কাঁদে মাতা, কাঁদে পিতা, কাঁদে সন্তান : কাঁদে বাংলাদেশ

প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৫, ১১:৫০ , অনলাইন ভার্সন
এমন কান্না, এমন হাহাকার, আর্তনাদ কেউ আগে কখনো শোনেনি। কাঁদছে সন্তানহারা মাতা-পিতা, মাকে হারিয়ে কাঁদছে সন্তান। স্বামীকে হারিয়ে কাঁদছে প্রিয়তমা স্ত্রী। সেই কান্না, হাহাকারে কাঁদছে সারা বাংলাদেশ। সকলের মিলিত কান্না, বুকফাটা আর্তনাদ-হাহাকারে স্তব্ধ বাংলার প্রকৃতি। বাংলার আকাশ-বাতাস, বৃক্ষরাজি, পশুপাখি। কান্নার রোল সর্বত্র। সেই শোক, সেই হাহাকার ছুঁয়ে যায় স্বদেশের সীমানা ছাড়িয়ে প্রবাসের হৃদয়।

অভিশপ্ত জুলাইয়ের ২১ তারিখ। বেলা সোয়া একটা, সূর্য মধ্য গগনে। ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজ। স্কুল শেষ। তখনো কেউ ক্লাসের ভেতর, কেউ বারান্দায়, কেউবা মাঠে। অভিভাবকেরা বাইরে সন্তানের অপেক্ষায়। দু-একজন হয়তো ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাড়ির পথে। তখনো ফুলের মতো শিশুদের কলকাকলিতে মুখরিত স্কুল প্রাঙ্গণ। তখনো কে জানত, এখনই আকাশ থেকে নেমে আসবে যমদূত। সব কোলাহল, হাসি, আনন্দ সব থেমে যাবে। স্তব্ধ হয়ে যাবে চারপাশ। প্রকৃতি হবে নির্বাক।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান মুহূর্তেই আকাশ থেকে ছুটে এসে প্রকট শব্দে আছড়ে পড়ে অ্যাকাডেমিক ভবনে। তারপর আগুন ছড়িয়ে ঢুকে পড়ে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে। আগুনের লেলিহান শিখায় গ্রাস করে নেয় ফুলের মতো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। অপরদিকে চিৎকার, ছোটাছুটি। কেউ স্তব্ধ, নির্বাক, কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সন্তানের অপেক্ষায় থাকা মাতা-পিতা। সন্তানেরা ছুটির আনন্দে ছুটে এসে মায়ের আঙুল ধরে বলবে, ‘মা বাড়ি চলো।’ ক্লাসে আজ কী কী হয়েছে তা নিয়ে মায়ের সঙ্গে জুড়ে দেবে গল্প।

না, সন্তান আসে না। ভেসে আসে সন্তানের লাশের গন্ধ। সব গন্ধেই মা সন্তানের গন্ধ পায়। কেউ কেউ বুক চাপড়ে আছড়ে পড়ে। এক মাতা সন্তান খুঁজে পাওয়ার জন্য ঝাঁপ দেয় আগুনে। সন্তান আর মায়ের পোড়া গন্ধ একাকার হয়ে যায়। ছাই হয়ে, আগুনে ঝলসে পড়ে আছে কারও এক সন্তান, কারও দুই, কারও-বা তিন সন্তানের তিনটিই। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই। কে কাকে সান্ত্বনা দেয়। সকলেই তো সন্তানশোকে কাতর। সবাই নিঃশব্দ। শুধু অ্যাম্বুলেন্স আর ফায়ার ব্রিগেডের শব্দ।

প্রতিদিন নিহতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। ২৫ থেকে ৩০; ৩০ থেকে ৩৫। কে জানে এই সম্পাদকীয় প্রকাশের সময় পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। প্রতিদিনই দু-একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে ছাত্রদের বাঁচাতে গিয়ে শিক্ষক মাহেরীন চৌধুরীর জীবনদান ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ছাত্রদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে তিনি ভুলে যান নিজের জীবনের কথা। নিজ সংসার, সন্তানদের কথা। অন্তত ২০-২২ জন শিক্ষার্থীকে আগুনের লেলিহান শিখা থেকে উদ্ধার করে অবশেষে নিজের জীবন তিনি উৎসর্গ করে যান। ছাত্রদের জন্য শিক্ষকের জীবনদানের এমন বিরল দৃষ্টান্ত আমরা ক’জনার মধ্যে খুঁজে পাব স্বদেশে! বিধ্বস্ত বিমানের নিহত পাইলট স্কোয়াড্রন লিডার তৌকির ইসলাম সাগর। মাত্র ছয় মাস আগে বিয়ে করেছিলেন। তার নবপরিণীতার বুকফাটা হাহাকারে আশপাশের মানুষের মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। তাকে দেখতে রাজশাহীতে তার কফিন ঘিরে হাজার হাজার শোকার্ত মানুষের ভিড় জমে যায়।

সরকার তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করে। কিছু অর্থ সাহায্যের কথাও ঘোষণা করে। কিন্তু ভিকটিমের বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন এমন শোক কবে ভুলতে পারবে, কে জানে। কে জানে, যে পরিবারে অন্ধকার নেমে এসেছে, সে অন্ধকার আদৌ কখনো ঘুঁচবে কি না। হয়তো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের কথায় ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহ, দহন লাগে।/ তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।’

সবাই আমরা জানি, জীবন জীবনের নিয়মেই বয়ে চলে। কিন্তু যাদের গেছে, তাদের তো গেছেই। তাদের জীবন কি স্বাভাবিক জীবনের নিয়মেই চলবে? যে ছন্দ মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আগুনে পুড়ে ছাই হলো, সেই ছন্দ তাদের জীবনে আর কখনো কি ফিরে আসবে? এখন অনেকেই নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু এখানে আহতদের দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক এবং মানসিক চিকিৎসা জরুরি। সে দিকে নজর দেয়াই মনে হয় সর্বাধিক প্রায়রিটি হওয়া উচিত, লাশের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক না করে। 
সর্বশক্তিমানের কাছে আমাদের প্রার্থনা, তিনি সবাইকে শোক সইবার শক্তি দান করেন। ঠিকানা পরিবারের পক্ষ থেকে নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত সবার প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078