আমেরিকার রাজনীতির গতি নির্ধারণ ও রূপায়ণে ক্রিশ্চিয়ানিটির প্রভাব 

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১৫:৪৫ , অনলাইন ভার্সন
মুহম্মদ শামসুল হক


উনিশ শতকের শেষ পাদ এবং বিশ শতকের সূচনাপর্বে সমগ্র আমেরিকায় শিল্পবিপ্লবের হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। শিল্প-কারখানার দ্রুত বিস্তারের ফলে আমেরিকানদের চিরায়ত সংস্কৃতি, জীবনাচরণ এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিতে বড় ধরনের চিড় ধরল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অশ্লীল জীবনাচরণ ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এবং ব্যবসায়িক স্বার্থসিদ্ধির বৃহত্তর খাতিরে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা দ্য সোশ্যাল গসপেল মুভমেন্ট বা ধর্মশাস্ত্রের নামে দুর্বার সামাজিক আন্দোলন শুরু করেছিল উনিশ শতকের শেষের দিকে দ্বিতীয় দশকে। ধর্মের দোহাই দিয়ে আন্দোলন সূচিত হলেও মূলত আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ও নেতৃস্থানীয় খ্রিষ্টানরা ধর্মের চেয়ে আর্থিক ফায়দা লোটাকে প্রাধান্য দিয়েছিল এবং শ্রমিক শোষণের মাধ্যমে রাতারাতি বিত্ত-বৈভবের পাহাড় গড়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হলো। তৎকালীন ওয়েল ম্যাগনেট (তেল কম্পাস) জন ডি রকফেলারের মতো রবার বারণসরা (রবার-দস্যু; বারণ-ব্রিটেনের ভূম্যধিকারীদের সর্বনিম্ন খেতাবধারী ব্যক্তি) শ্রমিক শোষণসহ সব ধরনের অনৈতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে রাশি রাশি অর্থকড়ির মালিক বা রীতিমতো ধনকুবের বনে গেল।

উল্লেখ্য, রাতারাতি বড় লোক হওয়াদের অন্যতম জন ডি রকফেলারের অর্থবিত্তের পাহাড় এতই গগনচুম্বী হয়ে উঠেছিল যে একদা জনৈক সাংবাদিক ওয়েল ম্যাগনেটকে প্রশ্ন করেছিলেন, আপনার আর কত অর্থের প্রয়োজন। উত্তরে রকফেলার বলেছিলেন, আর কিঞ্চিৎ হলেই চলবে। ধর্মের সাধুবাদের আড়ালে শ্বেতাঙ্গ লুটেরাদের বেপরোয়া মুনাফা লাভের প্রবণতায় ন্যায্য মজুরিবঞ্চিত শ্রমিকেরা ভেতরে ভেতরে বিক্ষুব্ধ হতে লাগল। শ্রুতিকটু শোনালেও বস্তুত অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সংস্কারের নামে দ্য সোশ্যাল গসপেল আন্দোলনের খোলসে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা ধর্মকে স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল। গসপেল আন্দোলনকারী খ্রিষ্টানদের মূল বার্তা ছিল বস্তি থেকে জনগণকে রক্ষা করা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। 

কিন্তু শাক দিয়ে বেশি দিন মাছ ঢেকে রাখা গেল না। একপর্যায়ে শোষিত-বঞ্চিত ও সর্বহারা শ্রমিক গোষ্ঠীও সোশ্যাল গসপেল আন্দোলনকারীদের দুরভিসন্ধি হাড়ে হাড়ে টের পেল এবং নিজেরাও তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে দিল। অগত্যা সোশ্যাল গসপেল আন্দোলনকারী খ্রিষ্টান নেতৃবর্গ শ্রমিকদের আট ঘণ্টার কর্মদিবসের দাবিকে স্বীকৃতি দিল, করপোরেট একনায়কত্বের মূলোচ্ছেদ হলো এবং আমেরিকার শ্রমবাজার থেকে শিশুশ্রম বিলুপ্ত হলো। আবার সোশ্যাল গসপেল মুভমেন্টে নেতৃত্বদানকারী খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা আমেরিকাজুড়ে বক্তৃতা মঞ্চ থেকে বক্তৃতা দিতেন, বক্তৃতা দেওয়ার নামে সারা দেশ চষে বেড়াতেন এবং সর্বাপেক্ষা বেশি বিক্রি হওয়া বই-পুস্তক লিখে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ উপার্জন করতেন। তা ছাড়া ব্যক্তিস্বার্থে তারা যিশু, যিশুর উপকরণ এবং বাণীকেও বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করেছিলেন এবং ব্যাপক বাজারজাতকরণের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা হাসিল করলেন।

উদাহরণস্বরূপ, ধর্মের নামে যিশুর নাম সংবলিত ডডঔউ (WWJD (What Would Jesus Do? bracelets বা যিশু কী করে ব্র্যাসলেটসকে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করেছিলেন এবং সাধারণ ধর্মাবলম্বীদের অন্তরের গভীরে ওই ব্র্যাসলেট পরিধানের তাৎপর্যমণ্ডিত প্রবণতা সৃষ্টি করেছিলেন। ফলে সমগ্র আমেরিকায় ওই ব্র্যাসলেট কেনাবেচার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। অথচ WWJD ছিল রেভারেন্ড চার্লস শেলডন নামক সোশ্যাল গসপেল নেতার লিখিত ‘ইন হিজ স্টেপস : হোয়াট উড জেসাস ডু’ শীর্ষক জনপ্রিয় উপন্যাসের ১৮৯৭ সালের স্লোগান।

যাহোক, উনিশ থেকে একুশ শতক পর্যন্ত বিগত ২০০ বছরে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য পরিবর্তনের প্লাবন বয়ে গেছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান, রাজনীতি-সমাজনীতি, মানুষের চিন্তা-চেতনা, রুচিবোধ-জীবনাচরণ সর্বত্র যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বিশেষত, বিজ্ঞানের নিত্য-নতুন আবিষ্কার মানুষের আবেগ-অনুভূতি ও ধর্মীয় বিশ্বাসে আমূল পরিবর্তন আনয়ন করেছে। একুশ শতক আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাহেন্দ্রক্ষণ। গোটা দুনিয়াকে নিয়ে এখন গ্লোবাল পৃথিবী। উনিশ শতকের নিরিখে একুশ শতকের শিল্প-কারখানা সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ধর্মঘটের আলোচনা অনেকের দৃষ্টিতে বেমানান মনে হলেও বাস্তবতা অনস্বীকার্য বিধায় মূল প্রসঙ্গে নিম্নে আলোকপাত করা হলো :

জেনারেল মোটরস,  ফোর্ড মোটর কোম্পানি এবং  ক্রিসলারের মালিকানাধীন স্টেলানটিস-বৃহৎ তিনটি অটোমেকারের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ধর্মঘট পরিচালনার মাধ্যমে সম্প্রতি ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্সের প্রেসিডেন্ট শাওন ফেইন ব্যতিক্রমধর্মী সাফল্য অর্জন করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। হাই স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন মধ্যম বয়সী ফেইন ধর্মঘট আহ্বানের পূর্ব মুহূর্তে অটো শ্রমিকদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আমাদের ছাপোষা শ্রমিক-সদস্যরা প্রতিদিন নিকেল বা ডাইম আয় করেন। পক্ষান্তরে অটো বা যানবাহন প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসাররা বছরে এক ট্রিলিয়ন ডলারের এক-চতুর্থাংশ মুনাফা অর্জন করেন। অথচ জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে ও ন্যায্য মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘট আহ্বান করা হলে কোম্পানিগুলোর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসারদের পক্ষ থেকে আমাদের হিমালয়তুল্য বাধার সম্মুখীন হতে হবে। তারপর সাথে সর্বদা দাদিমার বাইবেল বহনকারী খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী ফেইন ব্যক্তিগত ধর্মীয় বিশ্বাসের কথা বলতে শুরু করেন। ম্যাথৌর (১৭:২০-২১) উদ্ধৃতি দিয়ে ফেইন বলেন, যিশু তাঁর শিষ্যদের উদ্দেশে বলেন, যদি (জগদীশ্বরে তাঁর অনুসারীদের) সরিষার কণিকাতুল্য সামান্যতম বিশ্বাসও থাকে, তবে তারা পাহাড় অপসারণ বা চুরমার করতে সক্ষম হবে। কারণ (ঈশ্বরে অস্তিত্বে বিশ্বাসীদের বেলায়) কোনো কিছুই অসম্ভব হবে না। এরপর ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্সের সদস্যদের উদ্দেশে ফেইন বলেন, অটো প্রস্তুতকারীদের সুসংগঠিত এবং দুঃসাহসী চাহিদাগুলো তৈরি হয়েছিল মূলত পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার ভিত্তিতে। অতঃপর শ্রমিকদের উদ্দেশে ফেইন বলেন, কাম বা নির্মল হিসাব-নিকাশ থেকে বিশ্বাসের মহান কর্মকাণ্ড নেহাত কমই জন্মায়। ধর্মীয় অলৌকিকত্ব প্রসঙ্গে ফেইন বলেন, মুসার নিজস্ব স্টাফকে লোহিত সাগরের কিনারায় উত্তোলনের ক্ষেত্রে সাধারণ ভেদ-বুদ্ধি বা যুুক্তি-তর্ক খাটে না। 

প্রাতঃস্মরণীয় মহাপুরুষ পলের আইনকে পরাহত করা এবং আশীর্বাদকে আলিঙ্গন করার ঘটনাবলিও সর্বসাধারণের বিচার-বুদ্ধির আওতায় পড়ে না। ফেইন আরও বলেন, এটি কারাগার থেকে পিটারের মুক্তির জন্য কনফিডেন্ট কমিটির জেরুজালেমের একটি ক্ষুদ্র কক্ষে প্রার্থনার মতো অলৌকিক ঘটনাও নয়। বস্তুত, এটি ছিল অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য একদল বিশ্বাসীর একটি ভয়াবহ এবং অসাধ্য সাধনের চরম হঠকারী প্রচেষ্টার নামান্তর। ফেইনের অটল সংকল্প এবং অনড় বিশ্বাসের কাছে তিনটি করপোরেট পর্বত ধরাশায়ী হলো। ধর্মঘটের ছয় সপ্তাহ ফেইনের অনলবর্ষী ভাষণ ও বক্তব্য প্রচারণার পর জেনারেল মোটরস, ফোর্ড মোটর কোম্পানি এবং ক্রিসলার মালিকানাধীন স্টেলারটিস ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্সের সঙ্গে  কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ মজুরি বৃদ্ধির ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পাদন করল। ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্স সদস্যদের অনুমোদন সাপেক্ষে এই বিজয় যুক্তরাষ্ট্রে শুধু সাহসী শ্রমিক আন্দোলনকে নব শক্তি প্রদান করেনি, বরং আমেরিকায় ‘দ্য সোশ্যাল গসপেল মুভমেন্ট’ শীর্ষক অন্য আন্দোলনকে পুনরভ্যুত্থিত করেছে। ফেইনের নৈতিক বক্তৃতা বা ধর্মোপদেশ এবং অনলবর্ষী ভাষণ ছিল নিঃসন্দেহে তাৎপর্যমণ্ডিত ও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রথাগতভাবে শ্রমিক নেতারা সাধারণত কোনো ধর্মঘটের যৌক্তিকতা উপস্থাপনকালে বাইবেলের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য ও উপদেশাবলি এমনতর গুরুত্বসহকারে ও বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন না। সোশ্যাল গসপেল প্লেবুকের বাইরে ধর্মঘটের সঙ্গে ধর্মশাস্ত্রের সংমিশ্রণ এবং অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক ফেইনের নিখুঁত বর্ণনায় সুস্পষ্ট ভাষায় বাক্সময় হয়ে উঠেছে।

দ্য সোশ্যাল গসপেল আন্দোলন ফিরে আসছে কিংবা অনেকের যুক্তিতে সোশ্যাল গসপেল আন্দোলন কখনো বিদায় নেয়নিÑখ্রিষ্টধর্মের এই সুমহান ঘোষণাটি সাধারণ ধর্মবিশ্বাসীদের নিকট চরমভাবে উপেক্ষিত এবং সিংহভাগ অনুসারীরই দৃষ্টি ও বোধের অগম্য। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের এই অজ্ঞতা কিংবা সজ্ঞান উপেক্ষার প্রতি ফেইন অগ্নিবাণীর  চাবুকাঘাত হেনেছেন। ধর্মের ব্যাপারে আলোচনা করতে হলে শ্বেতাঙ্গ খ্রিষ্টান জাতীয়তাবাদী কাহিনিগুলো বর্তমানে সর্বাধিক সংখ্যক মিডিয়ার দৃষ্টি কেড়েছে। কিন্তু বহুসংখ্যক পণ্ডিত এবং ধর্মীয় নেতার মতে, আমাদের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ ও রূপায়ণে ভিন্ন একধরনের ক্রিশ্চিয়ানিটি প্রভাব ফেলছে, যা হোয়াইনেস (শুভ্রতা) এবং ন্যাশনালিজমের থেকে ভিন্ন। ফেইনের বর্ণনা অনুসারে, এদের মধ্যে রয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর রাফেল ওয়ারনক, স্বতন্ত্র প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কর্নেল ওয়েস্ট, দ্য রেভারেন্ড দ্বিতীয় উইলিয়াম বারবার, দ্য রেভারেন্ড লিজ থেওহারিস এবং পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত গ্রন্থকার ম্যাথৌ ডেসমন্ড। আর সোশ্যাল গসপেলের স্বনামধন্য অনুসারীদের মধ্যে রয়েছেন স্যানিটেশন শ্রমিকদের ধর্মঘটে নেতৃত্বদানকারী গুপ্তহত্যায় নিহত রেভারেন্ড মার্টিন লুথার কিং। 

উল্লিখিত সকল নেতাই কোনো না কোনোভাবে সোশ্যাল গসপেলের আলোকবর্তিকা বহন করেছেন। খ্রিষ্টানদের কর্মকাণ্ড ধর্মবিশ্বাসের চেয়ে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ এবং শৃঙ্খলমুক্ত ধনতন্ত্র স্বার্থপর অনুপ্রেরণার জন্ম দেয় বিধায় খ্রিষ্ট ধর্মানুশীলন নিন্দনীয়Ñবিভিন্নভাবে এসব যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে একদা সোশ্যাল গসপেল নেতারা বাইবেল ব্যবহার করেছিলেন। বর্তমানেও উপরিল্লিখিত নেতারা পূর্বসূরিদের অনুকরণে বাইবেল ব্যবহার করেন। সোশ্যাল গসপেলের এই পুনরুদীয়মান ধরন আমাদের রাজনীতিকে পরিবর্তন করছে বললে অতিশয়োক্তি হবে না। বস্তুত, এর প্রবক্তারা আমেরিকার বাহ্যত দৃষ্টিগ্রাহ্য চেহারার পুনঃ আকৃতিদানে সাহায্য করেছেন। অনেক আমেরিকানই এখন বিশ্বাস করেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় টেকের একচ্ছত্র প্রাধান্যের সমৃদ্ধির প্রতি ক্রমবর্ধিষ্ণু হুমকি; অনেকেই ন্যূনতম ফেডারেল মজুরির নাটকীয় বৃদ্ধি সমর্থন করেন এবং অনেকেই বিশ্বাস করেন যে কায়ক্লেশে জীবনধারণকারী (স্টুডেন্ট লোনের গুরুভারে জর্জরিত কম বয়সী আমেরিকান থেকে সরকারের সরাসরি সাহায্যপ্রাপ্ত পরিবার-পরিজন কিংবা কোভিড প্যান্ডামিকে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নির্বিশেষে) সকলকে সরকারের সাহায্য করা উচিত। চিন্তা-চেতনা এবং নীতিমালায় এসব পরিবর্তন সোশ্যাল গসপেলের প্রভাবে আংশিক প্রতিফলন ঘটিয়েছে। আমেরিকানদের চিন্তা-চেতনায় এই পরিবর্তনকে ফেইন বাস্তব রূপদান করেছেন। 

জনৈক ভাষ্যকারের বর্ণনায়, খ্রিষ্টধর্মের বাগাড়ম্বরিতাকে আঘাত করে ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্সের ধর্মঘটের সময়জুড়ে ফেইন রুটিনমাফিক সোশ্যাল গসপেলের অভ্যন্তরীণ তাৎপর্য তুলে ধরেছেন। ‘দ্য সোশ্যাল গসপেল ইন আমেরিকান রিলিজিয়ন : এ হিস্টরি’র গ্রন্থকার ক্রিস্টোফার এইচ ইভানস বলেন, ফেইনের ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্সের ধর্মঘটের অনলবর্ষী বক্তৃতায় সোশ্যাল গসপেলের বাণী ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়েছে এবং তিনি স্বয়ং তা শুনেছেন। বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের খ্যাতনামা অধ্যাপক ইভানস বলেন, তার বক্তৃতায় প্রতিধ্বনিত হয়েছিল, শ্রমিকদের স্বার্থেই যিশুর ধরাধামে আবির্ভাব ঘটেছে, যিশু শ্রমিকদের ধর্মঘটের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। এটি হচ্ছে তার অটল বার্তা এবং এটি গত উনিশ-বিংশ শতকের দ্য সোশ্যাল গসপেলের অসংখ্য ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের কাজ করেছে। 

‘ইউনিয়ন মেইড : ওয়ার্কিং পিপল অ্যান্ড দ্য রাইজ অব সোশ্যাল ক্রিশ্চিয়ানিটি ইন শিকাগো’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ সম্প্রতি রচনা করেছেন হিথ ডব্লিউ কার্টার। প্রিন্সটন থিয়োলজিক্যাল সেমিনারির আমেরিকান ক্রিশ্চিনিয়ানিটির সহযোগী অধ্যাপক ডব্লিউ কার্টার বলেন, উনিশ শতকের শেষ পাদে এবং বিশ শতকের সূচনাপর্বে একদা খ্রিষ্টধর্মের শিরা-উপশিরার গভীরে শ্রমের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন থাকায় শ্রমিকশ্রেণির পক্ষে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল। আমেরিকান ইতিহাসের আগাগোড়া অগণিত শ্রমিক, ঐতিহ্যগত বিশ্বাস এবং শ্রমসংগ্রাম পরস্পরের হাত ধরাধরি করে চলেছে। আন্দোলনরত শ্রমিকেরা জোর গলায় দাবি করছেন, বাইবেলই মান্ধাতার আমলের শ্রমিক আন্দোলন থেকে তাদেরকে সংগঠিত হতে বলায় তারা সময় এবং যুগের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সুসংগঠিত। ইউনিয়নের বন্ধুসুলভ পত্রপত্রিকাগুলো ধর্মের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেছে। ‘দ্য গসপেল অব লুকে’ (Luke) অনেক বর্ষজীবী রসদ সরবরাহ করেছে, ধনীদের জন্য দুঃসংবাদ! কারণ তোমরা তোমাদের সান্ত্বনাদায়ক পুরস্কার পেয়েছ। (৬ : ২৪) এবং শ্রমিক তার ভাড়া করা মজুরির যোগ্য (১০ : ৭)।

সোশ্যাল গসপেলের অন্যতম আলোকবর্তিকাবাহী সিনেটর ওয়ারনক, ম্যাথৌ ২৫ এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, মেডিকেড প্রদানে অস্বীকারকারী স্টেটগুলোতে মেডিকেডের সম্প্রসারণ ঘটানোর মতো কর্মকাণ্ডে ন্যূনতম অবদান রাখার ভিত্তিতে মানুষকে মূল্যায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন যিশু খ্রিষ্ট। এই কর্মকাণ্ড সম্পাদনের মাধ্যমে মানুষ সোশ্যাল গসপেলের তাত্ত্বিক সিঁড়িগুলো উতরাবে। এদিকে ইয়েল ডিভাইনিটি স্কুলস সেন্টার ফর পাবলিক থিওলজি অ্যান্ড পাবলিক পলিসির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক রেভারেন্ড বারবার বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন, ইমিগ্রেশন, অবৈধদের মজুরি বৈষম্য, বৈধতার প্রসঙ্গ উপস্থাপন করে কোটি কোটি শ্রমিক জনতাকে ন্যায্য মজুরি এবং ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা প্রসঙ্গে তার ভূমিকা ও বক্তব্য তার নিজস্ব খ্রিষ্টধর্ম বিশ্বাসে সোশ্যাল গসপেল স্মৃতিরাজিকে জাগ্রত করেছে। ‘এভিকটেড : পোভার্টি অ্যান্ড প্রফিট ইন দ্য আমেরিকান সিটি’ এবং ‘পোভার্টি বাই আমেরিকা’ গ্রন্থের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছেন নন্দিত গ্রন্থকার ম্যাথৌ ডেসমন্ড। তার গ্রন্থে ডেসমন্ড যুক্তি প্রদর্শন করেন, দারিদ্র্য ব্যক্তিবিশেষের নৈতিক ব্যর্থতা নয়। বরং এটি একটি পদ্ধতির বিষময় ফলাফল, যা কিছু সংখ্যক নাগরিককে গরিব বা দিনমজুর রেখে অনেকের স্বার্থসিদ্ধি করে। তিনি আরও বলেন, দারিদ্র্য নির্মূলের মতো পর্যাপ্ত সম্পদ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের রয়েছে। যাহোক, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে আমেরিকাসহ সারা বিশ্বে অসংখ্য পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও পরিমার্জনের ঢেউ খেলে গেছে। সোশ্যাল গসপেল মুভমেন্টেও অনেক গুণ ও পদ্ধতিগত পরিবর্তন নেমে এসেছে। 

আর ধনতন্ত্রের সুবিধাভোগী আমেরিকার মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ রাশি রাশি অর্থকড়ি ও বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। পক্ষান্তরে সিংহভাগ আমেরিকান অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসাসহ জীবনের অপরিহার্য চাহিদা পূরণে রীতিমতো গলদঘর্ম হচ্ছেন। পিউ রিচার্সের এক জরিপ প্রতিবেদন অনুসারে, এমনতর বাস্তবতায় ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী আমেরিকানদের বৃহত্তর অংশ ক্যাপিটালিজম বা ধনতন্ত্রের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন।

লেখক : সহযোগী সম্পাদক, ঠিকানা, নিউইয়র্ক।
২১ নভেম্বর ২০২৩
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078