নিউইয়র্কে স্মৃতিময় টার্কি পার্টি নার্গিস আউট রানা ফেরদৌস ইন

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১৫:৪৪ , অনলাইন ভার্সন
সালেম সুলেরী

‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ আর স্মৃতিমুগ্ধ ‘টার্কি পার্টি’। আমেরিকায় না এলে গুরুত্বটা ততটা বোঝা যেত না। আমি সপরিবারে আমেরিকাবাসী হই ২০০৫-এ। ইমিগ্র্যান্ট ভিসায় আটলান্টিক-পারে সগৌরবে প্রবেশ। এক মাসের মাথায় সোনার হরিণ ‘গ্রিনকার্ড’ প্রাপ্তি। পরের বছরই ঘটল না-বলা ঘটনাটি। নভেম্বরে পেলাম টার্কি পার্টির জোর আমন্ত্রণ। থ্যাংকস গিভিং ডের নান্দনিক আয়োজন। আমন্ত্রণকারিণী কমিউনিটি সংগঠক রানা ফেরদৌস চৌধুরী। সিলেটের সাবেক মেয়র বাবুল হোসেন বাবরুলের সুদর্শনা পত্নী।

বাঙালি কমিউনিটিতে তখনো টার্কি পার্টির চল অনেক কম। কিন্তু রানা আপার বাসার আয়োজনটি দেখলাম বিশালতর। কমিউনিটির গণ্যমান্য অসংখ্য মুখ ঈদের বারতা নিয়ে হাজির। আমার সঙ্গে অধিকাংশজনেরই পরিচয়, ঘনিষ্ঠতা হয়নি। হঠাৎ পেলাম সিনিয়র সাংবাদিক মনজুর আহমদ ভাইকে। তখনো তিনি সাপ্তাহিক ‘আজকালে’র সম্পাদক হননি। দুঃখিত, ‘আজকাল’ পত্রিকাটিই তখনো আলোর মুখ দেখেনি। অভিনেত্রী রেখা ভাবিও চিরসৌন্দর্য নিয়ে হাজির। আয়োজনটি ছিল রানা আপার এস্টোরিয়ার বাসায়। আমাকে গাড়ি করে নিয়ে গিয়েছিলেন গোলাম সারোয়ার চৌধুরী। নিউইয়র্কে আমার বিজনেস পার্টনার, একান্ত বন্ধুজন। জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন-খ্যাত মিজানুর রহমান শেফাজের সহোদর। পৈতৃক বাস বৃহত্তর সিলেটের পুণ্যভূমি হবিগঞ্জে।

আমাদের স্বাগত জানাতে রানা আপা এগিয়ে এলেন। কুশল বিনিময়ের পর সারোয়ার চৌধুরীকে শনাক্ত করলেন। বললেন, আপনার মামা নূরু চৌধুরী আমাদের পরিচিত।



থ্যাংকস গিভিং ডে বিষয়টি আমাকে বিশেষভাবে ভাবায়। টার্কি পার্টির প্রসঙ্গটি প্রথম শুনেছিলাম ঢাকায়। কমিউনিটি নেত্রী সুদর্শনা নার্গিস আহমদের মুখে। ২০০২ সালে আমাদের তোপখানা রোডস্থ ‘নিউজব্যাংক হলে’ এসেছিলেন। ওনাকে আর খান টিপু সুলতানকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। টিপু ভাই নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ সোসাইটির সম্পাদক ছিলেন। নার্গিস আপাও পরবর্তী সময়ে সভাপতি নির্বাচিত হন। ঢাকায় ‘সোনার তরী’ সংগঠন অনুষ্ঠানটির আয়োজক। সম্মানিত অতিথি বা উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন ঠিকানা-খ্যাত এম এম শাহীন এমপি। প্রবাসের আলোড়িত লেখক-বিশ্লেষক ডা. মিনা ফারাহ’ও অতিথি ছিলেন। সেদিন সংবর্ধিত অতিথিদ্বয় নিজেদের প্রবাস-কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। বক্তব্যে নার্গিস আপা ‘রূপসী বাংলা’ টিভি ও অন্যান্য উদ্যোগের কথা বলেন। সেদিনই জানান দেন, প্রতিবছর টার্কি পার্টিও করছেন। বাঙালি কমিউনিটিতে তিনিই প্রথম আনুষ্ঠানিকতার সূচনা করেছেন।

রানা আপার আয়োজনে গিয়ে নার্গিস আপাকেই ভাবছিলাম। কই, সেখান থেকে তো কোনো দাওয়াত বা সাড়া আসেনি।
আমেরিকার প্রথম টার্কি পার্টিতে গিয়েই আদৃত হলাম। উদ্বোধক হিসেবে ঘোষিত হলো আমার নাম। কথা, কবিতা আর জন্মদিনের আদলে টার্কি কাটা। ঘরভরা নারী-পুরুষে বেশ জমল পর্বটুকু। আমেরিকায় সেটিই ছিল আমার প্রথম অনুষ্ঠান। বললাম, আজ শুধুই ধন্যবাদ প্রকাশের দিন। ১৬৬১-তে গভর্নর উইলিয়াম তা নির্ধারণ করে গেছেন।

নভেম্বরের শেষ বৃহস্পতিবার থ্যাংকস গিভিং ডে। এটি নির্ধারিত হয়েছিল অভিবাসীদের উপলক্ষ করে। ১৬৬০ সালে ১০২ অভিবাসী আসেন ব্রিটেন থেকে। ‘মে ফ্লেয়ার’ জাহাজে আমেরিকার ম্যাচাসুসেটস রাজ্যে নামেন। ‘প্লিমথ’ নামে শস্য-সুফলা গ্রাম গড়ে তোলেন। ‘স্কোয়ান্তো’ নামের রেড-ইন্ডিয়ান উপজাতি তাদের সাহায্য করে। ফলে অভিবাসীরা কর্ণ চাষ ও মাছ ধরা শেখে। ম্যাপল গাছ থেকে রস বের করার কাজে দক্ষতা দেখায়। শস্য উৎপাদনে বা বাম্পার ফলনে রেকর্ড গড়ে। তাতে মহাতৃপ্তি বোধ করেন স্থানীয় নেতৃবর্গ ও গভর্নর মহোদয়। ফলে অভিবাসী ও অন্যদের সম্মানে আয়োজিত হয় ভুরিভোজ। খাওয়ানো হয় সবচেয়ে সুস্বাদু মোরগ গোত্রের ‘টার্কি’। সেই থেকেই উত্তর আমেরিকায় টার্কি পার্টির কালজয়ী প্রবর্তন।

১০২ অভিবাসীর সবাই একক কোনো ধর্মের অনুসারী ছিলেন না। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী হওয়ায় তাদের মধ্যে ধর্মবিরোধ ছিল না। গভর্নর উইলিয়ামের পার্টিতে বিষয়টি মূল্যায়িত হয়। ধন্যবাদ প্রদানে মহান সৃষ্টিকর্তা পান সর্বোচ্চ গুরুত্ব। দ্বিতীয় গুরুত্ব পান উপস্থিত অভিবাসী ও অতিথিবৃন্দ। গভর্নর বলেন, ভ্রাতৃত্ববোধ বা সহমর্মিতার জন্য ধন্যবাদ। পারস্পরিক ভালোবাসার কারণে আমরা সফল হয়েছি। এ জন্য আসুন একে অন্যকে ধন্যবাদ জানাই। ধর্মের ঊর্ধ্বে সর্বজনীন একটি দিবস চিরকাল উদ্্যাপন করি। ১৬৬১ থেকে সেই থ্যাংকস গিভিং ডে চিরায়ত রূপ পেয়েছে।

রানা আপার বাসার সফল আয়োজন স্মৃতিময় হয়ে আছে। পরের সোমবারে নিউইয়র্কের ‘বাংলা পত্রিকা’ রিপোর্ট ছাপল। শিরোনাম : ‘টার্কি পার্টি > নার্গিস আউট রানা ইন’। ভেতরের তথ্য অনেক প্রশ্নের জবাব দিল। বিশেষ করে, নার্গিস আহমদের নীরবতার প্রসঙ্গটি। বরাবর তিনি টার্কি পার্টি করে আসছেন। কিন্তু দুই বছর হলো বেশ বিপদে আছেন। জ্যামাইকার হাইল্যান্ড অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে জটিলতা। ব্যাপক সংস্কারকাজ শুরু হয়েও শেষ হচ্ছে না। নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতে মিলছে না। ফলে এবড়োখেবড়ো বাড়িতে পার্টি-আয়োজন অসম্ভব। অন্যদিকে বাঙালি কমিউনিটি বসে থাকতে নারাজ। সে সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছেন রানা ফেরদৌস। লাগসই আয়োজনের মাধ্যমে বেশ নাম কুড়িয়েছেন। উল্লেখ্য, তিনি পরবর্তী সময়ে নির্বাচন করেন। বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৭-০৮-এর সভাপতি নার্গিস আহমদের বিদায়ের পরপরই। ‘নার্গিস আউট রানা ইন’-এমন রিপোর্ট অবশ্য দেখিনি।

আবার মহান থ্যাংকস গিভিং ডে সমাদৃত হতে থাকল। নার্গিস আপা অনেক আগে থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। যথারীতি টার্কি পার্টির আয়োজনও করেছেন। বাসায় সাদর আমন্ত্রণ পেয়েছি যথাসময়ে। অন্যদিকে অনেক দিন রানা আপার খবর জানি না। মাঝে একবার ফোন দিয়ে ওনাকে পেলাম ফিলাডেলফিয়ায়। বাংলাদেশের সিলেটেও পাড়ি দেন প্রায়শ। কেউ এখন আর রিপোর্ট করে না : ‘নার্গিস ইন রানা আউট’।

প্যান্ডামিকের কারণে ২০২০-এর উৎসব স্থগিতই ছিল। স্বামীর আকস্মিক অসুস্থতার কারণে নার্গিস আপা হাসপাতালমুখী। তবে টার্কি পার্টি নিয়ে বাঙালি কমিউনিটি আর বসে নেই। ঘরে ঘরে এখন স্মৃতিময় নান্দনিক আয়োজন। অর্থাৎ নার্গিস আপাদের হাত ধরে সংস্কৃতিটি ছড়িয়ে গেছে। এখন এই মহান উৎসবটিকে আমরা কাজে লাগাই। ভালোবাসা, বন্ধনের তারে জড়িয়ে নিই সৃষ্টিকর্তা, স্বজনদের।

-নভেম্বর ২০২৩, নিউইয়র্ক
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078