বাংলাদেশে রাজনীতির রূপ বদলায় রাজনীতিকদের স্বভাব পাল্টায় না

প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৯ , অনলাইন ভার্সন
বিজ্ঞান বলে, বস্তু তার রূপ পাল্টালেও ওজন ঠিক থাকে। ঠিক বিজ্ঞানের মতোই নিশ্চিত করে বলা যায়, বাংলাদেশে রাজনীতিবিদদের রূপ পাল্টায়, তাদের স্বভাব পাল্টায় না। রং পাকা। ব্লিচ করলেও রং যায় না। রিজম চেঞ্জ যতই হোক, রাজনীতিবিদদের মত, আদর্শ ঠিক থাকে। রাজনীতির মঞ্চে রাজনীতিবিদেরা ন্যায়নিষ্ঠা, নীতি-আদর্শ, মানবিক হওয়ার কথা এবং হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে শান্তি ও সম্প্রীতির পথে চলার কথা যত বলেন, তা যদি আমজনতা একটু আস্থায় নিয়ে, বিশ্বাস করে চলতে পারতেন, তবে তো দলগত আদর্শের যত বিভক্তিই থাক, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের চেহারা পাল্টে যেত। আমরা যে ‘স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি’র কথা বলি, স্বর্গ আমরা না দেখলেও, অনাবিল আনন্দময় একটি বাসভূমি রেখে যেতে পারতাম।

তা হয়নি। হয়নি বলে আজও মানুষের স্বপ্ন, মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। হয়নি এ কারণে যে, জাতিগতভাবে এক হয়ে কিছু করতে চাইনি, কিছু পেতেও চাইনি। বাংলাদেশে শাসককুল শুধু ‘আমি’ সব পেতে চেয়েছে। ‘আমরা’ সবাই মিলে সমতার ভিত্তিতে কখনো কিছু পেতে চাইনি। বাংলাদেশে প্রায় ৫৫ বছর পার হয়ে এল স্বাধীনতা অর্জনের পর, কখনো এক হয়ে, বহুমতের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে অভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারিনি। আমরা জাতীয় স্বার্থেও কখনো এক হতে পারিনি। রাষ্ট্রের যত স্বার্থই থাক, মানুষের শত মঙ্গলও কোনো কর্মসূচিতে অর্জনের সম্ভাবনা থাক-আমরা সবাই এক হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি, এক হয়ে লড়তে পারিনি।
এই যে বিভাজন, এ বিভাজন আমাদের রক্তে মিশে গেছে। বাংলাদেশ জন্মের ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে। স্বাধীনতার জন্য যে লড়াই-সংগ্রাম হলো, তাতেও আমরা সবাই এক হতে পারিনি। একটি অংশের সক্রিয় বিরোধিতা থাকায় স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ পথে একসঙ্গে হতে পারিনি দলমত-নির্বিশেষে। গরিষ্ঠ অংশ সব মতপার্থক্যকে দূরে সরিয়ে রেখে এক হয়ে স্বাধীনতা অর্জনে মুক্তিযুদ্ধ করলেও, ছোট হলেও একটি গোষ্ঠী চরমভাবে সামনে দাঁড়িয়েছে বাধা দিতে। তারা স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধকে পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করার চক্রান্ত হিসেবে দেখেছে।

একটি গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব সত্ত্বেও দেশ স্বাধীন হয়েছে বহু রক্ত এবং নারী-পুরুষের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে। কিন্তু স্বাধীনতার পর প্রায় ৫৫ বছর পাড়ি দিয়ে এলেও আজও সেই বিভক্তির রক্ত আমাদের ধমনিতে প্রবহমান। জাতীয়ভাবে আমরা সেই পরম্পরা আজও বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। কোনো দিন এ থেকে বের হয়ে আসতে পারব কি না-তার জবাব একমাত্র ভবিষ্যৎই বলতে পারে। আর বলতে পারেন রাজনীতির মাঠের খেলোয়াড়েরা। কিন্তু তাদের হালচাল দেখে মনে হয় না রাজনীতির আকাশের এই কালো মেঘ আদৌ কোনো দিন কাটবে?

কিন্তু এ কথা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারলেও মাঠের খেলোয়াড়েরা বুঝতে চান না কেন, তা বলার ক্ষমতা আর কারও আছে বলে মনে হয় না। মানুষ ঐক্যবদ্ধ না হলে যেমন কোনো পরিবর্তন আনা যায় না শাসনব্যবস্থায়; তেমনি জাতীয় স্বার্থে, জাতীয় সংকটে সব দল-মত ন্যূনতম কর্মসূচিতে হলেও ঐক্যবদ্ধ হতে না পারলে দেশের মধ্যে হানাহানি, হিংসা-বিদ্বেষ, বিশৃঙ্খলা, জনদুর্ভোগ দূর করা সম্ভব হয় না। দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায় না। দেশের স্থায়ী উন্নয়ন অর্জন করা অসম্ভব হয়ে ওঠে না। অন্যদিকে যার আমলে যতটুকুই উন্নয়ন হোক-আমল পরিবর্তন হলেই সে উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। নানা কথায় সেই উন্নয়নকে অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন বলে প্রতিষ্ঠা করার জোর চেষ্টা চলে।
তাই স্থায়ী, টেকসই উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশকে ক্রমাগত অগ্রগতির ধারায় রাখতে হলে শুধু মানুষের নয়, রাজনীতির অন্য সব স্টেকহোল্ডারের মধ্যেও ন্যূনতম ঐক্য আশু প্রয়োজন এবং জনপ্রত্যাশা সে রকমটাই। এ প্রত্যাশা পূরণ না হলে সব সময় ষড়যন্ত্র, চক্রান্তের কথা শোনা যাবে। জনদুর্দশা এবং দেশের অভ্যন্তরে হানাহানি, লুট, ঘুষ-দুর্নীতি, রাহাজানি, ‘সমাজপতি’দের ব্যাংক লুটপাট, অর্থ পাচার কোনো দিনই সমাজের বুক থেকে দূর হবে না।

কথাগুলো যত দ্রুত রাজনীতিবিদদের মাথায় ঢুকবে, দেশ থেকে অনৈতিকতা, অমানবিকতা, বিভাজন, জনদুর্ভোগের তত দ্রুত অবসান ঘটবে।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041