নন্দিনী লুইজা
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ২০২৩ এ মানবাধিকার কর্মী ইরানের নাগরিক নার্গিস মোহাম্মাদী পেয়েছেন। এটা আমরা নারী হিসেবে গর্বিত। তবে তাঁর এই অর্জন পেতে যে ত্যাগ, তিতিক্ষা, অপমান, যন্ত্রণা, কষ্ট, অধিকার আদায়ের জন্য কারাবন্দি, বেতাঘাত পেয়েছে এত কিছু সহ্য করার পরও সে পিছু হাঁটেনি। সেই নারীকে সবার আগে স্যালুট।
আমরা যারা নারী তাঁকে কতটুকু মূল্যায়ন করতে পারব জানি না। তবে এমন নারী প্রতিটা দেশে জন্ম হওয়া দরকার এবং সত্য ন্যায়ের জন্য লড়াই করে সেটাকে সর্বজনীন করা একান্ত কাম্য। তাঁকে নিয়ে কতটুকু ঝড় তুলেছি আমার জানা নেই। আমরা নারীরা যদি নারীর জন্য লড়াই না করি তাহলে আমাদের ন্যায্য যে পাওনা, সেই পাওনা গুলো আমরা জন্মের পর থেকে বলতে পারি না, সেগুলো আদায় হবে কি করে?
আমি দেখেছি খুব কম নারী সব বিপদকে মাড়িয়ে কথার ঝঞ্ঝারাকে বুড়া আঙ্গুল দেখিয়ে সবার জন্য যে অবদান রেখেছেন তাদেরকে নিয়ে সমালোচনা করেছি এবং করছি। কি অদ্ভুত আমরা নারী হয়ে তাদেরকে যদি সমর্থন, সহযোগিতা, উৎকর্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়তা না করি তাহলে এই আন্দোলন কি করে অর্জন হবে।
আমি নার্গিস মোহাম্মাদীকে আবারও স্যালুট জানাই সে- কে কি করল আর করল না, কে বাহবা দিলো আর দিলো না; তার অপেক্ষা তিনি করেননি। তিনি দুই সন্তানের জননী হয়েও নারীর মুক্তির জন্য তাঁর দেশে যে আন্দোলন তৈরি করেছেন এ আন্দোলন শুধু তাঁর দেশের নয় এ আন্দোলন গোটা বিশ্বের । প্রচণ্ড রকমের নিষ্পেষিত হয়ে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য সোচ্চার, সেই ক্ষেত্রে নারী যদি নারীর সহমর্মিতা, সহযোগিতা যদি পায় তাহলে সেটা তাঁর বাড়তি শক্তি।
পুরুষ জন্মগতভাবেই নারীর পাশে থাকে বিভিন্ন ভঙ্গিমায়। সেটা বড় বিষয় নয় তবে পুরুষের মানসিকতা বুঝে যদি নারী কাজ করে, সেই নারী একটা নারী বন্ধুর চেয়ে সহযোগিতা বেশি পায়। কেন জানিনা আমার দেখা মতে বয়স তো কম হলো না আমি খুব কম দেখেছি একজন নারী অন্য একজন নারীর সফলতা তাঁর কর্ম উদ্দীপনা, তাঁর আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য অতন্দ্র প্রহরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। বরঞ্চ এক নারী অন্য নারীর সমালোচনা করে পুরুষদের আনন্দে কথা বলার খোরাক করে দেয়। এটা মনে হয় নারী বুঝতে পারে না।
পৃথিবীতে নর-নারী ছাড়া অন্য কোন প্রাণী জীবন জীবিকা উন্নয়ন, নিজের অবস্থা তৈরি করা, আন্দোলন করা, অন্য কোন জীব আছে বলে জানা নেই। তাহলে আমরা নারীরা কেন আমাদের স্বজাতি এক নারীর ভালো কাজের জন্য স্বীকৃতি দিতে তার পাশে দাঁড়াতে কোথায় সমস্যা?
আমার দেশেও ইদানীং দেখছি বোরকা, হিজাব এত বেশি মাত্রায় বেড়ে গেছে যা আমার মায়ের আমলেও আমি দেখিনি। যদি বলি আজ থেকে ৫০ বছর আগে এ দেশের অবস্থা কি ছিল। অবশ্যই কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিল। তখন প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল না। এখন গোটা বিশ্ব আমাদের হাতের মুঠোয় কিন্তু মানসিকতা ঠিক আদিমকালেই রয়ে গেছে। তবে এই প্রযুক্তির যুগে এসে আমরা কিভাবে প্রযুক্তির অপব্যবহার করে নিজেদেরকে ধর্মের লেবাস পড়ে সুফি সাজার একটা প্রবণতা রয়ে গেছে। ধর্ম যার যার কর্ম কিন্তু নিজের। আমার কর্ম দিয়েই তো ধর্মের উপলব্ধি। তাহলে শুধু শুধু মিথ্যা খোলস পড়ে ধর্মকে এভাবে কলঙ্কিত করা সমীচীন কি প্রশ্ন থেকে যায়!! আমরা কাউকে অনুসরণ না করে নিজে জানবো, বুঝবো তারপর সিদ্ধান্ত নিবো, আমার জন্য কোনটা উপযুক্ত। অহেতুক গোঁড়ামি, কুসংস্কার এগুলোর পেছনে না ছুটে নিজের মূল্যবোধ বাড়াতে হবে। নার্গিস মোহাম্মদী তুমি আমাদের জন্য সমাজে যে অবদান রেখেছো তুমি তাঁর স্বীকৃতি দেরিতে হলেও পেয়েছো। তোমার প্রাপ্তি নোবেল পুরস্কারের চেয়েও যদি বড় কিছু থাকত সেটা। তুমি যে বিষয় নিয়ে একটা দেশের সমস্ত নারী জাতির হয়ে আন্দোলন করছো এটা সত্যি আমার দেশে আমরা এভাবে বের হতে পারব কি না এ সাহসটুকু হবে কি না জানি না। তোমাকে নিয়ে আমাদের গর্ব হওয়া উচিত এবং আমাদের নারীরা তাদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে সোচ্চার হবে কিনা, সাহস হবে কি না, বলা মুশকিল তবে তুমি আমাদের পথপ্রদর্শক। যদি কখনও পিঠ দেওয়ালে ঠেকে যায় তখন তোমার এই ত্যাগ এই প্রতিবাদী যেন আমাদের সত্য হয়ে, সাহসী হয়ে আশীর্বাদ হয়ে পাশে দাঁড়ায়। তোমাকে আবারও স্যালুট মানবাধিকার কর্মী নারীবাদী কর্মী, সত্যের কর্মী, ন্যায় নিষ্ঠার কর্মী নার্গিস মোহাম্মদী।
লেখক : শিক্ষক, লেখক-গবেষক ও প্রকাশক, বর্ণপ্রকাশ লিমিটেড।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ২০২৩ এ মানবাধিকার কর্মী ইরানের নাগরিক নার্গিস মোহাম্মাদী পেয়েছেন। এটা আমরা নারী হিসেবে গর্বিত। তবে তাঁর এই অর্জন পেতে যে ত্যাগ, তিতিক্ষা, অপমান, যন্ত্রণা, কষ্ট, অধিকার আদায়ের জন্য কারাবন্দি, বেতাঘাত পেয়েছে এত কিছু সহ্য করার পরও সে পিছু হাঁটেনি। সেই নারীকে সবার আগে স্যালুট।
আমরা যারা নারী তাঁকে কতটুকু মূল্যায়ন করতে পারব জানি না। তবে এমন নারী প্রতিটা দেশে জন্ম হওয়া দরকার এবং সত্য ন্যায়ের জন্য লড়াই করে সেটাকে সর্বজনীন করা একান্ত কাম্য। তাঁকে নিয়ে কতটুকু ঝড় তুলেছি আমার জানা নেই। আমরা নারীরা যদি নারীর জন্য লড়াই না করি তাহলে আমাদের ন্যায্য যে পাওনা, সেই পাওনা গুলো আমরা জন্মের পর থেকে বলতে পারি না, সেগুলো আদায় হবে কি করে?
আমি দেখেছি খুব কম নারী সব বিপদকে মাড়িয়ে কথার ঝঞ্ঝারাকে বুড়া আঙ্গুল দেখিয়ে সবার জন্য যে অবদান রেখেছেন তাদেরকে নিয়ে সমালোচনা করেছি এবং করছি। কি অদ্ভুত আমরা নারী হয়ে তাদেরকে যদি সমর্থন, সহযোগিতা, উৎকর্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়তা না করি তাহলে এই আন্দোলন কি করে অর্জন হবে।
আমি নার্গিস মোহাম্মাদীকে আবারও স্যালুট জানাই সে- কে কি করল আর করল না, কে বাহবা দিলো আর দিলো না; তার অপেক্ষা তিনি করেননি। তিনি দুই সন্তানের জননী হয়েও নারীর মুক্তির জন্য তাঁর দেশে যে আন্দোলন তৈরি করেছেন এ আন্দোলন শুধু তাঁর দেশের নয় এ আন্দোলন গোটা বিশ্বের । প্রচণ্ড রকমের নিষ্পেষিত হয়ে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য সোচ্চার, সেই ক্ষেত্রে নারী যদি নারীর সহমর্মিতা, সহযোগিতা যদি পায় তাহলে সেটা তাঁর বাড়তি শক্তি।
পুরুষ জন্মগতভাবেই নারীর পাশে থাকে বিভিন্ন ভঙ্গিমায়। সেটা বড় বিষয় নয় তবে পুরুষের মানসিকতা বুঝে যদি নারী কাজ করে, সেই নারী একটা নারী বন্ধুর চেয়ে সহযোগিতা বেশি পায়। কেন জানিনা আমার দেখা মতে বয়স তো কম হলো না আমি খুব কম দেখেছি একজন নারী অন্য একজন নারীর সফলতা তাঁর কর্ম উদ্দীপনা, তাঁর আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য অতন্দ্র প্রহরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। বরঞ্চ এক নারী অন্য নারীর সমালোচনা করে পুরুষদের আনন্দে কথা বলার খোরাক করে দেয়। এটা মনে হয় নারী বুঝতে পারে না।
পৃথিবীতে নর-নারী ছাড়া অন্য কোন প্রাণী জীবন জীবিকা উন্নয়ন, নিজের অবস্থা তৈরি করা, আন্দোলন করা, অন্য কোন জীব আছে বলে জানা নেই। তাহলে আমরা নারীরা কেন আমাদের স্বজাতি এক নারীর ভালো কাজের জন্য স্বীকৃতি দিতে তার পাশে দাঁড়াতে কোথায় সমস্যা?
আমার দেশেও ইদানীং দেখছি বোরকা, হিজাব এত বেশি মাত্রায় বেড়ে গেছে যা আমার মায়ের আমলেও আমি দেখিনি। যদি বলি আজ থেকে ৫০ বছর আগে এ দেশের অবস্থা কি ছিল। অবশ্যই কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিল। তখন প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল না। এখন গোটা বিশ্ব আমাদের হাতের মুঠোয় কিন্তু মানসিকতা ঠিক আদিমকালেই রয়ে গেছে। তবে এই প্রযুক্তির যুগে এসে আমরা কিভাবে প্রযুক্তির অপব্যবহার করে নিজেদেরকে ধর্মের লেবাস পড়ে সুফি সাজার একটা প্রবণতা রয়ে গেছে। ধর্ম যার যার কর্ম কিন্তু নিজের। আমার কর্ম দিয়েই তো ধর্মের উপলব্ধি। তাহলে শুধু শুধু মিথ্যা খোলস পড়ে ধর্মকে এভাবে কলঙ্কিত করা সমীচীন কি প্রশ্ন থেকে যায়!! আমরা কাউকে অনুসরণ না করে নিজে জানবো, বুঝবো তারপর সিদ্ধান্ত নিবো, আমার জন্য কোনটা উপযুক্ত। অহেতুক গোঁড়ামি, কুসংস্কার এগুলোর পেছনে না ছুটে নিজের মূল্যবোধ বাড়াতে হবে। নার্গিস মোহাম্মদী তুমি আমাদের জন্য সমাজে যে অবদান রেখেছো তুমি তাঁর স্বীকৃতি দেরিতে হলেও পেয়েছো। তোমার প্রাপ্তি নোবেল পুরস্কারের চেয়েও যদি বড় কিছু থাকত সেটা। তুমি যে বিষয় নিয়ে একটা দেশের সমস্ত নারী জাতির হয়ে আন্দোলন করছো এটা সত্যি আমার দেশে আমরা এভাবে বের হতে পারব কি না এ সাহসটুকু হবে কি না জানি না। তোমাকে নিয়ে আমাদের গর্ব হওয়া উচিত এবং আমাদের নারীরা তাদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে সোচ্চার হবে কিনা, সাহস হবে কি না, বলা মুশকিল তবে তুমি আমাদের পথপ্রদর্শক। যদি কখনও পিঠ দেওয়ালে ঠেকে যায় তখন তোমার এই ত্যাগ এই প্রতিবাদী যেন আমাদের সত্য হয়ে, সাহসী হয়ে আশীর্বাদ হয়ে পাশে দাঁড়ায়। তোমাকে আবারও স্যালুট মানবাধিকার কর্মী নারীবাদী কর্মী, সত্যের কর্মী, ন্যায় নিষ্ঠার কর্মী নার্গিস মোহাম্মদী।
লেখক : শিক্ষক, লেখক-গবেষক ও প্রকাশক, বর্ণপ্রকাশ লিমিটেড।