কবি আসাদ চৌধুরীকে কানাডায় দাফন নিয়ে  বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন 

প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:১৬ , অনলাইন ভার্সন

কবি আসাদ চৌধুরীকে 
কানাডায় দাফন নিয়ে 
বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন 

বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কবি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদ চৌধুরী গত ৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে কানাডার টরন্টোতে ইন্তেকাল করেন। তাকে বিদেশের মাটিতেই দাফন করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর মত একজন  স্বনামধন্য কবি ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানকে কেন বিদেশের মাটিতে সমাহিত করা হলো, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। 
গত বছর নভেম্বরে আসাদ চৌধুরীর ব্ল্যাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। এছাড়াও শ্বাসকষ্ট ও কিডনিসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত কবি দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে প্রায় হাসপাতালেই সংকটজনক অবস্থায় ছিলেন। সর্বশেষ তাকে টরন্টোর অদূরে অশোয়া শহরে লেক রিজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। 
কবির স্ত্রী শাহানা চৌধুরী, মেয়ে নুসরাত জাহান চৌধুরী শাঁওলী, দুই ছেলে আসিফ চৌধুরী ও জারিফ চৌধুরীসহ নাতি-নাতনি নিয়ে কয়েক বছর ধরে কানাডার টরন্টোতে বসবাস করছিলেন। মৃত্যুর পর পরিবারের সিদ্ধান্তে বিদেশের মাটিতে দাফন করা হয়েছে আসাদ চৌধুরীকে। পরিবার কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। 
একাধিক সূত্র জানায়, আসাদ চৌধুরী বাংলাদেশের খ্যাতিমান কবি। তিনি বাংলাদেশের অহঙ্কার। মৃত্যুর পর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার মরদেহ দেশে দাফন করার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আগ্রহ দেখানো হয়নি। এ কারণেই পরিবারের সদস্যরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। 
অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের দায়িত্বশীল একটি সূত্র বলছে ভিন্ন কথা। সূত্রটি বলছে, পরিবার আসাদ চৌধুরীর মরদেহের দাফন নিয়ে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার ও হাইকমিশনের কিছু করার ছিল না। তবে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে। হাইকমিশনার খলিলুর রহমানসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন। 
আরেকটি সূত্র বলছে, আসাদ চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা রক্ষণশীল। তারাই চাননি তাকে বাংলাদেশে দাফন করা হোক। এমনকী স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির দাবি ছিল আসাদ চৌধুরীর মরদেহ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য টরন্টোর ড্যানফোর্থে স্থায়ী শহীদ মিনারে রাখা হোক। কিন্তু পরিবার তাতে সায় দেয়নি। পরিবারের সিদ্ধান্ত ছিল- আসাদ চৌধুরীর মরদেহ হাসপাতাল থেকে সরাসরি মসজিদে যাবে। সেখান থেকে জানাযা শেষে নেওয়া হবে গোরস্থানে। শেষ পর্যন্ত পরিবারের সিদ্ধান্তেই সবকিছু হয়েছে। 
এ ব্যাপারে পরিবারের বক্তব্য জানতে আসাদ চৌধুরীর ছেলে আসিফ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তার মোবাইলে ফোনে মেসেজও রাখা হয়েছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি ফোন কল ব্যাক করেননি। 
উল্লেখ্য, কবি আসাদ চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৬৪-১৯৭২ পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীকালে ঢাকায় থিতু হওয়ার পর একাধিক খবরের কাগজে সাংবাদিকতা করেছেন তিনি। ১৯৮৫-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ভয়েস অব জার্মানির বাংলাদেশ সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে দীর্ঘকাল চাকরির পর পরিচালক হিসাবে অবসর নেন তিনি।
কবি আসাদ চৌধুরী ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ২০১৩ সালে একুশে পদক লাভ করেন। পাশাপাশি, আবুল হাসান স্মৃতি পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু সম্মাননা, আলাওল সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন।
শেষ বিদায় জানালো হলো আসাদ চৌধুরীকে : গত ৬ অক্টোবর শুক্রবার জুম্মার নামাজের আগে এক ঘন্টার জন্য সবার শেষ শ্রদ্ধা ও বিদায় জানানো উপলক্ষে টরন্টোর নাগেট্ মসজিদে কবির কফিনবন্দী দেহ রাখা হয়। নামাজের পর টরন্টোর বাঙালি কমিউনিটির সুপরিচিত নাগেট মসজিদ চত্ত্বরে তাঁর জানাজা পড়ানো হয়। স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিপুল সংখ্যক মানুষ সেই জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। কবির সন্তানদের ইচ্ছানুযায়ী টরন্টোর পিকারিং শহরের ডাফিন মেডো সেমেট্রিতে তাকে দাফন করা হয়। 
মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে প্রাপ্য রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘গার্ড অব অনার’ প্রদানের জন্য বাংলাদেশ দুতাবাসের পক্ষ থেকে টরন্টো কনস্যুলেট অফিসের কনসাল জেনারেল মো. লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে অন্যান্য কর্মকর্তারা বেলা সাড়ে ১১টায় নাগেট মসজিদে আসেন। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এবং পুষ্পস্তবক নিয়ে তার শেষ বিদায়ে শ্রদ্ধা ও তাকে রাষ্ট্রীয় ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করেন। এছাড়াও কনস্যুলেট অফিসের পক্ষ থেকে একটি শোক বিবৃতিও প্রকাশ করা হয়েছে।
তিনি একাধারে শিক্ষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রাক্তন প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতির কর্মী এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি তিনি ব্যক্তিগত জীবনের পেশাগত পরিচয় ছাপিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন দেশের ও বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধানতম কবি। তাঁর কবিতা এবং লেখালেখির পরিচয় দিতে গেলে একটি বড় অধ্যায়ের প্রয়োজন কবে। কবিতার বইয়ের পাশাপাশি তার রচিত শিশুতোষ গ্রন্থ, ছড়া, অনুবাদ, জীবনী এবং সম্পাদনা গ্রন্থ রয়েছে। পেশাগত জীবনের শেষে তাঁর ছেলেমেয়েদের কাছে কানাডাতে প্রবাস জীবনে থিতু হয়েছিলেন। সেই সূত্রে সদাহাস্যময় অমায়িক এই কবি কানাডার বাঙালি সমাজের এক প্রধানতম মুখ এবং চেনা-অচেনা সবার ‘আসাদ ভাই’ হয়ে উঠেছিলেন। 
দেশেও যেমন অসংখ্য সংগঠনের সাথে জড়িত থাকতেন, তেমনি এই প্রবাসেও অসংখ্য সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। যেমন এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের আজীবন সদস্য, বাংলা একাডেমি ঢাকার ফেলো, বাংলাদেশ রেডিও-টেলিভিশন শিল্পী অ্যাসোসিশেনের সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর উপদেষ্টাসহ আরো অনেক সংগঠনে তিনি হয় প্রতিষ্ঠাতা, নয়তো সংগঠক ছিলেন। প্রবাসে বসেও দেশের যে কোন বিষয়ে প্রতিবাদ, আন্দোলন, সভা-সমাবেশে তিনি ছিলেন অগ্রণি তালিকায়। 
কবির মৃত্যুতে স্থানীয় সব সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রচারমাধ্যম, লেখক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশন, বিভিন্ন জেলা সমিতি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁর শেষ বিদায় ও শ্রদ্ধা জানানোর জন্য টরন্টোর নাগেট্ মসজিদে কবির কফিনবন্দী দেহ রাখা হয়। সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে এবং শেষ দেখা দেখতে এই প্রবাসে কাজকর্ম ফেলে ছুটে গেছেন হাজারো মানুষ। অনেকেই সংগঠনের পক্ষ থেকে, আবার অনেকে ব্যক্তিগতভাবে। বেশিরভাগ সংগঠনের পক্ষ থেকে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, দেশ এবং জাতি একজন শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারালো এবং দেশের এই দুঃসময়ে তাঁর মৃত্যু জাতীয় জীবনের অপূরণীয় ক্ষতি! তবু তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর সাহিত্যকৃতিতে।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041