মুহম্মদ শামসুল হক
[পূর্ব প্রকাশিতের পর]
পার্ল হারবার হামলার তিন মাস পর ধ্বংসপ্রাপ্ত হনলুলুর পুনর্নির্মাণ কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৪২ সালের ৪ মার্চ দুটি জাপানি যুদ্ধবিমান হনলুলুতে বোমা ফেলল। এরপর ১৯৪২ সালের ৩ ও ৪ জুন জাপানি নৌবাহিনী অলিউশিয়ান আইল্যান্ডস ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে আলাস্কা টেরিটরিতে আক্রমণ করল এবং উনালাস্কা নগরীর ওলন্দাজ পোতাশ্রয়ে বোমা ফেলল এবং ব্যাপক ক্ষতিসাধন ছাড়াও ৪৩ জন আমেরিকানকে খুন করল।
এর কয়েক দিন পর ছয়-সাত হাজার জাপানি সৈন্য মূল ভূখণ্ডে অবতরণ করল এবং অটু ও কিস্কার অলিউশিয়ান আইল্যান্ডস দখল করল। তবে ১৯৪৩ সালের মে থেকে আগস্টের মধ্যে আমেরিকান এবং কানাডীয় সেনাবাহিনী তাদের বিতাড়িত করায় দখলদারি স্থায়ী হয়নি। ফায়ার বেলুন বা আগুনে বেলুন ব্যবহার করে জাপান কয়েকটি হামলা চালিয়ে ছয়জন আমেরিকান নাগরিককে খুন করেছিল। এ ছাড়া অরেগনে হামলা চালিয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে দুই দফা সাবমেরিন থেকে বোমা নিক্ষেপ করে আমেরিকার পর্যাপ্ত ক্ষতি সাধন করেছিল। পার্ল হারবার ছাড়াও জাপানি বাহিনী আলাস্কা, ওয়েক আইল্যান্ড গুয়াম এবং ফিলিপাইন যুদ্ধে ব্যাপক ধ্বংস সাধন করেছিল।
১৯৪৪ সালের ডিসেম্বরে ভাইস অ্যাডমিরাল জিসাবুরো ওজাওয়ার নেতৃত্বে জাপানের নেভাল জেনারেল স্টাফ অপারেশন পিএক্স বা অপারেশন চেরি ব্লজম অ্যাট নাইটের প্রস্তাব করেছিল। ওই প্রস্তাবের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে, বিশেষত সান ডিয়াগো, লস অ্যাঞ্জেলেস ও সান ফ্রান্সিসকো নগরীতে সাবমেরিন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারসহ সিরিয়ান এয়ারক্রাফট অবতরণের আহ্বান জানানো হয়েছিল।
বিমানগুলো থেকে প্লেগ, কলেরা, টাইফয়েড, ডেঙ্গু জ্বর অন্যান্য বায়ুবাহিত রোগজীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া জনগণের মাঝে ছড়ানোর মাধ্যমে কোটি কোটি নিরীহ জনগণকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এ ছাড়া সুইসাইড মিশনের আওতায় সাবমেরিন ক্রুদের বায়ুবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে উপকূলে ছোটাছুটিরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। অপারেশন পিএক্স পরিকল্পনাটি ১৯৪৫ সালের ২৬ মার্চ চূড়ান্ত করা হলেও চিফ অব জেনারেল স্টাফ ইয়োশিজিরো উমেজুর বিরোধিতার কারণে এর প্রয়োগ বিলম্বিত হয়েছিল।
জেনারেল উমেজু বিশ্বাস করতেন, মানবতাবিরোধী অসীম ব্যাকটেরিয়া-যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে জাপানের বিরুদ্ধে প্রবল ঘৃণা ও বিদ্বেষের জন্ম দেবে। যাহোক, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হাওয়াই এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৎসংলগ্ন ভূখণ্ডের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছিল প্যাসিফিক থিয়েটার এবং আমেরিকান থিয়েটার। হাওয়াইতে কর্মরত অবস্থায় যেসব সামরিক কর্মকর্তা কন্টিনেন্টাল আমেরিকান ক্যাম্পেইনে দাপ্তরিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ছিলেন, তাদের এশিয়াটিক-প্যাসিফিক ক্যাম্পেইন মেডেল প্রদান করা হয়েছিল।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংসযজ্ঞ : পত্রিকান্তরে প্রকাশ, একসময় বিশ্বের সর্বাপেক্ষা অপ্রতিদ্বন্দ্বী পরাশক্তির বিশেষ আশীর্বাদপুষ্ট ব্যক্তি ছিলেন সৌদি আরবের অন্যতম ধনকুবের ওসামা বিন লাদেন। নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ হওয়ার পর ওসামা বিন লাদেনকে নাকি পরাশক্তি পরিত্যক্ত উচ্ছিষ্টের মতো ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে প্রতিশোধপরায়ণ ও অঢেল বিত্তশালী লাদেন রাশি রাশি অর্থ ব্যয়ে ইসলামের মৌলিক আদর্শচ্যুত কিছুসংখ্যক বিপথগামী মুসলমানকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিল আল-কায়েদা নামক বিশেষ সন্ত্রাসী গ্রুপ।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল পৌনে নয়টায় ওসামা বিন লাদেনের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় আল-কায়েদার ১৯ জন সদস্য ছিনতাইকৃত ৪ বাণিজ্যিক বিমানযোগে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারসহ অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ওপর আত্মঘাতী আঘাত হেনেছিল। ২০ হাজার গ্যালন জেট জ্বালানি ভর্তি আমেরিকান এয়ারলাইনসের একটি বোয়িং ৭৬৭ যোগে ছিনতাইকারীরা নিউইয়র্ক সিটির ওয়ার্ল্ড সেন্টারের উত্তর টাওয়ারে আঘাত হানল।
মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে ১১০ তলবিশিষ্ট আকাশচুম্বী হর্মটির ৮০তম তলা পুড়ে ছারখার হয়ে গেল এবং নিমেষে কয়েক শ লোক মারা গেল। প্রথম বিমানটি আঘাত হানার ১৮ মিনিট পর বোয়িং ৭৬৭ ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১৭৫ বিদ্যুৎবেগে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দিকে ধেয়ে এল এবং ৬০তম ফ্লোরের নিকটবর্তী সাউথ টাওয়ারে আঘাত হানল। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নর্থ ভবনটি ভূপাতিত হলো। হামলার ফলে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে অবস্থানরতদের মধ্যে মাত্র ১৮ জন প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। নর্থ টাওয়ারের স্টেয়ারওয়েল বি-তে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ বিভাগ এবং ফায়ার ফাইটার বিভাগের সর্বাধিক সংখ্যক কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছিলেন এবং বহু লোক আহত হয়েছিলেন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১১ সেপ্টেম্বরের ওই বর্বরোচিত হামলায় নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি এবং পেনসিলভানিয়ায় আল-কায়েদার ছিনতাইকারী ১৯ সদস্যসহ ৭৮ দেশের ২ হাজার ৯৯৬ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছিলেন। দুটি বিমান টুইন টাওয়ারে আঘাত হানার পর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে মারা গিয়েছিলেন ২ হাজার ৭৩৩ জন। এর মধ্যে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত ফায়ার ফাইটার ও প্যারামেডিকস ছিলেন ৩৪৩ জন, সিটির পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন ২৩ জন এবং পোর্ট অথরিটির পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন ৩৭ জন। লোয়ার ম্যানহাটনের বিস্তীর্ণ এলাকা ছাই-ভস্ম ও ধ্বংসাবশেষে ঢাকা পড়ায় পরিবেশের ভারসাম্য চরমভাবে ব্যাহত হয়েছিল। আবহাওয়া দূষিত হয়ে পড়ায় হাজার হাজার লোক শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ উপসর্গের শিকার হয়েছিলেন এবং কমপক্ষে ১০ হাজার আহত ও অসুস্থ লোককে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়েছিল। আবার অনেক লোক ক্যান্সারসহ নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে অদ্যাবধি মরণযন্ত্রণায় ছটফট করছেন।
পেন্টাগনে হামলা : আমেরিকান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৭৭ বিমানটি ওয়াশিংটন ডিসির সামান্য দূরবর্তী ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনস্থ পেন্টাগন সামরিক সদর দপ্তরের পশ্চিম পাশে সকাল পৌনে নয়টায় আঘাত হানার পূর্বে বেশ কয়েকবার চক্কর দিয়েছিল। বোয়িংয়ের জ্বালানির দরুন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ভবনে আগুন ধরে গেলে তা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেল। ফলে সামরিক বাহিনীর ১২৫ জন সদস্য ও বেসামরিক জনগণ এবং আমেরিকান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৭৭ এর ৬৪ জন আরোহীর সকলেই মারা গিয়েছিল।
চতুর্থ বিমান : নিউজার্সির নিউআর্ক লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার অভিমুখে ছেড়ে যাওয়া ইউনাইটেড ফ্লাইট ৯৩-কে উড্ডয়নের ৪০ মিনিট পর ছিনতাই করা হয়েছিল। বিমানটি উড্ডয়নে বিলম্ব হওয়ায় বিমানের আরোহীরা সেলফোন এবং এয়ারফোনের মাধ্যমে নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে হামলার খবর জানতে পেরেছিলেন। চার ছিনতাইকারীর চাহিদা অনুসারে বিমানটি নির্দিষ্ট বিমানবন্দরে যাচ্ছে না জানতে পারার পর বিমানের যাত্রী ও ক্রুরা প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিলেন। যাত্রী ও ক্রুদের সম্মিলিত বাধার মুখে ছিনতাইকারীদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো এবং পাইলট ঘণ্টায় ৫০০ মাইল বেগে বিমানটিকে চালিয়ে দ্রুত অবতরণের চেষ্টা করেন। ফলে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে বিমানটি ওয়েস্টার্ন পেনসিলভানিয়ার সানকসভিলের নিকট একটি গ্রামীণ মাঠে ধ্বংস হয় এবং ফ্লাইট ৯৩ এর ৪৪ জন আরোহী প্রাণ হারান। অনেকের ধারণা, হোয়াইট হাউস, আমেরিকার রাজধানী কিংবা ম্যারিল্যান্ডে ক্যাম্প ডেভিড প্রেসিডেন্সিয়াল আবাস হামলার লক্ষ্যস্থল ছিল। টেলিভিশনের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে এই পৈশাচিক হামলার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর সারা বিশ্বে ঘৃণা-প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় উঠেছিল।
হামলার পূর্বপ্রস্তুতি : জানা যায়, সন্ত্রাসীদের কয়েকজন এক বছর বা তার আগ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে আসছিল এবং আমেরিকান কমার্শিয়াল ফ্লাইট স্কুল থেকে ফ্লাইং বা বিমান চালনার শিক্ষণ গ্রহণ করেছিল। আর বাকিদের কয়েকজন ১১ সেপ্টেম্বরের আগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিল এবং অভিযানে পেশিশক্তি হিসেবে কাজ করেছিল। পূর্ব উপকূলীয় বস্টনের লোগান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, ওয়াশিংটন ডিসির ডুলেস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এবং নিউজার্সির নিউআর্ক ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের সিকিউরিটি কর্মকর্তাদের চোখে ধুলো দিয়ে ১৯ জন সন্ত্রাসী বক্স-কাটার ও ছোরা নিয়ে পুরোপুরি জ্বালানিভর্তি ক্যালিফোর্নিয়া অভিমুখী বিমানে আরোহণ করল। উড্ডয়নের অব্যবহিত পরপরই সন্ত্রাসীরা বিমানের নিয়ন্ত্রণ লাভ করল এবং সাধারণ যাত্রীবাহী চারটি বিমানকে গাইডেড মিশাইলে পরিণত করল।
আমেরিকার গৃহীত পদক্ষেপ : হামলার মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ছিলেন ফ্লোরিডায় এবং নিরাপত্তার কারণে দিনভর সারা দেশ ঘুরে অবশেষে সন্ধ্যা সাতটায় হোয়াইট হাউসে আসেন। অতঃপর রাত নয়টায় ওভাল অফিস থেকে টেলিভিশনযোগে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ওই ভাষণে প্রেসিডেন্ট বুশ তাৎক্ষণিকভাবে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট গঠন এবং আফগানিস্তান ও ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযানসহ সন্ত্রাস নির্মূলের বজ্রকঠোর সংকল্প ব্যক্ত করেন। এরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে আফগানিস্তান থেকে তালেবান শাসনের অবসান এবং ওসামা বিন লাদেনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সমূল উৎপাটনের নিমিত্ত অপারেশন এনডিউরিং ফ্রিডমের আওতায় ৭ অক্টোবর অভিযান শুরু করা হয়। পাশাপাশি সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
সাঁড়াশি অভিযানের মুখে দুই মাসের মধ্যে আফগানিস্তানে মোল্লা ওমরের সরকারের গণেশ উল্টে গেলেও তালেবানদের বিরুদ্ধে কোয়ালিশন বাহিনীর যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। এদিকে সাদ্দামের সুশিক্ষিত সেনাবাহিনী গোড়ার দিকে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুললেও শেষ পর্যন্ত পদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের অনেকেই মোটা অঙ্কের লেনদেনের বিনিময়ে সাদ্দামের পক্ষ ত্যাগ করেন। শেষ পর্যন্ত সাদ্দাম আটক হন এবং আমেরিকার আশীর্বাদপুষ্ট ইরাক সরকার সাদ্দামকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। এদিকে ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট বুশ সদম্ভে ঘোষণা করেন, ইরাক এবং আফগান যুদ্ধে কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জিত হয়েছে। মূলত বুশের ওই ঘোষণা সর্বস্তরের আমেরিকানসহ বিশ্ববাসীর নিকট চরমভাবে উপহসিত হয়।
বস্তুত, মোল্লা ওমর এবং সাদ্দাম সরকারের পতন ঘটলেও ইরাকে চোরাগোপ্তা হামলা এবং ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষ অদ্যাবধি অব্যাহত রয়েছে। অশান্ত ইরাকের মরুপ্রান্তর এখনো মুসলমানদের তাজা রক্তে প্রায়ই রঞ্জিত হচ্ছে। আর দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে বর্তমানে তালেবান সম্প্রদায় আফগানিস্তানের মসনদ দখল করেছে। ২০১১ সালের ২ মে পর্যন্ত ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা কিংবা গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদের একটি গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে আমেরিকান বাহিনী লাদেনকে হত্যা করে। অবশেষে ২০১১ সালের জুন মাসে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আফগানিস্তান থেকে বিপুলসংখ্যক সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন এবং ২০২১ সালের আগস্টে আমেরিকার সকল সৈন্য আফগানিস্তানের ভূখণ্ড ত্যাগ করে। ঠিকানার পক্ষ থেকে পার্ল হারবার, এগারো সেপ্টেম্বরসহ বিভিন্ন সশস্ত্র হামলায় নিহতদের আত্মার চিরপ্রশান্তি ও আহতদের আরোগ্য কামনা এবং তাদের স্বজনদের প্রতি প্রকাশ করছি গভীর সহমর্মিতা।
লেখক : সহযোগী সম্পাদক, ঠিকানা, নিউইয়র্ক।
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
[পূর্ব প্রকাশিতের পর]
পার্ল হারবার হামলার তিন মাস পর ধ্বংসপ্রাপ্ত হনলুলুর পুনর্নির্মাণ কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৪২ সালের ৪ মার্চ দুটি জাপানি যুদ্ধবিমান হনলুলুতে বোমা ফেলল। এরপর ১৯৪২ সালের ৩ ও ৪ জুন জাপানি নৌবাহিনী অলিউশিয়ান আইল্যান্ডস ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে আলাস্কা টেরিটরিতে আক্রমণ করল এবং উনালাস্কা নগরীর ওলন্দাজ পোতাশ্রয়ে বোমা ফেলল এবং ব্যাপক ক্ষতিসাধন ছাড়াও ৪৩ জন আমেরিকানকে খুন করল।
এর কয়েক দিন পর ছয়-সাত হাজার জাপানি সৈন্য মূল ভূখণ্ডে অবতরণ করল এবং অটু ও কিস্কার অলিউশিয়ান আইল্যান্ডস দখল করল। তবে ১৯৪৩ সালের মে থেকে আগস্টের মধ্যে আমেরিকান এবং কানাডীয় সেনাবাহিনী তাদের বিতাড়িত করায় দখলদারি স্থায়ী হয়নি। ফায়ার বেলুন বা আগুনে বেলুন ব্যবহার করে জাপান কয়েকটি হামলা চালিয়ে ছয়জন আমেরিকান নাগরিককে খুন করেছিল। এ ছাড়া অরেগনে হামলা চালিয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে দুই দফা সাবমেরিন থেকে বোমা নিক্ষেপ করে আমেরিকার পর্যাপ্ত ক্ষতি সাধন করেছিল। পার্ল হারবার ছাড়াও জাপানি বাহিনী আলাস্কা, ওয়েক আইল্যান্ড গুয়াম এবং ফিলিপাইন যুদ্ধে ব্যাপক ধ্বংস সাধন করেছিল।
১৯৪৪ সালের ডিসেম্বরে ভাইস অ্যাডমিরাল জিসাবুরো ওজাওয়ার নেতৃত্বে জাপানের নেভাল জেনারেল স্টাফ অপারেশন পিএক্স বা অপারেশন চেরি ব্লজম অ্যাট নাইটের প্রস্তাব করেছিল। ওই প্রস্তাবের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে, বিশেষত সান ডিয়াগো, লস অ্যাঞ্জেলেস ও সান ফ্রান্সিসকো নগরীতে সাবমেরিন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারসহ সিরিয়ান এয়ারক্রাফট অবতরণের আহ্বান জানানো হয়েছিল।
বিমানগুলো থেকে প্লেগ, কলেরা, টাইফয়েড, ডেঙ্গু জ্বর অন্যান্য বায়ুবাহিত রোগজীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া জনগণের মাঝে ছড়ানোর মাধ্যমে কোটি কোটি নিরীহ জনগণকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এ ছাড়া সুইসাইড মিশনের আওতায় সাবমেরিন ক্রুদের বায়ুবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে উপকূলে ছোটাছুটিরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। অপারেশন পিএক্স পরিকল্পনাটি ১৯৪৫ সালের ২৬ মার্চ চূড়ান্ত করা হলেও চিফ অব জেনারেল স্টাফ ইয়োশিজিরো উমেজুর বিরোধিতার কারণে এর প্রয়োগ বিলম্বিত হয়েছিল।
জেনারেল উমেজু বিশ্বাস করতেন, মানবতাবিরোধী অসীম ব্যাকটেরিয়া-যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে জাপানের বিরুদ্ধে প্রবল ঘৃণা ও বিদ্বেষের জন্ম দেবে। যাহোক, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হাওয়াই এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৎসংলগ্ন ভূখণ্ডের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছিল প্যাসিফিক থিয়েটার এবং আমেরিকান থিয়েটার। হাওয়াইতে কর্মরত অবস্থায় যেসব সামরিক কর্মকর্তা কন্টিনেন্টাল আমেরিকান ক্যাম্পেইনে দাপ্তরিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ছিলেন, তাদের এশিয়াটিক-প্যাসিফিক ক্যাম্পেইন মেডেল প্রদান করা হয়েছিল।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংসযজ্ঞ : পত্রিকান্তরে প্রকাশ, একসময় বিশ্বের সর্বাপেক্ষা অপ্রতিদ্বন্দ্বী পরাশক্তির বিশেষ আশীর্বাদপুষ্ট ব্যক্তি ছিলেন সৌদি আরবের অন্যতম ধনকুবের ওসামা বিন লাদেন। নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ হওয়ার পর ওসামা বিন লাদেনকে নাকি পরাশক্তি পরিত্যক্ত উচ্ছিষ্টের মতো ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে প্রতিশোধপরায়ণ ও অঢেল বিত্তশালী লাদেন রাশি রাশি অর্থ ব্যয়ে ইসলামের মৌলিক আদর্শচ্যুত কিছুসংখ্যক বিপথগামী মুসলমানকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিল আল-কায়েদা নামক বিশেষ সন্ত্রাসী গ্রুপ।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল পৌনে নয়টায় ওসামা বিন লাদেনের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় আল-কায়েদার ১৯ জন সদস্য ছিনতাইকৃত ৪ বাণিজ্যিক বিমানযোগে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারসহ অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ওপর আত্মঘাতী আঘাত হেনেছিল। ২০ হাজার গ্যালন জেট জ্বালানি ভর্তি আমেরিকান এয়ারলাইনসের একটি বোয়িং ৭৬৭ যোগে ছিনতাইকারীরা নিউইয়র্ক সিটির ওয়ার্ল্ড সেন্টারের উত্তর টাওয়ারে আঘাত হানল।
মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে ১১০ তলবিশিষ্ট আকাশচুম্বী হর্মটির ৮০তম তলা পুড়ে ছারখার হয়ে গেল এবং নিমেষে কয়েক শ লোক মারা গেল। প্রথম বিমানটি আঘাত হানার ১৮ মিনিট পর বোয়িং ৭৬৭ ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১৭৫ বিদ্যুৎবেগে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দিকে ধেয়ে এল এবং ৬০তম ফ্লোরের নিকটবর্তী সাউথ টাওয়ারে আঘাত হানল। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নর্থ ভবনটি ভূপাতিত হলো। হামলার ফলে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে অবস্থানরতদের মধ্যে মাত্র ১৮ জন প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। নর্থ টাওয়ারের স্টেয়ারওয়েল বি-তে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ বিভাগ এবং ফায়ার ফাইটার বিভাগের সর্বাধিক সংখ্যক কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছিলেন এবং বহু লোক আহত হয়েছিলেন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১১ সেপ্টেম্বরের ওই বর্বরোচিত হামলায় নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি এবং পেনসিলভানিয়ায় আল-কায়েদার ছিনতাইকারী ১৯ সদস্যসহ ৭৮ দেশের ২ হাজার ৯৯৬ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছিলেন। দুটি বিমান টুইন টাওয়ারে আঘাত হানার পর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে মারা গিয়েছিলেন ২ হাজার ৭৩৩ জন। এর মধ্যে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত ফায়ার ফাইটার ও প্যারামেডিকস ছিলেন ৩৪৩ জন, সিটির পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন ২৩ জন এবং পোর্ট অথরিটির পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন ৩৭ জন। লোয়ার ম্যানহাটনের বিস্তীর্ণ এলাকা ছাই-ভস্ম ও ধ্বংসাবশেষে ঢাকা পড়ায় পরিবেশের ভারসাম্য চরমভাবে ব্যাহত হয়েছিল। আবহাওয়া দূষিত হয়ে পড়ায় হাজার হাজার লোক শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ উপসর্গের শিকার হয়েছিলেন এবং কমপক্ষে ১০ হাজার আহত ও অসুস্থ লোককে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়েছিল। আবার অনেক লোক ক্যান্সারসহ নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে অদ্যাবধি মরণযন্ত্রণায় ছটফট করছেন।
পেন্টাগনে হামলা : আমেরিকান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৭৭ বিমানটি ওয়াশিংটন ডিসির সামান্য দূরবর্তী ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনস্থ পেন্টাগন সামরিক সদর দপ্তরের পশ্চিম পাশে সকাল পৌনে নয়টায় আঘাত হানার পূর্বে বেশ কয়েকবার চক্কর দিয়েছিল। বোয়িংয়ের জ্বালানির দরুন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ভবনে আগুন ধরে গেলে তা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেল। ফলে সামরিক বাহিনীর ১২৫ জন সদস্য ও বেসামরিক জনগণ এবং আমেরিকান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৭৭ এর ৬৪ জন আরোহীর সকলেই মারা গিয়েছিল।
চতুর্থ বিমান : নিউজার্সির নিউআর্ক লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার অভিমুখে ছেড়ে যাওয়া ইউনাইটেড ফ্লাইট ৯৩-কে উড্ডয়নের ৪০ মিনিট পর ছিনতাই করা হয়েছিল। বিমানটি উড্ডয়নে বিলম্ব হওয়ায় বিমানের আরোহীরা সেলফোন এবং এয়ারফোনের মাধ্যমে নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে হামলার খবর জানতে পেরেছিলেন। চার ছিনতাইকারীর চাহিদা অনুসারে বিমানটি নির্দিষ্ট বিমানবন্দরে যাচ্ছে না জানতে পারার পর বিমানের যাত্রী ও ক্রুরা প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিলেন। যাত্রী ও ক্রুদের সম্মিলিত বাধার মুখে ছিনতাইকারীদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো এবং পাইলট ঘণ্টায় ৫০০ মাইল বেগে বিমানটিকে চালিয়ে দ্রুত অবতরণের চেষ্টা করেন। ফলে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে বিমানটি ওয়েস্টার্ন পেনসিলভানিয়ার সানকসভিলের নিকট একটি গ্রামীণ মাঠে ধ্বংস হয় এবং ফ্লাইট ৯৩ এর ৪৪ জন আরোহী প্রাণ হারান। অনেকের ধারণা, হোয়াইট হাউস, আমেরিকার রাজধানী কিংবা ম্যারিল্যান্ডে ক্যাম্প ডেভিড প্রেসিডেন্সিয়াল আবাস হামলার লক্ষ্যস্থল ছিল। টেলিভিশনের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে এই পৈশাচিক হামলার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর সারা বিশ্বে ঘৃণা-প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় উঠেছিল।
হামলার পূর্বপ্রস্তুতি : জানা যায়, সন্ত্রাসীদের কয়েকজন এক বছর বা তার আগ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে আসছিল এবং আমেরিকান কমার্শিয়াল ফ্লাইট স্কুল থেকে ফ্লাইং বা বিমান চালনার শিক্ষণ গ্রহণ করেছিল। আর বাকিদের কয়েকজন ১১ সেপ্টেম্বরের আগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিল এবং অভিযানে পেশিশক্তি হিসেবে কাজ করেছিল। পূর্ব উপকূলীয় বস্টনের লোগান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, ওয়াশিংটন ডিসির ডুলেস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এবং নিউজার্সির নিউআর্ক ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের সিকিউরিটি কর্মকর্তাদের চোখে ধুলো দিয়ে ১৯ জন সন্ত্রাসী বক্স-কাটার ও ছোরা নিয়ে পুরোপুরি জ্বালানিভর্তি ক্যালিফোর্নিয়া অভিমুখী বিমানে আরোহণ করল। উড্ডয়নের অব্যবহিত পরপরই সন্ত্রাসীরা বিমানের নিয়ন্ত্রণ লাভ করল এবং সাধারণ যাত্রীবাহী চারটি বিমানকে গাইডেড মিশাইলে পরিণত করল।
আমেরিকার গৃহীত পদক্ষেপ : হামলার মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ছিলেন ফ্লোরিডায় এবং নিরাপত্তার কারণে দিনভর সারা দেশ ঘুরে অবশেষে সন্ধ্যা সাতটায় হোয়াইট হাউসে আসেন। অতঃপর রাত নয়টায় ওভাল অফিস থেকে টেলিভিশনযোগে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ওই ভাষণে প্রেসিডেন্ট বুশ তাৎক্ষণিকভাবে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট গঠন এবং আফগানিস্তান ও ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযানসহ সন্ত্রাস নির্মূলের বজ্রকঠোর সংকল্প ব্যক্ত করেন। এরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে আফগানিস্তান থেকে তালেবান শাসনের অবসান এবং ওসামা বিন লাদেনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সমূল উৎপাটনের নিমিত্ত অপারেশন এনডিউরিং ফ্রিডমের আওতায় ৭ অক্টোবর অভিযান শুরু করা হয়। পাশাপাশি সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
সাঁড়াশি অভিযানের মুখে দুই মাসের মধ্যে আফগানিস্তানে মোল্লা ওমরের সরকারের গণেশ উল্টে গেলেও তালেবানদের বিরুদ্ধে কোয়ালিশন বাহিনীর যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। এদিকে সাদ্দামের সুশিক্ষিত সেনাবাহিনী গোড়ার দিকে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুললেও শেষ পর্যন্ত পদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের অনেকেই মোটা অঙ্কের লেনদেনের বিনিময়ে সাদ্দামের পক্ষ ত্যাগ করেন। শেষ পর্যন্ত সাদ্দাম আটক হন এবং আমেরিকার আশীর্বাদপুষ্ট ইরাক সরকার সাদ্দামকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। এদিকে ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট বুশ সদম্ভে ঘোষণা করেন, ইরাক এবং আফগান যুদ্ধে কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জিত হয়েছে। মূলত বুশের ওই ঘোষণা সর্বস্তরের আমেরিকানসহ বিশ্ববাসীর নিকট চরমভাবে উপহসিত হয়।
বস্তুত, মোল্লা ওমর এবং সাদ্দাম সরকারের পতন ঘটলেও ইরাকে চোরাগোপ্তা হামলা এবং ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষ অদ্যাবধি অব্যাহত রয়েছে। অশান্ত ইরাকের মরুপ্রান্তর এখনো মুসলমানদের তাজা রক্তে প্রায়ই রঞ্জিত হচ্ছে। আর দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে বর্তমানে তালেবান সম্প্রদায় আফগানিস্তানের মসনদ দখল করেছে। ২০১১ সালের ২ মে পর্যন্ত ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা কিংবা গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদের একটি গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে আমেরিকান বাহিনী লাদেনকে হত্যা করে। অবশেষে ২০১১ সালের জুন মাসে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আফগানিস্তান থেকে বিপুলসংখ্যক সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন এবং ২০২১ সালের আগস্টে আমেরিকার সকল সৈন্য আফগানিস্তানের ভূখণ্ড ত্যাগ করে। ঠিকানার পক্ষ থেকে পার্ল হারবার, এগারো সেপ্টেম্বরসহ বিভিন্ন সশস্ত্র হামলায় নিহতদের আত্মার চিরপ্রশান্তি ও আহতদের আরোগ্য কামনা এবং তাদের স্বজনদের প্রতি প্রকাশ করছি গভীর সহমর্মিতা।
লেখক : সহযোগী সম্পাদক, ঠিকানা, নিউইয়র্ক।
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩।