বিক্ষোভে উত্তাল ফ্রান্স

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:২১ , অনলাইন ভার্সন
রাষ্ট্রীয় বাজেট কাটছাঁটের জেরে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ফ্রান্স। ট্রেড ইউনিয়ন ও বামপন্থি দলগুলোর আহ্বানে ১৮ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাজধানী প্যারিসসহ ছোট-বড় বিভিন্ন শহরে রাস্তায় নেমে এসেছেন লাখ লাখ মানুষ।

ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের দাবি, তাদের কর্মসূচিতে শামিল হয়েছেন কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষ। অন্যদিকে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ ৫ লাখ মানুষ বিক্ষোভ করছেন এবং পরিস্থিতি শান্ত রাখতে রাজধানীয়সহ সারা দেশে ৮০ হাজার পুলিশ কর্মকর্তাকে মোতায়েন করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্যারিস, লিওন ও নানতেস শহরে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি-সংঘাত হয়েছে বিক্ষোভকরীদের। বহু জায়গায় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারগ্যাস, লাঠি ও শিল্ড ব্যবহার করেছে পুলিশ।

বিক্ষোভের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পরিবহন পরিষেবা। রাজধানী প্যারিসমুখী অধিকাংশ মেট্রোরেল বন্ধ আছে। এছাড়া দেশজুড়ে ছোটে-বড় অসংখ্য সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন বিক্ষোভকারীরা।

বন্ধ আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।

এমনকি ওষুধের দোকানগুলোও বন্ধ। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ওষুধের দোকানগুলোর ৯৮ শতাংশই বন্ধ আছে।

পুলিশের সঙ্গে সংঘাত ও ধস্তাধস্তির অভিযোগে প্যারিসসহ বিভিন্ন শহর থেকে ৩ শতাধিক বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ব্যাপক এই বিক্ষোভের প্রধান এবং একমাত্র কারণ জাতীয় বাজেটে কাটছাঁট। ঋণের দেনায় জর্জরিত ফ্রান্সের সরকারকে স্বস্তি দিতে চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে বাজেটের কল্যাণমূলক খাতসহ বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ কাটছাঁট করেন সদ্য বিদায় নেওয়া প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঙ্কোইস বায়রো। বাজেট সংস্কারের অংশ হিসেবে বিভিন্ন খাত থেকে রাষ্ট্রীয় বরাদ্দের মোট ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ছেঁটে ফেলেন তিনি।

বিরোধী এমপিরা তার এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা শুরু করেন এবং এর জেরে গত ৯ সেপ্টেম্বর আস্থা ভোটের মুখে পড়তে হয় বায়রোকে। সেই ভোটে তিনি পরাজিত হন, বিজয়ী হন তার প্রতিদ্বন্দ্বী সেবাস্টিয়ান লেকর্নিও।

সেবাস্টিয়ান লেকর্নিও ইতোমধ্যে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ করেছেন, তবে এখনও নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেননি তিনি। বায়রোর নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে বাজেট বরাদ্দে যে কাটছাঁট হয়েছিল— তাও এখন পর্যন্ত বাতিল করা হয়নি।

নতুন প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণের এক সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পরও বরাদ্দ কাটছাঁটের আদেশ বাতিল না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ফ্রান্সের সাধারণ জনগণ, রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যেও বিভাজন বাড়ছে।

৩৬ বছর বয়সী সিরিয়েল পেশায় একজন আইটি কর্মী। প্যারিসে বিক্ষোভে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন তিনি। বিবিসিকে এই নারী বলেন, “আমি বিক্ষোভে এসেছি কারণ আমি ম্যাক্রোঁ (প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ)-এর অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতি পছন্দ করি না, বায়রোর বাজেটও সমর্থন করি না।”

“আমি চাই গণপরিষেবা ও সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ কাটছাঁট না করে বরং তা বাড়ানো হোক। পাশাপাশি আরও চাই, ধনীদের আরও বেশিমাত্রায় করের আওতায় আনা হোক।”

ফ্রান্সের ট্রেড ইউনিয়নগুলোর ঐক্যজোট জেনারেল কনফেডারেশন অব লেবার-এর জ্যেষ্ট নেত্রী সোফি বিনেট বিবিসিকে বলেন, “আমরা আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব এবং সামনের দিনে এর তেজ আরও বাড়বে। ধনীদের তুষ্ট রাখার যে নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, সেখান থেকে সরকারকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে।”

এদিকে বায়রোর নেতৃত্বাধীন সরকারের বিদায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেশিলিও জানিয়েছেন, সরকারের বাজেট কাটছাটের নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না।

বিবিসিকে তিনি বলেন, “বাজেটে কোনো পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা নেই। বিক্ষোভকারীরা তাদের কর্মসূচি থামিয়ে বাড়ি ফিরে গেলেই ভালো করবে। তারা যত বেশি সময় সড়কে অবস্থান করবে, গ্রেপ্তারের সংখ্যা তত বাড়বে।”

এদিকে ফ্রান্সের কট্টর বামপন্থি দলগুলোর জোট ফ্রান্স আনবৌওড (এলএফআই) এর জ্যেষ্ঠ নেতা রেশিলিওকে সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছেন, “সরকারের যে কোনো কঠোর পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া হবে ভয়াবহ।”

সূত্র : বিবিসি

ঠিকানা/এএস 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041