ট্রাম্পের কূটনীতিতে রাশিয়াকে ভুখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত

প্রকাশ : ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:১০ , অনলাইন ভার্সন
ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে যেকোনো চুক্তিতে যেতে উভয় পক্ষকেই কিছু ভূখণ্ড ছাড়তে হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ওয়াশিংটন। এতে করে এক অজানা ভয় জেঁকে বসেছে ইউক্রেনীয়দের মনে।
আগামী ১৫ আগস্ট (শুক্রবার) আলাস্কা সম্মেলনে ইউক্রেন ভূখণ্ড নিয়ে সম্ভাব্য চুক্তির আলাপ কী পরিণতি নিয়ে আসবে, সেই শঙ্কায় দিন কাটছে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার বাসিন্দাদের। তেমনই একটি স্থান স্লোভিয়ানস্ক। ছোট্ট লবণাক্ত হ্রদের তীরে অবস্থিত এই শহরটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্ক অঞ্চলে অবস্থিত।

স্লোভিয়ানস্ক থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরেই রাশিয়া-ইউক্রেনের সম্মুখ যুদ্ধ চলছে। তা সত্ত্বেও এই জায়গাটুকু যুদ্ধের ভয়াহতা থেকে কিছুটা শান্তি এনে দেয়। তবে আলাস্কায় আদৌ কোনো চুক্তি হবে কিনা, হলেও তার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান স্থানীয় বাসিন্দারা।
লবণাক্ত হ্রদে নামতে নামতে স্থানীয় সাংবাদিক মিখাইলো সিএনএনকে বলেন, ‘মনে হয় আমি যেন এই বাস্তবতা থেকে ভেসে দূরে চলে যাচ্ছি!’

তবে এই শান্ত সৈকতও তার মনে একটি আতঙ্ক জন্ম দিয়েছে। কারণ ডনবাসের যেসব এলাকা এখনো রাশিয়া নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি। সেসব এলাকার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের কাছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে ক্রেমলিন। এতে স্লোভিয়ানস্কসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকা হুট করেই মস্কোর ভুখণ্ডে পরিণত হতে পারে।

মিখাইলো বলেন, ‘আমরা অনেক বন্ধুই এখানেই থাকতে চান, তবে আমাদের হয়তো এই জায়গাটি ছাড়তে হবে।’ তাই ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তড়িঘড়ি করে যে চুক্তি করতে চাইছেন ট্রাম্প, আপাত দৃষ্টিতে তা রাশিয়ার জন্য লাভজনক বলে মনে হলেও স্থানীয়দের মতামতের কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে যেতে পারে। এতে চুক্তিটির বাস্তবায়ন ব্যর্থ হতে পারে বলে মনে করেন মিখাইলো।

ট্রাম্পের প্রতি হতাশা নিয়ে এই যুবক আরও বলেন, একের পর এক ইউক্রেনীয় যে প্রাণ হারাচ্ছেন তা নিয়ে ট্রাম্পের কোনো মাথাব্যথা নেই। বরং তিনি কাদামাটি থেকে রুশ প্রেসিডেন্টকে টেনে তুলে বলছেন, ‘পুতিন আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই। আমি তোমাকে পছন্দ করি।’
দুই বছর আগে ল্যান্ডমাইনে পা দেওয়ায় আহত ল্যুডমিলারের শারীরিক কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করে এই লবণাক্ত হ্রদ। তিনি বলেন, ‘তারা যে এসব কূটনীতির কথা বলে, সবই আসলে লোক দেখানো। তারা চিন্তা করে এক, বলে আরেক, আর করে অন্যকিছু। রাজনীতি সবসময়ই এমন।’

আলাস্কা সম্মেলনে দোনেৎস্ক অঞ্চল নিয়ে যে প্রস্তাব দেওয়া দেওয়া হয়েছে, তা পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর আখ্যা দিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই প্রত্যাখ্যান করেছে কিয়েভ। সেই সঙ্গে এই চুক্তির খবর যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের জীবনকে আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

২০১৪ সালে স্লোভিয়ানস্ক শহর দখল করেছিল মস্কোর পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীরা’, পরে তা আবার পুনর্দখল করে ইউক্রেন। বর্তমানে আবার এই শহরটি রাশিয়ার দখলে চলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে তার থেকেও বড় কথা হলো ইউক্রেনের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রই একদিন এই শহর নিয়ে এমন চিন্তা করবে, অনেকেই তা কল্পনা করতে পারেনি।

সদ্যজাত শিশুর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে তাইসিয়া নামে স্থানীয় এক নারীও নিজের মনের কোণে উঁকি দেওয়া দুশ্চিন্তার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমি খবরে দেখেছি। যদি এই শহর রাশিয়ার দখলে যায়, সেটি খুব খারাপ হবে। তবে আমাদের তো আসলে কিছু করার নেই এখানে। আমাদের সিদ্ধান্তে কিছু হবে না। শুধু ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে।’

ইউক্রেনীয়দের মনে জেঁকে বসেছে যুদ্ধের ভয়াবহতা
যুদ্ধ ও এর ভয়াবহতা প্রতিনিয়ত ধাওয়া করে বেড়াচ্ছে ইউক্রেনীয়দের। স্লোভিয়ানস্ক শহরে প্রায় প্রতিদিনই ড্রোন ও বোমবর্ষণ হয়ে থাকে। তাই নিজের সদ্যজাত সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে কিয়েভে বাস করতে গিয়েছিলেন সোফিয়া লামেখোভা। এতে বেশ খুশি হয়েছিলেন তার পরিবারের সদস্যরা। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে গত ৩১ জুলাই কিয়েভের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে বিমান হামলায় তারা তিনজনই নিহত হন।

সোফিয়ার মা নাতালিয়া বলেন, ‘যুদ্ধ থেকে বাঁচতে তারা যেখানে গিয়েছিল, সেখানে গিয়েই যুদ্ধ তাদের ধরেছে।’

সোফিয়া অন্তঃস্বত্তা ছিলেন, এই সুখের সংবাদটি তিনি স্বজন-বন্ধুদের দিতে চেয়েছিলেন। নাতালিয়া বলেন, ‘সবাইকে খবরটি জানাতে, আনন্দ ছড়িয়ে দিতে স্লোভিয়ানস্কে ফিরতে চেয়েছিল সোফিয়া। তারা ফিরেছেও, তবে অন্যভাবে।’

সন্তানহারা এই দম্পতিও এই জায়গা ছাড়তে চান না। এখানেই তাদের বসতভিটা, তাছাড়া এখানে তারা অনেক মানুষকে বিশেষত একা থাকা বৃদ্ধদের খাদ্য ও পানির সহায়তা দিয়ে থাকেন। এখানে সেনাদের উপস্থিতির মাঝেও বেসামরিক জীবন টিকে আছে। রুশ ড্রোন হামলা এখানে নিয়মিত। কিন্তু শহর জুড়ে বেঁচে থাকার যুদ্ধ এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছেই।

এই এলাকার সবচেয়ে কাছের রেলস্টেশন ক্রামাতোরস্ক। ১১ আগস্ট (সোমবার) সেখানে দেখা যায়, রেলস্টেশনে অনেকে বসে আছেন কিয়েভ থেকে আসা লোকদের স্বাগত জানাতে। আবার কেউ গিয়ে ট্রেনে উঠে বসছেন। এরই মধ্যে দেখা যায়, স্বামী সেরহিইকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন তেতিয়ানা। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করার দ্বিতীয় দিন থেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন তার স্বামী। জন্মদিন উপলক্ষে তাকে দুই দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্পের কূটনীতি নিয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই এই নারীর। তিনি সিএনএনকে বলেন, ‘জানেন আমার স্বপ্ন কী? আমার স্বামী যেন বাড়ি ফিরে আসে। ওই ভূখণ্ড নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমি শুধু চাই সে যেন বেঁচে থাকে এবং বাড়ি ফিরে আসে।’

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041