সারা দিন রোদ। ঝলমল আলোয় পূর্ণ সবুজ-শ্যামল মাঠ-ঘাট। অপরূপ শোভায় ছড়ানো সবুজে আকীর্ণ বন-বনানী। নিটোল, নির্মেঘ আর নির্মল আকাশের নিচে সহজ-সরল প্রাণবন্ত জনপদ। সুপ্তালোকের কিরণাভায় পরিপূর্ণ কোলাহল। সূর্যের আভা ছড়ানো ঝলমল দিবাশেষে নির্মল বাতায়নের শান্ত-সন্ধ্যা। জ্যোৎস্নামাখা চাঁদের আলোয় মেতে থাকত সবাই। প্রশান্ত হয়ে উঠত সবার মন। মুক্ত বাতায়নে বেজে উঠত জীবনের গান। স্বাধীনতা ও মুক্তির গান। দীর্ঘ পথ শেষে কখনো বৃক্ষের ছায়ায় খুলে যেত স্বস্তি ও শান্তির দুয়ার। ক্লান্ত পথিক ওইসব দুয়ারে খুঁজে পেত প্রেম-নিঃসৃত ভালোবাসা।
স্বপ্নের বিপুল সম্ভারে অবুঝ বালকের চোখেও ভাসত সম্ভাবনার নতুন সূর্য। শরতের শান্ত বিকাল কিংবা হেমন্তের পরশ সন্ধ্যায় সকল অবসাদ কেটে গিয়ে সবার মাঝে নেমে আসত স্বস্তি ও সুখময়তার শান্তিধারা।
কিন্তু আজ? সেই পৃথিবী আছে। বর্ণময় চাকচিক্য আছে। কিন্তু আলো নেই। মানুষ আছে কিন্তু হৃদয় নেই। স্বস্তি, শান্তি ও প্রেম-ভালোবাসা উঠে গেছে মানুষের ভেতর থেকে। দীপ্তালোকের আলো ঝলমলে পৃথিবীটা কেন যেন ক্রমাগত অন্ধকারের দিকেই ধাবমান!
মানুষের ভেতরকার প্রেম ও ভালোবাসায় মরীচিকা পড়ে গেছে। শান্তির পরিবর্তে নেমে এসেছে চরম অশান্তি। স্বস্তির চেয়ে ভীষণ অস্বস্তি। কোমল মায়ার পরিবর্তে নিষ্ঠুরতা সর্বত্র ছেয়ে গেছে। পৃথিবী ও প্রকৃতিকে কলুষিত করার জন্য যুদ্ধবাজ দুষ্টচক্র এখন সবচেয়ে শক্তিশালী। আলোর বদলে ঘন আঁধারের কুণ্ড-কুয়ায় নিপতিত শান্তিকামী মানুষ। নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা ও নৃশংসতায় পৃথিবী ছেয়ে গেছে কালো ধোঁয়ায়।
মানুষের প্রতি অমানবিক নির্দয় আচরণ রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে শুরু করে সমাজের সর্বত্রই বিদ্যমান! একদিকে অবক্ষয়ী সমাজ, অন্যদিকে পৃথিবীর ক্ষমতাধর লোভী দুষ্ট শাসকের স্বৈরাচারী ব্যবস্থাই যেন প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রপুঞ্জের মূলনীতি! যার ফলে সর্বত্র সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হয়। মানুষ নির্মম, নৃশংসভাবে হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়। সর্বত্র নিরাপত্তাহীনতায় সাধারণ মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মরে।
প্রতিবছর কোনো না কোনো দেশে মানববিধ্বংসী যুদ্ধের ভয়াবহতায় পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারায়। যার ফলে অবুঝ পৃথিবীতে ছেয়ে গেছে ভয়, শঙ্কা এবং আতঙ্কজনক ঘোর অমানিশা! আসলে এই অমানিশা প্রকৃতির নিকট থেকে নয় (!), মানুষেরই সৃষ্টি, মানুষেরই কর্মের ফসল।
প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কলঙ্কিত ইতিহাসের কথা সবার জানা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যেদিন শুরু হয়, সেদিনের সন্ধ্যায় নিজ দপ্তরের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লর্ড গ্রে বলেছিলেন, ‘ইউরোপের সর্বত্র আলো নিভে যাচ্ছে। আমাদের জীবনে আর সেই আলো জ্বলবে না।’
কী ভয়ংকর, বীভৎস ছিল মানববিধ্বংসী সেই যুদ্ধ। সাধারণ সৈনিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের মৃত্যুযন্ত্রণা যে কতটা বীভৎস রূপ ধারণ করতে পারে (!), সেইসব মৃত্যু আর ধ্বংসযজ্ঞের কথা কস্মিনকালেও ভুলে যাওয়ার নয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাত্র ২০ বছরের মাথায় পৃথিবীতে বিশ্ব মোড়লিপনার দৌরাত্ম্যে আবারও সমগ্র বিশ্বে আরও একটি যুদ্ধের দাবানল জ্বলে উঠল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধটি ছিল আরও ভয়ংকর, বীভৎস আরও বিভীষিকাময়। তারকাযুদ্ধের মরণখেলা আর হত্যাযজ্ঞের উন্মাদনায় পৃথিবীর দুষ্ট ও দুরাচার রাষ্ট্রনায়কদের প্রতিহিংসাপরায়ণ শক্তির মহড়া তখন ঘৃণিতভাবে প্রদর্শিত হয়েছিল।
শুধু কি তা-ই? প্রতিবছর মানববিধ্বংসী যুদ্ধ ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই মানুষের অকালমৃত্যু হয়। যেদিকে তাকাই সব দিকেই মানবতার বিপর্যয়! প্রতিহিংসা ও পাশবিকতার চরম বিপর্যয়ে একে অপরকে অবৈধ মারণাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিহত করার উন্মাদনায় কত নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
তবে এতটুকু বলা যায়, শুধু হিটলারের মাধ্যমেই ৬০ লাখ নিরীহ ইহুদি (ইহুদিদের হিসাবমতে) করুণভাবে মারা গিয়েছিল। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে জাপানি সৈন্যদের যুদ্ধংদেহী সবক দেওয়ার জন্য ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট আমেরিকা কর্তৃক নিক্ষিপ্ত মানববিধ্বংসী পারমাণবিক বোমায় হিরোশিমা-নাগাসাকির ধ্বংসলীলার অবস্থা কী ভয়ংকর ও বীভৎস রূপ ধারণ করেছিল (?), তা সকলেই অবগত। তখনকার মানববিধ্বংসী ভয়ংকর বোমা হামলায় নিরপরাধ ও নিরীহ লাখো মানুষের করুণ মৃত্যু হয়েছিল, সেই বীভৎস দৃশ্যের বর্ণনা দেওয়া অসম্ভব। সেই মারণাস্ত্রের ভয়াবহতা এত তীব্র এবং এতই ভয়ংকর ছিল, যার শিকারে লাখ লাখ মানুষ বিকলাঙ্গ হয়েছিল এবং পর্যায়ক্রমে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছিল। সেই বোমা হামলার এত বছর পরও সেখানকার বিষাক্ত বোমার তেজস্ক্রিয়তা আজও বিদ্যমান। যার দূষিত বায়ুপ্রবাহের প্রতিক্রিয়ায় সেখানকার বিভিন্ন স্থানে এখনো বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম নিচ্ছে!
পরমাণু বোমার ক্ষতি সম্পর্কে সেই সময়কার আণবিক বোমা তৈরির উদ্ভাবক একজন বিজ্ঞানী হকচকিতভাবে নিজেদের আবিষ্কার নিয়ে আক্ষেপসূচক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘ক্রিমিনালদের হাতে কোনো কিছুই নিরাপদ নয়। ক্রিমিনালদের হাতে সেসব পড়লে মহাসর্বনাশ হয়ে যেতে পারে।’
আসলে তো তা-ই, যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং পৃথিবীর মানববিধ্বংসী সন্ত্রাসীরা রেডিয়াম ও কেমিক্যালের অপব্যবহার ঘটিয়ে অর্থাৎ রাসায়নিক পরমাণুর অপপ্রয়োগে পৃথিবীতে অনেক অঘটন ঘটাতে পারে।
তবে এটাও ঠিক, বিজ্ঞানের প্রতিটি আবিষ্কারেরই একটি ভালো-মন্দ দিক আছে। পরমাণুজনিত বিষাক্ত কেমিক্যাল কিংবা বারুদসহযোগে দেশলাইয়ের কাঠির মতো ছোট্ট পেনসিল সাইজের শক্তিশালী বোমা দ্বারা প্রাসাদোপম সর্বোচ্চ বিল্ডিংও যে উড়িয়ে দেওয়া যায়, তাও পৃথিবীতে ইতিপূর্বে প্রমাণিত হয়েছে। বিষাদময় ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সর্বোচ্চ ও সুদৃশ্য টুইন টাওয়ার ও তৎসংলগ্ন টাওয়ারসমূহ (মোট সাতটি টাওয়ার) সন্ত্রাসী হামলায় ধূলিসাৎ হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। যেখানে কয়েক হাজার নিরীহ মানুষের করুণ মৃত্যু হয়েছিল। সেই ভয়াবহ ঘটনার দৃশ্যের কথা মনে উঠলে এখনো গা শিউরে ওঠে।
বলছিলাম সন্ত্রাস ও মানববিধ্বংসী সেসব তাণ্ডবের ঘটনা পৃথিবী যেমন দেখেছে, তেমনি বর্তমানে তার চেয়েও ভয়ংকর মানববিধ্বংসী ঘটনার অবতারণা ঘটছে। ফ্যাসিজমের ধারক হিসেবে হিটলারের প্রকৃত প্রেতাত্মাদের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম ঘটে চলছে। পৃথিবীর নিকৃষ্টতম নিষ্ঠুর বর্বরতা ঘটানো হচ্ছে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনে। সেখানকার অসহায় নারী-শিশুসহ নিরীহ মানুষকে হত্যালীলার উন্মত্ত নেশায় মেতে উঠেছে হাল-আমলে ইসরায়েলের উগ্রবাদী শাসক। প্রতিদিন শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। পৃথিবী সকরুণভাবে তা দেখছে। বিশ্বের সমগ্র শান্তিকামী মানুষ ক্ষোভে, দুঃখে ফুঁসে উঠছে। সবাই একযোগে অবৈধ ইসরায়েলের আগ্রাসন ও যুদ্ধ বন্ধের জোর দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু প্রতিকার হচ্ছে না। বিশ্বমোড়লদের মাঝে কোনো দয়ার সঞ্চার ঘটছে না! জাতিসংঘের অধিবেশনগুলোতে যুদ্ধ বন্ধের দাবি উঠছে এবং উত্থাপিত প্রস্তাবসমূহ মোড়লদের ভেটোতে নিদারুণভাবে নাকচ হয়ে যাচ্ছে!
ঘটনার সব কুফল বিজ্ঞানের আবিষ্কারের অসৎ ব্যবহার। পৃথিবীকে আলোর পথ থেকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করার অপচেষ্টা। যে বিজ্ঞানের মাধ্যমে বিশ্ব উন্নত হয়েছে, মানুষ আলোর সভ্যতা ও আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছে; সেই বিজ্ঞানকেই দুষ্টরা মানব বিধ্বংসের কাজে ব্যবহার করে বিশ্বের পরিবেশকে অবলীলায় দূষিত ও কলুষিত করে দিচ্ছে।
এভাবেই পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ সন্ত্রাস ও অবৈধ দখলদারদের হাতে বন্দী। এ ছাড়া অনেক দেশেই অবৈধ আগ্রাসন এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বহাল। উত্তর কোরিয়া, মিয়ানমার, সিরিয়া, সৌদি আরবসহ অনেক রাষ্ট্রই তার নিকৃষ্টতম উদাহরণ। এসব দেশ ছাড়াও সৌদি সরকারের অমানবিক নির্মম আগ্রাসনে গরিব রাষ্ট্র ইয়েমেন তছনছ হয়ে গেছে! সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন নারী-শিশুসহ কয়েক লাখ নিরীহ মানুষ।
মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈরতান্ত্রিক দেশ ছাড়াও অবরুদ্ধ ফিলিস্তিন দেশটি ইসরায়েলি আগ্রাসনের একটি স্থায়ী বধ্যভূমি। ইসরায়েলের আগ্রাসনে একসময়কার স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রটি এখন একটি মৃত্যু উপত্যকা। অথচ এই ফিলিস্তিন ছিল সভ্যতার লীলাভূমি। যেখানে ইসরায়েলি দস্যুশাসকের হাতে প্রতিনিয়ত শুধু মানুষ মরে।
পারমাণবিক বোমা তথা বর্তমান সময়ের অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র বড় দেশগুলোর গুদামে মজুত আছে। আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, জার্মানি, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ বৃহৎ শক্তির হাতে অনেক আগে থেকেই পারমাণবিক বোমা রয়েছে। তেমনি ইসরায়েলের মতো (ক্ষ্দ্রু সীমায়িত) দখলি রাষ্ট্রের কাছেও পারমাণবিক বোমা এবং মারণাস্ত্র কারখানা আছে। ইরান, পাকিস্তান, ভারতের কাছেও মজুত রয়েছে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, অমুসলিম দেশ ছাড়াও কোনো কোনো আলখেল্লাধারী মুসলিম একনায়কতান্ত্রিক দেশ ইসরায়েল এবং উত্তর কোরিয়া থেকে পর্যাপ্ত মারণাস্ত্র কিনে নিজের দেশের স্বৈরতন্ত্রকে বিপজ্জনকভাবে আরও স্থায়ী ও গতিশীল করে তুলছে! এসব দেশের কেউ কেউ বাইরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুখে খই ফোটায় কিন্তু ভেতরে ভেতরে ভয়ংকর দুষ্টচারিতায় মানুষ হত্যার অনাচারবৃত্তি চালিয়ে যায়। যেমন ইসরায়েলের প্রধান অস্ত্র ক্রেতা বন্ধুরাষ্ট্র হলো মিসর ও সৌদি আরব।
আহ! পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রপুঞ্জের নিক্ষিপ্ত ভয়ংকর মারণাস্ত্রে অবলীলায় প্রাণ হারাচ্ছে গরিব দেশগুলোর নারী, শিশু ও সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া সমগ্র বিশ্বের সব রকম বর্বরতা ও নৃশংসতাকে হার মানিয়ে কয়েক বছর আগে মিয়ানমারে ঘটেছে মানবসভ্যতার সবচেয়ে বড় রকমের মানবিক বিপর্যয়! মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নির্মম শিকার সেখানকার নিরপরাধ রোহিঙ্গা জাতি। সবকিছুকে হার মানিয়ে ইসরায়েলি শাসকের নির্বিচার বোমা হামলা, বর্বরতায় ফিলিস্তিনে নারী-শিশুসহ হাজার হাজার নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। ফিলিস্তিনিদের সমস্ত দালান-কোঠা ও বাড়িগুলোকে ধূলিসাৎ করে দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে! গাজা উপত্যকাসহ সমগ্র ফিলিস্তিনে নিদারুণ মানবিক বিপর্যয় ঘটিয়ে, গণহত্যা চালিয়ে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং মানববিধ্বংসী যুদ্ধ বন্ধ করার জোরালো দাবি উঠেছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বের সকল মানবিক সংগঠন বিক্ষুব্ধ। সমগ্র পৃথিবীর সকল মানুষ যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে সোচ্চার। যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিশ্বের সকল দেশ, এমনকি খোদ ইসরায়েলের জনগণও বর্তমান ইসরায়েলি শাসক ও ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছেন।
স্বপ্ন-উচ্ছ্বাস আর সম্ভাবনা নিয়েই মানুষ বেঁচে থাকতে চায়। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী মানুষও তা চায়। তাদের এই চাওয়া এবং স্বাধীনতাসংগ্রাম ৭৫ বছর ধরেই চলছে। ফিলিস্তিনের অধিকারহারা, মুক্তিকামী মানুষের ন্যূনতম ও মৌলিক অধিকার হরণ করেছে ইসরায়েলি দস্যুরাষ্ট্র। তাদের নির্দয়, নিষ্ঠুর ও অমানবিক আগ্রাসনমূলক যুদ্ধ বন্ধ হোক। তা-ই হোক আজকের প্রত্যাশা।
এই সুন্দর পৃথিবী ও প্রকৃতি আবার আলোকিত হয়ে উঠুক। মানববিধ্বংসী যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে কেটে যাক নৈরাশ্যের ঘন অন্ধকার। সভ্যতার বর্ণচ্ছটায় প্রকৃতি ও মানবভুবন আবার দ্যুতিময় হোক, ধন্য হয়ে উঠুক।
আর সেই প্রত্যাশায়, ‘আলোর সন্ধানে সর্বদা আঁধারে কাঁদে মন।’
লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক
স্বপ্নের বিপুল সম্ভারে অবুঝ বালকের চোখেও ভাসত সম্ভাবনার নতুন সূর্য। শরতের শান্ত বিকাল কিংবা হেমন্তের পরশ সন্ধ্যায় সকল অবসাদ কেটে গিয়ে সবার মাঝে নেমে আসত স্বস্তি ও সুখময়তার শান্তিধারা।
কিন্তু আজ? সেই পৃথিবী আছে। বর্ণময় চাকচিক্য আছে। কিন্তু আলো নেই। মানুষ আছে কিন্তু হৃদয় নেই। স্বস্তি, শান্তি ও প্রেম-ভালোবাসা উঠে গেছে মানুষের ভেতর থেকে। দীপ্তালোকের আলো ঝলমলে পৃথিবীটা কেন যেন ক্রমাগত অন্ধকারের দিকেই ধাবমান!
মানুষের ভেতরকার প্রেম ও ভালোবাসায় মরীচিকা পড়ে গেছে। শান্তির পরিবর্তে নেমে এসেছে চরম অশান্তি। স্বস্তির চেয়ে ভীষণ অস্বস্তি। কোমল মায়ার পরিবর্তে নিষ্ঠুরতা সর্বত্র ছেয়ে গেছে। পৃথিবী ও প্রকৃতিকে কলুষিত করার জন্য যুদ্ধবাজ দুষ্টচক্র এখন সবচেয়ে শক্তিশালী। আলোর বদলে ঘন আঁধারের কুণ্ড-কুয়ায় নিপতিত শান্তিকামী মানুষ। নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা ও নৃশংসতায় পৃথিবী ছেয়ে গেছে কালো ধোঁয়ায়।
মানুষের প্রতি অমানবিক নির্দয় আচরণ রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে শুরু করে সমাজের সর্বত্রই বিদ্যমান! একদিকে অবক্ষয়ী সমাজ, অন্যদিকে পৃথিবীর ক্ষমতাধর লোভী দুষ্ট শাসকের স্বৈরাচারী ব্যবস্থাই যেন প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রপুঞ্জের মূলনীতি! যার ফলে সর্বত্র সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হয়। মানুষ নির্মম, নৃশংসভাবে হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়। সর্বত্র নিরাপত্তাহীনতায় সাধারণ মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মরে।
প্রতিবছর কোনো না কোনো দেশে মানববিধ্বংসী যুদ্ধের ভয়াবহতায় পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারায়। যার ফলে অবুঝ পৃথিবীতে ছেয়ে গেছে ভয়, শঙ্কা এবং আতঙ্কজনক ঘোর অমানিশা! আসলে এই অমানিশা প্রকৃতির নিকট থেকে নয় (!), মানুষেরই সৃষ্টি, মানুষেরই কর্মের ফসল।
প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কলঙ্কিত ইতিহাসের কথা সবার জানা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যেদিন শুরু হয়, সেদিনের সন্ধ্যায় নিজ দপ্তরের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লর্ড গ্রে বলেছিলেন, ‘ইউরোপের সর্বত্র আলো নিভে যাচ্ছে। আমাদের জীবনে আর সেই আলো জ্বলবে না।’
কী ভয়ংকর, বীভৎস ছিল মানববিধ্বংসী সেই যুদ্ধ। সাধারণ সৈনিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের মৃত্যুযন্ত্রণা যে কতটা বীভৎস রূপ ধারণ করতে পারে (!), সেইসব মৃত্যু আর ধ্বংসযজ্ঞের কথা কস্মিনকালেও ভুলে যাওয়ার নয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাত্র ২০ বছরের মাথায় পৃথিবীতে বিশ্ব মোড়লিপনার দৌরাত্ম্যে আবারও সমগ্র বিশ্বে আরও একটি যুদ্ধের দাবানল জ্বলে উঠল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধটি ছিল আরও ভয়ংকর, বীভৎস আরও বিভীষিকাময়। তারকাযুদ্ধের মরণখেলা আর হত্যাযজ্ঞের উন্মাদনায় পৃথিবীর দুষ্ট ও দুরাচার রাষ্ট্রনায়কদের প্রতিহিংসাপরায়ণ শক্তির মহড়া তখন ঘৃণিতভাবে প্রদর্শিত হয়েছিল।
শুধু কি তা-ই? প্রতিবছর মানববিধ্বংসী যুদ্ধ ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই মানুষের অকালমৃত্যু হয়। যেদিকে তাকাই সব দিকেই মানবতার বিপর্যয়! প্রতিহিংসা ও পাশবিকতার চরম বিপর্যয়ে একে অপরকে অবৈধ মারণাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিহত করার উন্মাদনায় কত নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
তবে এতটুকু বলা যায়, শুধু হিটলারের মাধ্যমেই ৬০ লাখ নিরীহ ইহুদি (ইহুদিদের হিসাবমতে) করুণভাবে মারা গিয়েছিল। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে জাপানি সৈন্যদের যুদ্ধংদেহী সবক দেওয়ার জন্য ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট আমেরিকা কর্তৃক নিক্ষিপ্ত মানববিধ্বংসী পারমাণবিক বোমায় হিরোশিমা-নাগাসাকির ধ্বংসলীলার অবস্থা কী ভয়ংকর ও বীভৎস রূপ ধারণ করেছিল (?), তা সকলেই অবগত। তখনকার মানববিধ্বংসী ভয়ংকর বোমা হামলায় নিরপরাধ ও নিরীহ লাখো মানুষের করুণ মৃত্যু হয়েছিল, সেই বীভৎস দৃশ্যের বর্ণনা দেওয়া অসম্ভব। সেই মারণাস্ত্রের ভয়াবহতা এত তীব্র এবং এতই ভয়ংকর ছিল, যার শিকারে লাখ লাখ মানুষ বিকলাঙ্গ হয়েছিল এবং পর্যায়ক্রমে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছিল। সেই বোমা হামলার এত বছর পরও সেখানকার বিষাক্ত বোমার তেজস্ক্রিয়তা আজও বিদ্যমান। যার দূষিত বায়ুপ্রবাহের প্রতিক্রিয়ায় সেখানকার বিভিন্ন স্থানে এখনো বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম নিচ্ছে!
পরমাণু বোমার ক্ষতি সম্পর্কে সেই সময়কার আণবিক বোমা তৈরির উদ্ভাবক একজন বিজ্ঞানী হকচকিতভাবে নিজেদের আবিষ্কার নিয়ে আক্ষেপসূচক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘ক্রিমিনালদের হাতে কোনো কিছুই নিরাপদ নয়। ক্রিমিনালদের হাতে সেসব পড়লে মহাসর্বনাশ হয়ে যেতে পারে।’
আসলে তো তা-ই, যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং পৃথিবীর মানববিধ্বংসী সন্ত্রাসীরা রেডিয়াম ও কেমিক্যালের অপব্যবহার ঘটিয়ে অর্থাৎ রাসায়নিক পরমাণুর অপপ্রয়োগে পৃথিবীতে অনেক অঘটন ঘটাতে পারে।
তবে এটাও ঠিক, বিজ্ঞানের প্রতিটি আবিষ্কারেরই একটি ভালো-মন্দ দিক আছে। পরমাণুজনিত বিষাক্ত কেমিক্যাল কিংবা বারুদসহযোগে দেশলাইয়ের কাঠির মতো ছোট্ট পেনসিল সাইজের শক্তিশালী বোমা দ্বারা প্রাসাদোপম সর্বোচ্চ বিল্ডিংও যে উড়িয়ে দেওয়া যায়, তাও পৃথিবীতে ইতিপূর্বে প্রমাণিত হয়েছে। বিষাদময় ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সর্বোচ্চ ও সুদৃশ্য টুইন টাওয়ার ও তৎসংলগ্ন টাওয়ারসমূহ (মোট সাতটি টাওয়ার) সন্ত্রাসী হামলায় ধূলিসাৎ হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। যেখানে কয়েক হাজার নিরীহ মানুষের করুণ মৃত্যু হয়েছিল। সেই ভয়াবহ ঘটনার দৃশ্যের কথা মনে উঠলে এখনো গা শিউরে ওঠে।
বলছিলাম সন্ত্রাস ও মানববিধ্বংসী সেসব তাণ্ডবের ঘটনা পৃথিবী যেমন দেখেছে, তেমনি বর্তমানে তার চেয়েও ভয়ংকর মানববিধ্বংসী ঘটনার অবতারণা ঘটছে। ফ্যাসিজমের ধারক হিসেবে হিটলারের প্রকৃত প্রেতাত্মাদের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম ঘটে চলছে। পৃথিবীর নিকৃষ্টতম নিষ্ঠুর বর্বরতা ঘটানো হচ্ছে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনে। সেখানকার অসহায় নারী-শিশুসহ নিরীহ মানুষকে হত্যালীলার উন্মত্ত নেশায় মেতে উঠেছে হাল-আমলে ইসরায়েলের উগ্রবাদী শাসক। প্রতিদিন শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। পৃথিবী সকরুণভাবে তা দেখছে। বিশ্বের সমগ্র শান্তিকামী মানুষ ক্ষোভে, দুঃখে ফুঁসে উঠছে। সবাই একযোগে অবৈধ ইসরায়েলের আগ্রাসন ও যুদ্ধ বন্ধের জোর দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু প্রতিকার হচ্ছে না। বিশ্বমোড়লদের মাঝে কোনো দয়ার সঞ্চার ঘটছে না! জাতিসংঘের অধিবেশনগুলোতে যুদ্ধ বন্ধের দাবি উঠছে এবং উত্থাপিত প্রস্তাবসমূহ মোড়লদের ভেটোতে নিদারুণভাবে নাকচ হয়ে যাচ্ছে!
ঘটনার সব কুফল বিজ্ঞানের আবিষ্কারের অসৎ ব্যবহার। পৃথিবীকে আলোর পথ থেকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করার অপচেষ্টা। যে বিজ্ঞানের মাধ্যমে বিশ্ব উন্নত হয়েছে, মানুষ আলোর সভ্যতা ও আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছে; সেই বিজ্ঞানকেই দুষ্টরা মানব বিধ্বংসের কাজে ব্যবহার করে বিশ্বের পরিবেশকে অবলীলায় দূষিত ও কলুষিত করে দিচ্ছে।
এভাবেই পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ সন্ত্রাস ও অবৈধ দখলদারদের হাতে বন্দী। এ ছাড়া অনেক দেশেই অবৈধ আগ্রাসন এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বহাল। উত্তর কোরিয়া, মিয়ানমার, সিরিয়া, সৌদি আরবসহ অনেক রাষ্ট্রই তার নিকৃষ্টতম উদাহরণ। এসব দেশ ছাড়াও সৌদি সরকারের অমানবিক নির্মম আগ্রাসনে গরিব রাষ্ট্র ইয়েমেন তছনছ হয়ে গেছে! সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন নারী-শিশুসহ কয়েক লাখ নিরীহ মানুষ।
মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈরতান্ত্রিক দেশ ছাড়াও অবরুদ্ধ ফিলিস্তিন দেশটি ইসরায়েলি আগ্রাসনের একটি স্থায়ী বধ্যভূমি। ইসরায়েলের আগ্রাসনে একসময়কার স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রটি এখন একটি মৃত্যু উপত্যকা। অথচ এই ফিলিস্তিন ছিল সভ্যতার লীলাভূমি। যেখানে ইসরায়েলি দস্যুশাসকের হাতে প্রতিনিয়ত শুধু মানুষ মরে।
পারমাণবিক বোমা তথা বর্তমান সময়ের অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র বড় দেশগুলোর গুদামে মজুত আছে। আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, জার্মানি, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ বৃহৎ শক্তির হাতে অনেক আগে থেকেই পারমাণবিক বোমা রয়েছে। তেমনি ইসরায়েলের মতো (ক্ষ্দ্রু সীমায়িত) দখলি রাষ্ট্রের কাছেও পারমাণবিক বোমা এবং মারণাস্ত্র কারখানা আছে। ইরান, পাকিস্তান, ভারতের কাছেও মজুত রয়েছে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, অমুসলিম দেশ ছাড়াও কোনো কোনো আলখেল্লাধারী মুসলিম একনায়কতান্ত্রিক দেশ ইসরায়েল এবং উত্তর কোরিয়া থেকে পর্যাপ্ত মারণাস্ত্র কিনে নিজের দেশের স্বৈরতন্ত্রকে বিপজ্জনকভাবে আরও স্থায়ী ও গতিশীল করে তুলছে! এসব দেশের কেউ কেউ বাইরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুখে খই ফোটায় কিন্তু ভেতরে ভেতরে ভয়ংকর দুষ্টচারিতায় মানুষ হত্যার অনাচারবৃত্তি চালিয়ে যায়। যেমন ইসরায়েলের প্রধান অস্ত্র ক্রেতা বন্ধুরাষ্ট্র হলো মিসর ও সৌদি আরব।
আহ! পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রপুঞ্জের নিক্ষিপ্ত ভয়ংকর মারণাস্ত্রে অবলীলায় প্রাণ হারাচ্ছে গরিব দেশগুলোর নারী, শিশু ও সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া সমগ্র বিশ্বের সব রকম বর্বরতা ও নৃশংসতাকে হার মানিয়ে কয়েক বছর আগে মিয়ানমারে ঘটেছে মানবসভ্যতার সবচেয়ে বড় রকমের মানবিক বিপর্যয়! মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নির্মম শিকার সেখানকার নিরপরাধ রোহিঙ্গা জাতি। সবকিছুকে হার মানিয়ে ইসরায়েলি শাসকের নির্বিচার বোমা হামলা, বর্বরতায় ফিলিস্তিনে নারী-শিশুসহ হাজার হাজার নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। ফিলিস্তিনিদের সমস্ত দালান-কোঠা ও বাড়িগুলোকে ধূলিসাৎ করে দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে! গাজা উপত্যকাসহ সমগ্র ফিলিস্তিনে নিদারুণ মানবিক বিপর্যয় ঘটিয়ে, গণহত্যা চালিয়ে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং মানববিধ্বংসী যুদ্ধ বন্ধ করার জোরালো দাবি উঠেছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বের সকল মানবিক সংগঠন বিক্ষুব্ধ। সমগ্র পৃথিবীর সকল মানুষ যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে সোচ্চার। যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিশ্বের সকল দেশ, এমনকি খোদ ইসরায়েলের জনগণও বর্তমান ইসরায়েলি শাসক ও ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছেন।
স্বপ্ন-উচ্ছ্বাস আর সম্ভাবনা নিয়েই মানুষ বেঁচে থাকতে চায়। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী মানুষও তা চায়। তাদের এই চাওয়া এবং স্বাধীনতাসংগ্রাম ৭৫ বছর ধরেই চলছে। ফিলিস্তিনের অধিকারহারা, মুক্তিকামী মানুষের ন্যূনতম ও মৌলিক অধিকার হরণ করেছে ইসরায়েলি দস্যুরাষ্ট্র। তাদের নির্দয়, নিষ্ঠুর ও অমানবিক আগ্রাসনমূলক যুদ্ধ বন্ধ হোক। তা-ই হোক আজকের প্রত্যাশা।
এই সুন্দর পৃথিবী ও প্রকৃতি আবার আলোকিত হয়ে উঠুক। মানববিধ্বংসী যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে কেটে যাক নৈরাশ্যের ঘন অন্ধকার। সভ্যতার বর্ণচ্ছটায় প্রকৃতি ও মানবভুবন আবার দ্যুতিময় হোক, ধন্য হয়ে উঠুক।
আর সেই প্রত্যাশায়, ‘আলোর সন্ধানে সর্বদা আঁধারে কাঁদে মন।’
লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক