জুলাই-পরবর্তী রাজনীতি ►আওয়ামী ‘সিন্দুকের চাবি’এখন বিএনপির হাতে?

খেলোয়াড় বদলেছে, খেলা নয়

প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:১২ , অনলাইন ভার্সন
এ সময়ে দেশের সবচেয়ে বড় দল বিএনপি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিতাড়িত দল আওয়ামী লীগের অভাব ভুলিয়ে দিচ্ছে। সামনে দলটি আওয়ামী লীগের পর্যায়ে পৌঁছাবে নাকি আরও বেশি এগিয়ে যাবে এ প্রশ্ন ঘুরছে উদ্বেগের মতো। ঠিক এ রকম সময়েই ছয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থা আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর আরোপিত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছে। সামনে এই দাবি আরও জোরালো হওয়ার বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে বিভিন্ন দেশও এটি চাইতে শুরু করবে বলে আভাস ও চেষ্টা চলছে। বিএনপি নীতিগতভাবে আওয়ামী লীগ বা কোনো দলকে নিষিদ্ধ চায় না, তা সম্প্রতি বেশি বেশি করে বলছে। আবার জুলাই চেতনার কথাও ঠিক রাখছে। ৭১ আর ২৪-কে এক পাল্লায় না মাপতেও বলছে। আসলে বাংলাদেশে রাজনীতির রং মুহূর্তে মুহূর্তে পাল্টে যাচ্ছে। শক্তির ভরকেন্দ্রের পেন্ডুলাম কখন যে কার দিকে ঝুঁকছে বলা কঠিন। তবে একটি রাজনৈতিক বিশ্লেষক সবাই ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন যে, রাজনীতির ময়দানে খেলোয়াড় বদল হয়েছে, কিন্তু খেলা বদলায়নি। 
রাজনৈতিক মহলে বিএনপির মতিগতি ও নীতি বা কৌশল নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মাঝেই এল প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৬ আন্তর্জাতিক সংগঠনের চিঠি। বিশ্ব মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা এইচআরডব্লিউর বাইরে অন্য সংগঠনগুলো হচ্ছে বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা নিউইয়র্কভিত্তিক সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট-সিপিজে, বিশ্বজুড়ে নাগরিক সমাজের অধিকার রক্ষায় কাজ করা দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক সংস্থা সিভিকাস, রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করা মানবাধিকার সংগঠন থাইল্যান্ডভিত্তিক ফোরটিফাই রাইটস, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস ও টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এইচআরডব্লিউর ওয়েবসাইটে ঘোরা এ চিঠির কপির প্রিন্ট লিফলেটের মতো বিলি করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া জাতিসংঘের কোনো দলকে নিষিদ্ধ না করা ও কাউকে মৃত্যুদণ্ড না দেওয়ার অনুরোধপত্র তো রয়েছেই। বাংলাদেশে মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সংস্কার-প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নতুন করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা রোধে একগুচ্ছ প্রেসক্রিপশন রয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর চিঠিতে। সেখানে আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখাই মূলকথা।
নির্বাচন সামনে রেখে জুলাই ব্যবসা ও জুলাই গাদ্দারির নতুন ন্যারেটিভ চলাকালে আওয়ামী লীগকে প্রাসঙ্গিক করে তোলার পেছনে দেশীয় রাজনীতির সমান্তরালে ভিনদেশি কিছু তদবির ঘুরছে পুরোদমে। এ নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের বিভিন্ন সমীকরণ। আবার কারও কারও রয়েছে একরৈখিক কুটিল অঙ্ক। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে বিএনপির আওয়ামী চর্চা। জামায়াতকে একবার ক্ষমতায় এনে পাতানো টেস্ট ম্যাচের হিসাবও বাদ যাচ্ছে না। ছকমতো ক্ষমতার মূল ভরকেন্দ্রে ঢুকে পড়েছে জামায়াত। গুরুত্বপূর্ণ বেশ কটি জায়গা তাদের আয়ত্তে। আশ্চর্যজনকভাবে তাদের সঙ্গে মিলেছে প্রগতিশীল দাবিদার কয়েকটি দলও। সমমনা সাতটি দল নিয়ে তারা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব-পিআর পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচন, জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে নভেম্বরে গণভোট আয়োজনসহ পাঁচ দাবির ধোঁয়াও ছাড়ছে না জামায়াত। এই এক বছর দেশ যেভাবে চলছে জামায়াত ক্ষমতায় এলে দেশ কীভাবে চলবে, এর গুপ্ত-সুপ্ত ট্রেইলরও চলছে।
আর কালের নায়ক নাহিদ, সারজিস, হাসনাত, পাটোয়ারী, আখতার, সামান্তারা দৃশ্যত গ্যাঁড়াকলে। তাদের রবিনহুড হয়ে ওঠায় ছন্দপতন ঘটে গেছে। আবেগের জায়গাও দিনকে দিন নিঃশেষের পথে। জায়গা বিগড়ে গেছে ভোটের মাঠে। সেখানে বিএনপি দিয়ে চলছে আওয়ামী লীগের প্রক্সি। একদিকে দুর্বল আইনশৃঙ্খলা, অপরদিকে মোটামুটি কম প্রতিযোগিতার মাঠে এমপি হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া না করার তীব্র বাসনা ভয়ানক সহিংসতা সৃষ্টি করছে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে। দুই দশকে আওয়ামী লীগের বহু আচরণ মানুষ ভুলে গেছে, যা এরা আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে আওয়ামী লীগকে ক্রসও করতে বসেছে। ফরিদপুরে এ কে আজাদের ওপর হামলা হয়েছে। স্থানীয় বিএনপির সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী নায়ার ইউসুফ বলছেন, এ কে আজাদ আওয়ামী লীগের দোসর। জোনায়েদ সাকিকে এক ডোজ দেওয়া হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। এর আগে শিকার হয়েছেন নুরুল হক নুর ও মাহমুদুর রহমান মান্না, যা বিভিন্ন এলাকায় একসময়ের পরম মিত্রদের ওপর রাজনৈতিক কর্মীদের অসহিষ্ণুতা প্রকাশ। বিএনপি তা ঠেকাতে পারছে না। নির্বাচন কাছাকাছি এলে তা কোন পর্যায়ে যাবে, ভাবনার বিষয়। রাজনৈতিক এ চণ্ডাল সময়ে নতুন করে আবার মাঠে নেমেছেন আইকেবি নামে প্রচারিত সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভুইয়া। কয়েক দিন ধরে যোগাযোগ-ঘোরাফেরা আবার বাড়িয়েছেন। দিচ্ছেন ধারাবাহিক পোস্ট। এর আগেও ভিন্ন কিছু মাত্রায় হাইপ তোলার চেষ্টা করেছেন। কানাঘুষা হলেও শেষতক সুবিধা করতে পারেননি। শেখ হাসিনার বিশেষ ভরসার এই সেনাপ্রধান চৌদ্দ সালে বিনা ভোটে ১৫৩ জনকে এমপি নির্বাচিত করার কাজে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। তার সেনাপ্রধান থাকার সময়ে সুজাতা সিং ঢাকায় এসে এরশাদকে নির্বাচনে আসতে বাধ্য করা হয়। তার মদদেই এরশাদকে জোর করে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। জুলাই আন্দোলনে শেষের দিকে তিনি রাওয়া ক্লাবে সাবেক সেনা অফিসারদের এক সভায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রিভোল্ট করেন, কিন্তু তার আগে সেনা দরবার হলের বৈঠকে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না চালানোর সিদ্ধান্ত হয়ে যায়। এর পরও তার আশা ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো পর্যায়ে জায়গা পাওয়ার। তা না হওয়ার পরও তিনি মাঝেমধ্যে সরব হন। দৃষ্টি কাড়ার চেষ্টা করেন।
এবার করলেন আরেকটু নতুনত্বে। প্রতিবেশী ভারতকে সমঝে চলার বার্তা দিয়ে। এদিকে নয়া হাইপ তোলার চেষ্টায় এনসিপি। যারা থাকার কথা সনদের ফ্রন্টলাইনে, তারাই সনদ থেকে দূরে থাকলেন। স্বাক্ষর করলেন না। অনুষ্ঠানেও গেলেন না। বলছেন, বাস্তবায়ন পদ্ধতির উল্লেখ ছাড়া সনদে স্বাক্ষর করা জনগণের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। বিএনপি-জামায়াত, সেনাবাহিনীকে একত্র করে গুরুতর নানা অভিযোগ করতেও ছাড়েননি। বলছেন, বিএনপি, জামায়াত, আমলা, সেনাবাহিনী যে যার মতো জুলাইর সঙ্গে গাদ্দারি করে ফায়দা লুটছে। ঐকমত্য কমিশনও রয়েছে যন্ত্রণায়। সুপারিশ চূড়ান্ত করার আগ পর্যন্ত কমিশন দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবার জুলাই যোদ্ধাদেরও আমলে নিচ্ছে। জুলাই ব্যবসা, জুলাই জালিয়াতি ইত্যাদি ন্যারেটিভের মাঝে সেদিন সনদ সই অনুষ্ঠানের আগের ঘটনার পর ঐকমত্য কমিশন তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় সংসদের এলডি হলে।
বৈঠকে ১৭ অক্টোবরের ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে জুলাই-যোদ্ধারা জানান, ঘটনাটি তাদের জন্য অপমানজনক ও অনাকাক্সিক্ষত ছিল। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় তারা কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতা ঘটাতে যাননি; বরং তাদের ন্যায্য দাবিগুলো তুলে ধরার জন্যই সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেই সময় কিছু বহিরাগত সেখানে ঢুকে মারামারি ও ভাঙচুর করে। যাদের ২০ থেকে ২৫ জনের পরিচয় তারা চিহ্নিত করেছেন। এ ঘটনায় জুলাই-যোদ্ধারা কমিশনের সদস্যদের কাছে দুঃখ প্রকাশ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পাশাপাশি সেদিন দায়ের করা ৪টি মামলা প্রত্যাহারে কমিশনের সহায়তা চান। পঙ্গুত্ব, অসহায়ত্ব, আবার জুলাই-যোদ্ধা নামে নানা ঘটনা, ঘটনার পর মামলা ইত্যাদি ক্যারিকেচারেই যাদের এখন বেঁচে থাকা, এগিয়ে চলা।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041