নির্বাচনী বল মার্কিন কোর্টে, কার কেয়ার? কে টেকার?

প্রকাশ : ২০-০৪-২০২৩ ০১:১৮:৩৯ এএম , অনলাইন ভার্সন
বিশেষ প্রতিনিধি : দৌড়ছুটে ঘুরছে সামনের নির্বাচনের মডেল। এ নিয়ে তাপদাহে ভুগছে পজিশন-অপজিশন দুদিকই। হুকুমের মতো করে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু নির্বাচনের ধরন বলেনি। তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নাকি দলীয় সরকারের অধীনে, তা ঊহ্য রাখছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের কাছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন মডেল নির্বাচনের ওয়াদা দিয়েছেন। উঠেছে নানা প্রশ্ন।
অপজিশনে এ নিয়ে বেশ তৎপরতা। এই সরকারের মডেল বলতে তাদের কাছে ২০১৪ সালের বিনা ভোট, ২০১৮ সালের রাতের ভোট। এসবের যাবতীয় তথ্য-সাবুদ তারা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ নানান জায়গাকে ওয়াকিবহাল করে রেখেছে। সাম্প্রতিক মডেল হিসেবে যোগ হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপনির্বাচন ও সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির নির্বাচন। দলীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক কোনো সরকারের অধীনেই না হলে এবারের নির্বাচন তাহলে কার অধীনে হবে-এ প্রশ্নের দিশা মিলছে না। এসব নিয়ে নানা কচলানিতে নির্বাচনের বল এখন অনেকটাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোর্টে। বিএনপির নেতাদের বাসভবনে নিয়ে এ ইস্যুতে কথা বলেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। তারা ভেতরের কথা জানাচ্ছেন না। বলছেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন। পিটার হাসের সঙ্গে বিএনপির তিন নেতার এক্সক্লুসিভ বৈঠকের পরপরই আওয়ামী লীগের দিক থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বা তার সঙ্গে বৈঠকের কথা উল্লেখ না করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অপশক্তিগুলো বিএনপির নেতৃত্বে শেখ হাসিনাকে হটাতে উঠেপড়ে লেগেছে।
তার এ বক্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতেই ইরানের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফোনালাপ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংবাদ হচ্ছে বাংলাদেশ-ইরান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর আলাপ করেছেন তারা। আসলে খবরটি এত সিম্পল নয়। এর ভেতরে অনেক তথ্য লুকানো। যার একাংশ হচ্ছে স্থানিক-আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শর্তাধীনে তার কাছ থেকে বর্তমান সরকারের হিতাকাক্সক্ষী থাকার আশ্বাস মিলেছে। বর্তমান স্নায়ুযুদ্ধকালে গোটা মিডল ইস্ট ও যুক্তরাষ্ট্র-বিষয়ক ফ্যাক্টর।
স্নায়ুযুদ্ধের এ সময়ে একতরফা কিছু করার সুযোগ এখন কারও নেই। দুনিয়ার সব প্রান্তেই শত্রুর চেয়ে বন্ধু খোঁজার দৌড়ঝাঁপ চলছে। শত্রুই বন্ধু, বন্ধুই শত্রু হয়ে যাচ্ছে। সেই হিসেবে বাংলাদেশের সামনের নির্বাচন কেবল বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। অনেকের চোখ এখানে। রয়েছে প্রচুর স্বার্থও। ভৌগোলিক কারণে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, জাপানসহ বাংলাদেশ অনেকের কাছেই ফ্যাক্টর। তাদের অনেকের চাওয়া-পাওয়ার যোগ ঘটবে আগামী নির্বাচনে। যে কারণে আগের কোনো মডেলে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই সরকারের। আবার বিএনপি বা কোনো দলের পক্ষে তোলপাড় ঘটিয়ে দেওয়ার সামর্থ্যও হবে না। নির্বাচনে না যাওয়া বা নির্বাচন ঠেকানোর মতো পথে যাওয়ার রাস্তাও নেই তাদের। তাদের বাইরে রেখে নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার রাস্তা থাকছে না সরকারেরও। বিএনপিকে নির্বাচনে এনে দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে সরকারের অনুরোধ বা আওয়ামী লীগকে আগের মতো একতরফা ক্ষমতায় এনে দিতে ভারতের অনুকম্পাপ্রাপ্তি এরই মধ্যে ব্যর্থ হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা ভিডিওতে দেখা গেছে, ড. মোমেনকে যা বলার ব্লিঙ্কেন বৈঠকের প্রারম্ভিক বক্তব্যেই বলে দিয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রাথমিক বক্তব্যের যে ভিডিও আপলোড করেছে, তাতে নির্বাচন নিয়ে মোমেনের কোনো কথা নেই। অথচ বৈঠকের পর তিনি নিজের মতো করে কিছু কথা বলেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ দিয়েছেন সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য, সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হওয়ার জন্য। পরে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমি বলেছি, অবশ্যই। ...আমরাও একটি মডেল নির্বাচন চাই। ...বলেছি, এ ব্যাপারে আপনারাও আমাদের সাহায্য করেন, যাতে আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন করতে পারি।’
আসলে সবার সম্পর্কই এখন রহস্যঘেরা। চীন-ভারত সম্পর্কও তা-ই। মাঝেমধ্যে চাঙা হয় দুই দেশের সীমান্ত বিরোধ। দুই প্রতিবেশী দেশই ব্রিকস, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও হংকং সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার মতো জোটে শীর্ষ সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। আবার এই দুটি দেশ সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ অংশীদারও। আবার মিয়ানমারের ক্ষেত্রে চীন ও ভারতের ভূমিকা অভিন্ন।
এখানে একই সমান্তরালে বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থ মিলে গেলে এবং শেখ হাসিনা তাতে সম্মত হয়ে গেলে তার ক্ষমতায় থাকা প্রলম্বিত হতে পারে। বাংলাদেশের কেয়ার এবং টেকার বিষয়টি ঝুলে আছে সেখানেই। ভৌগোলিক এবং বিশ্ব রাজনৈতিক বাস্তবতায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল যত বিশ্ব রাজনীতি ও বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হবে, বাংলাদেশের কেয়ার এবং টেকার জটিলতাও বাড়বে। প্রতিদিন এর গুরুত্ব বাড়ছে এবং তা অনুধাবন করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও এই অঞ্চলে আগ্রহী হয়ে উঠছে। বাংলাদেশসহ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের অনুন্নত দেশগুলোর অনেক হিসাব সেখানে। ভৌগোলিকভাবে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিলনস্থলে অবস্থিত হওয়ায় অঙ্ক নানান দিকে যাচ্ছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর পরোক্ষ নির্ভরতা রয়েছে এখানে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পণ্যের এক-চতুর্থাংশ বঙ্গোপসাগর দিয়ে পরিবহন করা হয়। বঙ্গোপসাগর মধ্যপ্রাচ্য ও অপ্রতুল দেশগুলোতে জ্বালানি পরিবহনের জন্য একটি নিরাপদ করিডোর, যার জেরে সার্ক, আসিয়ান ও বিমসটেকের মতো সক্রিয় আঞ্চলিক জোট এখন একাকার। কেউ একক নয়, আবার ফেলনাও নয়।
গোটা বিশ্বের সব গোলার্ধের পথ ও গতিময়তার মোহনা এখানে, যা থেকে শেখ হাসিনা সরকারের বেনিফিশিয়ারি হওয়ার অভিজ্ঞতা অনেক। আবার বিএনপিও আগের ভুল আর করছে না। বিশ্বকে জানাতে চায়, তারা ছাড়া সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন দেওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশে আর কারও নেই। বর্তমান স্নায়ুযুদ্ধের সময় ভৌগোলিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের তীক্ষ্ম দৃষ্টির সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে বিএনপি।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041