রোমিনা লোদী
ওরা বলে, ১৮ একটা ম্যাজিক নাম্বার। বয়স যখন ১৮-তে পড়ে, তখন এ দেশের নাগরিকদের প্রাপ্তবয়স্কতা মেলে। তারা পদার্পণ করে প্রাপ্তবয়স্কের দোরগোড়ায়, অর্থাৎ তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক। আমেরিকার টিনএজাররা ১৮ হওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে। কারণ ১৮ হলেই তারা পেয়ে যায় বেশ কিছু মূল্যবান ক্ষমতা। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা পায়। আইনত বিয়ে করা এবং সংসার করার স্বাধীনতা পায়। বাড়িঘর ও সহায়-সম্পত্তির ব্যাপারে আইনত সিদ্ধান্ত নেওয়া ও স্বাক্ষর করার অধিকার অর্জন করে। সর্বোপরি নিজের চিকিৎসার ব্যাপারে সকল সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং ব্যক্তিগত মেডিক্যাল রেকর্ড গোপন রাখার স্বাধীনতা পায়, যাতে তার অনুমতি ছাড়া বাবা-মা বা অন্য কেউ তার শারীরিক অবস্থা বা চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে না পারে।
বয়স ১৮ হলে সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটা করতে পারবে বলে ছেলেমেয়েদের অসীম আনন্দ হয়, তা হলো বাবা-মার সংসার ত্যাগ করা বা তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া। এককথায় নিজের জীবন নিজে চালানোর পরীক্ষায় তারা সম্মুখীন হয়। পরীক্ষা-পর্বে কখনো সফলতা বা কখনো বিফলতা, এরই মধ্য দিয়ে তারা খুঁজে পায় তাদের আসল ঠিকানা, পৌঁছে যায় তাদের গন্তব্যে। এরই মধ্য দিয়ে তারা আবিষ্কার করে নিজেদের। আর এগুলো করতে করতেই তারা তরুণ প্রাপ্তবয়স্কতার ধাপটি পার করে হয়ে যায় পরিপূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক।
এই বিচ্ছেদের একটি বড় কারণ হলো হাইস্কুল পাস করে টিনএজাররা যখন কলেজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কলেজটি হয় অন্য কোনো শহরে বা অন্য কোনো স্টেটে। অনেক সময় একই শহরে ইউনিভার্সিটি হলেও ছেলেমেয়েরা বাড়িতে না থেকে হোস্টেল বা (আমেরিকান) ডর্মে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিপূর্ণভাবে এদের স্বাধীনতা উপভোগ করতে চায়। বাবা-মা চাইলেও আইনতভাবে ১৮ বছর বয়সী সন্তানকে বাড়িতে আটকে রাখতে পারবে না। তাই কোনো রকম বাধা বা নিষেধ ছাড়াই তারা সন্তানের ইচ্ছেটাকে পরিপূর্ণভাবে সমর্থন করে। এটাই আমেরিকান সমাজব্যবস্থা, স্বাভাবিক রীতিনীতি, যা বহুযুগ ধরে হয়ে আসছে। পরিপূর্ণ স্বাধীনতা লাভ বা ফ্রিডম পাওয়া আমেরিকানদের বেঁচে থাকার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।
আমাদের বাঙালি সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করলে মনে হবে, এটা কী ধরনের পাগলামি? ১৮ বছরের ছেলেমেয়েরা আবার বড় নাকি, তারা তো বাচ্চা। আসল দুনিয়াদারির বিচারে একেবারে নাদান শিশু। সবেমাত্র কলেজ (আমেরিকান হাইস্কুল) পাস করেছে। জীবনে কী করতে চায়, না চায় এখনো ভালো করে জানেই না। জীবনের বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তাদের হয়ে তাদের বাবা-মায়েরা নিয়ে দেবে। তবেই না তারা ঠিক পথে এগোবে। কাজেই বাবা-মায়ের বাড়ি ছাড়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। সত্যিকার অর্থে বাঙালি সমাজে অনেক সময় তিরিশোর্ধ্ব সন্তানদেরও বাপ-মায়ের বাড়িতে একসঙ্গে থাকতে দেখা যায়। এটা কারও কাছে দৃষ্টিকটুও হয় না।
পাশ্চাত্য দুনিয়ায় এই ব্যাপারটা কল্পনা করা যায় না। প্রাচ্যের এই চিন্তাধারাগুলো পাশ্চাত্যের দুনিয়ায় একদমই সেকেলে। প্রাচ্যের মানুষগুলো যখন ভাবে, তরুণদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে পিতা-মাতা বা গুরুজন সঠিক রাস্তা দেখাবে, ভুল করা থেকে প্রতিনিয়ত রক্ষা করবে; তখন তারা ভাবে, ভুল করতে করতেই তরুণেরা শিখবে এবং নিজের ভুলের মাশুল নিজেই দেবে। কোন ধারাটি সম্পূর্ণ ঠিক আর কোনটি বেঠিক, এই মতামত একেক জনের কাছে একেক রকম। আমরা যে যেই সমাজে বসবাস করি, সে সেই সমাজেরই রীতিনীতিগুলো মানতে বাধ্য হই।
এবার আসি নিউরোবিজ্ঞানী এবং মনোবিজ্ঞানীদের কথায়, ১৮ বছর সম্পর্কে তারা কী বলে। তাদের মতে, মানুষের শারীরিক পরিপক্বতা আর মানসিক পরিপক্বতা কোনোভাবেই একই গতিতে চলে না। কাজেই একটি ছেলে বা মেয়ে শারীরিকভাবে বিকশিত হয়ে গেলেও মানসিক বৃদ্ধি এমন একটি প্রক্রিয়া, যা ক্রমাগত চলতেই থাকে। কোনো কোনো গবেষণায় দেখা গিয়েছে, একজন তরুণ এবং একজন পূর্ণবয়স্ক যুবকের বুদ্ধিমত্তা এক হলেও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তরুণেরা বুদ্ধির চাইতে আবেগকে বেশি প্রাধান্য দেয়। যুক্তি বা বাস্তবতার বদলে তাদের আবেগই সকল চিন্তাধারাকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিজ্ঞানীদের মতে, ১৮ নয় বরং ২০ ঊর্ধ্ব কোনো বয়স, যেমন ২৪ বা ২৫ বছরে একজন মানুষের প্রাপ্তবয়স্ক বুদ্ধিমত্তা আসে।
বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রচার ও প্রসার টিনএজার বা তরুণদের জন্য ব্যাপারটাকে আরও কঠিন করে দিয়েছে। খুব অল্প সময়ে বিরাট কিছু করা বা তাড়াতাড়ি বড় হয়ে অন্যদের মতো কিছু করে দেখানোর এক প্রচণ্ড চাপ তারা সর্বদা অনুভব করে। মানসিক বৃদ্ধির স্বাভাবিক গতি ত্বরান্বিত করার যে চেষ্টায় তারা উপনীত হয়, তাতে করে ব্রেইনের সকল অংশ সমানভাবে ম্যাচিউর হয় না। আর সে জন্যই, উনিশ-কুড়ি বছর বয়সীরা জীবনে কিছু কাজ ঠিক করে, আবার কিছু ভুল সিদ্ধান্তের বিরাট মাশুল দেয়।
আমার বড় ছেলেটা এ বছর হাইস্কুল পাস করেছে এবং ১৮-তে পড়েছে। টেক্সাস এঅ্যান্ডএম ইউনিভার্সিটিতে অ্যাডমিশন পেয়ে সে বর্তমানে কলেজ জীবনে ঢোকার জন্য প্রস্তুত। সন্তান চলে যাওয়ার মনখারাপের মাঝে আমার বারবার মনে পড়ছিল, আঠারো বছর আগের সেই দিনটার কথা। ছেলেটা জন্মানোর তিন দিনের মাথায় আমি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলাম। ছোট্ট শিশুটা প্রথম বেবি ক্যারিয়ারে শুয়ে বাড়িতে এল। বাবা-মায়ের দুই পরিবারের সে যে কী আনন্দ। নতুন অতিথিকে বরণ করতে কত ধরনের আয়োজন সম্পন্ন হলো। কে আগে কোলে নেবে, এই আনন্দে সবাই ছিল বিভোর। একটু কান্নার আওয়াজ শুনলেই কী হলো কী হলো করে সবাই চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়ছিল।
সেই শিশুটি এ বছর প্রাপ্তবয়স্কতা পেল। তরুণ প্রাপ্তবয়স্কতার ছাড়পত্র পেয়ে সে বাড়ি ছাড়ার জন্য প্রস্তুত হলো। আমার ছেলেটা মা-বাবার স্নেহ-মমতায় তিল তিল করে গড়ে তোলা, তার চিরপরিচিত আবাসস্থল ছেড়ে রওনা হলো নতুন এক গন্তব্যস্থলের দিকে। তার সামনে এখন অপেক্ষা করছে অফুরন্ত সম্ভাবনা এবং এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা। এখন সে এক নতুন পথের পথিক। যদিও পথটি হবে বন্ধুর আর বিপৎসংকুল, তবু আশা রাখি, সাহস আর আত্মপ্রত্যয় নিয়ে সে ঠিকই পৌঁছে যাবে তার ঠিকানায়। এই ১৮ সংখ্যাটি তাকে ধীরে ধীরে নিয়ে যাবে নিজেকে চেনার আর স্বপ্নপূরণের পরিপক্বতার পথে। ম্যাজিক নাম্বার ১৮।
লেখক : ব্লগার ও কলামিস্ট, টেক্সাস
ওরা বলে, ১৮ একটা ম্যাজিক নাম্বার। বয়স যখন ১৮-তে পড়ে, তখন এ দেশের নাগরিকদের প্রাপ্তবয়স্কতা মেলে। তারা পদার্পণ করে প্রাপ্তবয়স্কের দোরগোড়ায়, অর্থাৎ তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক। আমেরিকার টিনএজাররা ১৮ হওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে। কারণ ১৮ হলেই তারা পেয়ে যায় বেশ কিছু মূল্যবান ক্ষমতা। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা পায়। আইনত বিয়ে করা এবং সংসার করার স্বাধীনতা পায়। বাড়িঘর ও সহায়-সম্পত্তির ব্যাপারে আইনত সিদ্ধান্ত নেওয়া ও স্বাক্ষর করার অধিকার অর্জন করে। সর্বোপরি নিজের চিকিৎসার ব্যাপারে সকল সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং ব্যক্তিগত মেডিক্যাল রেকর্ড গোপন রাখার স্বাধীনতা পায়, যাতে তার অনুমতি ছাড়া বাবা-মা বা অন্য কেউ তার শারীরিক অবস্থা বা চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে না পারে।
বয়স ১৮ হলে সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটা করতে পারবে বলে ছেলেমেয়েদের অসীম আনন্দ হয়, তা হলো বাবা-মার সংসার ত্যাগ করা বা তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া। এককথায় নিজের জীবন নিজে চালানোর পরীক্ষায় তারা সম্মুখীন হয়। পরীক্ষা-পর্বে কখনো সফলতা বা কখনো বিফলতা, এরই মধ্য দিয়ে তারা খুঁজে পায় তাদের আসল ঠিকানা, পৌঁছে যায় তাদের গন্তব্যে। এরই মধ্য দিয়ে তারা আবিষ্কার করে নিজেদের। আর এগুলো করতে করতেই তারা তরুণ প্রাপ্তবয়স্কতার ধাপটি পার করে হয়ে যায় পরিপূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক।
এই বিচ্ছেদের একটি বড় কারণ হলো হাইস্কুল পাস করে টিনএজাররা যখন কলেজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কলেজটি হয় অন্য কোনো শহরে বা অন্য কোনো স্টেটে। অনেক সময় একই শহরে ইউনিভার্সিটি হলেও ছেলেমেয়েরা বাড়িতে না থেকে হোস্টেল বা (আমেরিকান) ডর্মে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিপূর্ণভাবে এদের স্বাধীনতা উপভোগ করতে চায়। বাবা-মা চাইলেও আইনতভাবে ১৮ বছর বয়সী সন্তানকে বাড়িতে আটকে রাখতে পারবে না। তাই কোনো রকম বাধা বা নিষেধ ছাড়াই তারা সন্তানের ইচ্ছেটাকে পরিপূর্ণভাবে সমর্থন করে। এটাই আমেরিকান সমাজব্যবস্থা, স্বাভাবিক রীতিনীতি, যা বহুযুগ ধরে হয়ে আসছে। পরিপূর্ণ স্বাধীনতা লাভ বা ফ্রিডম পাওয়া আমেরিকানদের বেঁচে থাকার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।
আমাদের বাঙালি সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করলে মনে হবে, এটা কী ধরনের পাগলামি? ১৮ বছরের ছেলেমেয়েরা আবার বড় নাকি, তারা তো বাচ্চা। আসল দুনিয়াদারির বিচারে একেবারে নাদান শিশু। সবেমাত্র কলেজ (আমেরিকান হাইস্কুল) পাস করেছে। জীবনে কী করতে চায়, না চায় এখনো ভালো করে জানেই না। জীবনের বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তাদের হয়ে তাদের বাবা-মায়েরা নিয়ে দেবে। তবেই না তারা ঠিক পথে এগোবে। কাজেই বাবা-মায়ের বাড়ি ছাড়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। সত্যিকার অর্থে বাঙালি সমাজে অনেক সময় তিরিশোর্ধ্ব সন্তানদেরও বাপ-মায়ের বাড়িতে একসঙ্গে থাকতে দেখা যায়। এটা কারও কাছে দৃষ্টিকটুও হয় না।
পাশ্চাত্য দুনিয়ায় এই ব্যাপারটা কল্পনা করা যায় না। প্রাচ্যের এই চিন্তাধারাগুলো পাশ্চাত্যের দুনিয়ায় একদমই সেকেলে। প্রাচ্যের মানুষগুলো যখন ভাবে, তরুণদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে পিতা-মাতা বা গুরুজন সঠিক রাস্তা দেখাবে, ভুল করা থেকে প্রতিনিয়ত রক্ষা করবে; তখন তারা ভাবে, ভুল করতে করতেই তরুণেরা শিখবে এবং নিজের ভুলের মাশুল নিজেই দেবে। কোন ধারাটি সম্পূর্ণ ঠিক আর কোনটি বেঠিক, এই মতামত একেক জনের কাছে একেক রকম। আমরা যে যেই সমাজে বসবাস করি, সে সেই সমাজেরই রীতিনীতিগুলো মানতে বাধ্য হই।
এবার আসি নিউরোবিজ্ঞানী এবং মনোবিজ্ঞানীদের কথায়, ১৮ বছর সম্পর্কে তারা কী বলে। তাদের মতে, মানুষের শারীরিক পরিপক্বতা আর মানসিক পরিপক্বতা কোনোভাবেই একই গতিতে চলে না। কাজেই একটি ছেলে বা মেয়ে শারীরিকভাবে বিকশিত হয়ে গেলেও মানসিক বৃদ্ধি এমন একটি প্রক্রিয়া, যা ক্রমাগত চলতেই থাকে। কোনো কোনো গবেষণায় দেখা গিয়েছে, একজন তরুণ এবং একজন পূর্ণবয়স্ক যুবকের বুদ্ধিমত্তা এক হলেও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তরুণেরা বুদ্ধির চাইতে আবেগকে বেশি প্রাধান্য দেয়। যুক্তি বা বাস্তবতার বদলে তাদের আবেগই সকল চিন্তাধারাকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিজ্ঞানীদের মতে, ১৮ নয় বরং ২০ ঊর্ধ্ব কোনো বয়স, যেমন ২৪ বা ২৫ বছরে একজন মানুষের প্রাপ্তবয়স্ক বুদ্ধিমত্তা আসে।
বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রচার ও প্রসার টিনএজার বা তরুণদের জন্য ব্যাপারটাকে আরও কঠিন করে দিয়েছে। খুব অল্প সময়ে বিরাট কিছু করা বা তাড়াতাড়ি বড় হয়ে অন্যদের মতো কিছু করে দেখানোর এক প্রচণ্ড চাপ তারা সর্বদা অনুভব করে। মানসিক বৃদ্ধির স্বাভাবিক গতি ত্বরান্বিত করার যে চেষ্টায় তারা উপনীত হয়, তাতে করে ব্রেইনের সকল অংশ সমানভাবে ম্যাচিউর হয় না। আর সে জন্যই, উনিশ-কুড়ি বছর বয়সীরা জীবনে কিছু কাজ ঠিক করে, আবার কিছু ভুল সিদ্ধান্তের বিরাট মাশুল দেয়।
আমার বড় ছেলেটা এ বছর হাইস্কুল পাস করেছে এবং ১৮-তে পড়েছে। টেক্সাস এঅ্যান্ডএম ইউনিভার্সিটিতে অ্যাডমিশন পেয়ে সে বর্তমানে কলেজ জীবনে ঢোকার জন্য প্রস্তুত। সন্তান চলে যাওয়ার মনখারাপের মাঝে আমার বারবার মনে পড়ছিল, আঠারো বছর আগের সেই দিনটার কথা। ছেলেটা জন্মানোর তিন দিনের মাথায় আমি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলাম। ছোট্ট শিশুটা প্রথম বেবি ক্যারিয়ারে শুয়ে বাড়িতে এল। বাবা-মায়ের দুই পরিবারের সে যে কী আনন্দ। নতুন অতিথিকে বরণ করতে কত ধরনের আয়োজন সম্পন্ন হলো। কে আগে কোলে নেবে, এই আনন্দে সবাই ছিল বিভোর। একটু কান্নার আওয়াজ শুনলেই কী হলো কী হলো করে সবাই চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়ছিল।
সেই শিশুটি এ বছর প্রাপ্তবয়স্কতা পেল। তরুণ প্রাপ্তবয়স্কতার ছাড়পত্র পেয়ে সে বাড়ি ছাড়ার জন্য প্রস্তুত হলো। আমার ছেলেটা মা-বাবার স্নেহ-মমতায় তিল তিল করে গড়ে তোলা, তার চিরপরিচিত আবাসস্থল ছেড়ে রওনা হলো নতুন এক গন্তব্যস্থলের দিকে। তার সামনে এখন অপেক্ষা করছে অফুরন্ত সম্ভাবনা এবং এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা। এখন সে এক নতুন পথের পথিক। যদিও পথটি হবে বন্ধুর আর বিপৎসংকুল, তবু আশা রাখি, সাহস আর আত্মপ্রত্যয় নিয়ে সে ঠিকই পৌঁছে যাবে তার ঠিকানায়। এই ১৮ সংখ্যাটি তাকে ধীরে ধীরে নিয়ে যাবে নিজেকে চেনার আর স্বপ্নপূরণের পরিপক্বতার পথে। ম্যাজিক নাম্বার ১৮।
লেখক : ব্লগার ও কলামিস্ট, টেক্সাস