চার শক্তির ফোঁসফাঁস ♥ হাস নীরব ♥ রুশ থাবায় ড. ইউনূস

ভোটের নয়া মডেলের টার্গেটে হাসিনা

প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১০:০৫ , অনলাইন ভার্সন
দেশের অর্থনীতি ও পোশাকশিল্পকে বাঁচাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই মন্তব্য করে আলোচনার নতুন খোরাক জুগিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। সেই সঙ্গে কোনো দেশ বা কারও নাম উল্লেখ না করে জানিয়েছেন, নির্বাচনে বিদেশি থাবা দেখতে পাচ্ছেন তিনি। এ বক্তব্যের উপলক্ষটি ছিল ২৭ নভেম্বর রাজধানীর  আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনে সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির সদস্যদের আইনবিধি ও কর্মপদ্ধতি-বিষয়ক প্রশিক্ষণের উদ্বোধন। সেদিন তার এ বক্তব্যের মিনিট চল্লিশেক পর শ্রীলঙ্কা থেকে ঢাকায় ফেরেন এখানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। বিমানবন্দরে তাকে ধরার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন সাংবাদিকেরা।
দিনটিতে মনোনয়ন নিয়ে কেওয়াজ চলছিল বনানীতে জাতীয় পার্টির অফিসে। সেখান থেকে দলটির কয়েক নেতা পিটার হাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন বলে আলোচনা আছে। ঢাকায় ফেরার দুই দিনেও কোথাও মুভ করেননি তিনি। সময় কাটাচ্ছেন বাসা আর অফিসে। পিটার হাস দমে গেছেন বলে মনে করছেন না রাজনীতি-কূটনীতির মানুষেরা। তার মুভমেন্ট না থাকলেও তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা স্পষ্ট। তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ডেস্ক যথারীতি কর্মতৎপর। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তো আছেই। পিটার হাস ঢাকা ফেরার আগের দিন হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের আগে প্রতিযোগিতা দূর করতে বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক ও সহিংস দমন-পীড়ন শুরু হয়েছে, প্রায় ১০ হাজার কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে সরকারকে।
যুক্তরাষ্ট্র বা পিটার হাসের প্রতি সরকারি মহলের বিরক্তি ওপেন সিক্রেট। সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নানা কারণে ড. ইউনূসকেও দেখেন চরম প্রতিপক্ষ হিসেবে। তাকে কোনো ছাড় বা স্বস্তি দিতে নারাজ সরকার। সে কারণে এই কঠিন পরিস্থিতিতেও তার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো চলছে দ্রুত গতিতে। নিয়মিত হাজিরায় কাহিল ড. ইউনূস। কিছুদিন আগ পর্যন্ত তার পক্ষে বিদেশি নানা শক্তির যে তৎপরতা ছিল, হালে তা আছে কি না স্পষ্ট নয়। তবে তার পক্ষে বিদেশি হিতাকাক্সক্ষীদের বিবৃতি নেই। এ রকম সময়ে চমক ড. ইউনূসকে নিয়ে। মস্কোর ফাইন্যান্সিয়াল ইউনিভার্সিটি তাদের উপদেষ্টা বোর্ডের সভাপতি করেছে তাকে। কীভাবে, কোন সমীকরণে হলো এটি। তাকে মনে করা হয় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের একান্ত প্রোডাক্ট। সেই ইউনূসকেই উপদেষ্টা সভাপতি করেছে মস্কোর ফাইন্যান্সিয়াল ইউনিভার্সিটি। রাশিয়ার শীর্ষসেরা এ বিশ্ববিদ্যালয়টির অ্যাকাডেমিক স্টাফই তিন হাজার। গত বছর অধ্যাপক ইউনূস এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে সেখানে বক্তব্য দেন।
সবকিছুতে এমন তালগোলের মাঝে বাংলাদেশ এবং আশপাশের অঞ্চলে পরাশক্তি দেশগুলোর দ্বন্দ্ব রূপ নিচ্ছে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মিÑপিএলএ চীন-মিয়ানমার সীমান্তে মহড়া দিয়েছে। একে ‘জরুরি পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। ঘটনাটিকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে বিদ্রোহীদের হামলা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এটি এমন সময় প্রকাশ্যে এল, যখন চীন নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চীনের প্রতিনিধি মিয়ানমারের রাজধানীতে শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সীমান্তে স্থিতিশীলতা আনার বিষয়ে আলোচনা করেন। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির পাঁচ বাহিনীর অন্যতম, দ্য সাউদার্ন থিয়েটার কমান্ড উইচ্যাট ক্ষুদে বার্তা অ্যাপে জানিয়েছে, এই প্রশিক্ষণের লক্ষ্য হলো ‘বাহিনীর সেনাদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া, সীমান্ত অবরুদ্ধ করা ও সরাসরি হামলা চালানোর সক্ষমতা যাচাই করা’।
২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর সবচেয়ে বড় সমন্বিত, সশস্ত্র প্রতিরোধের মোকাবিলা করছে এখন। ২৪ নভেম্বর মিউস শহরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এমন সময় ঘটল, যখন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটির উত্তর-পূর্ব ও অন্যান্য অংশে বেশ কয়েকটি শহর ও সামরিক চৌকির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। সেখানে চলছে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া নজরদারি, যা থেকে বাংলাদেশও নিরাপদ নয়। অশান্ত মিয়ানমারের ভাগ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ নিজেকে আরও আগেই জড়িয়ে ফেলেছে মানবতার খাতিরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও নির্বাচন বিষয়ে রাশিয়াও আগ বাড়িয়ে মেখে নিয়েছে নিজেদের। পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে। তা আবার তারা রাশিয়ার বাংলাদেশস্থ দূতাবাসের ফেসবুকে পোস্ট দিয়েও জানিয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, অক্টোবরের শেষে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সরকারবিরোধী সমাবেশ আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে স্থানীয় বিরোধী দলের একজন সদস্যের সঙ্গে দেখা করেন।
এ ধরনের কর্ম অভ্যন্তরীণ বিষয়ে স্থূল হস্তক্ষেপের চেয়ে কম কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র এর কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন সামনে রেখে বিশ্বের চার সুপারপাওয়ার ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার এমন কর্মযজ্ঞের মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগোচ্ছেন তার গতিতে। নিজের পরাজয় নিজে নিশ্চিত করে বা হেরে গিয়ে ভোটের নিরপেক্ষতা প্রমাণের অবস্থা তার নেই। তবে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক-উৎসবমুখর করার চেষ্টায় কমতিও করছেন না। ভোটের মাঠে স্বতন্ত্রসহ ডামি প্রার্থী দেওয়ার মূল রহস্য এখানেই। তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারে নিশ্চিত দল, সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী নিজে। এর মধ্য দিয়ে বিনা ভোটের চৌদ্দ নয়, অথবা রাতের ভোটের আঠারোও নয়; চব্বিশে নতুন মডেলের নির্বাচনের কিছু কথা বেশ চাউর, যা বিএনপি বা কিছু দল নির্বাচনে না এলেও হতে পারে। এবার রাতে নয়, দিনে ভোটের ওয়াদা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ‘অস্ত্রে নয়, রাতের অন্ধকারে নয়, ভোটেই সরকার গঠন হবে’ মন্তব্য। এটিও শুধু মন্তব্য নয়, ওয়াদাও।
এ ছাড়া বাংলাদেশের নির্বাচন স্থানিক হলেও আন্তর্জাতিক বিষয়-আশয় যোগ হয়ে গেছে। তাই এ নির্বাচনে কোন দল বা জোট কী চায়Ñএর চেয়ে কোন দেশ কী চায়, সেই জিজ্ঞাসা আর রাখঢাকের মধ্যে নেই। কোন দেশ কোন দিকে, তা দলে দলে আলোচিত। পথে-ঘাটে-মাঠেও উচ্চারিত। নির্বাচনের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে সাত-আটটি মানদণ্ড বেশ আলোচিত। দেশভেদে তা আপেক্ষিক। তবে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ার কিছু কমন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রয়েছে। সুষ্ঠু-নিরপেক্ষতার সঙ্গে বেশি করে উচ্চারিত অংশগ্রহণমূলক-প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে দল নয়, ভোটার ও প্রার্থীর অংশগ্রহণে একে প্রতিদ্বন্দ্বিতার শর্ত পূরণের নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এতে কামিয়াবি হয়ে নতুন মডেলের একটি নির্বাচন তুলে আনার ব্যাপক আশা প্রধানমন্ত্রীসহ তার থিঙ্কট্যাঙ্কের। ২০১৪-১৮ সালের মতো ভোটকাণ্ড এবার সম্ভব হবে না বলে ধারণা এ নির্বাচনে অংশ নেওয়া অন্যান্য দলেরও। ধারণাটা তাদের অনেকের কাছে বিশ্বাসের পর্যায়ে। নির্বাচনে যতদূর সম্ভব লেজিটিমেসি আনা প্রধানমন্ত্রীসহ তার আশপাশেরও সিদ্ধান্ত। বাকিটা পরিস্থিতি ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারা না পারার ওপর।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041