গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৭৫ ফিলিস্তিনি নিহত, নিরাপদ আশ্রয় মিলছে না কোথাও

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪২ , অনলাইন ভার্সন
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের লাগাতার বোমাবর্ষণে একদিনে কমপক্ষে আরও ৭৫ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কেবল গাজা সিটিতেই নিহত হয়েছেন ৪৪ জন। এদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর তীব্র হামলায় গাজা সিটি পরিণত হয়েছে ‘আতঙ্কের নগরীতে’।

টানা বোমাবর্ষণে বিধ্বস্ত হচ্ছে পাড়া-মহল্লা, প্রাণ হারাচ্ছেন বহু সংখ্যক ফিলিস্তিনি, আর আশ্রয়ের খোঁজে পালিয়েও নিরাপত্তা পাচ্ছেন না কেউ। ৫ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নির্বিচার বোমাবর্ষণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে গাজা সিটির পাড়া-মহল্লা। আতঙ্কে পালাতে চাইছেন মানুষ, কিন্তু গোটা উপত্যকাতেই নিরাপদ আশ্রয় নেই। টানা ২৩ মাস ধরে চলছে এ নির্মম হামলা।

জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ ইতোমধ্যেই গাজা সিটিকে আখ্যা দিয়েছে ‘আতঙ্কের নগরী’ বলে। বৃহস্পতিবার তাল আল-হাওয়া এলাকায় একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি হামলায় একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হন, যাদের মধ্যে তিনজনই শিশু।

হামলার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত তাঁবুগুলোর সামনে ফিলিস্তিনিরা ভাঙাচোরা মালামাল গুছিয়ে নিচ্ছেন। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে রক্তে ভেজা একটি গোলাপি রঙের স্যান্ডেলও মেলে। ইসরা আল-বাসুস এএফপিকে বলেন, “আমি ও আমার সন্তানরা তাঁবুতে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ বোমা পড়ল, শরীরে টুকরো এসে লাগল, আমার চার সন্তান আতঙ্কে চিৎকার শুরু করল।”

গাজা সিটির জেইতুন, সাবরা, তুফাহ, নাসর ও শুজাইয়া এলাকায় ভয়াবহ বোমাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। তুফাহ পাড়ায় অন্তত আটজন নিহত ও বহু আহত হয়েছেন বলে জানান সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল।

শুজাইয়ায় একটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলায় দুইজন নিহত হয়েছেন। আর জেইতুনে ধ্বংসস্তূপ থেকে আল-ঘাফ পরিবারের তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানান, মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালাচ্ছেন নিরাপত্তার খোঁজে, কিন্তু যেখানে যাচ্ছেন সেখানেও ইসরায়েলি বিমান ও গোলাবর্ষণ তাদের পিছু ছাড়ছে না।

অনেকে আশ্রয় নিয়েছিলেন শেখ রাদওয়ান এলাকায়। কিন্তু সেখানে ইসরায়েলি ট্যাংক ঢুকে ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে, তাঁবুতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

হাসপাতালগুলোতে মৃত ও আহতের ঢল নেমেছে। আল-শিফা হাসপাতালে মর্গের মেঝেতে লাশ সারিবদ্ধভাবে রাখা। বাইরে এক মা তার নিহত সন্তানের মাথায় হাত বুলিয়ে কাঁদছিলেন আর বলছিলেন—“আমাকে ফেলে কোথায় গেলে, বাবা? কেন?”

ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার যোগাযোগ কর্মকর্তা টেস ইনগ্রাম সতর্ক করে বলেছেন, প্রায় ১০ লাখ মানুষ আটকা পড়েছেন এই ‘ভয়, পালানো ও জানাজায় ভরা নগরীতে’। শুধু বৃহস্পতিবারই গাজা সিটিতে নিহত হয়েছেন ৪৪ জন।

ইসরায়েলি সেনাদের তথ্য অনুযায়ী, তারা এখন গাজা সিটির ৪০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং আগামী দিনগুলোতে অভিযান আরও জোরদার করবে। আল জাজিরার সানাদ ফ্যাক্ট-চেকিং এজেন্সি স্যাটেলাইট ছবিতে অন্তত ৫২টি ইসরায়েলি সামরিক যান জেইতুন এলাকায় মোতায়েন থাকতে দেখেছে।

ছবিগুলো দেখাচ্ছে, গত ২৫ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উত্তর ও মধ্য গাজা সিটি থেকে পশ্চিমে, বিশেষ করে আল-রাশিদ সড়ক ও সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায়, ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু দক্ষিণ গাজায় আশ্রিতদের অবস্থাও ভয়াবহ। খান ইউনিসে চার মাস আগে গাজা সিটি থেকে পালিয়ে যাওয়া গর্ভবতী নারী শুরুক আবু ঈদ জানান, উত্তর দিক থেকে নতুন মানুষ আসায় তাদের দুর্দশা আরও বেড়েছে। তিনি বলেন, “কোনও গোপনীয়তা নেই, শান্তিও নেই।”

যেখানেই যাচ্ছেন, ফিলিস্তিনিরা মৃত্যু ও ধ্বংসের মুখোমুখি হচ্ছেন। বৃহস্পতিবার নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় সাতজন নিহত হন, যাদের মধ্যে তিনজন শিশু। এছাড়া রাফাহতে ত্রাণ নেওয়ার জন্য জড়ো হওয়া মানুষদের ওপরও গুলি চালায় সেনারা। সেখানে সাতজন নিহত ও আরও অনেকে আহত হন।

বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ইসরায়েলি স্থল ও বিমান হামলায় পুরো উপত্যকাজুড়ে নিহত হয়েছেন ৭৫ জন।

ঠিকানা/এএস 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041