এ বি এম সালেহ উদ্দীন
১১ সেপ্টেম্বর (২০০১ সালে) আমেরিকায় সন্ত্রাসী আক্রমণের পর সমগ্র বিশ্বে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছিল। যখন সারাবিশ্ব স্তব্ধ ও হতবাক হয়ে যায়। ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাত সমগ্র ফিলিস্তিনে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি ঘোষণা করেন। টুইন টাওয়ারের ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধারকৃত শত শত আহত লোকের জন্য সর্বপ্রথম নিজের রক্তদানের মধ্য দিয়ে সেই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়। তখন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আরিয়্যাল শ্যারন। ওই সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনের জেনিন, বেথেলহাম, জেরুসালের রামাল্লাসহ গাজার বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ হামলা চালানো হয়। ইসরাইলের অত্যাধুনিক মারণাস্র বহনকারী বোমারু বিমানের বিরতিহীন হামলায় ফিলিস্তিনের কয়েক হাজার প্রাণ হারায়।
ফিলিস্তিনের জনগণের বসবাসকৃত ঘরবাড়ি ও বহুতল বিল্ডিংগুলোর উপর ইসরাইলি সৈন্যদের ক্রমাগত বিমান হামলা, ট্যাংক ও বুলডজার হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দেয়া হয়। নারী ও শিশুসহ নিরীহ ফিলিস্তিনিদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আহত হয় অসংখ্য মানুষ। হাজার হাজার নারী ও শিশুসহ সর্বস্তরের মানুষকে গৃহহারা ও এলাকা ছাড়া করা হয়। পরে সেসব স্পর্শকাতর অঞ্চলগুলো ইসরাইলদের দখলের আওতায় এনে ইসরাইলি ইহুদিদের পুনর্বাসন করা হয় ।
ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতসহ ফিলিস্তিনের অন্যান্য শীর্ষনেতাগণ কয়েক দশকধরে বিশ্বের দ্বারে দ্বারে স্বাধীন ফিলিস্তিন পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশায় সফর করেন। বিরামহীনভাবে চলতে থাকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ইন্তেফাদা তথা গণ-অভুত্থ্যানের সংগ্রাম। কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। শুধু ফিলিস্তিনীরাই ভূমিহারা হচ্ছে, প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছে তাঁদের জনগোষ্ঠী। প্রতিটি সময়েই বিভিন্নভাবে চলেছে ইসরাইলি আগ্রাসন ও ফিলিস্তিনি নির্মূল অভিযান!
তখনকার ফিলিস্তিনি ব্রিগেড পরিচালক ও পিএলওর বিপ্লবীযুব নেতা মারওয়ান বারগুতিসহ কয়েকশত যোদ্ধাকে বন্দী করে ইসরাইলি কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাতের রামাল্লার সদর দপ্তরসহ ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা বাহিনী এবং সব নিরাপত্তা বেষ্টনীকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়া হয়।
এ ছাডা লেবানন এবং ফিলিস্তিনের হিজবুল্লাহ ও হামাসের ঘাঁটিতে বোমারু বিমান হামলা চালিয়ে আধ্যাত্মিক নেতা শতায়ু অন্ধ হাফেজ আহমদ ইয়াসিনসহ শত শত ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়।
কিছুদিন আগে পত্রিকায় প্রকাশিত একটি জরিপে দেখা যায় যে, ইসরাইল ১৯৪৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে তিন শত বার ফিলিস্তিনি এলাকায় বোমাবর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। শুরু থেকেই যেকোন তুচ্ছ ঘটনার অজুহাতে ইসরাইল ক্রমাগত ফিলিস্তিনিদের ভূমিকে দখল করার মাধ্যমে ইসরাইলি ইহুদিদের পুনর্বাসিত করার কাজ অব্যাহত রাখে।
২০০১ সালে রামাল্লায় পিএলও ‘র সদর দপ্তরকে গুঁড়িয়ে দিয়ে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট আরাফাতকে তার অফিসের চতুর্দিকে ইসরাইলি কামানগোলা ও অস্ত্রধারী সৈন্যদের বেষ্টনীতে নজরবন্দী করে নিজ অফিসেই তাঁকে কোণঠাসা করে ফেলা হয়। ইসরাইল কর্তৃক কয়েকদিনের টানা ধ্বংসযজ্ঞের পর যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বুশ ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট শ্যারনকে আগ্রাসী যুদ্ধটি বন্ধ করার জন্য বলেন, ‘এনাফ অ্যান্ড এনাফ’।
প্রকাশ থাকে যে, ইয়াসির আরাফাত রামাল্লায় নিজ অফিসে কয়েকমাস ইসরাইলি অবরুদ্ধ থাকার পর ক্রমান্বয়ে দুর্বল ও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত ফ্রান্স সরকারের দায়িত্বে তিনি প্যারিসের একটি হাসপাতালে থানান্তরিত হন। কিছুদিন পর তিনি সেই হাসপাতালেই মৃত্যুবরণ করেন।
২০১৪ সালেও ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনের অনেক নারী শিশুসহ অনেক লোক মারা যায় এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়। ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে দিয়ে তদস্থলে ইসরাইলি বসতি স্থাপনার ব্যবস্থা বলবৎ রাখে।
এ বছরও (২০২১ সালের মে মাসে) পবিত্র রমজান মাসের শেষদিকে হামাস কর্তৃক রকেট ছুড়বার অজুহাতে ইসরাইল ঠিক আগের মতোই ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজা শহরে ইসরাইলি আগ্রাসন শুরু হয়। ফিলিস্তিনের বহুতলা বিশিষ্ট দালানগুলোর উপর বোমারু বিমান হামলা চালিয়ে পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি বসতিদের ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে।
টানা ১১ দিনের ইসরাইলি ধ্বংসাত্মক বোমা হামলায় শত শত ঘরবাড়ি ও ফিলিস্তিনের কয়েকশত নারী ও শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর মিশরের মধ্যস্ততায় ফিলিস্তিনি গেরিলাগ্রুপ হামাস ও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যুদ্ধ বন্ধে সম্মত হয়। কিন্তু পরে ইসরাইল আবারও গাজায় বোমাবর্ষণ করে।
তখনকার যুদ্ধসংক্রান্তে অবাক করার বিষয় হচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছিলেন একেবারে চুপ। মি. বাইডেনের এমন নীরব ভূমিকায় সমগ্র বিশ্বকে হতবাক করে দেয়। আমেরিকান রাজনীতিতে সুনাম অর্জন ছাড়াও তিনি একজন মানবতাবাদী নেতা হিসাবে পরিচিত। কিন্তু ফিলিস্তিনে ইসরাইলি সংহিসতার ব্যাপারে মি. বাইডেন কোনো হস্তক্ষেপ না করায় এবং উল্টো ইসরাইলকে সমর্থন দিয়েছেন। এতে করে সে সময় বলে তিনি তার দলে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন।
অনেকের ধারণা, এবারের যুদ্ধটি বন্ধের ব্যাপারে মি. বাইডেন হস্তক্ষেপ করলে অবশ্যই ইসরাইল-ফিলিস্তিন চলমান সহিংসতা এতটা ভয়বহতায় রূপ নিতো না এবং সেখানে অসংখ্য নারী ও শিশুর জানমালের ক্ষতি থেকে ফিলিস্তিনি মুসলমানরা রক্ষা পেতেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
বলা বাহুল্য, বিগত ৭০ বছর ধরে, ফিলিস্তিনে ইসরাইলি আগ্রাসন, দমন, নিপীড়ন চলে আসছে। আগেকার শাসকদের অত্যাচার এবং বর্তমানে ইসরাইলি শাসক নেতানিয়াহু সরকারের নিষ্ঠুরতম নির্যাতন ও পাশবিকতার শিকার শুধু ফিলিস্তিনের নিরীহ জনগণ।
কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে যে, এবারের যুদ্ধে বাইডেন প্রশাসন সরাসরি ইসরাইলের পক্ষ নিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইচ্ছা করলে, ফিলিস্তিনিদের নিদারুণ সংকট করুণতমসহ ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে স্থায়ী মধ্যস্থতা করে নিমিষেই যুদ্ধ ও আগ্রাসন বন্ধ করানোর উদ্যোগ নিলে সেটি সব মহলে সমাদৃত হবে। আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো উদ্যোগ ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ হবে। ফিলিস্তিনের বিবাদমান ও সংঘাতময় অবস্থা নিরসন হবে এবং যুদ্ধটি নিমিষে বন্ধ হবে। ইতিহাস সৃষ্টি করবে।
আসলেই যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদেশগুলোর দিকে সারা পৃথিবী তাকিয়ে আছে। সবাই চায়, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের দীর্ঘকালের বিবাধমান পরিস্থিতির একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান হোকÑ সেটি সবার প্রত্যাশা।
একইভাবে গত ৭ অক্টোবর২০২৩ থেকে শুরু করে বর্তমানে ইসরাইলের দস্যুপনা সারা পৃথিবীকে বিস্মিত করেছে। ফিলিস্তিনিদের উপর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে পৃথিবীর বর্বরতম নিষ্ঠুরতার ইতিহাসকে প্রলম্বিত করে তুলছে। ফিলিস্তিনের উত্তর গাজার ২৫ লক্ষ লোকের অধিবাস ও নিজেদের আবাসভূমি বিতারিত করবার উন্মত্ত উল্লাসে ফিলিস্তিনে বিরামহীন হামালা চালিয়ে হাজার হাজার নারী ও শিশুসহ সর্বস্তরের নিরীহ মানুষে মর্মান্তিকভাবে প্রাণহানী ঘটে চলছে। সবাই জানেন যে, ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনি জনগণই ক্ষতিগ্রস্ত হন। জোরপূর্বক, তাঁদেরকে নিজ আবাসভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। শুধু ফিলিস্তিনিদেরই মর্মান্তিক প্রাণহানি ঘটে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের নিজস্ব ভূখণ্ডে ইসরাইলিদের পুনর্বাসিত করানো হয়। নিজ দেশে ফিলিস্তিনিরা পরাধীন, অবরুদ্ধ এবং নির্মম কারাগারে কার্যত বন্দী!
গত ৭ অক্টোবর হামাস গেরিলাদের ইসরাইলে আকস্মিক হামলায় নিরীহ ইসরাইলিদের হত্যাকাণ্ড ও প্রায় ১৫৫ জনকে ছিনতাইয়ের মাধ্যমে জিম্মি করে তুলে নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বর্তমানে ফিলিস্তিনের পুরো গাজা এলাকা দখল করে নেয়ার হিংস্রতায় কয়েক হাজার নারী ও শিশুসহ অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। নেতানিয়াহুর’র সরকারের ইসরাইলি সৈন্যরা পুরো ফিলিস্তিনকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। বিদ্যুৎ পানি ও সব ধরনের ওষুধ ও খাদ্যসংকটের ফলে,ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
ইসরাইলি সৈন্যরা সীমান্তের সব গেট বন্ধ করে করে লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনে হত্যার নেশায় মেতে উঠেছে।
স্বাধীনতাকামী হামাস গেরিলাদের গাজা থেকে নির্মূল অভিযানের নামে গাজার বেসামরিক নাগরিকদের উপর নির্বিচারে বোমা বর্ষণ ও ভারী মারণাস্র নিয়ে বিরামহীনভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের মানবতাবাদী সমগ্র রাষ্ট্রপুঞ্জ ও জনসমাজ ইসরাইলের এই আগ্রাসনকে শতাব্দীর ভয়াবহ নিষ্ঠুরতম হামলা হিসেবে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
তুরস্কসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বলছেন, একটি ‘গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং তারা সতর্ক করেছেন, ‘গাজায় এমন অসামঞ্জস্যপূর্ণ হামলা বিশ্ব সম্প্রদায়ের চোখে ইসরাইলকে একটি অপ্রত্যাশিত অবস্থানে ঠেলে দিতে পারে। বেসামরিক বসতিতে বোমাবর্ষণ করা, এই অঞ্চলে মানবিক সহায়তা নিয়ে আসা যানবাহনকে অবরুদ্ধ করা এবং এই সমস্ত কিছুকে একটি দক্ষতা হিসেবে উপস্থাপন করা শুধু একটি গোষ্ঠীর প্রতিফলন হতে পারে, কোনো রাষ্ট্রের নয়।’
ফিলিস্তিনের পক্ষে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান তাঁর দৃঢ় সমর্থনের পাশাপাশি, ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ গ্রেটার দ্যান ফাইভ’ (জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য, যাদের হাতে গোটা দুনিয়ার ভাগ্য নির্ধারিত) এর ব্যানারে কাজ করছেন এবং তিনি ইসরাইলের সংঘটিত অন্যায়ের অটল সমালোচক হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। একই সঙ্গে ইসরাইলসহ আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর সাথে তুরস্কের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের মাধ্যমে অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো সহকারে তুরস্ক একটি সম্ভাব্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
ফিলিস্তিনিদের ওপর থেকে সব মানবতাবিরোধী নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে ইসরাইলের প্রতি বিশ্বের ৯০টি দেশ একযোগে আহ্বান জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের আগ্রাসন এবং দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে গত ৩০.২০২২ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় একটি প্রস্তাব পাস হয় । কিন্তু তারপর গত ৬ জানুয়ারি.২০২৩ হিসেবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিকসহ একাধিক নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয় ইসরাইল। জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতকে (আইসিজে) ইসরাইলি দখলদারির বিষয়ে একটি সুপারিশ প্রস্তাব দিতে গত ১৬ জানুয়ারি এক বৈঠক বসে। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য দেশগুলোর সম্মতির ভিত্তিতে ইসরাইলের প্রতি ওই বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
ঢাকার একটি দৈনিকের রিপোর্ট এ মন্তব্য করা হয় যে-
‘ইউক্রেন নিয়ে বিশ্বব্যাপী এখন মাতামাতির অন্ত নাই। যুগ যুগ ধরে ফিলিস্তিনে মানবাধিকার লংঘন করছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনের ব্যাপারে বিশ্বের মানবতাবোধ আর বিবেক কোথায়? পৃথিবীর কত দেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানো হয়। ফিলিস্তিনে কেনো শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানো হয় না? ফিলিস্তিনিদের ঘুম ভাঙে মৃত্যুর আশঙ্কা নিয়ে। ফিলিস্তিনিদের জমি দখল ও হত্যা দুটিই ইসরাইলিদের কাছে ডাল-ভাত। এ বিষয়ে বিশ্ব বিবেক নিশ্চুপ। গাজা কার্যত এক ছাদখোলা কারাগার। ফিলিস্তিনিরা মুসলিম, তাদের উপর অত্যাচার আর তাদের ভূমি জবরদখল করছে এমন একটি পক্ষ, যার উগ্রবাদ স্পষ্ট দৃশ্যমান হলেও কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই! ফিলিস্তিনে মানবতার বিপর্যয় ও গণহত্যা আধুনিক সভ্যতার দীর্ঘস্থায়ী সংকট। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, ইসরাইলের দাবনীয় শক্তির কাছে সবাই যেন নতি স্বীকার করেছে।’
একইভাবে, বিশ্বের নামকরা বিশ্লেষকদের মতে,আরবরাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে তুরস্ক যদি একযোগে উদ্যোগ নেয় এবং ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলি যুদ্ধ ও সংঘাত নিরসনের পথ বেরুবে এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পথ সুগম হতে পারে। তাতে অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদেশগুলোর ভূমিকা থাকা দরকার। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই পারে- ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকটের সমাধানের পথ দেখাতে।
অতএব, সব শান্তিকামী মানুষের একান্ত প্রত্যাশা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনে স্বাধীনতার ব্যাপারে মধ্যস্ততার মাধ্যমে একটি স্থায়ী সমাধান করবে এবং বিশ্বের সব উৎকণ্ঠা বিদূরিত করে শান্তির পথ উন্মোচিত হবে।
কেননা, বিশ্বের বিবেকবান সুশীলসমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করেন, নেতানিয়াহু’র সরকারের পক্ষ থেকে মূলত, ফিলিস্তিনের অস্তিত্ব নিঃশেষ করবার যে অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে, তা সফল হবে না। কেননা, ফিলিস্তিনের প্রতিটি নাগরিক তাঁদের দেশ মাতৃকার জন্য জীবনবাজি যুদ্ধের মধ্য দিয়েই এক দিন দেশটিকে মুক্ত করবে। যেমনÑ ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি মাহমুদ দারবিশের দৃঢ় কণ্ঠে উচ্চারিত হয়,-
“তার চোখজোড়া ফিলিস্তিন । তার নাম ফিলিস্তিন । তার পোশাক আর তার দুঃখগুলো ফিলিস্তিন । তার মাথায় বাঁধা রুমাল, তার পা জোড়া আর তার শরীর ফিলিস্তিন”।
১১ সেপ্টেম্বর (২০০১ সালে) আমেরিকায় সন্ত্রাসী আক্রমণের পর সমগ্র বিশ্বে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছিল। যখন সারাবিশ্ব স্তব্ধ ও হতবাক হয়ে যায়। ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাত সমগ্র ফিলিস্তিনে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি ঘোষণা করেন। টুইন টাওয়ারের ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধারকৃত শত শত আহত লোকের জন্য সর্বপ্রথম নিজের রক্তদানের মধ্য দিয়ে সেই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়। তখন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আরিয়্যাল শ্যারন। ওই সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনের জেনিন, বেথেলহাম, জেরুসালের রামাল্লাসহ গাজার বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ হামলা চালানো হয়। ইসরাইলের অত্যাধুনিক মারণাস্র বহনকারী বোমারু বিমানের বিরতিহীন হামলায় ফিলিস্তিনের কয়েক হাজার প্রাণ হারায়।
ফিলিস্তিনের জনগণের বসবাসকৃত ঘরবাড়ি ও বহুতল বিল্ডিংগুলোর উপর ইসরাইলি সৈন্যদের ক্রমাগত বিমান হামলা, ট্যাংক ও বুলডজার হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দেয়া হয়। নারী ও শিশুসহ নিরীহ ফিলিস্তিনিদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আহত হয় অসংখ্য মানুষ। হাজার হাজার নারী ও শিশুসহ সর্বস্তরের মানুষকে গৃহহারা ও এলাকা ছাড়া করা হয়। পরে সেসব স্পর্শকাতর অঞ্চলগুলো ইসরাইলদের দখলের আওতায় এনে ইসরাইলি ইহুদিদের পুনর্বাসন করা হয় ।
ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতসহ ফিলিস্তিনের অন্যান্য শীর্ষনেতাগণ কয়েক দশকধরে বিশ্বের দ্বারে দ্বারে স্বাধীন ফিলিস্তিন পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশায় সফর করেন। বিরামহীনভাবে চলতে থাকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ইন্তেফাদা তথা গণ-অভুত্থ্যানের সংগ্রাম। কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। শুধু ফিলিস্তিনীরাই ভূমিহারা হচ্ছে, প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছে তাঁদের জনগোষ্ঠী। প্রতিটি সময়েই বিভিন্নভাবে চলেছে ইসরাইলি আগ্রাসন ও ফিলিস্তিনি নির্মূল অভিযান!
তখনকার ফিলিস্তিনি ব্রিগেড পরিচালক ও পিএলওর বিপ্লবীযুব নেতা মারওয়ান বারগুতিসহ কয়েকশত যোদ্ধাকে বন্দী করে ইসরাইলি কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাতের রামাল্লার সদর দপ্তরসহ ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা বাহিনী এবং সব নিরাপত্তা বেষ্টনীকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়া হয়।
এ ছাডা লেবানন এবং ফিলিস্তিনের হিজবুল্লাহ ও হামাসের ঘাঁটিতে বোমারু বিমান হামলা চালিয়ে আধ্যাত্মিক নেতা শতায়ু অন্ধ হাফেজ আহমদ ইয়াসিনসহ শত শত ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়।
কিছুদিন আগে পত্রিকায় প্রকাশিত একটি জরিপে দেখা যায় যে, ইসরাইল ১৯৪৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে তিন শত বার ফিলিস্তিনি এলাকায় বোমাবর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। শুরু থেকেই যেকোন তুচ্ছ ঘটনার অজুহাতে ইসরাইল ক্রমাগত ফিলিস্তিনিদের ভূমিকে দখল করার মাধ্যমে ইসরাইলি ইহুদিদের পুনর্বাসিত করার কাজ অব্যাহত রাখে।
২০০১ সালে রামাল্লায় পিএলও ‘র সদর দপ্তরকে গুঁড়িয়ে দিয়ে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট আরাফাতকে তার অফিসের চতুর্দিকে ইসরাইলি কামানগোলা ও অস্ত্রধারী সৈন্যদের বেষ্টনীতে নজরবন্দী করে নিজ অফিসেই তাঁকে কোণঠাসা করে ফেলা হয়। ইসরাইল কর্তৃক কয়েকদিনের টানা ধ্বংসযজ্ঞের পর যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বুশ ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট শ্যারনকে আগ্রাসী যুদ্ধটি বন্ধ করার জন্য বলেন, ‘এনাফ অ্যান্ড এনাফ’।
প্রকাশ থাকে যে, ইয়াসির আরাফাত রামাল্লায় নিজ অফিসে কয়েকমাস ইসরাইলি অবরুদ্ধ থাকার পর ক্রমান্বয়ে দুর্বল ও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত ফ্রান্স সরকারের দায়িত্বে তিনি প্যারিসের একটি হাসপাতালে থানান্তরিত হন। কিছুদিন পর তিনি সেই হাসপাতালেই মৃত্যুবরণ করেন।
২০১৪ সালেও ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনের অনেক নারী শিশুসহ অনেক লোক মারা যায় এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়। ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে দিয়ে তদস্থলে ইসরাইলি বসতি স্থাপনার ব্যবস্থা বলবৎ রাখে।
এ বছরও (২০২১ সালের মে মাসে) পবিত্র রমজান মাসের শেষদিকে হামাস কর্তৃক রকেট ছুড়বার অজুহাতে ইসরাইল ঠিক আগের মতোই ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজা শহরে ইসরাইলি আগ্রাসন শুরু হয়। ফিলিস্তিনের বহুতলা বিশিষ্ট দালানগুলোর উপর বোমারু বিমান হামলা চালিয়ে পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি বসতিদের ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে।
টানা ১১ দিনের ইসরাইলি ধ্বংসাত্মক বোমা হামলায় শত শত ঘরবাড়ি ও ফিলিস্তিনের কয়েকশত নারী ও শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর মিশরের মধ্যস্ততায় ফিলিস্তিনি গেরিলাগ্রুপ হামাস ও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যুদ্ধ বন্ধে সম্মত হয়। কিন্তু পরে ইসরাইল আবারও গাজায় বোমাবর্ষণ করে।
তখনকার যুদ্ধসংক্রান্তে অবাক করার বিষয় হচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছিলেন একেবারে চুপ। মি. বাইডেনের এমন নীরব ভূমিকায় সমগ্র বিশ্বকে হতবাক করে দেয়। আমেরিকান রাজনীতিতে সুনাম অর্জন ছাড়াও তিনি একজন মানবতাবাদী নেতা হিসাবে পরিচিত। কিন্তু ফিলিস্তিনে ইসরাইলি সংহিসতার ব্যাপারে মি. বাইডেন কোনো হস্তক্ষেপ না করায় এবং উল্টো ইসরাইলকে সমর্থন দিয়েছেন। এতে করে সে সময় বলে তিনি তার দলে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন।
অনেকের ধারণা, এবারের যুদ্ধটি বন্ধের ব্যাপারে মি. বাইডেন হস্তক্ষেপ করলে অবশ্যই ইসরাইল-ফিলিস্তিন চলমান সহিংসতা এতটা ভয়বহতায় রূপ নিতো না এবং সেখানে অসংখ্য নারী ও শিশুর জানমালের ক্ষতি থেকে ফিলিস্তিনি মুসলমানরা রক্ষা পেতেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
বলা বাহুল্য, বিগত ৭০ বছর ধরে, ফিলিস্তিনে ইসরাইলি আগ্রাসন, দমন, নিপীড়ন চলে আসছে। আগেকার শাসকদের অত্যাচার এবং বর্তমানে ইসরাইলি শাসক নেতানিয়াহু সরকারের নিষ্ঠুরতম নির্যাতন ও পাশবিকতার শিকার শুধু ফিলিস্তিনের নিরীহ জনগণ।
কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে যে, এবারের যুদ্ধে বাইডেন প্রশাসন সরাসরি ইসরাইলের পক্ষ নিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইচ্ছা করলে, ফিলিস্তিনিদের নিদারুণ সংকট করুণতমসহ ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে স্থায়ী মধ্যস্থতা করে নিমিষেই যুদ্ধ ও আগ্রাসন বন্ধ করানোর উদ্যোগ নিলে সেটি সব মহলে সমাদৃত হবে। আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো উদ্যোগ ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ হবে। ফিলিস্তিনের বিবাদমান ও সংঘাতময় অবস্থা নিরসন হবে এবং যুদ্ধটি নিমিষে বন্ধ হবে। ইতিহাস সৃষ্টি করবে।
আসলেই যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদেশগুলোর দিকে সারা পৃথিবী তাকিয়ে আছে। সবাই চায়, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের দীর্ঘকালের বিবাধমান পরিস্থিতির একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান হোকÑ সেটি সবার প্রত্যাশা।
একইভাবে গত ৭ অক্টোবর২০২৩ থেকে শুরু করে বর্তমানে ইসরাইলের দস্যুপনা সারা পৃথিবীকে বিস্মিত করেছে। ফিলিস্তিনিদের উপর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে পৃথিবীর বর্বরতম নিষ্ঠুরতার ইতিহাসকে প্রলম্বিত করে তুলছে। ফিলিস্তিনের উত্তর গাজার ২৫ লক্ষ লোকের অধিবাস ও নিজেদের আবাসভূমি বিতারিত করবার উন্মত্ত উল্লাসে ফিলিস্তিনে বিরামহীন হামালা চালিয়ে হাজার হাজার নারী ও শিশুসহ সর্বস্তরের নিরীহ মানুষে মর্মান্তিকভাবে প্রাণহানী ঘটে চলছে। সবাই জানেন যে, ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনি জনগণই ক্ষতিগ্রস্ত হন। জোরপূর্বক, তাঁদেরকে নিজ আবাসভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। শুধু ফিলিস্তিনিদেরই মর্মান্তিক প্রাণহানি ঘটে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের নিজস্ব ভূখণ্ডে ইসরাইলিদের পুনর্বাসিত করানো হয়। নিজ দেশে ফিলিস্তিনিরা পরাধীন, অবরুদ্ধ এবং নির্মম কারাগারে কার্যত বন্দী!
গত ৭ অক্টোবর হামাস গেরিলাদের ইসরাইলে আকস্মিক হামলায় নিরীহ ইসরাইলিদের হত্যাকাণ্ড ও প্রায় ১৫৫ জনকে ছিনতাইয়ের মাধ্যমে জিম্মি করে তুলে নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বর্তমানে ফিলিস্তিনের পুরো গাজা এলাকা দখল করে নেয়ার হিংস্রতায় কয়েক হাজার নারী ও শিশুসহ অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। নেতানিয়াহুর’র সরকারের ইসরাইলি সৈন্যরা পুরো ফিলিস্তিনকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। বিদ্যুৎ পানি ও সব ধরনের ওষুধ ও খাদ্যসংকটের ফলে,ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
ইসরাইলি সৈন্যরা সীমান্তের সব গেট বন্ধ করে করে লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনে হত্যার নেশায় মেতে উঠেছে।
স্বাধীনতাকামী হামাস গেরিলাদের গাজা থেকে নির্মূল অভিযানের নামে গাজার বেসামরিক নাগরিকদের উপর নির্বিচারে বোমা বর্ষণ ও ভারী মারণাস্র নিয়ে বিরামহীনভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের মানবতাবাদী সমগ্র রাষ্ট্রপুঞ্জ ও জনসমাজ ইসরাইলের এই আগ্রাসনকে শতাব্দীর ভয়াবহ নিষ্ঠুরতম হামলা হিসেবে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
তুরস্কসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বলছেন, একটি ‘গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং তারা সতর্ক করেছেন, ‘গাজায় এমন অসামঞ্জস্যপূর্ণ হামলা বিশ্ব সম্প্রদায়ের চোখে ইসরাইলকে একটি অপ্রত্যাশিত অবস্থানে ঠেলে দিতে পারে। বেসামরিক বসতিতে বোমাবর্ষণ করা, এই অঞ্চলে মানবিক সহায়তা নিয়ে আসা যানবাহনকে অবরুদ্ধ করা এবং এই সমস্ত কিছুকে একটি দক্ষতা হিসেবে উপস্থাপন করা শুধু একটি গোষ্ঠীর প্রতিফলন হতে পারে, কোনো রাষ্ট্রের নয়।’
ফিলিস্তিনের পক্ষে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান তাঁর দৃঢ় সমর্থনের পাশাপাশি, ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ গ্রেটার দ্যান ফাইভ’ (জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য, যাদের হাতে গোটা দুনিয়ার ভাগ্য নির্ধারিত) এর ব্যানারে কাজ করছেন এবং তিনি ইসরাইলের সংঘটিত অন্যায়ের অটল সমালোচক হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। একই সঙ্গে ইসরাইলসহ আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর সাথে তুরস্কের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের মাধ্যমে অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো সহকারে তুরস্ক একটি সম্ভাব্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
ফিলিস্তিনিদের ওপর থেকে সব মানবতাবিরোধী নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে ইসরাইলের প্রতি বিশ্বের ৯০টি দেশ একযোগে আহ্বান জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের আগ্রাসন এবং দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে গত ৩০.২০২২ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় একটি প্রস্তাব পাস হয় । কিন্তু তারপর গত ৬ জানুয়ারি.২০২৩ হিসেবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিকসহ একাধিক নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয় ইসরাইল। জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতকে (আইসিজে) ইসরাইলি দখলদারির বিষয়ে একটি সুপারিশ প্রস্তাব দিতে গত ১৬ জানুয়ারি এক বৈঠক বসে। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য দেশগুলোর সম্মতির ভিত্তিতে ইসরাইলের প্রতি ওই বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
ঢাকার একটি দৈনিকের রিপোর্ট এ মন্তব্য করা হয় যে-
‘ইউক্রেন নিয়ে বিশ্বব্যাপী এখন মাতামাতির অন্ত নাই। যুগ যুগ ধরে ফিলিস্তিনে মানবাধিকার লংঘন করছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনের ব্যাপারে বিশ্বের মানবতাবোধ আর বিবেক কোথায়? পৃথিবীর কত দেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানো হয়। ফিলিস্তিনে কেনো শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানো হয় না? ফিলিস্তিনিদের ঘুম ভাঙে মৃত্যুর আশঙ্কা নিয়ে। ফিলিস্তিনিদের জমি দখল ও হত্যা দুটিই ইসরাইলিদের কাছে ডাল-ভাত। এ বিষয়ে বিশ্ব বিবেক নিশ্চুপ। গাজা কার্যত এক ছাদখোলা কারাগার। ফিলিস্তিনিরা মুসলিম, তাদের উপর অত্যাচার আর তাদের ভূমি জবরদখল করছে এমন একটি পক্ষ, যার উগ্রবাদ স্পষ্ট দৃশ্যমান হলেও কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই! ফিলিস্তিনে মানবতার বিপর্যয় ও গণহত্যা আধুনিক সভ্যতার দীর্ঘস্থায়ী সংকট। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, ইসরাইলের দাবনীয় শক্তির কাছে সবাই যেন নতি স্বীকার করেছে।’
একইভাবে, বিশ্বের নামকরা বিশ্লেষকদের মতে,আরবরাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে তুরস্ক যদি একযোগে উদ্যোগ নেয় এবং ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলি যুদ্ধ ও সংঘাত নিরসনের পথ বেরুবে এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পথ সুগম হতে পারে। তাতে অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদেশগুলোর ভূমিকা থাকা দরকার। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই পারে- ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকটের সমাধানের পথ দেখাতে।
অতএব, সব শান্তিকামী মানুষের একান্ত প্রত্যাশা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনে স্বাধীনতার ব্যাপারে মধ্যস্ততার মাধ্যমে একটি স্থায়ী সমাধান করবে এবং বিশ্বের সব উৎকণ্ঠা বিদূরিত করে শান্তির পথ উন্মোচিত হবে।
কেননা, বিশ্বের বিবেকবান সুশীলসমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করেন, নেতানিয়াহু’র সরকারের পক্ষ থেকে মূলত, ফিলিস্তিনের অস্তিত্ব নিঃশেষ করবার যে অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে, তা সফল হবে না। কেননা, ফিলিস্তিনের প্রতিটি নাগরিক তাঁদের দেশ মাতৃকার জন্য জীবনবাজি যুদ্ধের মধ্য দিয়েই এক দিন দেশটিকে মুক্ত করবে। যেমনÑ ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি মাহমুদ দারবিশের দৃঢ় কণ্ঠে উচ্চারিত হয়,-
“তার চোখজোড়া ফিলিস্তিন । তার নাম ফিলিস্তিন । তার পোশাক আর তার দুঃখগুলো ফিলিস্তিন । তার মাথায় বাঁধা রুমাল, তার পা জোড়া আর তার শরীর ফিলিস্তিন”।