দুই বিষয়ে উদ্বিগ্ন বিএনপির শরিকরা

প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:৪০ , অনলাইন ভার্সন
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির আসন ভাগাভাগির হিসাব দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে। আসন নিয়ে সরল অঙ্ক মেলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি। বিষয়টি নিয়ে মিত্র দলগুলোর মধ্যে বাড়ছে অস্বস্তি। তবে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের আসনছাড়ের বিষয়টি দ্রুত সুরাহা করতে চায় বিএনপি। এ জন্য মিত্রদের কাছে তালিকা চেয়েছে দলটি। বিএনপি ও মিত্র দলগুলোর একাধিক সূত্র বলছে, বিএনপির কাছে দুই শতাধিক আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা জমা দিয়েছে শরিক দলগুলো। এর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ ১৩৮, ১২ দলীয় জোট ২১, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ৯, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ১৩, জাতীয় পার্টি-বিজেপি ৫, গণফোরাম ১৫টি আসনের প্রার্থীর নাম দিয়েছে। যদিও শরিকদের জন্য এখন পর্যন্ত বিএনপির সর্বোচ্চ ৩০টি আসন ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। তবে প্রয়োজনে আরও বাড়তে পারে এই সংখ্যা। এর আগে বিএনপি নির্বাচিত হলে জোট শরিকদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জোটে থাকা সেই সব নেতার জন্য আসন ছাড়া হবে, যাদের জয়ের সম্ভাবনা আছে। এরই মধ্যে গত আগস্টে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায় ৬০ জন নেতাকে আশ্বস্ত করেছিলেন, জোটের নেতারা ভবিষ্যতে তাদের সরকারের অংশ হবেন। দলটির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, তিনি নির্বাচনী প্রচারণা পর্যবেক্ষণ করছেন এবং জরিপের মাধ্যমে জনপ্রিয়তার ব্যাপারে ধারণা নিচ্ছেন।
শরিকরা বিএনপির কাছ থেকে কতটি আসন ছাড় পাবে, এ নিয়ে যতটা চিন্তিত, তার চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ভিন্ন দুটি বিষয়ে। এর একটি হলো জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) প্রস্তাবিত পরিবর্তন, অন্যটি হলো ছাড় পাওয়া আসনগুলোতে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীদের মোকাবিলা করা। কারণ আরপিও পরিবর্তনে মিত্র দলগুলো বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক ‘ধানের শীষ’ নিয়ে প্রার্থী হতে পারবে না। অন্যদিকে বিএনপি শরিকদের আসন ছাড়লেও দলটির কোনো পরিচিত মুখ সেই আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করলে জয়ের আশা ফিকে হয়ে যেতে পারে শরিক দলের নেতার। বিষয় দুটি নির্বাচনী ময়দানে শরিক দলের প্রার্থীদের বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করবে। এ কারণে তারা বেশ উদ্বিগ্ন। বাস্তবতার নিরিখে বিএনপির শরিক ছোট ছোট দলগুলোর সাংগঠনিক শক্তি তুলনামূলক দুর্বল। তাদের ভরসা অনেকটাই বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের ওপর। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিধান অনুযায়ী, জোটের প্রার্থী হলেও নিজ দলের প্রতীকেই লড়তে হবে। এতে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের ভোটব্যাংক কাজে লাগানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে বিএনপি থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারাও স্বীকার করেছেন, মনোনয়ন না পেয়ে অনেক নেতা ক্ষুব্ধ হবেন। তাদের শান্ত করা সহজ হবে না। আবার তাদের জায়গায় জয়ের সম্ভাবনা কম এমন মিত্রদের আসন দেওয়ার ব্যাপারটি কঠিন হবে।
শরিকদের অভিযোগ, তাদের গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হলেও বিএনপির অনেক নেতা এমন নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন, যেখানে মিত্র দলের নেতারাও মাঠে আছেন। তারা বলছেন, বিএনপি তৃণমূল প্রার্থীদের লাগাম টানতে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না দলটি। বিষয়টি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন তারা। এই যেমন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান ও বিএনপি জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল মজিদ প্রচারণা চালাচ্ছেন ঝিনাইদহ-২ আসনে। আব্দুল মজিদ বলেন, ‘দল যদি রাশেদকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে বিএনপি এই আসন হারাবে। রাশেদ এখানে সক্রিয় নন, এখানে তার তেমন সমর্থক নেই।’ যদিও আব্দুল মজিদের এই দাবির সঙ্গে একমত নন রাশেদ খান। তিনি বলেন, ‘একজন রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে এ ধরনের মন্তব্য করা উচিত নয়। আমি নিয়মিত এলাকায় যাই, মানুষের সঙ্গে দেখা করি। আমার এলাকার মানুষ আমাকে পছন্দ করে।’
একই ধরনের পরিস্থিতি কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদা ও বিএনপির মুজিবুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান বিএনপির টিকিটে। মুজিবুর জানান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একটি চিঠি দিয়ে মিত্র দলগুলোর সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ আচরণের কথা বলেছে। তবে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বলেনি। আর এহসানুল হুদা বলেন, ‘আমি নিয়মিত এলাকায় যাচ্ছি; বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী না দাঁড়ালে আমার জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে প্রচারণা চালাচ্ছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। সেখানে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল খালেকও মনোনয়নপ্রত্যাশী। আব্দুল খালেক মনে করেন, এই আসনে বিএনপির প্রতীক ছাড়া সাকির জেতার সম্ভাবনা ‘শূন্য’। যদিও জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা নিজেদের মতো করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা চলছে। বিএনপি যেসব আসন ছেড়ে দেবে, সেখানে তাদের নেতাকর্মীদের কীভাবে ম্যানেজ করবে, সেটা তারা ঠিক করবে।’
এদিকে পটুয়াখালী-৩ আসনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও বিএনপির হাসান মামুন প্রচারণা চালাচ্ছেন। হাসান মামুন বলেন, ‘নূরকে ছেড়ে দিলে এই আসন বিএনপি হারাবে এটা নিশ্চিত। স্থানীয়রা এখানে বিএনপির নেতা চান, কোনো মিত্র দলের কাউকে না।’ অন্যদিকে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-৪ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেখানে বিএনপির একজন প্রার্থীও মনোনয়ন চেয়েছেন। একই আসনের বিএনপি নেতারা জানান, জোটের কোনো দুর্বল প্রার্থীকে এই আসন ছেড়ে দিলে জয় পেতে সুবিধা হবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, যেখানে জোট নেতাদের জয়ের সম্ভাবনা বেশি, তাদের সেই আসন ছেড়ে দেবে বিএনপি। যাদের দল মনোনয়ন দেবে, তাদের নিশ্চয়ই সহযোগিতা করবে বিএনপি। তাদের তো জলে ফেলে দেব না। তাদের জিতিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। তবে জোট শরিকদের সব চাওয়া হয়তো পূরণ করতে পারব না।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041