ট্রাম্পের শুল্কারোপ যেভাবে ভোগাবে ভারতের অর্থনীতিকে 

প্রকাশ : ০১ অগাস্ট ২০২৫, ২২:৩৩ , অনলাইন ভার্সন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাদের বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোর জন্য পারস্পরিক শুল্ক হার ঘোষণা করেছেন। হোয়াইট হাউস ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। তবে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য ট্রাম্প নয়াদিল্লির ওপর ‘অতিরিক্ত জরিমানা’ আরোপের হুমকি দিয়ে রেখেছেন। যদি এই জরিমানা কার্যকর করা হয়, তাহলে ভারতের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে কমতে পারে। এই শুল্ক বা আমদানি শুল্ক ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। খবর এনডিটিভির।   

ট্রাম্পের শুল্ক ভারতের কাছে কেন গুরুত্বপূর্ণ?
২০২৪-২৫ সালে টানা চতুর্থ বছর যুক্তরাষ্ট্র ছিল ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৮৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি এবং ৪৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আমদানি)। ২০২৪-২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে পার্থক্য ছিল ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

পরিষেবা খাতে ভারত আনুমানিক ২৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি করেছে এবং ২৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আমদানি করেছে।

ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদন অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ২৫ শতাংশের বেশি হলে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের মোট রপ্তানির প্রায় ১০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে বিশ্বব্যাপী মন্দার মধ্যে ভারতের ‘নিরাপদ স্বর্গ’ আখ্যানের বিষয়টি দুর্বল হয়ে পড়বে।

ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান পণ্যগুলো হলো—
২০২৪ সালেযুক্তরাষ্ট্রে ভারতের প্রধান রপ্তানির মধ্যে ছিল ওষুধের ফর্মুলেশন ও বায়োলজিক্যাল (৮ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), টেলিকম যন্ত্রপাতি (৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), মূল্যবান এবং আধা মূল্যবান পাথর (৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), পেট্রোলিয়াম পণ্য (৪ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), যানবাহন ও গাড়ির যন্ত্রাংশ (২ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), সোনা এবং অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর গহনা (৩ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), সুতির তৈরি পোশাক, আনুষাঙ্গিকসহ (২ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) এবং লোহা ও ইস্পাতের পণ্য (২ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

ভারতের আমদানির মধ্যে রয়েছে অপরিশোধিত তেল (৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), পেট্রোলিয়াম পণ্য (৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), কয়লা, কোক (৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), কাটা ও পালিশ করা হীরা (২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি (১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি (১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), বিমান, মহাকাশযান এবং যন্ত্রাংশ (১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) এবং স্বর্ণ (১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

অতিরিক্ত শুল্ক কীভাবে বাণিজ্যকে প্রভাবিত করতে পারে
আমদানি শুল্ক আমদানিকারক দেশে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এতে মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। তবে, নির্দিষ্ট কোনো ক্ষেত্রে ভারতীয় ব্যবসার ওপর চূড়ান্ত প্রভাব নির্ভর করবে, এটির অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতার ওপর। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের প্রতিযোগী দেশ যেমন বাংলাদেশ (২০ শতাংশ), ভিয়েতনাম (২০ শতাংশ) ও থাইল্যান্ডের (১৯ শতাংশ) ওপর শুল্ক কম, যার ফলে সেসব দেশে থেকে আমদানি করা পণ্য মার্কিন বাজারে অনেক সস্তা হবে। এতে মার্কিন ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করবে এসব দেশ।

রপ্তানিকারকদের মতে, এই শুল্কের কারণে ভারতীয় বাজারের পোশাক, চামড়া ও চামড়াবিহীন জুতা, রত্ন ও গহনা, কার্পেট ও হস্তশিল্প পণ্য সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হতে পারে।

এ ছাড়া ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ৫০ শতাংশ এবং গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এটি ভারতীয় পণ্যের ওপর বিদ্যমান শুল্কের সঙ্গে অতিরিক্ত হিসেবে আরোপ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বর্তমানে টেক্সটাইল পণ্যের ওপর ৬ থেকে ৯ শতাংশ শুল্ক রয়েছে, তাই ২৫ শতাংশ যোগ করার পর ১ আগস্ট থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা ভারতীয় টেক্সটাইল পণ্যের ওপর শুল্ক দাঁড়াবে ৩১ থেকে ৩৪ শতাংশ। এর ওপর আরও জরিমানা আরোপ করা হতে পারে।

ভারতীয় পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্কের হার কত?
টেলিকম খাত—২৫ শতাংশ, রত্ন ও গহনা–৩০ শতাংশ থেকে ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ; যা বর্তমানে ৫-১৩ দশমিক ৫ শতাংশ, খাদ্য ও কৃষি পণ্যে–২৯ থেকে ৩০ শতাংশ, পোশাক—বর্তমানের ১২ শতাংশের সঙ্গে যুক্ত হবে ২৫ শতাংশ।

প্রভাবিত হবে এমন মূল খাতগুলো হলো—
রত্ন ও অলংকার : উচ্চ শুল্কারোপ রত্ন খাতের গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত করতে পারে এবং হাজার হাজার মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদন অনুসারে, এই খাত থেকে ভারত ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে। ভারতের রত্ন ও জুয়েলারি রপ্তানি উন্নয়ন পরিষদ বুধবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেছে, এ শুল্কারোপের ফলে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, চালান বিলম্বিত হবে, মূল্য বাড়বে, শ্রমিক থেকে শুরু করে বৃহৎ উৎপাদনকারী সবার ওপরই প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হবে।

জ্বালানি তেল : ভারত তাদের আমদানি করা জ্বালানি তেলের প্রায় ৩৭ শতাংশ রাশিয়া থেকে পায়। এই তেল মূল্যছাড়ে পাওয়া যায়। তবে যদি রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আর পাওয়া না যায়, তাহলে আমদানি খরচ বেড়ে যাবে এবং ভারতীয় পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর লাভ কমে যাবে।

ইলেকট্রনিক্স : অ্যাপল ভারতে তাদের আইফোনের আরও বেশি সংযোজন শুরু করার পর দেশটি চীনকে ছাড়িয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রিত স্মার্টফোনের শীর্ষ উৎস হয়ে উঠেছে। তবে সর্বশেষ শুল্কারোপের ফলে এটি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদন অনুসারে, আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ সারচার্জ আরোপে অ্যাপলকে তাদের পরিকল্পনায় সংশোধন আনতে পারে।

টেক্সটাইল ও পোশাক : ভারতের কাপড়, পোশাক ও জুতা প্রস্তুতকারকরা মার্কিন খুচরা বিক্রেতাদের পণ্য প্রস্তুত করে, যার মধ্যে রয়েছে দ্য গ্যাপ ইনকর্পোরেটেড, পেপে জিন্স, ওয়ালমার্ট ইনকর্পোরেটেড ও কস্টকো হোলসেল কর্পোরেশনের মতো বড় কোম্পানিগুলো।

কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নতুন শুল্ক এই খাতের জন্য একটি ‘কঠিন চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এটি ভারতের টেক্সটাইল ও পোশাক রপ্তানিকারকদের গুরুতর পরীক্ষার মুখে ফেলবে। কারণ আমরা আর কোনো উল্লেখযোগ্য শুল্ক ব্যবধানের (অন্যান্য দেশের তুলনায়) সুবিধা ভোগ করতে পারব না।

ওষুধ : ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আনুমানিক বার্ষিক আট বিলিয়ন ডলার মূল্যের পেটেন্টবিহীন ওষুধ রপ্তানি করে। সামগ্রিকভাবে, ভারতীয় কোম্পানিগুলোর ওষুধ ২০২২ সালে মার্কিন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় প্রায় ২২০ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২২ সাল পর্যন্ত বিগত দশকে মোট ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার আয় করেছে।

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078