নিউইয়র্কের টাইমস্ স্কয়ারে শতকন্ঠে ১৪৩০ বাংলা বর্ষবরণের সকল প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। তবে রোজার মাসে বর্ষবরণ আয়োজন নিয়ে কমিউনিটিতে কিছুটা বিতর্ক শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিতর্ক তুলে দিয়েছেন বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্যদিকে আয়োজকরা সেই বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে নতুন বছরকে বরণ করতে অনুষ্ঠানের চূড়ন্ত প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চলছে তাদের মহড়াও।
টাইমস্ স্কয়ারে শতকন্ঠে ১৪৩০ বাংলা বর্ষবরণের আয়োজক প্রতিষ্ঠান এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এর সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল লিটন জানান, নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে শতকন্ঠে ১ বৈশাখ ১৪ এপ্রিল শুক্রবার উদযাপন করা হবে ১৪৩০ বাংলা বর্ষবরণ। জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় ১৫ এপ্রিল ২ বৈশাখ শনিবার বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করবেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস। একুশে পদক প্রাপ্ত নৃত্য সারথি মুক্তিযোদ্ধা লায়লা হাসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে এ আয়োজনে যোগ দিতে আসবেন স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। কলকাতা থেকে আসবেন কমলিনী মুখোপাধ্যায় ও নন্দনা দেব সেন। ৯ এপ্রিল রোববার জ্যাকসন হাইটসের নেপালি রেস্তোরায় মহিতোষ তালুকদার তাপসের পরিচালনায় শতকন্ঠে বর্ষবরণের পঞ্চম মহড়াও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের প্রেসিডেন্ট বিশ্বজিত সাহা বলেন, বাংলা বছরের প্রথম দিন ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে শত কন্ঠে গানের মাধ্যমে বছরকে বরণ করে নেয়া হবে সকাল আটটা পর্যন্ত। রমনার বটমূলের আদলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হবে ১৫ এপ্রিল শনিবার জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায়। সেদিন মঙ্গল শোভাযাত্রা উদ্বোধন করবেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস, উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদগণ। আবহমান বাঙালি সংস্কৃতির পরিবেশনা চলবে সকাল ৭টা থেকে একটানা রাত ১০টা পর্যন্ত। এ উপলক্ষে প্রধান সম্পাদক নুরুল বাতেনের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হবে দেড়শতাধিক পৃষ্ঠার একটি সমৃদ্ধ স্মারকগ্রন্থ।
মহড়া অনুষ্ঠানে দেওয়া শুভেচ্ছা বক্তব্যে সাংবাদিক ও কবি দর্পণ কবীর বলেন, বাংলা নববর্ষ উদযাপন বাঙালি সংস্কৃতির উৎসব। এর সঙ্গে কোন ধর্মের সাংঘর্ষিক অবস্থা নেই। সকল ধর্মাবলম্বীরা এই উৎসবের অংশ। নতুন প্রজন্মকে ঐতিহ্যবাহী বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য সকল অভিবাসীর এই বর্ষবরণের উৎসবে অংশ নেওয়া উচিত। বাংলা বর্ষবরণ নির্ধারিত দিনেই পালন করাটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। যারা বিরোধিতা করেন তারা ভুল চিন্তা অথবা বিরত করার মানসিকতা থেকে এটি করেন। বাংলা নববর্ষ উদযাপন মানে দেশ ও মাটির টানে উজ্জীবিত হওয়া।
গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক সৈয়দ জাকির আহমেদ রনি বলেন, ষাট এর দশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে উৎসবের আমেজে বর্ষবরণ প্রচলন শুরু হয় । সেই আমেজ সমুন্নত রেখেই ১৪ এপ্রিল নিউইয়র্কে বর্ষবরণের যে আয়োজন তার সাফল্য আসবে আপনাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে। বাংলা বর্ষবরণ ঘিরে বহু বাধা-বিপত্তি আগেও ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে! সেসবকে উপেক্ষা করে যারা বাঙালি সংস্কৃতিকে হৃদয় ধারণ করেন তারাই এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করবেন।
এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আয়োজনের অনুষ্ঠান ও মঞ্চ ব্যবস্থাপক নাট্যজন সীতেশ ধর। বৈশাখী মেলা সমন্বয়ক শিবলী ছাদেক, মঙ্গল শোভাযাত্রা সমন্বয়ক কানিজ ফাতেমা শাওন, ঈদ বাজারের স্টল ব্যাবস্থাপক গীতালি হাওলাদার, আয়োজন সমন্বয়ক ইয়াসমীন ফাত্তাহ, কণ্ঠশিল্পী চন্দন চৌধুরী, লেখক ও সাংবাদিক ভায়লা সালিনা এবং এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এর কার্যনির্বাহী সদস্য তানভীর কায়সার।
-
এদিকে এ বছর পয়লা বৈশাখ পবিত্র রমজান মাসে পড়েছে। বাংলাদেশে পবিত্র রমজানের ভাবমূর্তি রক্ষা করে সীমিত আকারে বৈশাখী উৎসবের আয়োজন চলছে বলে জানা গেছে। এ কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিউইয়র্কের অনুষ্ঠানটি না করা, প্রয়োজনে পরে আয়োজনের ওপর মত দিয়েছেন প্রবাসের বেশ কয়েকজন বিশিষ্টজন।
কমিউনিটি লিডার নাসির আলী খান পল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, আমি প্রত্যেকের মতামতকে সম্মান করি। তার মানে এই নয় তার সঙ্গে আমি একমত। বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের বিপক্ষে আমি নই। আমি বলছি তা পিছিয়ে নেয়া হোক। যাতে রোজার পর আমরা সবাই মিলে এ উৎসবে অংশ নিতে পারি। তিনি বলেন, বাংলাদেশি শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের কাছ থেকে এটাই চাওয়া হচ্ছে। নিশ্চয়ই তা ১০ ভাগ মাইনোরিটি ও ধর্মে অবিশ্বাসী কিছু লোকের কাছে বেশি চাওয়া নয়। দয়া করে আমাদের পোর্টেট করবেন না যে আমরা বৈশাখী উৎসবের বিরোধী। বরং আমরা এই গ্রেট শো মিস করতে চাই না। কোন ব্যক্তির অধিকার নেই তা থেকে আমাদের বঞ্চিত করা। আমরাই দুনিয়াতে নন কমিউনাল। ধর্ম নিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতা নিয়ে কোন ব্যক্তির জ্ঞান দেবারও প্রয়োজন নেই। আমি সংগঠক ও আমন্ত্রিত অতিথি বিশেষ করে ড. নুরুন নবী, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, লায়লা হাসান, বিশ্বজিত সাহা ও মহিতোষ তালুকদার তাপসকে অনুরোধ করছি বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটি মুসলিম কমিউনিটির কথা বিবেচনায় রেখে এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়া হোক।
মূলধারার রাজনীতিক অ্যাটর্নি মইন চৌধুরী ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘পবিত্র রমজানের কারণে এবারের বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবো না।’ বাংলাদেশি কমিউনিটিতে অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরীর বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। রয়েছে অধিক গ্রহণযোগ্যতা। মূলত এ কারণে তার সংক্ষিপ্ত স্ট্যাটাসটি বাংলাদেশি কমিউনিটির নজরে এসেছে।
সাংবাদিক ইমরান আনসারি সোস্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় নিউইয়র্কে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান স্থগিতের আহ্বান জানাচ্ছি। যেখানে রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাণী দিচ্ছেন। সিটি মেয়র বরোতে ঘুরে ঘুরে ইফতার পার্টিতে অংশ নিচ্ছেন, নিজের বাসভবনে ইফতার আয়োজন করছেন, টাইম স্কয়ারের মত জায়গায় উন্মুক্ত স্থানে তারাবি পড়ার নিরাপত্তা দিচ্ছেন। নিউইয়র্কের প্রায় চারশ মসজিদকে বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় এনেছেন। সে জায়গায় আপনি বাংলাদেশি মুসলমান হয়ে শতকণ্ঠের অনুষ্ঠান করে কিসের বার্তা দিতে চাইছেন।
তিনি আরো লিখেছেন, বর্ষবরণের অনুষ্ঠান রমজানের পরে করলে আপনাদের খুব বেশি ক্ষতি হবে বলে মনে করি না। কারণ যারা এটির আয়োজন করছেন তারা এবারই প্রথম শতকণ্ঠে বর্ষবরণের আয়োজন করছেন। এর কোনো ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এখানে নেই যে পয়লা বৈশাখেই এটি করতেই হবে। বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রত্যেক সদস্যকে এ বিষয়ে সোচ্চার হবার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
এদিকে কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট দীনেশ চন্দ্র মজুমদার লিখেছেন, বাঙালির আত্মপরিচয় পয়লা বৈশাখকে যারা ব্যক্তিগত ধর্ম বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক করে তুলছেন তাদের প্রতি করুণা হয় । ধর্ম বিশ্বাস পরিবর্তনযোগ্য, বিশ্বাস পরিবর্তন হতে পারে, জাতিগত পরিচয় পরিবর্তনযোগ্য নয়, জাতির শেকড়।
সাংবাদিক রওশন হক লিখেছেন, রোজার পরে হলে সবাই আনন্দ করতে পারতো।
কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট রামিও রহমান লিখেছেন, নিউইর্য়কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় যারা আমাদের এই পবিত্র রোজার মাসে বৈশাখীর আয়োজন করছেন এবং যে সব প্রতিষ্ঠান স্পন্সর করছেন, আগামী দিনে তাদের থেকে দুরে থাকার জন্য সকল প্রবাসী ভাই-বোনদের অনুরোধ করছি।
এদিকে আয়োজকরা বলছেন, গুটিকয়েক লোক অনুষ্ঠানের তারিখ পরিবর্তন করতে বলছেন। এতে অনুষ্ঠানের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।
টাইমস্ স্কয়ারে শতকন্ঠে ১৪৩০ বাংলা বর্ষবরণের আয়োজক প্রতিষ্ঠান এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এর সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল লিটন জানান, নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে শতকন্ঠে ১ বৈশাখ ১৪ এপ্রিল শুক্রবার উদযাপন করা হবে ১৪৩০ বাংলা বর্ষবরণ। জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় ১৫ এপ্রিল ২ বৈশাখ শনিবার বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করবেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস। একুশে পদক প্রাপ্ত নৃত্য সারথি মুক্তিযোদ্ধা লায়লা হাসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে এ আয়োজনে যোগ দিতে আসবেন স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। কলকাতা থেকে আসবেন কমলিনী মুখোপাধ্যায় ও নন্দনা দেব সেন। ৯ এপ্রিল রোববার জ্যাকসন হাইটসের নেপালি রেস্তোরায় মহিতোষ তালুকদার তাপসের পরিচালনায় শতকন্ঠে বর্ষবরণের পঞ্চম মহড়াও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের প্রেসিডেন্ট বিশ্বজিত সাহা বলেন, বাংলা বছরের প্রথম দিন ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে শত কন্ঠে গানের মাধ্যমে বছরকে বরণ করে নেয়া হবে সকাল আটটা পর্যন্ত। রমনার বটমূলের আদলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হবে ১৫ এপ্রিল শনিবার জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায়। সেদিন মঙ্গল শোভাযাত্রা উদ্বোধন করবেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস, উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদগণ। আবহমান বাঙালি সংস্কৃতির পরিবেশনা চলবে সকাল ৭টা থেকে একটানা রাত ১০টা পর্যন্ত। এ উপলক্ষে প্রধান সম্পাদক নুরুল বাতেনের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হবে দেড়শতাধিক পৃষ্ঠার একটি সমৃদ্ধ স্মারকগ্রন্থ।
মহড়া অনুষ্ঠানে দেওয়া শুভেচ্ছা বক্তব্যে সাংবাদিক ও কবি দর্পণ কবীর বলেন, বাংলা নববর্ষ উদযাপন বাঙালি সংস্কৃতির উৎসব। এর সঙ্গে কোন ধর্মের সাংঘর্ষিক অবস্থা নেই। সকল ধর্মাবলম্বীরা এই উৎসবের অংশ। নতুন প্রজন্মকে ঐতিহ্যবাহী বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য সকল অভিবাসীর এই বর্ষবরণের উৎসবে অংশ নেওয়া উচিত। বাংলা বর্ষবরণ নির্ধারিত দিনেই পালন করাটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। যারা বিরোধিতা করেন তারা ভুল চিন্তা অথবা বিরত করার মানসিকতা থেকে এটি করেন। বাংলা নববর্ষ উদযাপন মানে দেশ ও মাটির টানে উজ্জীবিত হওয়া।
গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক সৈয়দ জাকির আহমেদ রনি বলেন, ষাট এর দশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে উৎসবের আমেজে বর্ষবরণ প্রচলন শুরু হয় । সেই আমেজ সমুন্নত রেখেই ১৪ এপ্রিল নিউইয়র্কে বর্ষবরণের যে আয়োজন তার সাফল্য আসবে আপনাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে। বাংলা বর্ষবরণ ঘিরে বহু বাধা-বিপত্তি আগেও ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে! সেসবকে উপেক্ষা করে যারা বাঙালি সংস্কৃতিকে হৃদয় ধারণ করেন তারাই এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করবেন।
এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আয়োজনের অনুষ্ঠান ও মঞ্চ ব্যবস্থাপক নাট্যজন সীতেশ ধর। বৈশাখী মেলা সমন্বয়ক শিবলী ছাদেক, মঙ্গল শোভাযাত্রা সমন্বয়ক কানিজ ফাতেমা শাওন, ঈদ বাজারের স্টল ব্যাবস্থাপক গীতালি হাওলাদার, আয়োজন সমন্বয়ক ইয়াসমীন ফাত্তাহ, কণ্ঠশিল্পী চন্দন চৌধুরী, লেখক ও সাংবাদিক ভায়লা সালিনা এবং এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এর কার্যনির্বাহী সদস্য তানভীর কায়সার।
-
এদিকে এ বছর পয়লা বৈশাখ পবিত্র রমজান মাসে পড়েছে। বাংলাদেশে পবিত্র রমজানের ভাবমূর্তি রক্ষা করে সীমিত আকারে বৈশাখী উৎসবের আয়োজন চলছে বলে জানা গেছে। এ কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিউইয়র্কের অনুষ্ঠানটি না করা, প্রয়োজনে পরে আয়োজনের ওপর মত দিয়েছেন প্রবাসের বেশ কয়েকজন বিশিষ্টজন।
কমিউনিটি লিডার নাসির আলী খান পল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, আমি প্রত্যেকের মতামতকে সম্মান করি। তার মানে এই নয় তার সঙ্গে আমি একমত। বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের বিপক্ষে আমি নই। আমি বলছি তা পিছিয়ে নেয়া হোক। যাতে রোজার পর আমরা সবাই মিলে এ উৎসবে অংশ নিতে পারি। তিনি বলেন, বাংলাদেশি শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের কাছ থেকে এটাই চাওয়া হচ্ছে। নিশ্চয়ই তা ১০ ভাগ মাইনোরিটি ও ধর্মে অবিশ্বাসী কিছু লোকের কাছে বেশি চাওয়া নয়। দয়া করে আমাদের পোর্টেট করবেন না যে আমরা বৈশাখী উৎসবের বিরোধী। বরং আমরা এই গ্রেট শো মিস করতে চাই না। কোন ব্যক্তির অধিকার নেই তা থেকে আমাদের বঞ্চিত করা। আমরাই দুনিয়াতে নন কমিউনাল। ধর্ম নিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতা নিয়ে কোন ব্যক্তির জ্ঞান দেবারও প্রয়োজন নেই। আমি সংগঠক ও আমন্ত্রিত অতিথি বিশেষ করে ড. নুরুন নবী, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, লায়লা হাসান, বিশ্বজিত সাহা ও মহিতোষ তালুকদার তাপসকে অনুরোধ করছি বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটি মুসলিম কমিউনিটির কথা বিবেচনায় রেখে এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়া হোক।
মূলধারার রাজনীতিক অ্যাটর্নি মইন চৌধুরী ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘পবিত্র রমজানের কারণে এবারের বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবো না।’ বাংলাদেশি কমিউনিটিতে অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরীর বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। রয়েছে অধিক গ্রহণযোগ্যতা। মূলত এ কারণে তার সংক্ষিপ্ত স্ট্যাটাসটি বাংলাদেশি কমিউনিটির নজরে এসেছে।
সাংবাদিক ইমরান আনসারি সোস্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় নিউইয়র্কে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান স্থগিতের আহ্বান জানাচ্ছি। যেখানে রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাণী দিচ্ছেন। সিটি মেয়র বরোতে ঘুরে ঘুরে ইফতার পার্টিতে অংশ নিচ্ছেন, নিজের বাসভবনে ইফতার আয়োজন করছেন, টাইম স্কয়ারের মত জায়গায় উন্মুক্ত স্থানে তারাবি পড়ার নিরাপত্তা দিচ্ছেন। নিউইয়র্কের প্রায় চারশ মসজিদকে বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় এনেছেন। সে জায়গায় আপনি বাংলাদেশি মুসলমান হয়ে শতকণ্ঠের অনুষ্ঠান করে কিসের বার্তা দিতে চাইছেন।
তিনি আরো লিখেছেন, বর্ষবরণের অনুষ্ঠান রমজানের পরে করলে আপনাদের খুব বেশি ক্ষতি হবে বলে মনে করি না। কারণ যারা এটির আয়োজন করছেন তারা এবারই প্রথম শতকণ্ঠে বর্ষবরণের আয়োজন করছেন। এর কোনো ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এখানে নেই যে পয়লা বৈশাখেই এটি করতেই হবে। বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রত্যেক সদস্যকে এ বিষয়ে সোচ্চার হবার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
এদিকে কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট দীনেশ চন্দ্র মজুমদার লিখেছেন, বাঙালির আত্মপরিচয় পয়লা বৈশাখকে যারা ব্যক্তিগত ধর্ম বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক করে তুলছেন তাদের প্রতি করুণা হয় । ধর্ম বিশ্বাস পরিবর্তনযোগ্য, বিশ্বাস পরিবর্তন হতে পারে, জাতিগত পরিচয় পরিবর্তনযোগ্য নয়, জাতির শেকড়।
সাংবাদিক রওশন হক লিখেছেন, রোজার পরে হলে সবাই আনন্দ করতে পারতো।
কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট রামিও রহমান লিখেছেন, নিউইর্য়কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় যারা আমাদের এই পবিত্র রোজার মাসে বৈশাখীর আয়োজন করছেন এবং যে সব প্রতিষ্ঠান স্পন্সর করছেন, আগামী দিনে তাদের থেকে দুরে থাকার জন্য সকল প্রবাসী ভাই-বোনদের অনুরোধ করছি।
এদিকে আয়োজকরা বলছেন, গুটিকয়েক লোক অনুষ্ঠানের তারিখ পরিবর্তন করতে বলছেন। এতে অনুষ্ঠানের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।