মারুফ খান
আজকালকার শিক্ষার্থীদের একটি কমন সমস্যা হচ্ছে ‘ভাল্লাগে না’। মূলত নানান বিষয়ের দুশ্চিন্তা যখন চারদিক থেকে ঘিরে ধরে, তখন প্রায়ই আমাদের মুখ দিয়ে এ কথাটি বের হয়, ‘ভাল্লাগে না’। সেটা হতে পারে আসন্ন পরীক্ষার টেনশন, প্রচুর পড়া জমা হয়ে যাওয়ার মানসিক চাপ, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা, বন্ধুদের অবহেলিত আচরণ, অপ্রাপ্তির কষ্ট, পারিবারিক টানাপোড়েন ইত্যাদি।
মোটকথা ‘ভাল্লাগে না’ শব্দটির পেছনে দুশ্চিন্তার একটি ছাপ রয়েছে, রয়েছে শূন্যতারও এক অনুভূতি। এ ছাড়া অনেক না-বলা কথা যেন এই ‘ভাল্লাগে না’র মধ্যে লুক্কায়িত রয়েছে।
সবকিছু সব সময় ভালো না লাগাটাই স্বাভাবিক। ভালো না লাগাটাকে যদি পাত্তা দেওয়া হয়, তাহলে ‘ভাল্লাগে না’র দুষ্টচক্রে পড়ে যেতে হবে। এটাকে বলা হয় ‘Discomfort Anxiety’ (ডিজকমফোর্ট অ্যাংজাইটি)। এ জগতের অনেক কিছুই আমাদের ভালো লাগবে না। তবু আমাদেরকে সেটা মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে। তেতো করলার সবজি খেতে কার ভালো লাগে, বলুন? তবু সেটা শরীরের জন্য দরকারি। শরীরচর্চা করে গা ঘামাতে কার ভালো লাগে? ভাজাপোড়া তো সবাই পছন্দ করে, আর সেটা খেলে কী হবে, তাও কারও অজানা নয়। তাই আমরা যদি সুস্থ শরীর চাই, তবে আমাদেরকে এ ধরনের ‘ভাল্লাগে না’র সঙ্গে অভ্যস্ত হতে হবে।
যা-ই হোক, ‘ভাল্লাগে না’ থেকে বেরিয়ে আসতে প্রথমেই যা করা দরকার, তা হচ্ছে অন্যের সঙ্গে তুলনা করা বন্ধ করতে হবে। এটা অতি আবশ্যক। অমুকের এটা আছে ওটা আছে কিন্তু আমার তেমন কিছু নেই, অমুক সফল হয় কিন্তু আমি যা-ই করি ব্যর্থ হই, ‘হোয়াই অলওয়েজ মি’ ইত্যাদি এসব চিন্তা করা বাদ দিতে হবে। বরং চিন্তা করতে হবে, আমার থেকেও আরও অনেক মানুষ খারাপ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো গৃহহীন মানুষের মতো আমিও নিঃস্ব অবস্থায় থাকতে পারতাম। অপ্রাপ্তির হিসাব বাদ দিয়ে নিজের প্রাপ্তি নিয়ে ভাবতে হবে। এভাবে আত্মোপলব্ধির বিষয়টি ‘ভাল্লাগে না’ বলার যে ‘ডিজকমফোর্ট অ্যাংজাইটি’ রয়েছে, তা থেকে মুক্তি দেবে।
নিজের বিপক্ষে কিছু গেলে মানতে না পারা অর্থাৎ একটু প্রতিকূল অবস্থায় ভেঙে পড়া ‘ভাল্লাগে না’ বলার আরেকটি কারণ। দেখা যায়, মনমতো কিছু না পেলে মন খারাপ করে বসে থাকা হয়। একজন মানুষ তখনই স্মার্ট, যখন সে নিজেকে অনুকূল এবং প্রতিকূল দুই অবস্থাতেই মানিয়ে নিতে পারে। কাজেই প্রতিকূল অবস্থায় নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার অভ্যাস করতে হবে। আমাদেরকে ভুলে গেলে চলবে না, দুনিয়ার এ জীবন একটি পরীক্ষার জীবন। আর পরীক্ষার প্রশ্ন সব সময় মনমতো থাকে না। কখনো সহজ কখনো কঠিন হয়। আর দুটোই ফেস করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। ঠিক একইভাবে জীবনের এই পরীক্ষায় অনুকূল ও প্রতিকূল দুটোই ফেস করার জন্য সব সময় মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। তা না হলে ইচ্ছার একটু এদিক-সেদিক হলে ভেঙে পড়া অনিবার্য হয়ে দাঁড়াবে।
‘ভাল্লাগে না’ থেকে মুক্তি পেতে আমার এটা লাগবে ওটা লাগবে এসব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে অর্থাৎ চাহিদা কমাতে হবে। অল্পে তুষ্ট থাকতে হবে। আল্লাহর শুকরিয়া আদায়কারী বান্দা হতে হবে। চাহিদা বেশি থাকার কারণে অপ্রাপ্তির সংখ্যা বাড়ে, যার দরুন ‘ভাল্লাগে না’। সুখে থাকার মূলমন্ত্র হচ্ছে অল্পে তুষ্টি আর সবর বা ধৈর্য। যা পাওয়া হবে, এগুলোই তো আমি না পেতে পারতাম-এটা মনে করে তাতে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। আর কষ্টের সময় সবর করতে হবে। শুকরিয়া আর ধৈর্য না থাকলে কোটিপতি হলেও সুখী হওয়া যাবে না। যার মধ্যে এ দুটি গুণ রয়েছে, সে সব সময় সুখী থাকে, এমনকি তার কিছু না থাকলেও শান্তি অনুভব করে। আবার যেসব মানুষের কথা শুনলে কিংবা যেসব বিষয়ের সংস্পর্শ দুশ্চিন্তা বাড়ায়, সেগুলো বর্জন করতে হবে। মাথা থেকে সকল নেতিবাচকতা ঝেড়ে ফেলতে হবে। বইপড়া, কোরআন-হাদিস নিয়ে স্টাডি করা, দ্বীনি বিষয়ে সময় দেওয়া, আল্লাহর অনুগত হয়ে চলার মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা, ভালো মানুষের সঙ্গে থাকা, মাঝে মাঝে অসহায়দের সঙ্গে সময় কাটানো, তাদের অসহায়ত্বের কথা শোনা ইত্যাদি বিষয় ‘ভাল্লাগে না’র মানসিক ব্যাধি থেকে রেহাই দিতে খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
এ ছাড়া মাঝে মাঝে দর্শনীয় স্থানে বেড়াতে গেলে একঘেয়েমি কাটবে, মনটা ফ্রেশ হবে। আল্লাহর নিয়ামত আরও বেশি উপলব্ধি হবে। আর মনের ভেতর কষ্ট চেপে না রেখে বিশ্বস্ত বা দ্বীনের বুঝ আছে এমন কারও সঙ্গে শেয়ার করলে মনটা হালকা হবে, সমাধান বেরিয়ে আসবে, ভালো না লাগার কারণও দূর হবে, ইনশা আল্লাহ।
লেখক : তালিবে ইলম, প্রাবন্ধিক
আজকালকার শিক্ষার্থীদের একটি কমন সমস্যা হচ্ছে ‘ভাল্লাগে না’। মূলত নানান বিষয়ের দুশ্চিন্তা যখন চারদিক থেকে ঘিরে ধরে, তখন প্রায়ই আমাদের মুখ দিয়ে এ কথাটি বের হয়, ‘ভাল্লাগে না’। সেটা হতে পারে আসন্ন পরীক্ষার টেনশন, প্রচুর পড়া জমা হয়ে যাওয়ার মানসিক চাপ, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা, বন্ধুদের অবহেলিত আচরণ, অপ্রাপ্তির কষ্ট, পারিবারিক টানাপোড়েন ইত্যাদি।
মোটকথা ‘ভাল্লাগে না’ শব্দটির পেছনে দুশ্চিন্তার একটি ছাপ রয়েছে, রয়েছে শূন্যতারও এক অনুভূতি। এ ছাড়া অনেক না-বলা কথা যেন এই ‘ভাল্লাগে না’র মধ্যে লুক্কায়িত রয়েছে।
সবকিছু সব সময় ভালো না লাগাটাই স্বাভাবিক। ভালো না লাগাটাকে যদি পাত্তা দেওয়া হয়, তাহলে ‘ভাল্লাগে না’র দুষ্টচক্রে পড়ে যেতে হবে। এটাকে বলা হয় ‘Discomfort Anxiety’ (ডিজকমফোর্ট অ্যাংজাইটি)। এ জগতের অনেক কিছুই আমাদের ভালো লাগবে না। তবু আমাদেরকে সেটা মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে। তেতো করলার সবজি খেতে কার ভালো লাগে, বলুন? তবু সেটা শরীরের জন্য দরকারি। শরীরচর্চা করে গা ঘামাতে কার ভালো লাগে? ভাজাপোড়া তো সবাই পছন্দ করে, আর সেটা খেলে কী হবে, তাও কারও অজানা নয়। তাই আমরা যদি সুস্থ শরীর চাই, তবে আমাদেরকে এ ধরনের ‘ভাল্লাগে না’র সঙ্গে অভ্যস্ত হতে হবে।
যা-ই হোক, ‘ভাল্লাগে না’ থেকে বেরিয়ে আসতে প্রথমেই যা করা দরকার, তা হচ্ছে অন্যের সঙ্গে তুলনা করা বন্ধ করতে হবে। এটা অতি আবশ্যক। অমুকের এটা আছে ওটা আছে কিন্তু আমার তেমন কিছু নেই, অমুক সফল হয় কিন্তু আমি যা-ই করি ব্যর্থ হই, ‘হোয়াই অলওয়েজ মি’ ইত্যাদি এসব চিন্তা করা বাদ দিতে হবে। বরং চিন্তা করতে হবে, আমার থেকেও আরও অনেক মানুষ খারাপ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো গৃহহীন মানুষের মতো আমিও নিঃস্ব অবস্থায় থাকতে পারতাম। অপ্রাপ্তির হিসাব বাদ দিয়ে নিজের প্রাপ্তি নিয়ে ভাবতে হবে। এভাবে আত্মোপলব্ধির বিষয়টি ‘ভাল্লাগে না’ বলার যে ‘ডিজকমফোর্ট অ্যাংজাইটি’ রয়েছে, তা থেকে মুক্তি দেবে।
নিজের বিপক্ষে কিছু গেলে মানতে না পারা অর্থাৎ একটু প্রতিকূল অবস্থায় ভেঙে পড়া ‘ভাল্লাগে না’ বলার আরেকটি কারণ। দেখা যায়, মনমতো কিছু না পেলে মন খারাপ করে বসে থাকা হয়। একজন মানুষ তখনই স্মার্ট, যখন সে নিজেকে অনুকূল এবং প্রতিকূল দুই অবস্থাতেই মানিয়ে নিতে পারে। কাজেই প্রতিকূল অবস্থায় নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার অভ্যাস করতে হবে। আমাদেরকে ভুলে গেলে চলবে না, দুনিয়ার এ জীবন একটি পরীক্ষার জীবন। আর পরীক্ষার প্রশ্ন সব সময় মনমতো থাকে না। কখনো সহজ কখনো কঠিন হয়। আর দুটোই ফেস করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। ঠিক একইভাবে জীবনের এই পরীক্ষায় অনুকূল ও প্রতিকূল দুটোই ফেস করার জন্য সব সময় মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। তা না হলে ইচ্ছার একটু এদিক-সেদিক হলে ভেঙে পড়া অনিবার্য হয়ে দাঁড়াবে।
‘ভাল্লাগে না’ থেকে মুক্তি পেতে আমার এটা লাগবে ওটা লাগবে এসব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে অর্থাৎ চাহিদা কমাতে হবে। অল্পে তুষ্ট থাকতে হবে। আল্লাহর শুকরিয়া আদায়কারী বান্দা হতে হবে। চাহিদা বেশি থাকার কারণে অপ্রাপ্তির সংখ্যা বাড়ে, যার দরুন ‘ভাল্লাগে না’। সুখে থাকার মূলমন্ত্র হচ্ছে অল্পে তুষ্টি আর সবর বা ধৈর্য। যা পাওয়া হবে, এগুলোই তো আমি না পেতে পারতাম-এটা মনে করে তাতে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। আর কষ্টের সময় সবর করতে হবে। শুকরিয়া আর ধৈর্য না থাকলে কোটিপতি হলেও সুখী হওয়া যাবে না। যার মধ্যে এ দুটি গুণ রয়েছে, সে সব সময় সুখী থাকে, এমনকি তার কিছু না থাকলেও শান্তি অনুভব করে। আবার যেসব মানুষের কথা শুনলে কিংবা যেসব বিষয়ের সংস্পর্শ দুশ্চিন্তা বাড়ায়, সেগুলো বর্জন করতে হবে। মাথা থেকে সকল নেতিবাচকতা ঝেড়ে ফেলতে হবে। বইপড়া, কোরআন-হাদিস নিয়ে স্টাডি করা, দ্বীনি বিষয়ে সময় দেওয়া, আল্লাহর অনুগত হয়ে চলার মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা, ভালো মানুষের সঙ্গে থাকা, মাঝে মাঝে অসহায়দের সঙ্গে সময় কাটানো, তাদের অসহায়ত্বের কথা শোনা ইত্যাদি বিষয় ‘ভাল্লাগে না’র মানসিক ব্যাধি থেকে রেহাই দিতে খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
এ ছাড়া মাঝে মাঝে দর্শনীয় স্থানে বেড়াতে গেলে একঘেয়েমি কাটবে, মনটা ফ্রেশ হবে। আল্লাহর নিয়ামত আরও বেশি উপলব্ধি হবে। আর মনের ভেতর কষ্ট চেপে না রেখে বিশ্বস্ত বা দ্বীনের বুঝ আছে এমন কারও সঙ্গে শেয়ার করলে মনটা হালকা হবে, সমাধান বেরিয়ে আসবে, ভালো না লাগার কারণও দূর হবে, ইনশা আল্লাহ।
লেখক : তালিবে ইলম, প্রাবন্ধিক