কামরুল হোসেন লিটু
আমাদের এলাকার দীনবন্ধু খুব ভালো ক্যামেরাম্যান, ওর একটা ছবি তোলার দোকান মানে স্টুডিও ছিল। নিজের ক্যামেরার ছোটখাটো ত্রুটি-বিচ্যুতি নিজেই মেরামত করতে করতে একটা সময় সে অন্যদের ক্যামেরাও মেরামত করতে শুরু করল। এভাবে ছবি তোলার কাজ ছেড়ে ক্যামেরা মেরামতই তার প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়াল। এ ব্যাপারে দীনোর দক্ষতা এবং সুনাম এত বৃদ্ধি পেল যে সমগ্র জেলা থেকে এমনকি জেলার বাইরে থেকেও লোকজন আসত তার কাছে ক্যামেরা মেরামতের জন্য। ২০১০ সালের পর দীনোর ক্যামেরা মেরামতের কাজে ভাটার প্রভাব পড়তে শুরু করল।
আব্দুস সবুর, যিনি সব ধরনের ঘড়ি মেরামতের অত্যন্ত ভালো কারিগর কিন্তু গত শতকের নব্বইয়ের দশকে যখন জাপানের ক্যাসিও কোম্পানি ডিজিটাল ঘড়ি বাজারজাত করতে শুরু করল, তখন থেকে সবুর ভাইয়ের কাজ কমতে শুরু করলেও সেটা তেমন প্রভাব ফেলেনি তার ওপর কিন্তু একুশ শতকের শুরু থেকে মোবাইল ফোনের প্রচলন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার কাজ কমতে কমতে শূন্যের ঘরে এসে পৌঁছাল। একইভাবে পোর্টেবল রেডিও বাজার থেকে হারিয়ে গেল, ফিতার ক্যাসেট, ভিসিআর, ডিভিডি বিলুপ্ত হলো, বিশ্বখ্যাত ফুজি ফিল্ম, কোডাক ফিল্ম একেবারে দেউলিয়া হয়ে গেল।
ছোটবেলায় মাসে একটা বা দুটো সিনেমা দেখতে সিনেমা হলে যেতাম। এখন সিনেমা হল প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে কিন্তু সিনেমা হাতের মুঠোয়, পকেটের ভেতর ঢুকে গেছে। একমাত্র বিটিভি বা বাংলাদেশ টেলিভিশন দেখতে পেতাম, এখন অগণিত টিভি। বিটিভির সপ্তাহের একটা নাটক দেখে তৃপ্তি পেতাম আর এখন...
মোবাইল ফোন যখন থেকে টাচ স্ক্রিন প্রযুক্তিসমৃদ্ধ হলো, তখন থেকে ধীরে ধীরে মোবাইল ফোন শুধু ফোন নয়, এটা হয়ে উঠল একের ভেতর অনেক। এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মানুষ যেন সারা পৃথিবীকেই হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। শুধু সিনেমা, নাটকই নয় বরং হাতে গোনা কয়েকটি বিষয় ছাড়া সবকিছুই প্রায় মোবাইল ফোনের সাহায্যে করা যায়। যদিও আমরা এটাকে সবাই মোবাইল ফোন বলি, মূলত এটা এমন একটা যন্ত্র (DEVICE), ফোন তার একটা বৈশিষ্ট্য মাত্র।
এ কারণেই যে কেউ এই মোবাইল ডিভাইসটা চালানো শুরু করলে দীর্ঘক্ষণ এটায় সময় ক্ষেপণ করে। যেহেতু এর ভেতরে বহুবিধ কার্যক্রম বিদ্যমান, সেহেতু যেকোনো বয়সের নারী-পুরুষ যার যেমন রুচি, ইচ্ছা বা দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করে ব্যবহার করে। শুরু করলে খুব তাড়াতাড়ি এটার ব্যবহার শেষ করা কঠিন। বিভিন্ন বিষয় একটার পর একটা চলে আসে ধারাবাহিকভাবে, ফলে ওগুলোর মধ্যে আকর্ষণ করার মতো কন্টেন্ট রুচি/পছন্দ অনুযায়ী ব্যক্তিকে আকর্ষিত করে ব্যবহার বাড়াতে।
গত প্রায় দুই যুগের মধ্যে প্রযুক্তির যে ব্যাপক বৃদ্ধি, সেটা রীতিমতো বিস্ময়কর। কবি সুফিয়া কামাল বেঁচে থাকলে তার ‘আজিকার শিশু’ কবিতাটা নিশ্চয় নতুন করে লিখতেন। পৃথিবীর যেকোনো দেশে যেকোনো স্থানেই যান না কেন, গুগল ম্যাপ আপনাকে সহায়তা করবে। দুনিয়ার কোনো ভাষাই এখন আর দুর্বোধ্য নয়। কারণ, আপনার কাছে থাকা ভ্রাম্যমাণ ডিভাইসটার মাধ্যমে আপনি যেকোনো ভাষা অনুবাদ করে বুঝে নিতে পারবেন। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে অন্য যেকোনো স্থানে শুধু কথা বলা নয়, ভিডিও কলে কথা বলা এখন কোনো ব্যাপারই নয়। বর্তমানে ছোট-বড় সব খবরই দুনিয়ার সবখানে পৌঁছে যাচ্ছে মুহূর্তের মধ্যে।
প্লেন থেকে ট্রেন, এমনকি লটারির টিকিট পর্যন্ত অনলাইনে কিনতে পারবেন, জুতো জামার কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। ক্রয়-বিক্রয়ের যাবতীয় কার্যক্রম এবং বাড়ি-গাড়ি থেকে সুই-সুতা সবকিছুই আজ অনলাইনে পাওয়া যায়। ব্যাংক-বিমা, ডাক্তার-কবিরাজÑকী নেই এখানে। যেটা কয়েক বছর আগে কল্পনা করা যেত না, সেটাই এখন উল্টো হয়ে গেছে অর্থাৎ স্মার্ট ডিভাইস তথা প্রযুক্তিহীন জীবন অকল্পনীয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা কার্টুন বহুবার দেখা গেছে। কার্টুনটার দুটো দৃশ্য। প্রথম দৃশ্যে এক মা তার কিশোর ছেলেকে বাড়ির পাশের খেলার মাঠ থেকে তাড়িয়ে বাড়ি আনছেন, কারণ অনেকক্ষণ সে মাঠে খেলা করছে। দ্বিতীয় দৃশ্যে দেখা যায়, মা তার কিশোর ছেলেকে বাড়ি থেকে জোর করে বের করছেন, কারণ সে দীর্ঘক্ষণ ঘরের ভেতরে বসে স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করছে। এই কার্টুনই বলে দেয়, প্রযুক্তি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাপনের ওপর কেমন প্রভাব ফেলছে।
২০২২ সালের নভেম্বরে AI মানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স থেকে চ্যাট জিপিটি অ্যাপ এসেছে। CHAT GPT হচ্ছে (Chat generative pre-trained transformer) বর্তমান প্রযুক্তিবিশ্বে বহুল আলোচিত একটি টেকনোলজির নাম। চ্যাট জিপিটি বিশাল তথ্যপূর্ণ অত্যাধুনিক রোবট। এই চ্যাট জিপিটি আপনার সব প্রশ্নের তথ্যসমৃদ্ধ উত্তর দেবে, এমনকি কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, অঙ্কও করে দেবে। এর ফলে স্টুডেন্টদের পড়ালেখায় মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে বিধায় ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষ অনেক বিষয়ে ব্যবহারিক বিধিনিষেধ প্রয়োগ করেছে অ্যাপটিতে। পরীক্ষার হলে যেমন ক্যালকুলেটর নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয় না, কারণ ক্যালকুলেটরের সাহায্য নিলে স্টুডেন্ট তার নিজের বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে না। একই কারণে স্টুডেন্টের বুদ্ধিমত্তার পরিমাপও করা যায় না। সম্প্রতি বিশ্বের সর্ববৃহৎ সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি হলিউডের বিভিন্ন পর্যায়ের শিল্পী ও কলাকুশলীরা প্রযুক্তির ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য ধর্মঘট পর্যন্ত করেছেন।
এই Portable device এর প্রভাবে কোটি কোটি পাঠকের বিলুপ্তি ঘটেছে। আগে মানুষ অনেক বেশি বই, পত্র-পত্রিকা পড়ত। এখন ওইসব পাঠক আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। লং রুটের বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে যেসব লোকেরা আগে বই, পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়ত, তারাই বর্তমানে Portable device ব্যবহারে মশগুল।
বহুকাল আগে প্রখ্যাত লেখক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়, যিনি ‘বনফুল’ নামেও পরিচিত, ‘পাঠকের মৃত্যু’ নামে একটা ছোটগল্প লিখেছিলেন। গল্পে রেলস্টেশনে অপেক্ষমাণ এক যাত্রীর বই অন্য যাত্রী নিয়ে পড়া শুরু করে। সে পড়ায় এমন মজা পায় যে, টিনের যাত্রীছাউনির নিচে ভরদুপুরে প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পড়তে থাকে। বইটার শেষ পর্যন্ত পড়ার তৃষ্ণায় সে তার যাওয়ার নির্দিষ্ট রেলগাড়ি এলেও তাতে না চড়ে পরবর্তী ট্রেনে যাওয়ার চিন্তা করে বইপড়া চালিয়ে যায়। তখনকার মানুষের পড়ার আগ্রহ এবং অভ্যাস আজকের মানুষেরা হারিয়ে ফেলেছে, এখন পাঠক খুঁজে পাওয়া কঠিন, সবাই দর্শক আর শ্রোতা।
আমাদের আগামী দিনে প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে জীবনযাপন অসম্ভব। তাই প্রযুক্তিকে বাদ নয়, প্রযুক্তির ব্যবহার যথাসম্ভব সীমিত করার পরিকল্পনা এখন থেকে করতে হবে। আর এই সীমিতকরণের জন্য বইসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়া, যেকোনো বিষয়ে লেখার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। ঘরের বাইরের বিভিন্ন কার্যক্রম, যেমন সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, বিভিন্ন খেলাধুলা, ব্যায়ামসহ শারীরিক কাজ বাড়ানো খুবই প্রয়োজন।
আমাদের এলাকার দীনবন্ধু খুব ভালো ক্যামেরাম্যান, ওর একটা ছবি তোলার দোকান মানে স্টুডিও ছিল। নিজের ক্যামেরার ছোটখাটো ত্রুটি-বিচ্যুতি নিজেই মেরামত করতে করতে একটা সময় সে অন্যদের ক্যামেরাও মেরামত করতে শুরু করল। এভাবে ছবি তোলার কাজ ছেড়ে ক্যামেরা মেরামতই তার প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়াল। এ ব্যাপারে দীনোর দক্ষতা এবং সুনাম এত বৃদ্ধি পেল যে সমগ্র জেলা থেকে এমনকি জেলার বাইরে থেকেও লোকজন আসত তার কাছে ক্যামেরা মেরামতের জন্য। ২০১০ সালের পর দীনোর ক্যামেরা মেরামতের কাজে ভাটার প্রভাব পড়তে শুরু করল।
আব্দুস সবুর, যিনি সব ধরনের ঘড়ি মেরামতের অত্যন্ত ভালো কারিগর কিন্তু গত শতকের নব্বইয়ের দশকে যখন জাপানের ক্যাসিও কোম্পানি ডিজিটাল ঘড়ি বাজারজাত করতে শুরু করল, তখন থেকে সবুর ভাইয়ের কাজ কমতে শুরু করলেও সেটা তেমন প্রভাব ফেলেনি তার ওপর কিন্তু একুশ শতকের শুরু থেকে মোবাইল ফোনের প্রচলন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার কাজ কমতে কমতে শূন্যের ঘরে এসে পৌঁছাল। একইভাবে পোর্টেবল রেডিও বাজার থেকে হারিয়ে গেল, ফিতার ক্যাসেট, ভিসিআর, ডিভিডি বিলুপ্ত হলো, বিশ্বখ্যাত ফুজি ফিল্ম, কোডাক ফিল্ম একেবারে দেউলিয়া হয়ে গেল।
ছোটবেলায় মাসে একটা বা দুটো সিনেমা দেখতে সিনেমা হলে যেতাম। এখন সিনেমা হল প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে কিন্তু সিনেমা হাতের মুঠোয়, পকেটের ভেতর ঢুকে গেছে। একমাত্র বিটিভি বা বাংলাদেশ টেলিভিশন দেখতে পেতাম, এখন অগণিত টিভি। বিটিভির সপ্তাহের একটা নাটক দেখে তৃপ্তি পেতাম আর এখন...
মোবাইল ফোন যখন থেকে টাচ স্ক্রিন প্রযুক্তিসমৃদ্ধ হলো, তখন থেকে ধীরে ধীরে মোবাইল ফোন শুধু ফোন নয়, এটা হয়ে উঠল একের ভেতর অনেক। এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মানুষ যেন সারা পৃথিবীকেই হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। শুধু সিনেমা, নাটকই নয় বরং হাতে গোনা কয়েকটি বিষয় ছাড়া সবকিছুই প্রায় মোবাইল ফোনের সাহায্যে করা যায়। যদিও আমরা এটাকে সবাই মোবাইল ফোন বলি, মূলত এটা এমন একটা যন্ত্র (DEVICE), ফোন তার একটা বৈশিষ্ট্য মাত্র।
এ কারণেই যে কেউ এই মোবাইল ডিভাইসটা চালানো শুরু করলে দীর্ঘক্ষণ এটায় সময় ক্ষেপণ করে। যেহেতু এর ভেতরে বহুবিধ কার্যক্রম বিদ্যমান, সেহেতু যেকোনো বয়সের নারী-পুরুষ যার যেমন রুচি, ইচ্ছা বা দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করে ব্যবহার করে। শুরু করলে খুব তাড়াতাড়ি এটার ব্যবহার শেষ করা কঠিন। বিভিন্ন বিষয় একটার পর একটা চলে আসে ধারাবাহিকভাবে, ফলে ওগুলোর মধ্যে আকর্ষণ করার মতো কন্টেন্ট রুচি/পছন্দ অনুযায়ী ব্যক্তিকে আকর্ষিত করে ব্যবহার বাড়াতে।
গত প্রায় দুই যুগের মধ্যে প্রযুক্তির যে ব্যাপক বৃদ্ধি, সেটা রীতিমতো বিস্ময়কর। কবি সুফিয়া কামাল বেঁচে থাকলে তার ‘আজিকার শিশু’ কবিতাটা নিশ্চয় নতুন করে লিখতেন। পৃথিবীর যেকোনো দেশে যেকোনো স্থানেই যান না কেন, গুগল ম্যাপ আপনাকে সহায়তা করবে। দুনিয়ার কোনো ভাষাই এখন আর দুর্বোধ্য নয়। কারণ, আপনার কাছে থাকা ভ্রাম্যমাণ ডিভাইসটার মাধ্যমে আপনি যেকোনো ভাষা অনুবাদ করে বুঝে নিতে পারবেন। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে অন্য যেকোনো স্থানে শুধু কথা বলা নয়, ভিডিও কলে কথা বলা এখন কোনো ব্যাপারই নয়। বর্তমানে ছোট-বড় সব খবরই দুনিয়ার সবখানে পৌঁছে যাচ্ছে মুহূর্তের মধ্যে।
প্লেন থেকে ট্রেন, এমনকি লটারির টিকিট পর্যন্ত অনলাইনে কিনতে পারবেন, জুতো জামার কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। ক্রয়-বিক্রয়ের যাবতীয় কার্যক্রম এবং বাড়ি-গাড়ি থেকে সুই-সুতা সবকিছুই আজ অনলাইনে পাওয়া যায়। ব্যাংক-বিমা, ডাক্তার-কবিরাজÑকী নেই এখানে। যেটা কয়েক বছর আগে কল্পনা করা যেত না, সেটাই এখন উল্টো হয়ে গেছে অর্থাৎ স্মার্ট ডিভাইস তথা প্রযুক্তিহীন জীবন অকল্পনীয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা কার্টুন বহুবার দেখা গেছে। কার্টুনটার দুটো দৃশ্য। প্রথম দৃশ্যে এক মা তার কিশোর ছেলেকে বাড়ির পাশের খেলার মাঠ থেকে তাড়িয়ে বাড়ি আনছেন, কারণ অনেকক্ষণ সে মাঠে খেলা করছে। দ্বিতীয় দৃশ্যে দেখা যায়, মা তার কিশোর ছেলেকে বাড়ি থেকে জোর করে বের করছেন, কারণ সে দীর্ঘক্ষণ ঘরের ভেতরে বসে স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করছে। এই কার্টুনই বলে দেয়, প্রযুক্তি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাপনের ওপর কেমন প্রভাব ফেলছে।
২০২২ সালের নভেম্বরে AI মানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স থেকে চ্যাট জিপিটি অ্যাপ এসেছে। CHAT GPT হচ্ছে (Chat generative pre-trained transformer) বর্তমান প্রযুক্তিবিশ্বে বহুল আলোচিত একটি টেকনোলজির নাম। চ্যাট জিপিটি বিশাল তথ্যপূর্ণ অত্যাধুনিক রোবট। এই চ্যাট জিপিটি আপনার সব প্রশ্নের তথ্যসমৃদ্ধ উত্তর দেবে, এমনকি কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, অঙ্কও করে দেবে। এর ফলে স্টুডেন্টদের পড়ালেখায় মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে বিধায় ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষ অনেক বিষয়ে ব্যবহারিক বিধিনিষেধ প্রয়োগ করেছে অ্যাপটিতে। পরীক্ষার হলে যেমন ক্যালকুলেটর নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয় না, কারণ ক্যালকুলেটরের সাহায্য নিলে স্টুডেন্ট তার নিজের বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে না। একই কারণে স্টুডেন্টের বুদ্ধিমত্তার পরিমাপও করা যায় না। সম্প্রতি বিশ্বের সর্ববৃহৎ সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি হলিউডের বিভিন্ন পর্যায়ের শিল্পী ও কলাকুশলীরা প্রযুক্তির ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য ধর্মঘট পর্যন্ত করেছেন।
এই Portable device এর প্রভাবে কোটি কোটি পাঠকের বিলুপ্তি ঘটেছে। আগে মানুষ অনেক বেশি বই, পত্র-পত্রিকা পড়ত। এখন ওইসব পাঠক আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। লং রুটের বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে যেসব লোকেরা আগে বই, পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়ত, তারাই বর্তমানে Portable device ব্যবহারে মশগুল।
বহুকাল আগে প্রখ্যাত লেখক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়, যিনি ‘বনফুল’ নামেও পরিচিত, ‘পাঠকের মৃত্যু’ নামে একটা ছোটগল্প লিখেছিলেন। গল্পে রেলস্টেশনে অপেক্ষমাণ এক যাত্রীর বই অন্য যাত্রী নিয়ে পড়া শুরু করে। সে পড়ায় এমন মজা পায় যে, টিনের যাত্রীছাউনির নিচে ভরদুপুরে প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পড়তে থাকে। বইটার শেষ পর্যন্ত পড়ার তৃষ্ণায় সে তার যাওয়ার নির্দিষ্ট রেলগাড়ি এলেও তাতে না চড়ে পরবর্তী ট্রেনে যাওয়ার চিন্তা করে বইপড়া চালিয়ে যায়। তখনকার মানুষের পড়ার আগ্রহ এবং অভ্যাস আজকের মানুষেরা হারিয়ে ফেলেছে, এখন পাঠক খুঁজে পাওয়া কঠিন, সবাই দর্শক আর শ্রোতা।
আমাদের আগামী দিনে প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে জীবনযাপন অসম্ভব। তাই প্রযুক্তিকে বাদ নয়, প্রযুক্তির ব্যবহার যথাসম্ভব সীমিত করার পরিকল্পনা এখন থেকে করতে হবে। আর এই সীমিতকরণের জন্য বইসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়া, যেকোনো বিষয়ে লেখার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। ঘরের বাইরের বিভিন্ন কার্যক্রম, যেমন সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, বিভিন্ন খেলাধুলা, ব্যায়ামসহ শারীরিক কাজ বাড়ানো খুবই প্রয়োজন।