নাম না-জানা সেই পথিক

প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২৪ , অনলাইন ভার্সন
শামীম আরা ডোরা

আমি আসলেই তার নাম জানি না। প্রতিদিন সকালে দেখা হতো। শরীরের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ নেই বললেই চলে। নার্সিং হোমের দায়িত্বরত কেউ বাইরে একটি চেয়ারের ওপর বসিয়ে রাখতেন। কিছুটা সময় বাইরে বসে থাকার আনন্দে বুঝতে পারতাম, তার হৃদয় নেচে উঠত। ভাবখানা এই ছিল :
-শোনো শোনো, তোমরা সবাই কেমন আছ, ভালো তো? তোমাদের বাসার সবাই ভালো আছে তো?
দীর্ঘদিন চেনাজানার পরিচয়ে বাস ড্রাইভার হতে শুরু করে সবাই মনপ্রাণ ঢেলে হাত নেড়ে পথিককে অভিনন্দন জানাতে কখনোই ভুল করত না। এ দেশের কালচারে যা বলেÑহাই সুইটি, হাই হানি, এক আন্তরিক পরিচয়ে আমাকে শুভেচ্ছা জানাতে ভুলতেন না।
বেঁচে থাকার আনন্দে পথিক সবাইকে খুঁজে বেড়াত। লোকটির পা দুটো তো নেইÑহাত দুটো দেখা যায় না। শরীরের অর্ধাংশ নেই বললেই চলে। নার্সিং হোমের কর্তব্যরত নার্সের সঙ্গে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব। একদিন জানতে চাইলাম :
-তুমি কত দিন এখানে আছ?
-এক যুগের বেশি।
-আর সে? (নাম না-জানা পথিক)
-দুই যুগের বেশি।
প্রকৃতির আলো-বাতাস আর কিছু মানুষের হাই-হ্যালো সম্বোধনের জন্য আমরা প্রতিদিন কিছুটা সময় ওকে বাইরে বসিয়ে রাখি আর সেই আনন্দে সে নিজেকে বাক্যহীন করে ধরে রাখতে পারে না।  
করোনা-পরবর্তী সময়ে তাকে আর দেখি না। আমার চোখ সেখানেই পড়ে যায়, যেখানে তাকে বসিয়ে রাখা হতো। নার্সকে দেখামাত্রই জানতে চাইলাম :
-তাকে আর দেখছি না যে!
-সে শারীরিক অবস্থা তার নেই।
-একেবারেই বুঝলাম না!
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। বাইরে বসিয়ে রাখা এখন সম্ভব নয়। নার্সকে জানিয়ে দিলাম, সে আমাকে ভালো করে চেনে। ওকে বলো, আমি ওকে হাই বলেছি আর ওর কথা জানতে চেয়েছি। নার্স আমাকে জানিয়ে দিল, অবশ্যই বলব।
সাত দিন পর আবার সেই নার্স জেসিকার সঙ্গে দেখা।
-তুমি কি ওকে আমার কথা বলেছিলে? সময় পাওনি?
-আসলে কী জানো, ডোরা, গত সাত দিন আমি খুব ব্যস্ত ছিলেম। বলা হয়নি।
-ঠিক আছে, পরে বলো, কেমন?
-না ডোরা, সে সুযোগ আর নেই!
-মানে! কী হয়েছে?
-কাল রাতে সবাইকে না জানিয়ে না ফেরার দেশে চলে যায়। আমরা অনেকেই কাছে ছিলাম। কিন্তু একদম বুঝে উঠতে পারিনি।
কী বলব জানি না! সেই পথ দিয়ে প্রতিদিন সকালে স্কুলে যাই। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষায় একই মানুষগুলো সেই পথ দিয়ে যাতায়াত করে। পথিককে খুঁজে বেড়ায়। কেমন যেন জায়গাটি শূন্য মনে হয়। যদিও পথে দেখা-লোকটি সবার কাছে ভিন্নতর পরিচয়ে পরিচিত ছিল।
পথিককে দেখে আমার মনে হতো, কত যুদ্ধ করে মানুষকে বেঁচে থাকতে হয়! এখন ‘যুদ্ধের অবসান’! এখন সে ‘সম্পূর্ণ মুক্ত, সম্পূর্ণ স্বাধীন’!

লেখক : অ্যাডভোকেট, সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা, বাংলাদেশ নিউইয়র্ক প্রবাসী
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041