ইসরাইলির নৃশংসতায় গাজায় নিষ্পেষিত মানবতা

প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:৩৮ , অনলাইন ভার্সন
ধ্বংসস্তূপ থেকে শিশুদের নির্জীব দেহ বের করে আনা, তাঁবুতে সাদা চাদরে মোড়ানো সারি সারি মৃতদেহ এবং বিমান হামলায় মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া ইমারত। মাহমুদ বাদাভি তার চোখের সামনে মানবতা গুঁড়িয়ে যেতে, পুড়তে, ছিন্নভিন্ন হতে দেখেছেন। এই পরিস্থিতি গাজার। ইসরাইলি বাহিনীর বুট আর ট্যাংকে চাপায় নিষ্পেষিত মানবতা। নেতানিয়াহু বাহিনীর অভিযানে ৩ হাজার শিশুসহ নিহতের সংখ্যা ৭ হাজার ছাড়িয়েছে। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই নিহতের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তার মতে, সেখানে বেশি মানুষ নিহত হয়নি।

অ্যাম্বুলেন্স চালক মাহমুদ জানান, ‘অনেক কঠিন পরিস্থিতি আসে। একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে যা ঘটছে তার অনেক কিছুই দেখতে হয়। বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া হাত, মাথা দেহ—যা-ই হোক, আমরা অভ্যস্ত।’ প্রত্যক্ষদর্শী মাহমুদ বাদাভির অ্যাম্বুলেন্স হত্যাযজ্ঞের এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ছুটে চলে। গাজার এক সরু গলিতে মাহমুদ দাঁড়ালেন, বিমান হামলায় আহত দুই শিশুকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলার জন্য। এক ব্যক্তি তার কোলে কিছু একটা নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের দিকে এগিয়ে এলেন। তার কোলে মারাত্মকভাবে আহত এক বালক। মাহমুদের এক বন্ধু যিনি আহতদের উদ্ধারকার্যে নিযুক্তদের সাহায্য করছেন, তাকে চিৎকার করে ঐ আহত বালক সম্পর্কে আরো যত্নশীল হতে অনুরোধ করে বলেন, ‘নাসির, ওর মাথা চৌচির হয়ে গেছে।’ তারপরও মাহমুদ বিচলিত না হয়ে শান্তভাব বজায় রাখেন। এমনটা নয় যে, এই পরিস্থিতি তাকে নাড়িয়ে দিয়ে যায় না। কিন্তু মাহমুদ যে কাজে ব্রতী, তা সুষ্ঠুভাবে করার জন্য স্থির থাকাটা ভীষণ দরকার, যাতে তিনি আহতদের দিকে নজর দিতে পারেন, যাদের বাঁচানো সম্ভব।

মাহমুদ বলেন, ‘এখানে যা অবস্থা তাতে বিরতি নেওয়ার ফুরসত আমাদের কারো নেই। পরিস্থিতি ভীষণ খারাপ। এখন আমাদের খোঁজার চেষ্টা করতে হবে, কোথায় এই বিস্ফোরণ হলো, যাতে আহত আর মৃতদের কাছে পৌঁছতে পারি।’  চিকিৎসা পরিষেবার কথা জানতে চাইলে, তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন, সবই চলছে। গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিগত দুই সপ্তাহে ৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই শিশু বলে জানা গেছে।

জাতিসংঘের তরফে সতর্ক করা হয়েছে, এক তৃতীয়াংশ হাসপাতাল এবং দুই-তৃতীয়াংশ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করতে হয়েছে। এসব হাসপাতাল হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা জ্বালানিসংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ আরো জানিয়েছে যে, মজুত জ্বালানির ভাণ্ডার ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো সংকটময় হতে চলেছে। আগামী দিনে, কোন পরিষেবাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে আর কোনটা হবে না, তা নিয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ইসরাইলের বিমান আক্রমণ কিন্তু অব্যাহত। পালিয়ে যাব কি-না? গেলে কোথায় যাব? কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব?—গাজায় দিনরাত এসব প্রশ্ন মরিয়া হয়ে ঘুরছে মানুষের মনে। এর অর্থ, জরুরি পরিষেবার কাজে নিযুক্ত মানুষের ঘরে ফেরা বা সুরক্ষিত আশ্রয়ে থাকার প্রশ্নও নেই।

মাহমুদ যখন তার কাজে বাসা থেকে বের হন, তখন তার স্ত্রী আর ছয় সন্তানের জন্য উদ্বিগ্ন থাকেন। একই সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরাও মাহমুদের নিরাপত্তার জন্য চিন্তায় থাকে। যেদিন বোমার হানা তীব্র হয়, মাহমুদ চেষ্টা করেন, প্রতি ঘণ্টায় বাড়িতে ফোন করে কথা বলতে। কিন্তু টেলিফোন মারফত যোগাযোগ করাও কঠিন। তিনি বলেন, পরিবারের সবার সঙ্গে যোগাযোগ করাটাও ভীষণ কঠিন। বাড়ির সবাই সুরক্ষিত আছে কি না, সেটুকু জানার জন্যও যতটুকু পরিষেবা প্রয়োজন তাও অনেকসময় থাকে না। সংসার চালাতে মাহমুদ কঠিন পরিশ্রম করেন। সঙ্গে তার সমাজসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। খান ইউনিসের নাসার হাসপাতাল থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরের একটি তিন তলা ভবনে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় একটি বড় বিমান হামলা হয়েছে। এই হামলায় অন্তত ৫০ জন হতাহত হয়েছে। অনেকে বেঁচে আছে, অনেকে মারা গেছে। হতাহতদের উদ্ধারে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় অনেক অ্যাম্বুলেন্স।

গাজায় ট্যাংক দিয়ে অভিযান ইসরাইলের
ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ গাজার উত্তরাঞ্চলে ট্যাংক ব্যবহার করে রাতভর ‘সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু’তে অভিযান চালিয়েছে। তারা বলেছে, যুদ্ধের পরবর্তী ধাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ অভিযান চালানো হয়েছে। ‘অনেক সন্ত্রাসী সেল, অবকাঠামো এবং অ্যান্টি ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে ব্যবহূত স্থাপনায় আঘাত করা হয়েছে বলে অভিযানের ভিডিও পোস্টে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, এরপর সৈন্যরা ঐ এলাকা ত্যাগ করে ইসরাইলের ভূখণ্ডে ফিরে আসে। এর আগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইসরাইল গাজায় স্থল অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু এই অভিযান কখন চালানো হবে—সে সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো কিছু জানাতে রাজি হননি তিনি।

ফিলিস্তিনে বেশি মানুষ নিহত হয়নি: বাইডেন
ইসরাইলের বর্বর হামলায় ফিলিস্তিনে প্রতিদিন যখন শত শত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন, ঠিক তখনই এ নিয়ে বিপরীত এক মন্তব্য করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার দাবি, হতাহতের সংখ্যা নিয়ে মিথ্যাচার করছে ফিলিস্তিনিরা। স্থানীয় সময় বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন বাইডেন। গাজায় বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা কমাতে ইসরাইল যথেষ্ট কাজ করছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের প্রকাশ করা সংখ্যার (হতাহতের) ওপর কোনো ‘আস্থা নেই’ তার।

নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব বাতিল
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আনা ইসরাইল ও গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়ার জন্য ‘মানবিক বিরতি’ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে চীন ও রাশিয়া। মার্কিন প্রস্তাবের পরিবর্তে রাশিয়া একটি প্রস্তাব এনেছে, যেখানে অস্ত্রবিরতির আহ্বান রয়েছে। কিন্তু এই প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদের সর্বনিম্ন ভোট পেতেও ব্যর্থ হয়। —বিবিসি ও আলজাজিরা

ঠিকানা/এসআর
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041