যে তিন উপায়ে প্রযুক্তির নেতৃত্বে পৌঁছাতে চায় জার্মানি

প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৫৯ , অনলাইন ভার্সন
প্রযুক্তির দখল নিতে বিশ্বব্যাপী যে লড়াই চলছে, তাতে অংশ নিতে প্রস্তুত জার্মানিও। তবে এই লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে জার্মানিকে পরিবর্তনের গতি বাড়াতে হবে। জার্মানির ইয়েনা শহরে দুই দিনের ডিজিটাল নীতি সম্মেলনে একত্রিত হয়েছিল আইন প্রণেতা, শিল্পখাতের নেতা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। সেখানে নিজের বক্তব্যে এই বার্তা তুলে ধরেন চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস। শলৎস বলেন, আমাদের প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করতে হবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-এর মতো উদীয়মান প্রযুক্তিগুলো বিশ্বকে বদলে দিচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে উদ্ভাবন এবং প্রকৌশল দক্ষতার কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত জার্মানি এখন বিশ্বের নানা প্রান্তের প্রতিযোগীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে লড়াই করছে ৷ দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি, আমলাতান্ত্রিক বাধা এবং তুলনামূলকভাবে কম বিনিয়োগের ফলে ইউরোপের বৃহত্তম এই অর্থনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মতো শক্তিশালী প্রতিযোগীদের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে।

কিন্তু এই পরিস্থিতির বদল ঘটাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বার্লিন। শলৎসের বক্তব্য অনুসারে, সবকিছু এগিয়ে যাচ্ছে।

১.তথ্যের সরবরাহ : প্রযুক্তির নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সরবরাহ। অনেক আধুনিক প্রযুক্তিই, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে নির্ভর করতে হয় বিপুল পরিমাণ তথ্যের ওপর।

এটি জার্মানির প্রতিষ্ঠান এবং গবেষকদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। গোপনীয়তা নিয়ে নিজেদের কঠোর নিয়মের জন্য পরিচিত। ১৯৭০ সালে বিশ্বের প্রথম তথ্য সুরক্ষা আইন পাস হয়েছিল এই দেশটিতে ৷

গোপনীয়তাকে হুমকিতে না ফেলেই কিভাবে তথ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়, এ নিয়ে চলছে নানা পরীক্ষা। বার্লিন নানা উদ্যোগ নিয়েছে। মারিস্পেস-এক্স নামের এমন এক উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্বের মহাসাগর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ এবং তা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য জার্মান প্রতিষ্ঠান এবং গবেষণা সংস্থাগুলো যৌথ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

দেশটিতে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জাতীয় তথ্য ইনস্টিটিউট। এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য হচ্ছে জ্বালানি খরচ থেকে শুরু করে কোভিড-এর প্রভাব পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের নানা গবেষণা তথ্য আদান-প্রদান করার করা হয় ।

কিন্তু জার্মানির অলাভজনক প্রতিষ্ঠান উইকিমিডিয়ার নীতি ও সরকারি খাতের উপদেষ্টা আলিনে ব্লাঙ্ক্যার্ৎস মনে করেন এই প্রকল্পগুলো গ্রহণ করার এক বছর পরও আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি।

ডয়চে ভেলেকে ব্লাঙ্ক্যার্ৎস বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দায়িত্ব ভাগাভাগি এবং আইনি সমস্যাগুলোর প্রশ্নে এসে এই কাজ আটকে যায়, এগুলোর সমাধানের অনেক সময় লাগে।’

২.এআই-এর ভয়ঙ্কর রূপ : গোপনীয়তা রক্ষায় নিজেদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেই প্রযুক্তিকে প্রতিযোগিতামূলক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায় জার্মানি৷

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি ‘নৈতিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ তৈরির পথে নেতৃত্ব দিতে চায় জার্মানি। মান এবং নৈতিকতার নীতিগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে চায় দেশটি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। এমন পরিস্থিতিতে জার্মানির নৈতিক এআই নতুন পথ দেখাতে পারে বলে মনে করে জার্মানি।

বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণ নীতি চূড়ান্ত করার পথে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। জার্মান অর্থনীতি মন্ত্রী রবার্ট হাবেক অবশ্য সতর্ক করে দিয়েছেন 'অতিনিয়ন্ত্রণ' উদ্ভাবনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

গ্রিন পার্টির এই সদস্য এক প্যানেল আলোচনায় বলেন, ‘আমাদের নিশ্চিত করতে হবে আমরা যাতে নির্দিষ্ট প্রয়োগকে নিয়ন্ত্রণ করি এবং প্রযুক্তিকে নয়।’

বার্লিন ভিত্তিক এআই স্টার্টআপ মেরান্টিক্স মোমেন্টামের সিইও নিকোল ব্যুটনারও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে একমত।

ডিডব্লিউকে তিনি বলেন, আমরা কোনো নিয়মের বিরুদ্ধে নই, আমরা কিছু নিয়ন্ত্রণ চাই। তবে তার আগে আমাদের প্রযুক্তির বিকাশ ও উন্নয়ন হতে দিতে হবে। যদি আমরা এখনই অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ করি তাহলে প্রযুক্তিটি এখানে একেবারেই বিকশিত হবে না।

৩.প্রযুক্তি প্রতিভা খুঁজতে হবে : উদ্যোক্তাদের মূলধন বৃদ্ধি হয়েছে। ফলে নতুন স্টার্টআপগুলোর জন্য গত কয়েক বছর আগের তুলনায় অর্থ সংগ্রহ সহজ হয়েছে। কিন্তু এসব স্টার্ট আপ খালি পদ পূরণের জন্য সঠিক ব্যক্তি খুঁজে পাচ্ছে না। ২০২২ সালের শেষে ডিজিটাল শিল্প সমিতি বিটকম এই খাতে প্রায় এক লাখ ৩৭ হাজার তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের ঘাটতির বিষয়ে সতর্ক করেছিল। বিটকম বোর্ডের সদস্য রাল্ফ ভিন্টারগের্স্ট এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

উদ্যোক্তা নিকোল ব্যুটনার মনে করেন, ‘সমস্যাটি বাস্তব। যেসব স্টার্ট আপ বড় হতে চায় এবং যেসব প্রতিষ্ঠান মাঝারি আকারের, তাদের কর্মী প্রয়োজন।’

কিছু জার্মান তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ঘানার মতো বিভিন্ন দেশে কাজ আউটসোর্স করার পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু ব্যুটনার মনে করেন, এটি সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নয়। বিদেশ থেকে প্রযুক্তি প্রতিভাবানদের আকৃষ্ট করতে হবে এবং আমলাতান্ত্রিক বাধায় জর্জরিত ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াকে সহজ করার পরামর্শ তার।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থেকে দক্ষ কর্মীদের আনতে নানা বাধা কমাতে এই বছরের শুরুতে দক্ষ অভিবাসন আইন সংশোধন করেছে জার্মানি।

ইয়েনা শহরের সম্মেলনে চ্যান্সেলর শলৎস বলেছেন, আমাদের কাছে এখন বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক অভিবাসন আইন রয়েছে, যা অন্য যেকোনো দেশের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।

তিনি বলেন, "বিশ্বের কোথাও আপনি শ্রমিক বা গবেষক হিসাবে প্রয়োজন এমন লোকদের জন্য এর চেয়ে ভাল অভিবাসন পরিস্থিতি খুঁজে পাবেন না।" সূত্র : ডয়চে ভেলে


ঠিকানা/এম
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041