মেধাবী ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন ও জনগণের প্রত্যাশা 

প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:২৫ , অনলাইন ভার্সন
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দুয়ারে কড়া নাড়ছে। আওয়ামী সরকারের অধীনে নির্বাচন দেশ-বিদেশের কাছে নানাভাবে আলোচিত। একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন সবার কাম্য। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমান সময়ে উন্নয়ন ও ভোটাধিকার অনেকটাই সাংঘর্ষিক হয়ে উঠেছে। বিগত সময়ের নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না বলে যে আলোচনা হয়ে থাকে, তাকে মিথ্যা প্রমাণের দায়ভার এবার আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন পরীক্ষা। তবে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রার্থীদের সংখ্যা দেখে জনগণ শঙ্কিত। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রার্থীদের অবস্থা দেখে মনে হয়, সবাই আওয়ামী লীগ আর নেতা ঘরে ঘরে। অনেক এলাকার পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতি সত্যিই দৃষ্টিকটু। বাবার পরে ছেলে মনোনয়ন যদি পায়, তাহলে অন্য নেতাদের মূল্যায়ন কী করে হবে? গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারায় এ কথাটা বিবেচনা রাখা উচিত অন্য নেতাদের মূল্যায়ন করে। আবার কোথাও নৌকা প্রতীক নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের চেয়ে অন্য পেশার ব্যক্তিরা মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। এই ব্যক্তিদের রাজনৈতিক অবস্থানটা অনেকটাই আগাছার মতো। অন্যদিকে মহাজোটের নামে অন্য কয়েকটি দলও নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে আগ্রহী। এ থেকে বোঝা যায়, এ ধারার নির্বাচন নিয়ে জনগণ তেমনভাবে সরব হবে না। কারণ, শক্ত কোনো বিরোধী দল এখন পর্যন্ত মাঠে নেই।
বাঙালি জাতির চলমান জীবনে রাজনৈতিক আলোচনা একটি বিশেষ বিষয়। অথচ ইদানীংকালে শহর-গ্রামের মানুষের চায়ের টেবিলে সে আলোচনায় একটা স্তিমিত ভাব দেখা যায়। তাদের কাছে জীবন চালানোর চাহিদাগুলো মুখ্য বিষয়। যেই ক্ষমতায় আসুক, তা নিয়ে তারা ভাবে না। তারা চায় উন্নয়নের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ হোক নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য। সামাজিক নিরাপত্তার বলয়ে তাদের সন্তানদের নিশ্চিত জীবন কাম্য। আর জনগণের রাজনৈতিক অনীহার কারণে সব দলের আলোচনায় তুখোড় রাজনীতিবিদদের বক্তৃতার জায়গা দখল করে নিয়েছে দুর্নীতিবাজ নেতা নামধারী ব্যক্তিরা। এদের কারণে দেশের স্থানীয়, জাতীয় রাজনীতি নিয়ে হতাশার কালো ছায়া সরানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করে বাঙালি জাতি দেশটাকে পেয়েছে। সেই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশে তৈরি হয়েছে দেশপ্রেমী রাজনৈতিক নেতা। যারা মানুষকে লড়াই করার সাহস দিয়েছেন তাদের আদর্শ দিয়ে। কিন্তু স্বাধীনতার পরে সময়ের পরিবর্তনে মতের ভিন্নতায় নতুন দল সৃষ্টি হয়েছ নীতি ও আদর্শগত বৈষম্যের কারণে। তবে সব দলেই ছাত্ররাজনীতিসহ অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে বিজ্ঞ রাজনীতিবিদেরা দলে এসেছেন। তারা অনেকেই নিজেদের মেধা ও প্রজ্ঞার প্রতিফলন ঘটিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে হয়েছেন সমাদৃত।
পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতির বৈরী পরিবেশে সেসব নেতার ওপর নির্ভর করে দেশের জনগণ সরব ছিল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে। কেবল রাজনীতির চায়ের কাপে ঝড় তুলে নয়, বরং নিজেদের অধিকার আদায়ে নব্বইয়ের আন্দোলনের মাধ্যমে ফিরিয়ে এনেছে গণতন্ত্র। রাজনীতিকে ব্যবসার পুঁজি করার মানসিকতা তখন পর্যন্ত ছিল না। এমনকি ছাত্ররাজনীতি করে উচ্চাভিলাষী জীবনযাপন তখনো ছিল কল্পনাতীত।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, নব্বই-পরবর্তী দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের অনুপ্রবেশ ঘটে ভোটের রাজনীতির মধ্য দিয়ে। টাকা এবং ভোট রাজনীতির মূলধারাকে নষ্ট করে দেয় ক্রমশ। আর ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছাত্ররা ব্যবহৃত হয় অন্যদের ফায়দা হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে। একই সঙ্গে তারা আগামী সময়ে দেশের জনগণের নেতা হওয়ার উদ্দেশ্যকে মুখ্য বিষয় বলে মনে করে না। বরং টেন্ডারবাজি, তদবির আর প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। এতে করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে আসে। ছাত্ররাজনীতি হয়ে পড়ে মেধাশূন্য।
অন্যদিকে মাঠপর্যায়ের নেতাদের মূল্যায়ন হয় না ভোটের সময়। অর্থ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে দলের সমর্থন পাওয়া হয় সোনার হরিণের মতো। এ অবস্থায় এলাকার জনগণ দলকে সমর্থন দিতে গিয়ে বাধ্য হয় বসন্তের কোকিল ব্যক্তিকে ভোট দিতে। সংসদ সদস্য ও এলাকার জনগণের দূরত্বকে পুঁজি করে রাজনৈতিক দলের নামধারী ব্যক্তিরা।
দিনের পর দিন রাজনীতির এ হাল দেখে জনগণের মাঝে একধরনের হতাশা ও শঙ্কা কাজ করছে দেশের আগামী দিনের রাজনীতি নিয়ে। তার ওপর দুর্নীতি, রাজনীতির প্রহসন, ক্ষমতার অপব্যবহার দেখে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয় মানুষ। একজন রাজনৈতিক নেতা সবার আগে জনগণের বন্ধু। সেখানে বর্তমান সময়ের নেতাদের দাম্ভিকতার সুর ভিন্ন কথা বলে।
রাজনৈতিক দলগুলোর বর্ষীয়ান নেতারা বয়সের ভারে অনেকেই নতজানু। আবার যারা চলে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে, সে স্থানগুলো পূরণ করার মতো নেতা নেই কোনো দলে। দলমত, আদর্শগত বিভেদ দেশের রাজনীতিতে থাকবেই। কিন্তু সঠিক বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ যদি দলের মাঝে সৃষ্টি না হয়, তা কল্যাণকর হয় না কারও জন্য।
একটি দেশের উন্নয়ন তখনই পরিপূর্ণ হবে, যখন সে দেশ মেধা ও মননশীলতায় এগিয়ে যাবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন কেবল উন্নয়নের মানদণ্ড নয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের ছাত্রদের বারবার বলেছিলেন পড়ালেখায় মনোনিবেশ করতে। কারণ, তিনি জানতেন, সোনার বাংলা গড়তে হলে মেধাসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন রয়েছে, যারা তাদের মেধা আর প্রজ্ঞা দিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
অথচ আজ একুশ শতকের এ সময়ে বাঙালি জাতি আগামী দিনের রাজনৈতিক মেধা আর প্রজ্ঞা নিয়ে চিন্তিত। কারণ, তাদের সামনে প্রতিনিয়ত আসছে কেবল বিতর্কিত রাজনৈতিক নেতাকর্মীর নামÑসে হোক মূল দলের বা অঙ্গসংগঠনের। এসব কারণে দ্বাদশ নির্বাচনের মনোনয়নপ্রার্থীদের নাম-পরিচয় দেখে অনেক আসনে মানুষ ভোট নিয়ে নতুন কিছু আশা করে না। কারণ যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত হওয়ার গল্প এখন মেধাহীন রাজনৈতিক দলের নিত্যকার জীবনের চালচিত্র।
লেখক : কলামিস্ট
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078