সম্মান

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১০:০৪ , অনলাইন ভার্সন
ড. রফিকুল ইসলাম

সম্মান পাওয়া খুব গর্বের বিষয়। এটি তোমাকে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখায়। তাই নিজেকে কখনো এতটা সস্তা করে তুলবে না, যাতে করে মানুষ সম্মান দিতে ভুলে যায়। এখানে আত্মসম্মান এবং সম্মান নিয়ে কিছু কথা আলোচনা করা হলো।

সম্মান হলো আয়নার মতো। তুমি অন্যকে যত বেশি সম্মান দেবে, এর চেয়ে অনেক বেশি সম্মান তুমি তাদের কাছ থেকে ফিরে পাবে। অন্য মানুষের অনুভূতিকে সম্মান করো। এটি হয়তো তোমার কাছে কিছুই না-ও হতে পারে, তবে এটি তাদের কাছে সবকিছু হতে পারে। মানুষ তোমার পছন্দ বা অপছন্দ নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়। সে শুধু চায় তুমি তাকে একজন মানুষ হিসেবে সম্মান করো। সম্মান পেতে গেলে আগে সম্মান দিতে জানতে হয়, সম্মান না দিয়ে সম্মান আশা করাটা একটা বোকামির কাজ। যে ভুল স্বীকার করে, সে কখনো ছোট হয় না। বরং তার সম্মান আরও বেড়ে যায়। প্রেম ও সম্মান একে অপরের পরিপূরক। সম্মান ছাড়া প্রেম হারিয়ে যায়। নিজেকে সম্মান করো, তাহলে অন্যরাও তোমাকে সম্মান করবে। যেমন টাকা হারিয়ে গেলে কিছুই হারায় না। তবে সম্মান হারালে সব হারিয়ে যায়। জীবনে এমন কাউকে ভালোবাসো যে তোমাকে ভালোবাসতে না পারলেও সম্মান করবে।
হারিয়ে যাওয়া সবকিছু ফিরে পাওয়া গেলেও হারিয়ে যাওয়া সম্মান কখনো ফিরে পাওয়া যায় না। তাকে কখনো সম্মান করো না, যে তোমাকে সম্মান করে না। এটাকে অহংকার বলবে না, এটাকে বলে আত্মসম্মান। 

সব সময় এমন মানুষের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করো যে তোমাকে সম্মান দেয়। কারণ সম্মান ভালোবাসার চেয়েও দামি। তুমি সৌজন্য দাবি করতে পারো, তবে মনে রেখো তোমাকে সম্মান অর্জন করতে হবে। মেয়েদেরকে দেওয়ার মতো অনেক উপহারই থাকে। তবে তাদেরকে দেওয়ার মতো সবচেয়ে বড় উপহার হলো সম্মান। যখন আমরা অন্যান্য জীবিত জিনিসের প্রতি আমাদের সম্মান দেখাই, তখন তারা আমাদের প্রতি শ্রদ্ধার সঙ্গে সাড়া দেয়। সবার সঙ্গে একইভাবে কথা বলো, সে আবর্জনা সংগ্রহকারীই হোক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি। তুমি অন্যদের সম্মান করলে অন্যদের কাছ থেকেও সম্মান পাবে, আর অন্যকে অবহেলা করলে তারাও একদিন তোমাকে অবহেলা করবে। সাফল্য পেতে গেলে যেমন নিজের পথ নিজেই তৈরি করতে হয়, ঠিক তেমনি অন্যের চোখে সম্মান পেতে হলে আগে নিজের চোখে সম্মান তৈরি করতে হবে। সম্মান ও ভালোবাসার গভীরতা সমুদ্রের গভীরতার চেয়েও বেশি। আমাদের এমনভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে হবে, যা অন্যদের প্রতি আমাদের সম্মান প্রদর্শন করে।

মা ও স্ত্রী দুজনকে অধিক সম্মান এবং ভালোবাসা দাও। কারণ একজন তোমাকে পৃথিবীতে এনেছে, আর অন্যজন তোমার জন্য পৃথিবীর সব আপনজন ছেড়ে তোমার কাছে এসেছে। কারণ সুখী জীবনের রহস্য হলো সম্মান। নিজের জন্য সম্মান এবং অন্যদের জন্য সম্মান। সম্পদ থেকে যে সম্মান আসে, তা বেশি দিন স্থায়ী হয় না। সম্মান করতে শেখো সেই সব মানুষকে, যাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে তারা তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে না। যেখানে একতা আছে, সেখানে পরস্পরের মধ্যে সম্মানবোধ জন্মায়। যেখানে সম্মান থাকে, সেখানে ভালোবাসা ও শান্তি পাশাপাশি অবস্থান করে। বর্তমান যুগে খুব কম মানুষই আছে, যারা অন্যকে তার যোগ্য সম্মান দেয়। যারা তোমাকে অসম্মান করে, তাদের থেকে সব সময় দূরে থাকার চেষ্টা করবে। তাহলে জীবনে অনেক পরিবর্তন দেখতে পাবে। এখানে দেওয়া সম্মান নিয়ে কথাগুলো তোমার আত্মসম্মান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি। নিজেদের প্রতি শ্রদ্ধা আমাদের নৈতিকতাকে নির্দেশ করে; অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা আমাদের আচরণ নির্দেশ করে।

যে অন্যকে ভালোবাসে, তিনি সর্বদা তাদের কাছে প্রিয়। যে অন্যকে সম্মান করে, তিনি সর্বদা তাদের দ্বারা সম্মানিত। সম্মান হলো দ্বিমুখী রাস্তা, যদি পেতে চাও তাহলে দিতে হবে। যে ব্যক্তি মহানের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়, সে তার নিজের মহত্ত্বের পথ প্রশস্ত করে। তুমি নিজেকে যত বেশি জানবে এবং সম্মান করবে, তোমার চারপাশের লোকেদের ওপর তোমার প্রভাব তত বেশি পড়বে। যদি লোকেরা তোমাকে সম্মান করে, তবে তাদের সম্মান করো। যদি তারা তোমাকে অসম্মান করে, তবু তাদের সম্মান করো। সবাইকেই সমান সম্মান দিয়ো। সম্মান পাওয়ার আগে সম্মান দেওয়া খুবই জরুরি। আমরা যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে চাই, তাহলে আগে আইনকে সম্মান করতে হবে। সম্মান তাদের জন্য, যারা এটি প্রাপ্য; তাদের জন্য নয়, যারা এটি দাবি করে। প্রতিপক্ষকে সম্মান করো, কিন্তু কাউকে ভয় করো না। তুমি যদি মানুষের সঙ্গে সঠিক আচরণ করো, তবে তারাও তোমার সঙ্গে সঠিক আচরণ করবে। প্রত্যেক মানুষই, সে যে জাত অথবা যে ধর্মের হোক না কেন, সম্মানের যোগ্য। আমরা নিজেদের যেমন সম্মান করি, তেমনি আমাদের প্রত্যেককে সম্মান করতে হবে। সুখের চেয়ে সম্মানটা অনেক বেশি দামি। সম্মান তারই প্রাপ্য, যে অন্যকে সম্মান করে।

বইয়ের পাতা শেষ করলে কেউ শিক্ষিত হয় না। শিক্ষিত তো সেই, যে অন্যকে সম্মান করে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জনপ্রিয়তার চেয়ে সম্মান অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং অনেক বেশি দামি। তোমার আত্মসম্মান বাড়ানোর জন্য সবার আগে মানুষকে সাহায্য করতে হবে। তুমি নিজের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করতে চাও, মানুষের সঙ্গে তেমন আচরণই করো। কাউকে জোর করে সম্মান দেওয়া যায় না, কিংবা সম্মান ভিক্ষা করা যায় না। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্জিত এবং প্রাপ্ত হয়। সম্মান পাওয়া যেমন ভাগ্যের ব্যাপার, তেমনি অন্যকে সম্মান করাও ভালো শিক্ষার পরিচয়। তাই নিজের আত্মসম্মান ধরে রাখার সঙ্গে সঙ্গে অন্যকেও সম্মান করো। সম্মান নিয়ে এসব কথা তোমার আত্মসম্মান ধরে রাখতে এবং অন্যকে সম্মান করতে অনুপ্রাণিত করবে। সম্মান একটি পারস্পরিক জিনিস, এটি কখনোই একতরফা হতে পারে না। তুমি যদি তাকে সম্মান করতে না পারো, তবে তুমি তার যোগ্য নও! একটি সুখী জীবনের রহস্য হলো সম্মান। নিজের জন্য সম্মান এবং অন্যদের জন্য সম্মান। আমরা যদি স্বাধীন না হই, কেউ আমাদের সম্মান করবে না। তুমি লাখ লাখ টাকা খরচ করেও সত্যিকারের সম্মান কিনতে পারবে না।

যারা তোমার প্রতি অনুগত, তাদের প্রতি অনুগত হও। সবাইকে সম্মান করো, এমনকি তোমার শত্রু এবং প্রতিযোগীকেও। তুমি কালো, সাদা, খাটো, লম্বা, ধনী বা দরিদ্র হলে আমার কিছু যায় আসে না। তুমি যদি আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো, তবে আমিও তোমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করব। তুমি যদি কোনো কিছুই সম্মান না করতে পারো, তাহলে পড়াশোনা করে কোনো লাভ নেই। জীবন ছোট এবং আমাদের প্রতিটি মুহূর্তকে সম্মান করা উচিত। সম্মানের সবচেয়ে আন্তরিক রূপগুলোর মধ্যে একটি হলো অন্যের কথা শোনা। বেশির ভাগ ভালো সম্পর্ক পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সম্মানের ওপর নির্মিত হয়। আমরা যদি আমাদের মধ্যে ঐশ্বরিককে সম্মান করতে পারি, তাহলে আমরা আমাদের চারপাশের অন্যদের সম্মান করতে পারি। সম্মানিত হওয়ার অধিকার অন্যকে সম্মান করার মাধ্যমে জয়ী হয়। একজন মানুষ যত বেশি লজ্জিত হয়, সে তত বেশি সম্মানিত হয়।

নিজেকে গভীরভাবে সম্মান করা অন্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা করার প্রথম পদক্ষেপ। যেটুকু পেয়েছি, সেটুকুতেই সন্তুষ্ট আমি। তবে হ্যাঁ, আমার কাছে টাকার চেয়ে সম্মানটা অনেক বেশি দামি। শত বছরের বয়স্ক লোক হোক বা চৌদ্দ বছরের বাচ্চাছেলে, সম্মান তাকে করবে, যার কথাবার্তা বা আচরণ খুব ভালো। সম্মান বয়স দেখে নয়, আচরণ দেখে করা উচিত। কারও কাছ থেকে সম্মান পেতে চাইলে আগে ব্যবহার ভালো করো। পৃথিবীর প্রায় সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই আমাদের সব মানুষকে সম্মান করতে হবে। এর মানে এই নয় যে আমাকে তাদের পছন্দের সঙ্গে একমত হতে হবে বা তাদের মতামতের সঙ্গে একমত হতে হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমি তাদের মানুষ হিসেবে সম্মান করি।
সবার প্রতি সম্মান রেখেই আলোচনার সমাপ্তি টানছি। সবাই সুস্থ, সুন্দর থেকো-এই প্রত্যাশা করছি।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078