াতে লাগল। পেছনে নিশুতি রাতের কান্নার মতো একটা হিংস্র শব্দ চিৎকার করে বলছে...

‘আমার হাত থেকে শিকারি পালিয়ে গেল। আ আ। ওকে ধরে আন, এত বছরের সাধনা বিফলে যাবে।’
সেদিন অভিরাম হাঁপাতে হাঁপাতে নিজ বাড়ির সামনে চিৎকার করে ডাক দিয়ে জানশূন্য হয়ে মাটিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। বাড়ির দরজা খুলে অভিরামের স্ত্রী মণিমালা স্বামীকে জ্ঞানশূন্য অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে এল। তার গা এখন গরমে পুড়ে যাচ্ছে। সে বারবার ভয় ও আতঙ্কে চিৎকার করছে আর কাঁপছে!
তার পর থেকে প্রায় ১০ দিন জ্বরে ভুগল। অভিরাম কাউকে ঠিকমতো চিনতে পারছে না। সুস্থ হয়ে স্ত্রীর কাছে পুরো ঘটনা সবিস্তারে বলল। সব শুনে অভিরামের স্ত্রী স্বামীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041