লাদাখে কারফিউ জারি করল ভারত সরকার

প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:১৭ , অনলাইন ভার্সন
ভারতের হিমালয় অঞ্চলের এলাকা লাদাখের রাজধানী লেহতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানে কারফিউ জারি করেছে সরকার। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজ্য মর্যাদা ফেরত চেয়ে আন্দোলনে নামে স্থানীয়রা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে চারজন নিহত হওয়ার পর এই কারফিউ জারি করা হলো।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গত বুধবার ওই সংঘর্ষের সময় ভারতের শাসক দল বিজেপির স্থানীয় কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। পুড়িয়ে দেওয়া হয় পুলিশের একটি গাড়িও। পুলিশের দাবি, অন্তত ৩০ জন সদস্য আহত হয়েছেন।

ঘটনার জন্য আলোচিত পরিবেশকর্মী ও শিক্ষাবিদ সোনম ওয়াংচুককে দায়ী করেছে ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকার। তারা বলছে, ওয়াংচুক উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে জনতাকে সহিংসতার পথে ঠেলে দিয়েছেন। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

হাজার বছরের পুরোনো মুসলিম ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বসতি লাদাখে। এটি একধরনের বিরান অঞ্চল। ২০১৯ সালে ভারতের বিজেপি সরকার জুম্ম-কাশ্মীরকে ভেঙে লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করে। তখন থেকেই রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর দাবিতে বিক্ষোভ চলছে।

যেখানে সহিংসতা হয়েছে, সেই লেহ অঞ্চল মূলত বৌদ্ধপ্রধান। এখানকার জনগণ বহু বছর ধরেই স্বতন্ত্র অঞ্চলের দাবি জানিয়ে আসছে। অন্যদিকে মুসলিম অধ্যুষিত কারগিল জেলার জনগণ ভারত-শাসিত কাশ্মীরের সঙ্গে পুনরায় যুক্ত হতে চায়। ২০১৯ সালের পর থেকে দুটি সম্প্রদায়ই একসঙ্গে রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর পাশাপাশি চাকরির কোটা সংরক্ষণসহ স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানিয়ে আসছে।

কয়েক মাস ধরেই বিভিন্ন দফায় বিক্ষোভ চলছিল। তবে হঠাৎ করে বুধবারের এই সহিংসতা কীভাবে শুরু হলো, তা এখনো পরিষ্কার নয়। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে দাবি করে, সোনম ওয়াংচুক তার বক্তব্যে আরব বসন্ত ও নেপালের জেন-জি আন্দোলনের উদাহরণ দিয়ে লোকজনকে উসকে দিয়েছেন। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রতিবাদকারীরা বিজেপির কার্যালয়ে আগুন দেয়, পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এতে অন্তত ৩০ পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। এতে কিছু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।’

সোনম ওয়াংচুক অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি ১২ সেপ্টেম্বর থেকে অনশন কর্মসূচিতে ছিলেন এবং এটি বন্ধ করারও ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তার দাবি, তরুণদের মধ্যে দীর্ঘদিনের বেকারত্ব ও হতাশাই এই উত্তেজনার মূল কারণ।

ওয়াংচুক লাদাখের এক পরিচিত নাম। তিনি একাধারে পরিবেশবিদ, সমাজকর্মী ও শিক্ষানবিশ প্রকৌশলী। শিক্ষায় ও জলবায়ু ইস্যুতে কাজ করে তিনি জাতীয় পর্যায়ে পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লাদাখের জন্য রাজ্যের মর্যাদা, স্থানীয়দের রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং সাংস্কৃতিক-ভূমি-সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ ফেরানোর দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।

তার ভাষ্য, কেন্দ্র সরকার লাদাখের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার পর এখানকার জনগণ নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তায় পড়েছে। বাইরের অর্থনৈতিক স্বার্থ এখানে দখল নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে স্থানীয়দের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ হুমকির মুখে পড়েছে।

তবে কেন্দ্রীয় সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, ২০২৩ সাল থেকে তারা নিয়মিত স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে এবং এ থেকে ‘দারুণ অগ্রগতি’ হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সোনম ওয়াংচুকসহ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। তবে কিছু ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যক্তি’ এই আলোচনার ফলাফল মেনে নিতে পারছেন না।

লাদাখে কেন্দ্র সরকার নিয়োজিত লেফটেন্যান্ট গভর্নর কবিন্দর গুপ্ত বলেছেন, সহিংসতার বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। তার ভাষায়, ‘গত দুই দিন ধরে জনতাকে উসকানোর চেষ্টা চলছে। প্রতিবাদ কর্মসূচিকে বাংলাদেশের বা নেপালের ঘটনার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এতে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।’

প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে বৃহস্পতি ও শুক্রবার নতুন করে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ৬ অক্টোবর কেন্দ্রীয় সরকারের গঠিত একটি কমিটি লাদাখের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবে বলেও জানানো হয়েছে।

ঠিকানা/এনআই
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041