ঢাকা-কাঠমান্ডু অনেক দূর?

প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:৪৯ , অনলাইন ভার্সন
সড়কে ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু ১১শ’ ৪ কিলোমিটার দূরে। ঢাকা থেকে বাংলাবান্দার দূরত্ব প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার। বাংলাবান্ধা থেকে নেপালের কাঁকরভিটা স্থলবন্দরের দূরত্ব মাত্র ৫৪ কিলোমিটার। কাঁকরভিটা থেকে কাঠমান্ডু ৬০০ কিলোমিটারের মতো। এর মধ্যে ২২০ কিলোমিটার পাহাড়ি খাড়া রাস্তা। মাপতে গেলে বাস্তবটা কি আসলে এমন? 
দূরত্ব মাপামাপিতে না গিয়ে উভয় দেশের রাজনীতি-অর্থনীতিতে ভারতের বেশ প্রভাব। যদিও নেপাল ও বাংলাদেশ উভয়ই স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। নেপাল একটি ল্যান্ডলক, স্পষ্টভাবে বললে ইন্ডিয়া-লক্ড দেশ, তাই অনেক কিছুতেই দেশটিকে ভারতের সাথে ছাড় দিতে হয়। তারপরও দেশটির নিজস্ব সার্বভৌমত্ব রয়েছে। ২০১৫-তে নেপাল যখন তাদের নতুন সংবিধান ঘোষণা করলো, ভারত  নাখোশ ছিল। তাতে কী হয়েছে?
হয়েছে অনেক কিছুই। রাষ্ট্রব্যবস্থার গুণে-মানে নেপালের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বাংলাদেশের চেয়ে সমৃদ্ধ নয়। কাঠমান্ডুর রাজনৈতিক কেওয়াস, সময়ে অসময়ে সরকার পতন বা বদলের ঘটনা ঢাকার চেয়ে কদাকার। কিন্তু, এবার ফ্যাসিবাদ হটানোর প্রায় কাছাকাছি দৃশ্যপটের মাঝেও রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায় তারা বাংলাদেশের তুলনায় কি ক্যারিশমার পরিচয় কম দিয়েছে? 
বরং স্মার্টনেস বেশি দেখিয়েছে। নেপালে আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনার ছাত্ররা এ ক’দিনের মধ্যেই পড়ার টেবিলে ফিরে গেছে। ক্ষমতার শরীক হয়নি। লুটপাট, চাঁদাবাজি, মব, খবরদারির শরীক হয়নি। তারা ক্ষমাও চেয়েছে আন্দোলনের কয়েকটা দিন ধ্বংস, আগুন ও জনজীবন বিপন্নের জন্য। আমরা তাদের মাথায় তুলেছি। পায়ে নামাতেও কি চেষ্টা কম করছি?
নতুন সরকার প্রধান জেন-জি শিক্ষার্থীদের এ মনোভাব ও ভূমিকার মর্যাদা দিয়েছেন। রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় তাদের শরীক রেখেছেন। সেখানকার অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি নোবেলজয়ী নন। তবে, ক্ষমতা নেয়ার প্রশ্নে প্রতিক্রিয়া ছিল, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার স্বাদ নেয়ার ইচ্ছা তার নেই। তারুণ্যের দাবি তিনি ফেলতে পারেননি বলেই দায়িত্বটা নিয়েছেন। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বয়ান কি ছিল? 
তিনি মুখ খুলে বলে ফেলেছেন, ছাত্ররা তার নিয়োগকর্তা। শ্রীলঙ্কার সুশীলার নিয়োগকর্তাও আন্দোলনকারী ছাত্ররাই। কিন্তু, তারা বাংলাদেশের সমন্বয়কদের মতো সরকারের উপদেষ্টা হননি,  রাষ্ট্র পরিচালনার কঠিন জোয়াল কাঁধে নেননি। বিষয়টির মধ্যে নিয়োগকারী-নিয়োগপ্রাপ্ত উভয়ের জন্যই শিক্ষার বিষয়-আশয় রয়েছে। হয়ে থাকতে পারে বাংলাদেশের বছরখানেকের নমুনাদৃষ্টে অভিজ্ঞতা নিয়েছে সেখানকার অন্তর্বর্তী সরকার, তার নিয়োগকর্তাসহ রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার অংশীজনরা। সুশীলা শপথ নিয়েই ভোটের তারিখ জানিয়ে দিয়েছেন। ছাত্রদের আয়ত্বে রেখেছেন। কিন্তু ক্ষমতার পার্টনার করেননি। ছাত্ররাও তা হতে চায়নি। তাদের কী মন চায়নি উপদেষ্টা গোছের কিছু হতে?
নানা কারণেই তারা ওই পথে যায়নি। বাংলাদেশের মতো সংস্কার-বিচারসহ কিছু বিষয় নেপালে আবশ্যক হয়ে ওঠেনি। আয়নাঘর, গুম, ক্রসফায়ার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান কোতোয়ালদের ওপর আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা, নিশিভোট, ডামিভোট থাকলে হয়তো এগুলো তাদের দেশেও জরুরি হতো। তাই সংস্কার-বিচারকে নির্বাচনের পূর্বশর্ত করে সামনে নিয়ে আসা, ঐকমত্যের নামে সিরিজ দেনদরবার পর্বে তাদের যেতে হয়নি। চর্চাগত দিক থেকে আমরা ভাগ্যাহত। মন্দ রেওয়াজে বেশি অভ্যস্ততা আমাদের। নেপাল-বাংলাদেশের আগে শ্রীলঙ্কায়ও প্রায় একই ধাঁচের  বিপ্লব হয়েছে। তার কয়েকদিনের মধ্যে সেখান থেকে দুর্নীতি অনেকটাই ‘নাই’ হয়ে গেছে। কিন্তু, বাংলাদেশে? 
বাংলাদেশে বিপ্লবের কয়েকদিনের মধ্যে বিপ্লবই শুধু ‘নাই’ হয়ে যায়নি। নাই হয়ে গেছে সিলেটের সাদা পাথর, জনতার আবেগ, নেতাদের বিবেক, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের অনেকের  জবাবদিহিতা। আর ব্যবসা-বিনিয়োগ রীতিমত চাঙ্গে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি কেসস্টাডি হিসেবে এক অর্থে নেপালের ইন্টেরিমের জন্য কি শিক্ষনীয় হয়েছে? তারা শিখেছে। আমাদের কি শেখার কিছু থাকতে নেই? কারো কারো মতে, নেপালে দুর্নীতি কম, টাকা পাচার কম, স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক দখলদারিত্ব কম। তাই  দ্রুত নির্বাচনের তারিখ দেয়া সম্ভব হয়েছে সেখানে। বাংলাদেশে ঐতিহ্যগতভাবে বিরোধ বেশি সত্য। সময়ও যথেষ্ট তো গড়িয়েছে। ফেতনা-ফ্যাসাদ, খুটিনাটি কমালে সামনের বাকিটা সময় কাজে লাগানোর অবশিষ্ট সুযোগও নেই বাংলাদেশের?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা। 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041