এস এম মোজাম্মেল হক
ফুল ভালোবাসে না পৃথিবীতে এমন প্রাণী বিরল। তবে এ ভালোবাসার পেছনে রয়েছে নানা তাৎপর্য। কেউ ভালোবাসে সৌন্দর্যের জন্য, কেউ সুগন্ধির জন্য আবার কেউ আহার বা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য। আহার হিসেবে মানুষ সরাসরি খুব কম ফুলই ব্যবহার করে, তবে ফুল থেকে জন্ম নেওয়া ফল মানুষের খাদ্য ও ব্যবহার্য তালিকার প্রধান অনুষঙ্গ। ফুল সাধারণত উদ্ভিদের উপরি অংশ অর্থাৎ কাণ্ডে প্রস্ফুটিত হয়। কোনো কোনো উদ্ভিদের ফল ফুল থেকে উৎপন্ন না হয়ে শিকড় থেকে জন্মায়। উদাহরণ হিসেবে আলু, মুলা, গাজর, শালগম, শালুক ইত্যাদি বহু রকমের খাবার উপযোগী ফলমুল রয়েছে। তবে এর সবগুলোর বংশবৃদ্ধি একই অঙ্গ থেকে বা একই প্রক্রিয়ায় হয় না। কোনো কোনোটির ফল শিকড়, কাণ্ড বা পাতা থেকেও হয়। বর্তমান যুগে কৃষিবিজ্ঞানের উন্নতির ফলে অনেক অবিশ্বাস্য রকমের পদ্ধতিতে উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধি ঘটানো হয়ে থাকে। আমাদের এ কথা জানা যে বিভিন্ন ফসলের পরাগায়ণ বিভিন্নভাবে হয়ে থাকে।
এর মধ্যে কিছু পোকামাকড়ের মাধ্যমে, কিছু বাতাস বা জলের ঢেউয়ের মাধ্যমেও হয়ে থাকে। তবে এটাই বিস্ময় যে পোকামাকড় তার খাদ্য সংগ্রহের জন্য ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায় আর তার মাধ্যমেই পরাগায়ণ হয়ে থাকে অর্থাৎ তাদের অজান্তেই প্রাপ্ত খাদ্যের বিনিময় হিসেবে পরাগায়ণের মতো অতিপ্রয়োজনীয় কাজটি তারা সম্পন্ন করে ফেলে অর্থাৎ এখানেই দেওয়া-নেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট, যা শিরোনামের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। প্রশ্ন হলো সৃষ্টির এই যে মহাযজ্ঞ নীরবে-নিভৃতে সংঘটিত হচ্ছে, যা নিয়ে আমরা খুব একটা মাথা ঘামাই না, প্রাকৃতিকভাবেই সব সংঘটিত হচ্ছে। তবে এই নিখুঁত পরিকল্পনার বিষয়টি কোনোভাবেই উপেক্ষিত হওয়ার নয়। আমাদের চিন্তার বাইরে থাকলেও যিনি এসবের নিয়ন্তা, তিনি ঠিকই যথাপূর্ব ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আমেরিকায় আসা মানুষদের প্রথম যে সমস্যা, তা হলো ভাষা। নিজ দেশে মাতৃভাষায় কথা বলা শিক্ষিত লোকদেরও এখানকার প্রচলিত কথাবার্তা সহজে অনুধাবন করা অনেকটা দুর্বোধ্য। তবে স্কুল-কলেজগামী বাচ্চাদের বিষয়টি আলাদা। তারা স্কুল-কলেজে অহরহ স্থানীয় ভাষায় কথা বলা ও পড়ালেখা করার কারণে কিছুদিনের মধ্যেই এখানকার ভাষা পুরোপুরি আয়ত্ত করে ফেলে। এমনকি মাতৃভাষা পারিবারিক পর্যায় ব্যতীত বাইরে না বলার কারণে মাতৃভাষায় জড়তা দেখা দেয়। বয়স্ক অনেকেই পরবর্তী প্রজন্মের মাতৃভাষা ভুলে যাওয়ার ব্যাপারে সন্দিহান। বাচ্চা বয়সে আসাদের মূলস্রোতের সঙ্গে মিশে যাওয়া এবং স্থানীয় ভাষায় পারদর্শী হয়ে শিক্ষাদীক্ষায় ব্যুৎপত্তি অর্জনের ফলে সহজেই তারা যোগ্যতানুসারে কর্মসংস্থান করতে সক্ষম। পক্ষান্তরে বয়স্কদের পূর্ব যোগ্যতা ও কাজের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও এখানকার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু প্রশিক্ষণ প্রয়োজন কিন্তু কোভিডের কারণে প্রায় দুই বছর সবকিছু অচল হয়ে পড়ায় অনেকের পক্ষেই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা সম্ভব না হওয়ায় এবং ওই দুই বছর নিয়োগও বন্ধ থাকায় তাদের তদানুরূপ কর্মসংস্থান সহজ না হওয়ায় অনেকেই অড জব করতে বাধ্য হন। তা সত্ত্বেও কর্মঠ হলে স্বল্প আয়ে মিলেমিশে সংসার পরিচালনা তেমন কঠিন নয়। দুনিয়ার সর্বত্রই অলস প্রকৃতির লোকদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্য ধরাছোঁয়ার বাইরে। যে কারণে এখানেও চরম দারিদ্র্যপীড়িত গৃহহীন লোকজনের দেখা পাওয়া যায়, যারা মূলত হোমলেস খ্যাত। তাদের কারণে সামাজিক অসামঞ্জস্য তৈরি হওয়ার ফলে শেল্টারে সরকারি তত্ত্বাবধানে থাকার নিশ্চয়তা থাকলেও সেখানে না থেকে অনিরাপদভাবে রাস্তাঘাটে থাকতেই তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
উন্নত দেশসমূহে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার মতো সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করা যতটা সহজ, অনুন্নত দেশসমূহের বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে মোটেই তেমনটি নয়। কারণ আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য ঐকান্তিক প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয়, বরং পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা অত্যন্ত সহায়ক শক্তি হিসেবে বিবেচ্য, যা উন্নত দেশসমূহে হাতের নাগালে। দারিদ্র্যের কারণে শিক্ষা গ্রহণ দূরে থাক, শুধু ভাত-কাপড় জোগাতেই শিশুশ্রম দিতে বাধ্য হওয়া শিশুদের সঙ্গে উন্নত বিশ্বের শিশুদের কোনোভাবেই তুলনা চলে না। সেখানেও পড়ালেখার পাশাপাশি শিশু বয়সেই অভিজ্ঞতা অর্জন ও ভবিষ্যতে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তোলার মানসিক শক্তি অর্জনের জন্য কিছু কাজের সুযোগ দেওয়া হয়। তবে তা শিশুশ্রমের পর্যায়ে পড়ে না। কারণ, সেসব কাজ শিশুরা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করে এবং তা হাড়ভাঙা খাটুনির কাজ নয়, যার কারণে শিশুর দেহ-মনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে না। দারিদ্র্যপীড়িত দেশে উচ্চশিক্ষিত কেউ চাকরির জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা চাওয়া হলে তারা অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে চাকরি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। উন্নত বিশ্বের মতো পড়ালেখার সঙ্গে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন ও স্বাবলম্বী হওয়ার রীতি না থাকাই এর অন্যতম কারণ।
তবে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্তদের ক্ষেত্রেই এসব বেশি দেখা যায়। দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা সংসারের প্রয়োজনে পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু করতে বাধ্য হয়, যা তাদের ভবিষ্যতে কিছু করার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার জায়গাটি পূরণ করতে সহায়তা করে। অন্যদিকে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানেরা অর্থবলে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে সমর্থ হওয়ার ফলে এবং কর্মক্ষেত্র হিসেবে পারিবারিক ব্যবসা-বাণিজ্য দেখভাল করার ফলে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চাকরির খোঁজ করতে হয় না। তবে এমন সংখ্যা খুব বেশি নয়। কর্মসংস্থান কঠিন হওয়া এসব দেশে কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া খুব জরুরি। সে ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিদ্যমান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন এক-দুটি কারিগরি পদ সৃষ্টি করে প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটানো যায় কি না, দেখা যেতে পারে। তাতে সফল হলে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরবর্তী পর্যায়ে বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। এর ফলে নিজ দেশে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে, দেশের বাইরে অন্যান্য দেশেও কর্মসংস্থান লাভ সহজ হবে। পৃথিবীর বহু দেশে প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকার কারণে বাইরে থেকে তাদের কর্মী জোগাড় করতে হয়। ফলে দেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পর্যাপ্ত কর্মী থাকলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা খুব জরুরি।
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট ও গবেষক। কুইন্স ভিলেজ, নিউইয়র্ক।
ফুল ভালোবাসে না পৃথিবীতে এমন প্রাণী বিরল। তবে এ ভালোবাসার পেছনে রয়েছে নানা তাৎপর্য। কেউ ভালোবাসে সৌন্দর্যের জন্য, কেউ সুগন্ধির জন্য আবার কেউ আহার বা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য। আহার হিসেবে মানুষ সরাসরি খুব কম ফুলই ব্যবহার করে, তবে ফুল থেকে জন্ম নেওয়া ফল মানুষের খাদ্য ও ব্যবহার্য তালিকার প্রধান অনুষঙ্গ। ফুল সাধারণত উদ্ভিদের উপরি অংশ অর্থাৎ কাণ্ডে প্রস্ফুটিত হয়। কোনো কোনো উদ্ভিদের ফল ফুল থেকে উৎপন্ন না হয়ে শিকড় থেকে জন্মায়। উদাহরণ হিসেবে আলু, মুলা, গাজর, শালগম, শালুক ইত্যাদি বহু রকমের খাবার উপযোগী ফলমুল রয়েছে। তবে এর সবগুলোর বংশবৃদ্ধি একই অঙ্গ থেকে বা একই প্রক্রিয়ায় হয় না। কোনো কোনোটির ফল শিকড়, কাণ্ড বা পাতা থেকেও হয়। বর্তমান যুগে কৃষিবিজ্ঞানের উন্নতির ফলে অনেক অবিশ্বাস্য রকমের পদ্ধতিতে উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধি ঘটানো হয়ে থাকে। আমাদের এ কথা জানা যে বিভিন্ন ফসলের পরাগায়ণ বিভিন্নভাবে হয়ে থাকে।
এর মধ্যে কিছু পোকামাকড়ের মাধ্যমে, কিছু বাতাস বা জলের ঢেউয়ের মাধ্যমেও হয়ে থাকে। তবে এটাই বিস্ময় যে পোকামাকড় তার খাদ্য সংগ্রহের জন্য ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায় আর তার মাধ্যমেই পরাগায়ণ হয়ে থাকে অর্থাৎ তাদের অজান্তেই প্রাপ্ত খাদ্যের বিনিময় হিসেবে পরাগায়ণের মতো অতিপ্রয়োজনীয় কাজটি তারা সম্পন্ন করে ফেলে অর্থাৎ এখানেই দেওয়া-নেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট, যা শিরোনামের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। প্রশ্ন হলো সৃষ্টির এই যে মহাযজ্ঞ নীরবে-নিভৃতে সংঘটিত হচ্ছে, যা নিয়ে আমরা খুব একটা মাথা ঘামাই না, প্রাকৃতিকভাবেই সব সংঘটিত হচ্ছে। তবে এই নিখুঁত পরিকল্পনার বিষয়টি কোনোভাবেই উপেক্ষিত হওয়ার নয়। আমাদের চিন্তার বাইরে থাকলেও যিনি এসবের নিয়ন্তা, তিনি ঠিকই যথাপূর্ব ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আমেরিকায় আসা মানুষদের প্রথম যে সমস্যা, তা হলো ভাষা। নিজ দেশে মাতৃভাষায় কথা বলা শিক্ষিত লোকদেরও এখানকার প্রচলিত কথাবার্তা সহজে অনুধাবন করা অনেকটা দুর্বোধ্য। তবে স্কুল-কলেজগামী বাচ্চাদের বিষয়টি আলাদা। তারা স্কুল-কলেজে অহরহ স্থানীয় ভাষায় কথা বলা ও পড়ালেখা করার কারণে কিছুদিনের মধ্যেই এখানকার ভাষা পুরোপুরি আয়ত্ত করে ফেলে। এমনকি মাতৃভাষা পারিবারিক পর্যায় ব্যতীত বাইরে না বলার কারণে মাতৃভাষায় জড়তা দেখা দেয়। বয়স্ক অনেকেই পরবর্তী প্রজন্মের মাতৃভাষা ভুলে যাওয়ার ব্যাপারে সন্দিহান। বাচ্চা বয়সে আসাদের মূলস্রোতের সঙ্গে মিশে যাওয়া এবং স্থানীয় ভাষায় পারদর্শী হয়ে শিক্ষাদীক্ষায় ব্যুৎপত্তি অর্জনের ফলে সহজেই তারা যোগ্যতানুসারে কর্মসংস্থান করতে সক্ষম। পক্ষান্তরে বয়স্কদের পূর্ব যোগ্যতা ও কাজের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও এখানকার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু প্রশিক্ষণ প্রয়োজন কিন্তু কোভিডের কারণে প্রায় দুই বছর সবকিছু অচল হয়ে পড়ায় অনেকের পক্ষেই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা সম্ভব না হওয়ায় এবং ওই দুই বছর নিয়োগও বন্ধ থাকায় তাদের তদানুরূপ কর্মসংস্থান সহজ না হওয়ায় অনেকেই অড জব করতে বাধ্য হন। তা সত্ত্বেও কর্মঠ হলে স্বল্প আয়ে মিলেমিশে সংসার পরিচালনা তেমন কঠিন নয়। দুনিয়ার সর্বত্রই অলস প্রকৃতির লোকদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্য ধরাছোঁয়ার বাইরে। যে কারণে এখানেও চরম দারিদ্র্যপীড়িত গৃহহীন লোকজনের দেখা পাওয়া যায়, যারা মূলত হোমলেস খ্যাত। তাদের কারণে সামাজিক অসামঞ্জস্য তৈরি হওয়ার ফলে শেল্টারে সরকারি তত্ত্বাবধানে থাকার নিশ্চয়তা থাকলেও সেখানে না থেকে অনিরাপদভাবে রাস্তাঘাটে থাকতেই তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
উন্নত দেশসমূহে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার মতো সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করা যতটা সহজ, অনুন্নত দেশসমূহের বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে মোটেই তেমনটি নয়। কারণ আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য ঐকান্তিক প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয়, বরং পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা অত্যন্ত সহায়ক শক্তি হিসেবে বিবেচ্য, যা উন্নত দেশসমূহে হাতের নাগালে। দারিদ্র্যের কারণে শিক্ষা গ্রহণ দূরে থাক, শুধু ভাত-কাপড় জোগাতেই শিশুশ্রম দিতে বাধ্য হওয়া শিশুদের সঙ্গে উন্নত বিশ্বের শিশুদের কোনোভাবেই তুলনা চলে না। সেখানেও পড়ালেখার পাশাপাশি শিশু বয়সেই অভিজ্ঞতা অর্জন ও ভবিষ্যতে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তোলার মানসিক শক্তি অর্জনের জন্য কিছু কাজের সুযোগ দেওয়া হয়। তবে তা শিশুশ্রমের পর্যায়ে পড়ে না। কারণ, সেসব কাজ শিশুরা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করে এবং তা হাড়ভাঙা খাটুনির কাজ নয়, যার কারণে শিশুর দেহ-মনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে না। দারিদ্র্যপীড়িত দেশে উচ্চশিক্ষিত কেউ চাকরির জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা চাওয়া হলে তারা অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে চাকরি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। উন্নত বিশ্বের মতো পড়ালেখার সঙ্গে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন ও স্বাবলম্বী হওয়ার রীতি না থাকাই এর অন্যতম কারণ।
তবে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্তদের ক্ষেত্রেই এসব বেশি দেখা যায়। দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা সংসারের প্রয়োজনে পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু করতে বাধ্য হয়, যা তাদের ভবিষ্যতে কিছু করার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার জায়গাটি পূরণ করতে সহায়তা করে। অন্যদিকে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানেরা অর্থবলে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে সমর্থ হওয়ার ফলে এবং কর্মক্ষেত্র হিসেবে পারিবারিক ব্যবসা-বাণিজ্য দেখভাল করার ফলে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চাকরির খোঁজ করতে হয় না। তবে এমন সংখ্যা খুব বেশি নয়। কর্মসংস্থান কঠিন হওয়া এসব দেশে কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া খুব জরুরি। সে ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিদ্যমান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন এক-দুটি কারিগরি পদ সৃষ্টি করে প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটানো যায় কি না, দেখা যেতে পারে। তাতে সফল হলে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরবর্তী পর্যায়ে বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। এর ফলে নিজ দেশে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে, দেশের বাইরে অন্যান্য দেশেও কর্মসংস্থান লাভ সহজ হবে। পৃথিবীর বহু দেশে প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকার কারণে বাইরে থেকে তাদের কর্মী জোগাড় করতে হয়। ফলে দেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পর্যাপ্ত কর্মী থাকলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা খুব জরুরি।
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট ও গবেষক। কুইন্স ভিলেজ, নিউইয়র্ক।