নেপালের পর বিক্ষোভে উত্তাল ফিলিপাইন

প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩:০৫ , অনলাইন ভার্সন
নেপালের জেন-জি বিক্ষোভের পর এবার উত্তাল হয়ে উঠেছে এশিয়ার আরেক দেশ ফিলিপাইন। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) হাজার হাজার মানুষ রাজধানী ম্যানিলার রাস্তায় নেমে আসে দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভে। মূল অভিযোগ দেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে কোটি কোটি ডলারের অবৈধ খরচ। সাধারণ মানুষ বলছে, এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে সরকারের অর্থদাতা জনগণের ট্যাক্সের টাকা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ও সেনারা সতর্ক অবস্থানে থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের খবরও পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় অন্তত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়েছে এবং ব্যারিকেডে আগুন ধরিয়েছে। পরে পুলিশের পানির কামান ব্যবহৃত হয় মুখোশধারী আরেকদল বিক্ষোভকারীর ওপর। কিছু পুলিশকেও পাথর তুলে বিক্ষোভকারীদের দিকে ছুড়তে দেখা যায়।

ম্যানিলার মেয়র ফ্রান্সিসকো ইস্কো মোরেনো ডোমাগোসো জানিয়েছেন, আহত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের নিকটস্থ সাম্পালক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আজ মেন্ডিওলা এলাকায় দায়িত্বে থাকা আমাদের পুলিশ সদস্যদের সিটি ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন ম্যানেজমেন্ট অফিস এবং ম্যানিলা হেলথ ডিপার্টমেন্ট প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছে। আহতদের দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সবাইকে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’

বিক্ষোভকারীরা ম্যানিলার পতাকা উড়িয়ে এবং ‘আর নয়, যথেষ্ট হয়েছে, জেলে পাঠাও’ লেখা ব্যানার ধরে সরকারের বিরুদ্ধে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ছাত্রছাত্রীরা দাবি করেন, যারা দুর্নীতিতে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক।

স্টুডেন্ট অ্যাক্টিভিস্ট আলথিয়া ত্রিনিদাদ এএফপিকে বলেন, ‘আমরা দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন কাটাই, বাড়িঘর হারাই, ভবিষ্যৎ হারাই, আর তারা আমাদের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে বিলাসবহুল গাড়ি, বিদেশ সফর ও বড় ব্যবসায়িক লেনদেন চালাচ্ছে। আমরা চাই এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে মানুষ আর শোষিত হবে না।’

ম্যানিলার সিটি প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, লুনেটা পার্কে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ অংশ নেন।

দুর্নীতির অভিযোগ ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের ভাষণে জুলাই মাসে উঠে আসে। এরপর তিনি একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করেন, যা ৯,৮৫৫টি বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে অনিয়মের তদন্ত করবে। এসব প্রকল্পের মোট মূল্য ৫৪৫ বিলিয়ন পেসো (প্রায় ৯.৫ বিলিয়ন ডলার)।

জনতার ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়, যখন ধনী দম্পতি সারা ও প্যাসিফিকো ডিসকায়া, যারা বিভিন্ন নির্মাণ কোম্পানি পরিচালনা করে, একই প্রকল্পে কন্ট্রাক্ট পান। এ সময় প্রকাশ হয় তাদের মালিকানাধীন ইউরোপ ও মার্কিন বিলাসবহুল গাড়ি ও এসএউভির তথ্য।

প্রেসিডেন্ট মার্কোস বলেছেন, ‘জনতা এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করার জন্য দায়ী নয়। আমরা চাই বিক্ষোভগুলো শান্তিপূর্ণ হোক।’ তিনি আরও জানান, সেনাবাহিনী ‘রেড অ্যালার্ট’-এ রয়েছে।

ম্যানিলা থেকে আল-জাজিরার সংবাদিক জানিয়েছেন, বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছে খ্রিষ্টান চার্চের বিভিন্ন সম্প্রদায়। ঐতিহাসিকভাবে ক্যাথলিক চার্চ ফিলিপাইনের জনগণকে আন্দোলনে প্রেরণা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘বিক্ষোভ ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোসের আইনশৃঙ্খলা ঘোষণা দিবসের বার্ষিকী এবং সেই সড়কে যেখানে দুটি পিপল পাওয়ার বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল।’

প্রতিবাদকারীরা প্রেসিডেন্টের কাছে দাবি করছেন, সরকারের সব স্তরে দুর্নীতি রোধ করতে স্থায়ী সংস্কার ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

২৩ বছর বয়সী নার্সিং ছাত্রী অ্যালি ভিলাহার্মোসা এএফপিকে বলেন, ‘যদি ঘোস্ট প্রকল্পের জন্য বাজেট থাকে, তাহলে স্বাস্থ্য খাতের জন্য কেন নেই? এটি সত্যিই লজ্জাজনক।’

এই বিক্ষোভের মাধ্যমে ফিলিপাইনের সাধারণ মানুষ সরকারের দুর্নীতি ও সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে শক্তিশালী বার্তা দিচ্ছে। সংঘর্ষ ও গ্রেপ্তার থাকলেও হাজার হাজার মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তায় থেকে তাদের দাবি জানাচ্ছেন।

ঠিকানা/এনআই
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041