প্রসঙ্গে : তারেক রহমান

প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:৩০ , অনলাইন ভার্সন
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কয়েকটি মিডিয়া সাক্ষাৎকার সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন মহলে হটটপিক হিসেবে ব্যাপক ভাবে আলোচিত হতে দেখা যায়। বিবিসি বাংলা, ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে তিনি এসব সাক্ষাৎকার দেন, যা বিগত প্রায় দুই দশকের মধ্যে এবারই প্রথম ঘটে। বিগত ১৭ বছর ধরে তিনি তার ভাষায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকতে বাধ্য হন বলে জানান। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি শিগগিরই দেশে ফেরার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তার ভাষায় ‘ইনশাআল্লাহ সময় এসেছে এ তার দেশে ফেরার। কারো প্রতিক্ষোভ প্রকাশ না করে কিছু ব্যক্তিগত কারণে তিনি এত দিন দেশে ফিরতে পারেননি বলে জানান।

আসন্ন নির্বাচনে তার দলের বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল বলে অনেকে ধারণা করেন। নির্বাচনে বিজয়ী হলে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে তারেক রহমান দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেটাও অনেকটা নিশ্চিত মনে করা হয়। দেশের অন্য বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা এক প্রকার নেই বললেই চলে। প্রসঙ্গত, চব্বিশের জুলাই বিপ্লবে জাতিংঘসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্টে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর পদক্ষেপে (crackdown) কমবেশি ১৪০০০ জন নিহত ও আরো বহুসংখ্যক মানুষ আহত হয়, যার ফলে সৃষ্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মুখে শেখ হাসিনাকে জীবন বাঁচাতে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হতে হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধে বর্তমানে তার ও তার দলের অনেক নেতার বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অপর একটি বড় দল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবির সাম্প্রতিক সময়ে দু’টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর) স্টুডেন্টস ইউনিয়ন নির্বাচনে বেশ ভালো ফললাভ করলেও, ধর্মীয় মৌলবাদী আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধে দলের ভূমিকার কারণে দেশের একটি বড় অংশের মানুষের কাছে ওই দলের গ্রহণযোগ্যতা এখানো যতেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ।

১৭ বছর দেশে না থাকতে পারায় সশরীরে দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম অংশ নিতে সক্ষম নাহলেও তারেক রহমানভার্চুয়ালি ও বিভিন্ন সমাজিক মাধ্যমে যুক্ত হয়ে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখেন, যা স্বৈরশাসকের সীমাহীন নিপীড়ন-নির্যাতনের মধ্যেও দলকে ঐক্যবদ্ধ ও দলীয় নেতাকর্মীদের সাহস ও মনোবলকে চাঙ্গা রাখতে সক্ষম হয়, যা তার রাজনৈতিক দক্ষতা ও পরিপক্বতার পরিচয় দেয়।
উল্লেখ্য যে, বিগত দেড় দশকে তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ বহু মামলা দেয়া হয়। শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলার মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। মানিলন্ডারিং মামলায় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিতনা হওয়ায় তিনি মামলা থেকে খালাস পান, যদিও শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে তাকে সাজা দানের জন্য মামলার বিচারক জনাব মোতাহার হোসেনের উপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনার কথামতো সাজা না দেয়ায় বিচারককে তার রোষানলে পড়ে নিজের জীবন বাঁচাতে দেশত্যাগ করতে হয়।

তারেক রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত সব মামলাকে প্রতিহিংসা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক বলে দাবি করেন। এরইমধ্যে তার বিরুদ্ধ আনীত সব মামলা থেকে তিনি অভিযোগমুক্ত হয়েছেন।
লন্ডন থেকে তারেক রহমানের রাজনৈতিক কার্যক্রমের কারণে বিএনপিকে ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সব মিডিয়ায় তারেক রহমানের বক্তব্য-বিবৃতি প্রচার বন্ধ করে দেন। সেই সালে অত্যন্ত দম্ভভরে ও অশালীন ভাষায় তাকে উদ্দেশ করে লন্ডনে বসে রাজনীতি না করে ‘বাপের বেটা’ হলে দেশে এসে রাজনীতি করার নসিহত করেন। স্পষ্টত এর মাধ্যমে দেশে এলে তিনি তাকে উপযুক্ত শাস্তি দেবেন, সেটাই তিনি বোঝাতে চান।

নিয়মিত কী পরিহাস, যে মানুষটির প্রতি তার এত ক্ষোভ ও বিদ্বেষ, সেই মানুষটির নায়কের বেশে দেশে ফেরা অত্যাসন্ন হলেও, শেখ হাসিনাকেই কি না এখন বিচারে সাজাভোগের সমূহ সম্ভাবনা নিয়ে পলাতক জীবনে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক ফন্দি-ফিকির প্রণয়নে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। ‘আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইর’ প্রবাদ বাক্যটির উৎপত্তি সম্ভবত এ ধরনের পরিস্থিতি থেকেই হয়।
উপরে বর্ণিত প্রতিটি সাক্ষাৎকারে তারেক রহমানের মার্জিত ও বিজ্ঞজনচিত্র বক্তব্যে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও পরিপক্বতা সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে, যা বহু মহলে বিশেষভাবে প্রশংসিত হতে দেখা যায়।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে সব ভায়োলেন্স ও সহিংসতার একটি গুরুতর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। মহাত্মাগান্ধী, আবদুল গাফফার খান, রুশ লেখক টলান্টয়, মার্টিন লুতার কিং জুনিয়র এরা সবাই ইতিহাস খ্যাত বরেণ্য ব্যক্তিত্ব।

তারা সবাই ছিলেন অহিংসায় বিশ্বাসী মানুষ। সমাজ পরিবর্তনে অহিংস পন্থা কতটা কার্যকর, তা নিয়ে দ্বিমত থাকাটা স্বাভাবিক হলেও এর কোনো ইতিবাচক গুরুত্ব নেই। সেটা বলার উপায় নেই। বাংলাদেশের পরবর্তী নেতা এসব মহান ব্যক্তির মতো মানুষকে জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ পরিচালনায় ব্রতী হলে, তা সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে মনে করি।

জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে সংগঠিত জুলাই বিপ্লবে গণতান্ত্রিক মানবিক সমাজ গড়ার সংকল্প ও আকাক্সক্ষার প্রকাশ ঘটে, যা বাংলাদেশের মানুষের অন্তরে চিরস্থায়ী ছাপ রেখ গেছে। গায়ের জোরে দেশ শাসনের পরিনাম যে কখনো শুভ হয় না, জুলাই বিপ্লব তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। প্রতিহিংসা ও সংঘাতের পথ পরিহার করে দেশ পরিচালনার বিকল্প নেই। এরইমধ্যে তারেক রহমানের নির্দেশে নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে দলের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘটনা একটি শুভ লক্ষণ।
লেখক : কলামিস্ট।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041