যুক্তরাষ্ট্রে ৩ দিনব্যাপী ফোবানা সম্মেলন শুরু  

প্রকাশ : ৩১ অগাস্ট ২০২৫, ১১:১৪ , অনলাইন ভার্সন
মুজিব মাসুদ, (আটলান্টা) যুক্তরাষ্ট্র থেকে : প্রবাসী বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সমাবেশ ফোবানা (FOBANA) সম্মেলনের ৩৯তম আসর শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে শুরু হয়েছে। আটলান্টার ডুলুথে গ্যাস সাউথ কনভেনশন সেন্টারে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনে উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে আগত হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশি অংশ নিয়েছেন।

উদ্বোধনী দিনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর আলোচকরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঐক্য, সংস্কৃতি ও আগামী প্রজন্মের কাছে মাতৃভাষা এবং ঐতিহ্য পৌঁছে দেওয়ার গুরুত্ব নিয়ে বক্তব্য রাখেন।

সম্মেলনে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে আসা হাজারো প্রবাসী বাঙালির পদচারণায় পুরো অনুষ্ঠানস্থল পরিণত হয়েছিল এক টুকরো বাংলাদেশে। 
 
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’র চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক বিন হারুন, যুক্তরাষ্ট্রের লেফটেন্যান্ট গভর্নর অফ জর্জিয়া বার্ড জোন্স, চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স, বাংলাদেশ, সালাউদ্দিন মাহমুদ, কনসোল জেনারেল অব বাংলাদেশ, মায়মি, সেহেলি সাবরিন, জর্জিয়ার সেনেটর শেখ আব্দুর রহমান, সেনেটর নাবিলা ইসলাম, সেনেটর শেলী হেরাল, সিনেটর জস ম্যাকলেইন, জর্জিয়া ফায়ারের চেয়ারম্যান হাসান তারেক দ্বীপ, কনভেনর, ফোবানা ২০২৫ নাহিদুল খান সাহেল, মেম্বার সেক্রেটারি মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, মো. আলমগীর, সেক্রেটারি জেনারেল আবির আলমগীর, চেয়ারপারসন ফোবানা এক্সিকিউটিভ কমিটি মাসুদ রব চৌধুরী, চেয়ারপারসন ফোবানা হোস্ট বিজনেস কমিটি ডিউক খান, কাজী নাহিদ, চীফ কো-অর্ডিনেট এম মওলা দিলু, মোয়াজ্জেম এইচ চৌধুরী, তাসিক আহমেদ, কবি ও বাচিক শিল্পী ভাস্কর ব্যানার্জি, ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিফ, যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র বাংলাদেশি মুসলিম জজ আজমেরী হক, মাহবুব রেজা চৌধুরী প্রমুখ। 

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের নিয়ে বিজনেস নেটওয়ার্কিং সেমিনার। সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশী ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদেরকে বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগের আহ্বান জানান বিডার চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক বিন হারুন। ওই সেমিনারে তিনি কি- নোট স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন।  

এবারের সম্মেলনে বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পাশাপাশি ছিল আলোচনা সভা, সাহিত্য আসর, প্রবাসীদের জীবনধারা ও নতুন প্রজন্মের সমস্যাবলী নিয়ে সেমিনার। এছাড়া নাটক, লোকসংগীত, আধুনিক গান, ফ্যাশন শো এবং শিশু-কিশোরদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। 

সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন জনপ্রিয় শিল্পী, সাংবাদিক, লেখক ও রাজনীতিবিদরা। তাদের অংশগ্রহণে আয়োজনটি আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। একই সঙ্গে প্রবাসী ব্যবসায়ী, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও তরুণ প্রজন্মের উপস্থিতি সম্মেলনকে রূপ দিয়েছে এক মহা মিলনমেলায়।

তিন দিনব্যাপী এ মহোৎসবকে ঘিরে আটলান্টার বাঙালি কমিউনিটিতে বইছে উৎসবের আমেজ। শুধু সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নয়, এখানে ছিল বাঙালি খাবার, পোশাক, অলঙ্কার ও বই মেলা। যা পুরো সম্মেলনকে রূপ দিয়েছে এক ক্ষুদ্র বাংলাদেশে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আয়োজক নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে বলেছেন এই সম্মেলন প্রবাসীদের সাংস্কৃতিক বন্ধন আরও দৃঢ় করবে এবং আগামী প্রজন্মকে মাতৃভাষা ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সংযুক্ত রাখতে অনুপ্রাণিত করবে।

তারা আরো বলেছেন, এই সম্মেলনের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে শুধু সাংস্কৃতিক বন্ধনই দৃঢ় করেনি, বরং তরুণ প্রজন্মকে বাংলাদেশি ঐতিহ্য, শিল্প-সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত করারও সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ফোবানা সম্মেলন আগামী দিনে প্রবাসীদের পরিচয়, ঐক্য ও মূলধারায় সম্পৃক্ততাকে আরও সমৃদ্ধ করবে বলেও তারা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। এবারের সম্মেলনে ছিল বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল এর বিশেষ সেবা সার্ভিস। 

বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব জর্জিয়া এই বিশেষ সার্ভিসটি আয়োজন করেন। পাসপোর্ট নবায়ন, ই-পাসপোর্ট, এনআইডি সমস্যাসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়া হয় সেখানে। 

তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজক ছিলেন আটলান্টাভিত্তিক সাহিত্য-সংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাংলা ধারা’।  
এবারের সম্মেলনের মূল ফোকাস ছিল ‘প্রবাসী প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি ও বৈশ্বীকরণে বাংলাদেশের অবস্থান’। এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বাড়ানো, বাংলাদেশিদেরকে দেশটির মূলধারায় সম্পৃক্ত করা এবং শিক্ষা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা ছিল সম্মেলনের মূল লক্ষ্য। এবারের সম্মেলনে বেশ কিছু বিষয়কে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। 
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন্স ইন নর্থ আমেরিকার (ফোবানা) চেয়ারপারসন মাসুদ রব চৌধুরী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে সৌহার্দ্য বাড়িয়ে তোলা, নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের জীবন, শিল্প-সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই এই সম্মেলন আয়োজনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

এবারের সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে স্কলারশিপ দেওয়া হয়। এছাড়া এবার আটলান্টার ১০ জন নতুন প্রজন্মের মেধাবী শিক্ষার্থীদের এককালীন স্কলারশিপ প্রদান করা হয়। 
ফোবানার এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি আবীর আলমগীর বলেন, এবারের সম্মেলনে উত্তর আমেরিকার ২৪টি শহর থেকে সর্বমোট ৭৪টি সংগঠন এবং সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়া ছিল উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন শহরের সাংগঠনিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, বিষয়ভিত্তিক সেমিনার, বইমেলা, সাহিত্য আসর, কাব্য জলসা, বিভিন্ন পণ্যের স্টল, ইয়ুথ ফোরাম, বিজনেস নেটওয়ার্কিং ইভেন্টস এবং বাংলাদেশের জনপ্রিয় তারকা শিল্পীদের অংশগ্রহণে সংগীতানুষ্ঠান। 

সম্মেলনের তৃতীয় শেষ দিনে ফোবানার সাধারণ সভার পর ঘোষণা করা হবে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে আগামী বছরের জন্য নির্বাচিত নতুন কমিটির সদস্যদের নাম। সম্মেলনে জানানো হয় আগামী বছর ২০২৬ সালের ৪০তম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফোবানা ২০২৫ এর কনভেনর নাহিদুল খান সাহেল বলেন, ফোবানা সম্মেলন মানে প্রবাসীদের একটি মিলনমেলা। তিনি আরো বলেন, ফোবানা সম্মেলনে শুধু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানই নয়, মানবিক বিষয়েও কাজ করা হয়। তবে ফোবানা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। এখানে দলমত নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণ থাকে। প্রবাসে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে দেশীয় সংস্কৃতির পরিচয় করিয়ে দেওয়াও এই সম্মেলনের বড় অর্জন।

তিনি বলেন এবারের সম্মেলনে বেশ কয়েকটি বিষয়কে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে এবারের সেমিনারগুলো অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছিল  সামাজিক ইস্যু: মানবাধিকার ও সামাজিক-রাজনৈতিক দিক। স্বাস্থ্য ও সুস্থতা: প্রতিরোধমূলক এবং চিকিৎসাগত দিক। প্রযুক্তি: প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। শিক্ষা, ক্যারিয়ার ও যোগাযোগে প্রযুক্তির প্রভাব। গঠিত পরিবেশ ও জলবায়ু: স্থাপত্য, পরিকল্পনা, শহরায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন। ব্যবসা ও অর্থনীতি: ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি, উদ্যোক্তা, বাজার এবং অর্থনৈতিক নীতি। শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি: পাঠদান, সৃজনশীল শিল্প, ডিজাইন, চলচ্চিত্র, মিডিয়া এবং সাহিত্য। সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য: ঐতিহ্য সংরক্ষণ, ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং বাংলাদেশি-আমেরিকানদের মূলধারায় সম্পৃক্ততা। 

এবারের সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটের যুবক-যুবতী ও নারীদের বড় ধরনের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পরার মত। 
সম্মেলনের চিফ কো-অর্ডিনেটর দিলু মওলা বলেন, এবারের সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল  উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন শহরের ২৬টি সংগঠনের জমজমাট সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বিজনেস নেটওয়ার্কিং সেমিনার শেষে বাংলাদেশী প্রবাসী এবং যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অবদান রাখা এবং ফোবানার বিভিন্ন কর্মকান্ডে অবদান রাখার জন্য ১৭ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে প্রাউড স্পনসর এন্ড কন্ট্রিবিউটরস এওয়ার্ড দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আটলান্টার বাংলাদেশী প্রবাসী গ্রেট কেয়ার ডেন্টিস্ট্রি ডাক্তার নাঈম বাসার।

ঠিকানা/এসআর

 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041