কাজী হাসান
কতটুকু পথ চললে একজনকে পথিক বলা যায়? কতটুকু ভালোবাসলে একজন প্রেমিক হতে পারে? কিংবা কতটুকু লেখালেখি করলে একজন লেখক হয়? কয়েক দিন ধরে প্রশ্নগুলো মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। কেন এ রকম হচ্ছে; সেটা না হয় একটু পরে বলি।
মাত্র কয়েক বছর আগে কেন (Ken) কাদের নিউইয়র্ক থেকে ডালাসে আসেন। তিনি নিউইয়র্কে থাকাকালে বাংলা সংস্কৃতির প্রসারে একনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। সেখানে থেকেই মূলত তার প্রচেষ্টায় চালু হয় সনম টিভি স্বাধীনতা দিবস (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের) পুরস্কার। এই সম্মাননার মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে যারা বাংলা সংস্কৃতি ও সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন, তাদেরকে তিনি সম্মানিত করে চলেছেন। এ পর্যন্ত বেশ কিছু গুণী ব্যক্তিত্ব এই পদক পেয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন নাট্যশিল্পী জামালউদ্দিন হোসেন, কবি শহীদ কাদরী, আবির আলমগীর প্রমুখ। তিনি ডালাসে আসার পর এই কার্যক্রম নতুন উদ্যোগে আরম্ভ করেন। প্রতিবারই এই পদক প্রদানকে কেন্দ্র করে সনম টিভি আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে।
গত ৭ অক্টোবর শনিবার (২০২৩) ডালাসের আরভিং আর্ট সেন্টারের ডুপ্রি হলে কেন কাদের, সাবেরা কাদের ও তাদের পুরো দল মিলে সনম স্বাধীনতা পদক পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করেন। সীমিত সময়ের মধ্যে অনেকগুলো উপস্থাপনা মঞ্চে আনা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। তারপর পুরো তিন ঘণ্টা ধরে দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে একের পর এক পরিবেশনা চলতে থাকে। ‘পায়েল’ নামের কিশোরী নাট্যদল সবাইকে মাতিয়ে তোলে। পরে তারা একটা ফ্যাশন শো-ও করে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দারুণ সুন্দর কাজ উপহার দেওয়ার জন্য রুপালী রোশনিকে অশেষ ধন্যবাদ। ‘মুদ্রা’ নামের নাচের দলীয় উপস্থাপনা দেখে বোঝা গেল, ওরা নৃত্যশিল্প রীতিমতো চর্চা করে। দলের কান্ডারি রাফিয়া রাসু কাজটা দীর্ঘ দিন ধরে করছেন, তাকে নির্দ্বিধায় কৃতিত্ব দিতে হয়। শুদ্ধ উচ্চারণে প্রমিত বাংলায় চর্চা করার প্রত্যয় নিয়ে ‘কথকতা’ দলীয় আবৃত্তি পরিবেশনা করে। ইকবাল আনোয়ার ও তার দল প্রবাসে ব্যস্ত জীবন থেকে সময় বের করে কাজটা করছে, সে জন্য তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ‘বাংলার সংস্কৃতি’ ডালাসের পরিচিত একটা সংগঠন। তারা দলীয়ভাবে সংগীত পরিবেশনা করে। তাদের একটা অংশে গানের সঙ্গে দৃষ্টিনন্দন নৃত্যও ছিল। গোলাম মোরশেদ ও তার দল প্রবাসে বাংলা সংস্কৃতিকে পোক্ত একটা জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য পরিশ্রম করছেন, সে জন্য তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। একক সংগীতে ছিলেন মোট তিনজনÑশারমিন এরিনা, নাসরিন রেজা ও মোহাম্মদ শাহীন। বয়সে নবীন শারমিন এরিনার রবীন্দ্রসংগীত গায়কী ধরন ভালো লেগেছে। ডালাসের সুকণ্ঠী গায়িকা নাসরিন রেজার কয়েকটা গানে কারোরই মন ভরেনি। সর্বশেষে মোহাম্মদ শাহীন সোনালি দিনের গান দিয়ে সবার হৃদয় জয় করেন।
‘আমেরিকাতে বাংলা ভাষার প্রসার এবং বাঙালিদের অবদান’ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ছিল। প্যানেলে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলিনার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়া হাসান, কবি ও আবৃত্তিকার ডা. ফারুক আজম ও ডালাসের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জাহিদ রেজা। সঞ্চালক হিসেবে ছিলাম আমি (কাজী হাসান)। বক্তারা একে একে তাদের মতামত জানালেন। সবাই এ ব্যাপারে একমত হলেন, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে তার যোগ্য স্থানে নেওয়ার জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। আশার কথা, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাঙালি প্রবাসে তাদের শ্রম ও মেধা দিয়ে অবদান রেখে চলেছেন। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ব্যাপক চাহিদা আছে এবং থাকবে। বাঙালিরা সাগর পাড়ি দিয়ে এলেও বিদেশের মাটিতে ঠিকই বাংলা সংস্কৃতি চর্চা করছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ভাবনা দুজন প্রবাসী থেকেই এসেছিল। আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়, বিদেশের বুক থেকেই বাঙালিরা একদিন ভাষা ও সংস্কৃতিকে অনন্যসাধারণ উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
সনম টিভি স্বাধীনতা পদক পুরস্কার ২০২৩-এ ভূষিত হলেন তিনজন। প্রথম জন ডা. ফারুক আজম পেশায় একজন সাইকোলজিস্ট, পাশাপাশি তিনি কবি, আবৃত্তিকার ও অভিনেতা। আজ বহু বছর ধরে তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। দ্বিতীয় জন হলেন মোহাম্মদ শাহীন। তার পেশা ও নেশা দুই-ই সংগীত। তিনি বেশ কিছু বছর ধরে পুরোদস্তুর সংগীত বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন। তিনি আজ পর্যন্ত বহু সংগীতশিল্পী গড়ে তুলেছেন। এই দুজন নিঃসন্দেহে তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এ রকম গুরুত্বপূর্ণ পদক পাওয়ার উপযুক্ত। কিন্তু তৃতীয় একজনকে বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য পুরস্কৃত করা হলো; তার সম্পর্কে আমি কিছু বলতে চাই। কারণ সেই ব্যক্তিটা যে আমি স্বয়ং (কাজী হাসান)।
আপনাদের সবার মনে আছে নিশ্চয়, লেখার শুরুতে তিনটা প্রশ্ন করেছিলাম। কতটুকু পথ চললে একজন পথিক হতে পারে? কতটুকু ভালোবাসলে একজন প্রেমিক হতে পারে? এবং কতটুকু লেখালেখি করলে একজন লেখক হয়? শুধু এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় হেঁটে চললে পথিক হওয়া যায় না। পথের পুরোটা স্বাদ নিতে ও বুঝতে পারলেই একজন হতে পারে প্রকৃত পথিক। আবার একবারে খাঁটি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কি কেউ কাউকে কখনো নিবেদন করতে পেরেছে, যে একজন নিজেকে প্রেমিক বলে দাবি করতে পারে। আমি বেশ কিছু বছর ধরে সমাজের দায়বদ্ধতা ঘাড়ে নিয়ে লেখালেখি করি। আমার প্রচেষ্টা থাকে কিছু ঘটনা, তথ্য, রম্য ও বিশ্লেষণ দিয়ে মানুষের মনটাকে ভাবিয়ে তোলার; তারা যাতে অন্যের প্রতি সংবেদনশীল হয়, নিজের সম্পর্কে ধারণা গভীরতা পায়, জীবনের নান্দনিকতা গাঢ় হয়। কতটুকু সফল হই, সেটা আমার জানা নেই। আমার এই নগণ্য প্রয়াসকে লেখকের কাজ বলাটা হয়তো অত্যুক্তি! তবে এতটুকু বলতে পারি, এই পুরস্কারপ্রাপ্তিতে আমার যতটা না কৃতিত্ব, আমার লেখালেখিতে যারা উৎসাহ জুগিয়েছেন, তাদের অবদানই বেশি। সবার নাম উল্লেখ করলে হয়তো অনেক লম্বা ফর্দ হয়ে যাবে। তবে কয়েকটা নাম উল্লেখ করতে চাই। আমার বাবা ও মা লেখকের জায়গায় ছাপা অক্ষরে আমার নাম দেখে ভীষণ খুশি হতেন; তা আমাকে সব সময়ই লেখালেখিতে উৎসাহিত ও আন্দোলিত করে। আরেকজনের কথা এখানে বলতে চাই, সে আমার জীবনসাথি। আমি জানি, আমার মতো একজন উদাসী মানুষের সঙ্গে সংসার করাটা খুবই কঠিন। সে এই দুরূহ কাজটা যুগের পর যুগ ধরে অভিযোগ ছাড়াই করে চলেছে, আমার লেখালেখি করার সময় ও সুযোগ করে দিয়েছে। তার কাছে আমার সাত সাগরের কৃতজ্ঞতা।
অনুষ্ঠানজুড়ে ফারহানাজ রেজা ও মারুনা রাহীর মিষ্টিমধুর উপস্থাপনা পুরো উদ্যোগটাকে একই সুতোয় বেঁধে রেখেছিল; মনে হয়েছিল দুজন সুচারু মালি বুঝি বিশাল বড় একটা মালা গেঁথে দর্শকদের উপহার দিয়েছেন। শেষে একটা প্রত্যাশার কথা বলে লেখাটা শেষ করতে চাই। অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য কেন কাদের, সাবেরা কাদের ও তাদের পুরো দলকে অশেষ ধন্যবাদ। আশা করব, তাদের বিদেশের মাটিতে বাংলা সংস্কৃতি ও সাহিত্যে গুণীজনদের স্বীকৃতির কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
-অক্টোবর ১৯, ২০২৩
কতটুকু পথ চললে একজনকে পথিক বলা যায়? কতটুকু ভালোবাসলে একজন প্রেমিক হতে পারে? কিংবা কতটুকু লেখালেখি করলে একজন লেখক হয়? কয়েক দিন ধরে প্রশ্নগুলো মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। কেন এ রকম হচ্ছে; সেটা না হয় একটু পরে বলি।
মাত্র কয়েক বছর আগে কেন (Ken) কাদের নিউইয়র্ক থেকে ডালাসে আসেন। তিনি নিউইয়র্কে থাকাকালে বাংলা সংস্কৃতির প্রসারে একনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। সেখানে থেকেই মূলত তার প্রচেষ্টায় চালু হয় সনম টিভি স্বাধীনতা দিবস (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের) পুরস্কার। এই সম্মাননার মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে যারা বাংলা সংস্কৃতি ও সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন, তাদেরকে তিনি সম্মানিত করে চলেছেন। এ পর্যন্ত বেশ কিছু গুণী ব্যক্তিত্ব এই পদক পেয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন নাট্যশিল্পী জামালউদ্দিন হোসেন, কবি শহীদ কাদরী, আবির আলমগীর প্রমুখ। তিনি ডালাসে আসার পর এই কার্যক্রম নতুন উদ্যোগে আরম্ভ করেন। প্রতিবারই এই পদক প্রদানকে কেন্দ্র করে সনম টিভি আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে।
গত ৭ অক্টোবর শনিবার (২০২৩) ডালাসের আরভিং আর্ট সেন্টারের ডুপ্রি হলে কেন কাদের, সাবেরা কাদের ও তাদের পুরো দল মিলে সনম স্বাধীনতা পদক পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করেন। সীমিত সময়ের মধ্যে অনেকগুলো উপস্থাপনা মঞ্চে আনা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। তারপর পুরো তিন ঘণ্টা ধরে দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে একের পর এক পরিবেশনা চলতে থাকে। ‘পায়েল’ নামের কিশোরী নাট্যদল সবাইকে মাতিয়ে তোলে। পরে তারা একটা ফ্যাশন শো-ও করে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দারুণ সুন্দর কাজ উপহার দেওয়ার জন্য রুপালী রোশনিকে অশেষ ধন্যবাদ। ‘মুদ্রা’ নামের নাচের দলীয় উপস্থাপনা দেখে বোঝা গেল, ওরা নৃত্যশিল্প রীতিমতো চর্চা করে। দলের কান্ডারি রাফিয়া রাসু কাজটা দীর্ঘ দিন ধরে করছেন, তাকে নির্দ্বিধায় কৃতিত্ব দিতে হয়। শুদ্ধ উচ্চারণে প্রমিত বাংলায় চর্চা করার প্রত্যয় নিয়ে ‘কথকতা’ দলীয় আবৃত্তি পরিবেশনা করে। ইকবাল আনোয়ার ও তার দল প্রবাসে ব্যস্ত জীবন থেকে সময় বের করে কাজটা করছে, সে জন্য তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ‘বাংলার সংস্কৃতি’ ডালাসের পরিচিত একটা সংগঠন। তারা দলীয়ভাবে সংগীত পরিবেশনা করে। তাদের একটা অংশে গানের সঙ্গে দৃষ্টিনন্দন নৃত্যও ছিল। গোলাম মোরশেদ ও তার দল প্রবাসে বাংলা সংস্কৃতিকে পোক্ত একটা জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য পরিশ্রম করছেন, সে জন্য তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। একক সংগীতে ছিলেন মোট তিনজনÑশারমিন এরিনা, নাসরিন রেজা ও মোহাম্মদ শাহীন। বয়সে নবীন শারমিন এরিনার রবীন্দ্রসংগীত গায়কী ধরন ভালো লেগেছে। ডালাসের সুকণ্ঠী গায়িকা নাসরিন রেজার কয়েকটা গানে কারোরই মন ভরেনি। সর্বশেষে মোহাম্মদ শাহীন সোনালি দিনের গান দিয়ে সবার হৃদয় জয় করেন।
‘আমেরিকাতে বাংলা ভাষার প্রসার এবং বাঙালিদের অবদান’ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ছিল। প্যানেলে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলিনার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়া হাসান, কবি ও আবৃত্তিকার ডা. ফারুক আজম ও ডালাসের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জাহিদ রেজা। সঞ্চালক হিসেবে ছিলাম আমি (কাজী হাসান)। বক্তারা একে একে তাদের মতামত জানালেন। সবাই এ ব্যাপারে একমত হলেন, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে তার যোগ্য স্থানে নেওয়ার জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। আশার কথা, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাঙালি প্রবাসে তাদের শ্রম ও মেধা দিয়ে অবদান রেখে চলেছেন। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ব্যাপক চাহিদা আছে এবং থাকবে। বাঙালিরা সাগর পাড়ি দিয়ে এলেও বিদেশের মাটিতে ঠিকই বাংলা সংস্কৃতি চর্চা করছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ভাবনা দুজন প্রবাসী থেকেই এসেছিল। আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়, বিদেশের বুক থেকেই বাঙালিরা একদিন ভাষা ও সংস্কৃতিকে অনন্যসাধারণ উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
সনম টিভি স্বাধীনতা পদক পুরস্কার ২০২৩-এ ভূষিত হলেন তিনজন। প্রথম জন ডা. ফারুক আজম পেশায় একজন সাইকোলজিস্ট, পাশাপাশি তিনি কবি, আবৃত্তিকার ও অভিনেতা। আজ বহু বছর ধরে তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। দ্বিতীয় জন হলেন মোহাম্মদ শাহীন। তার পেশা ও নেশা দুই-ই সংগীত। তিনি বেশ কিছু বছর ধরে পুরোদস্তুর সংগীত বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন। তিনি আজ পর্যন্ত বহু সংগীতশিল্পী গড়ে তুলেছেন। এই দুজন নিঃসন্দেহে তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এ রকম গুরুত্বপূর্ণ পদক পাওয়ার উপযুক্ত। কিন্তু তৃতীয় একজনকে বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য পুরস্কৃত করা হলো; তার সম্পর্কে আমি কিছু বলতে চাই। কারণ সেই ব্যক্তিটা যে আমি স্বয়ং (কাজী হাসান)।
আপনাদের সবার মনে আছে নিশ্চয়, লেখার শুরুতে তিনটা প্রশ্ন করেছিলাম। কতটুকু পথ চললে একজন পথিক হতে পারে? কতটুকু ভালোবাসলে একজন প্রেমিক হতে পারে? এবং কতটুকু লেখালেখি করলে একজন লেখক হয়? শুধু এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় হেঁটে চললে পথিক হওয়া যায় না। পথের পুরোটা স্বাদ নিতে ও বুঝতে পারলেই একজন হতে পারে প্রকৃত পথিক। আবার একবারে খাঁটি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কি কেউ কাউকে কখনো নিবেদন করতে পেরেছে, যে একজন নিজেকে প্রেমিক বলে দাবি করতে পারে। আমি বেশ কিছু বছর ধরে সমাজের দায়বদ্ধতা ঘাড়ে নিয়ে লেখালেখি করি। আমার প্রচেষ্টা থাকে কিছু ঘটনা, তথ্য, রম্য ও বিশ্লেষণ দিয়ে মানুষের মনটাকে ভাবিয়ে তোলার; তারা যাতে অন্যের প্রতি সংবেদনশীল হয়, নিজের সম্পর্কে ধারণা গভীরতা পায়, জীবনের নান্দনিকতা গাঢ় হয়। কতটুকু সফল হই, সেটা আমার জানা নেই। আমার এই নগণ্য প্রয়াসকে লেখকের কাজ বলাটা হয়তো অত্যুক্তি! তবে এতটুকু বলতে পারি, এই পুরস্কারপ্রাপ্তিতে আমার যতটা না কৃতিত্ব, আমার লেখালেখিতে যারা উৎসাহ জুগিয়েছেন, তাদের অবদানই বেশি। সবার নাম উল্লেখ করলে হয়তো অনেক লম্বা ফর্দ হয়ে যাবে। তবে কয়েকটা নাম উল্লেখ করতে চাই। আমার বাবা ও মা লেখকের জায়গায় ছাপা অক্ষরে আমার নাম দেখে ভীষণ খুশি হতেন; তা আমাকে সব সময়ই লেখালেখিতে উৎসাহিত ও আন্দোলিত করে। আরেকজনের কথা এখানে বলতে চাই, সে আমার জীবনসাথি। আমি জানি, আমার মতো একজন উদাসী মানুষের সঙ্গে সংসার করাটা খুবই কঠিন। সে এই দুরূহ কাজটা যুগের পর যুগ ধরে অভিযোগ ছাড়াই করে চলেছে, আমার লেখালেখি করার সময় ও সুযোগ করে দিয়েছে। তার কাছে আমার সাত সাগরের কৃতজ্ঞতা।
অনুষ্ঠানজুড়ে ফারহানাজ রেজা ও মারুনা রাহীর মিষ্টিমধুর উপস্থাপনা পুরো উদ্যোগটাকে একই সুতোয় বেঁধে রেখেছিল; মনে হয়েছিল দুজন সুচারু মালি বুঝি বিশাল বড় একটা মালা গেঁথে দর্শকদের উপহার দিয়েছেন। শেষে একটা প্রত্যাশার কথা বলে লেখাটা শেষ করতে চাই। অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য কেন কাদের, সাবেরা কাদের ও তাদের পুরো দলকে অশেষ ধন্যবাদ। আশা করব, তাদের বিদেশের মাটিতে বাংলা সংস্কৃতি ও সাহিত্যে গুণীজনদের স্বীকৃতির কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
-অক্টোবর ১৯, ২০২৩