মন মাঝি তোর বৈঠা নেরে

প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:৩০ , অনলাইন ভার্সন
সবাই মিলে বেড়াতে গেলাম। মেয়ে-আর বাবা, ফুফু দাদী-দাদা আরও অনেকে। নৌকায় উঠতে হয়েছে। মেয়েটি খুব ছোট। আমি নিজেও সাঁতার জানি না। কী ভয় পেয়েছি- ব্যাখ্যা করতে পারব না। সবাই হাসছে। কারণ সাঁতার জানে। আমাকে নিয়ে মজা করছে। কারো পৌষ মাস- কারো সর্বনাশ।

নৌকার মাঝি ভয়ের কারণ বুঝতে পারে। আমাদের নিশ্চিন্তে নিরাপদে মেয়ের দাদা-বাড়ি পৌঁছে দিলো। চোখ বুঁজে সৃষ্টিকর্তাকে শুকরিয়া জানাই।

ছোটবেলার কথা বলছি। গ্রামে বেড়াতে যেতাম। মা-ভাই-বোন-মামা মিলে যেতাম। প্রথমে বাসে- রিকশা-সবশেষে নৌকায় উঠতে হতো। বড় একটি খাল। টইটুম্বর পানি। সবাই এক সাথে যাচ্ছি। আনন্দ পাচ্ছি। কিন্তু নৌকাতে অনেক মানুষ। আমার ভয় হতো। বেশ ক’দিন গ্রামে থাকতাম। খেলার সাথীদের নিয়ে খালের পাড়ে যেতাম। নৌকাবোঝাই মানুষ দেখতাম। মাঝি পারাপার করত। এত মানুষ- নৌকা ডুবু ডুবু করছে। এই বুঝি ডুবে গেল। কিন্তু কখনোই এমন ঘটনা হয়নি। যতটুকু বুঝতাম- নৌকার মাঝি প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী। সে হাসি মুখে সকাল-সন্ধ্যা এ কাজটি করত। যাত্রীরাও নিরাপদে এ পার-ওপার যাতায়াত করত।

টিভির মাধ্যমে একজনের কথা জানতে পারি। বয়স আশি। পেশায় মাঝি। নাম খুরশিদা। খুরশিদ মাঝি নামে পরিচিত। দীর্ঘ ৪০ বছর মানুষ পারাপারের কাজ করছেন। জীবিকার জন্য এ পথ বেছে নেন। হয়তো অন্য কোনো সুযোগ ছিল না। তাই এই পেশা বেছে নেন। দুঃখ করে বলেন, পরিবারের জন্য জীবন ও জীবিকার জন্য কাজ করতে হবে। সাধারণ মানুষও তার এই প্রচেষ্টায় উপকৃত হয়।
সারা বাংলায় ৬৮ হাজার গ্রাম। (যদি ভুল না হয়ে থাকে)। অনেক নদী-খাল শুকিয়ে গেছে। সেসব নদী-খাল হারিয়ে গেলেও এসব খুরশিদ মাঝি হারিয়ে যায়নি। সুখ-দুঃখের টানাপোড়নে এখনও তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। পথ চলার ক্লান্তি আসেনি। নিজের জন্য পথ চলেন। পরিবারের জন্য পথ চলেন। নদী পারাবারের ইতিহাস সৃষ্টি করেন।

আমরা সবাই ‘নৌকার মাঝি; এই নৌকা জীবন নৌকা’। আমাদেরও বৈঠা বাইতে হয়। তবে আমাদের দৃশ্যমান কোনো নৌকা বা বৈঠা নেই। আমাদের মানুষ পারাপার করতে হয় না। এই মহান কাজটি আমরা করতে পারি না।

আমাদের সাথে খুরশিদ মাঝিদের পার্থক্য অনেক। আমাদের আছে বিশাল অট্টলিকা-দামি গাড়ি- এসি, আরও অনেক কিছু। খুরশিদ মাঝি সরলপ্রাণ মানুষ। এরা নিঃশব্দে বসে থাকে। কাজ করে। আমরা একটুতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ি। পরিশ্রম করতে চাই না। আমাদের অনেক কিছুই আছে। তার পরও অভাববোধ করি- অভিযোগ করি।

সহজ-সরল গ্রামের মাঝি। খেয়া পারাপারের কাজ করে। কোনো অভিযোগ নেই। আমাদের আছে অহংকার আর অভিজাত্যের নিদর্শন। আর বিশাল দালান-কোঠার ইতিহাস।

খুরশিদ মাঝি! যাদের জীবনে রয়ে গেছে- জীর্ণ কুঠিরের ইতিহাস। কখনোই এসব মাঝি ক্লান্ত হয় না- তাদের ক্লান্তি আসে না- ক্লান্ত হতে নেই। এসব মাঝি এক অর্থে অনন্য। চাওয়া নেই- পাওয়া নেই- হারানোরও কিছু নেই।
আছে শুধু দুঃখের সারি। আর মানুষ পারাপারের ইতিহাস।

লেখক : অ্যাডভোকেট শামীম আরা ডোরা
ফরমার অ্যাসিটেন্ট অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ।
বর্তমানে নিউইয়র্ক প্রবাসী।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041