
সম্প্রতি বাংলাদেশে ঘটে গেছে একটি মর্মান্তিক ঘটনা। গত ২১ জুলাই সোমবার দুপুর একটায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এক প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়নের পর আছড়ে পড়েছে ঢাকাস্থ উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে। এ সময় এই ভবনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শতাধিক শিক্ষার্থী ক্লাস শেষে কোচিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছিল এবং কয়েকশ শিক্ষার্থী বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বিস্ফোরণের পর আগুনের তাপে ও ধোঁয়ায় শিক্ষার্থীরা অনেকেই ভবনের ভেতরে দগ্ধ হয়ে আটকে পড়ে। বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো এলাকা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা ছুটে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায় এবং নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করে। দুর্ঘটনায় সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী ৩৫ জন মৃত্যুবরণ করে ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হয় দুই শতাধিক।
জানা যায়, কুর্মিটোলা এ কে খন্দকার ঘাঁটি থেকে বিমানবাহিনীর এই যুদ্ধবিমানটি উড্ডয়নের পরপরই যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌফিক ইসলাম বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি বুঝতে পেরে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এর আগেই বিমান মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের ওপর বিধ্বস্ত হয়। হৃদয়বিদারক ঘটনা নিমেষেই যেন একটি ফুলের বাগানকে তছনছ করে দেয়। অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় স্কুলের ফুটফুটে ছেলেমেয়েরা। ৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানের নিয়মিত প্রশিক্ষণে অংশ নিতে এই দিন তৌকির ইসলাম বিমানটি নিয়ে উড্ডয়ন করেছিলেন। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও তদন্ত চলছে। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় পুরো দেশে নেমে আসে শোকের ছায়া। আমাদের দেশে প্রশিক্ষণ বিমান এর আগেও বিধ্বস্ত হতে আমরা দেখেছি। কিন্তু এবারের মতো জনবহুল এলাকায় বিধ্বস্ত হয়নি বলে ভয়াবহতা কম ছিল। অবুঝ বাচ্চাদের এহেন মৃত্যুতে চোখে পানি এসেছে। বারবার মনে পড়েছে আমার বাচ্চাদের কথা। মা-বাবা সকালে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিলেন। কেউ কি ভেবেছিলেন একটি নষ্ট বিমান এভাবে তাদের বাচ্চাদের প্রাণ কেড়ে নেবে? এই ঘটনার দায় বিমানবাহিনীর প্রধান এড়াতে পারেন না।
উল্লেখ্য, প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা আমাদের দেশে নতুন নয়। চলতি বছরের ১৩ মার্চ যশোরে গ্রোব-১২০টিপি বিমানটি জরুরি অবতরণকালে দুর্ঘটনায় পড়ে। ২০২৪ সালের ৯ মে চট্টগ্রামে ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ভেঙে পড়ে; কো-পাইলট স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ পরে মারা যান। ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর বগুড়ায় পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার শিকার হলেও পাইলটরা ভাগ্যক্রমে রক্ষা পান। ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রশিক্ষণের সময় টাঙ্গাইলের মধুপুরে বিধ্বস্ত হয় এফ-৭ বিজি। এতে নিহত হন পাইলট আরিফ আহমেদ। ২০১৫ সালের জুনে এফ-৭ যুদ্ধবিমান সাগরে বিধ্বস্ত হলে পাইলট তাহমিদ নিখোঁজ হন। ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি যশোরে পিটি-৬ বিমান ধানখেতে জরুরি অবতরণ করে প্রাণে রক্ষা পায়। ২০১২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীতে আরেকটি যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ে। ২০১১ সালের ১০ অক্টোবর শাহ আমানত বিমানবন্দরে একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলেও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মুনতাসিন প্রাণে বেঁচে যান। ২০১০ সালের ২০ ডিসেম্বর বরিশালে পিটি-৬ বিমান ভেঙে পড়ে, এতে দুই পাইলট নিহত হন। ২০০৮ সালের এপ্রিলে টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে পাইলটসহ বিধ্বস্ত হয় এফ-৭ প্রশিক্ষণ বিমান। এতে নিহত হন স্কোয়াড্রন লিডার মোর্শেদ হাসান।
ঘটনার পর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এটা কি নিছক দুর্ঘটনা না নাশকতা? সংবাদপত্র সূত্রে জানা যায়, বিমানটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ। সত্যিই বিমান উড্ডয়নের পূর্ব থেকে ত্রুটিপূর্ণ ছিল কি না, তা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আমার জানামতে, বিমান আকাশে উড্ডয়নের পূর্বে দায়িত্বরত একজন ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারকে বিমানের সবকিছু ঠিক আছে কি না তা ভালো করে পরীক্ষা করে দেখতে হয়। এই বিমান উড্ডয়নের পূর্বে কোনো ইঞ্জিনিয়ার এই পরীক্ষা করে দেখেছিলেন এবং তাতে কোনো গাফিলতি ছিল কি না অনুসন্ধান করে দেখা দরকার। কোন পরিস্থিতিতে বিমান বিধ্বস্ত হলো, এটাও তদন্ত প্রয়োজন। বিশ্বের সকল দেশে প্রশিক্ষণ বিমান চলে জনশূন্য এলাকায়। কিন্তু আমাদের দেশে কেন উত্তরার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রশিক্ষণ নিতে হয়, এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? এখন এতগুলো জীবনহানির দায়িত্ব কে নেবে? এই দুর্ঘটনায় কেবল ৩২টি অবুঝ শিশু-কিশোর ঝরে যায়নি, সেই সঙ্গে ঝরে গেছেন শিক্ষানবিশ পাইলট তৌকির এবং একই স্কুলে দায়িত্বরত দুই শিক্ষয়িত্রী মাহেরীন চৌধুরী ও মাসুকা বেগম। মৃত্যুর পূর্বে শিক্ষার্থীদের প্রতি মমত্ববোধ ও দায়িত্ববোধের উদাহরণ তৈরি করে গেছেন শিক্ষক মাহেরীন চৌধুরী। যখন প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমানটি বিধ্বস্ত হয়, তখনো তিনি অক্ষত ছিলেন। কিন্তু বিপদের মুখে নিজের সন্তানতুল্য ছাত্রছাত্রীদের বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ফলে আগুনে ঝলসে যায় তার শরীর। ঢাকা বার্ন ইনস্টিটিউটে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় পরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ঘটনার পর আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তার প্রশ্নটি জোরালোভাবে উত্তাপিত হচ্ছে। জানা গেছে, বিমানবাহিনীতে যে সকল ফাইটার জেট আছে, তার বেশির ভাগই নাকি আউটডেটেড? যে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে এতগুলো জীবনপ্রদীপ নিভিয়েছে, সেটার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে ২০১৩ সালে। শুনেছি, এগুলো ক্রয় করার সময়ও অনেক অনিয়ম হয়েছে। যদি সত্যিই তা-ই হয়, তাহলে এই এয়ারক্রাফটগুলোই হচ্ছে আমাদের জন্য ফ্লাইং কফিন। এখন দেশের জাতীয় নিরাপত্তা কোন অবস্থায় আছে, সহজেই অনুমেয়। এই পর্যায়ে সময় এসেছে বিমানবাহিনীকে আধুনিকায়ন করার। বিমানবাহিনীর বহরে আছে মোট ৪৪টি যুদ্ধবিমান। এর মধ্যে ৩৬টিই চীনের তৈরি, যেগুলোর উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে ২০১৩ সালে। বাকিগুলো সোভিয়েত মিগ-২৯। বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের এই জেটগুলো নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তির সামনে কার্যকারিতা হারাচ্ছে। এখন জরুরি হচ্ছে নতুন এয়ারক্রাফট ক্রয় করা। জিনিস পুরোনো হলে ঝুঁকি বাড়বেই। ফলে ঝুঁকি এড়াতে আমাদের বিমানবাহিনীতে নতুন এয়ারক্রাফট সংযোগ করা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত জীবন বাঁচাতে ও বিমানবাহিনীর হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ। দেশের মানুষ প্রশিক্ষণের নামে জনজীবনে হুমকি দেখতে চায় না। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রতিটি প্রাণের ক্ষতি পূরণ দেওয়া হোক ও সেই সঙ্গে কারণ অনুসন্ধানপূর্বক দায়ী ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক।
লেখক : কলামিস্ট ও কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট, নিউইয়র্ক।
জানা যায়, কুর্মিটোলা এ কে খন্দকার ঘাঁটি থেকে বিমানবাহিনীর এই যুদ্ধবিমানটি উড্ডয়নের পরপরই যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌফিক ইসলাম বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি বুঝতে পেরে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এর আগেই বিমান মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের ওপর বিধ্বস্ত হয়। হৃদয়বিদারক ঘটনা নিমেষেই যেন একটি ফুলের বাগানকে তছনছ করে দেয়। অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় স্কুলের ফুটফুটে ছেলেমেয়েরা। ৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানের নিয়মিত প্রশিক্ষণে অংশ নিতে এই দিন তৌকির ইসলাম বিমানটি নিয়ে উড্ডয়ন করেছিলেন। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও তদন্ত চলছে। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় পুরো দেশে নেমে আসে শোকের ছায়া। আমাদের দেশে প্রশিক্ষণ বিমান এর আগেও বিধ্বস্ত হতে আমরা দেখেছি। কিন্তু এবারের মতো জনবহুল এলাকায় বিধ্বস্ত হয়নি বলে ভয়াবহতা কম ছিল। অবুঝ বাচ্চাদের এহেন মৃত্যুতে চোখে পানি এসেছে। বারবার মনে পড়েছে আমার বাচ্চাদের কথা। মা-বাবা সকালে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিলেন। কেউ কি ভেবেছিলেন একটি নষ্ট বিমান এভাবে তাদের বাচ্চাদের প্রাণ কেড়ে নেবে? এই ঘটনার দায় বিমানবাহিনীর প্রধান এড়াতে পারেন না।
উল্লেখ্য, প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা আমাদের দেশে নতুন নয়। চলতি বছরের ১৩ মার্চ যশোরে গ্রোব-১২০টিপি বিমানটি জরুরি অবতরণকালে দুর্ঘটনায় পড়ে। ২০২৪ সালের ৯ মে চট্টগ্রামে ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ভেঙে পড়ে; কো-পাইলট স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ পরে মারা যান। ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর বগুড়ায় পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার শিকার হলেও পাইলটরা ভাগ্যক্রমে রক্ষা পান। ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রশিক্ষণের সময় টাঙ্গাইলের মধুপুরে বিধ্বস্ত হয় এফ-৭ বিজি। এতে নিহত হন পাইলট আরিফ আহমেদ। ২০১৫ সালের জুনে এফ-৭ যুদ্ধবিমান সাগরে বিধ্বস্ত হলে পাইলট তাহমিদ নিখোঁজ হন। ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি যশোরে পিটি-৬ বিমান ধানখেতে জরুরি অবতরণ করে প্রাণে রক্ষা পায়। ২০১২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীতে আরেকটি যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ে। ২০১১ সালের ১০ অক্টোবর শাহ আমানত বিমানবন্দরে একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলেও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মুনতাসিন প্রাণে বেঁচে যান। ২০১০ সালের ২০ ডিসেম্বর বরিশালে পিটি-৬ বিমান ভেঙে পড়ে, এতে দুই পাইলট নিহত হন। ২০০৮ সালের এপ্রিলে টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে পাইলটসহ বিধ্বস্ত হয় এফ-৭ প্রশিক্ষণ বিমান। এতে নিহত হন স্কোয়াড্রন লিডার মোর্শেদ হাসান।
ঘটনার পর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এটা কি নিছক দুর্ঘটনা না নাশকতা? সংবাদপত্র সূত্রে জানা যায়, বিমানটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ। সত্যিই বিমান উড্ডয়নের পূর্ব থেকে ত্রুটিপূর্ণ ছিল কি না, তা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আমার জানামতে, বিমান আকাশে উড্ডয়নের পূর্বে দায়িত্বরত একজন ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারকে বিমানের সবকিছু ঠিক আছে কি না তা ভালো করে পরীক্ষা করে দেখতে হয়। এই বিমান উড্ডয়নের পূর্বে কোনো ইঞ্জিনিয়ার এই পরীক্ষা করে দেখেছিলেন এবং তাতে কোনো গাফিলতি ছিল কি না অনুসন্ধান করে দেখা দরকার। কোন পরিস্থিতিতে বিমান বিধ্বস্ত হলো, এটাও তদন্ত প্রয়োজন। বিশ্বের সকল দেশে প্রশিক্ষণ বিমান চলে জনশূন্য এলাকায়। কিন্তু আমাদের দেশে কেন উত্তরার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রশিক্ষণ নিতে হয়, এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? এখন এতগুলো জীবনহানির দায়িত্ব কে নেবে? এই দুর্ঘটনায় কেবল ৩২টি অবুঝ শিশু-কিশোর ঝরে যায়নি, সেই সঙ্গে ঝরে গেছেন শিক্ষানবিশ পাইলট তৌকির এবং একই স্কুলে দায়িত্বরত দুই শিক্ষয়িত্রী মাহেরীন চৌধুরী ও মাসুকা বেগম। মৃত্যুর পূর্বে শিক্ষার্থীদের প্রতি মমত্ববোধ ও দায়িত্ববোধের উদাহরণ তৈরি করে গেছেন শিক্ষক মাহেরীন চৌধুরী। যখন প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমানটি বিধ্বস্ত হয়, তখনো তিনি অক্ষত ছিলেন। কিন্তু বিপদের মুখে নিজের সন্তানতুল্য ছাত্রছাত্রীদের বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ফলে আগুনে ঝলসে যায় তার শরীর। ঢাকা বার্ন ইনস্টিটিউটে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় পরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ঘটনার পর আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তার প্রশ্নটি জোরালোভাবে উত্তাপিত হচ্ছে। জানা গেছে, বিমানবাহিনীতে যে সকল ফাইটার জেট আছে, তার বেশির ভাগই নাকি আউটডেটেড? যে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে এতগুলো জীবনপ্রদীপ নিভিয়েছে, সেটার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে ২০১৩ সালে। শুনেছি, এগুলো ক্রয় করার সময়ও অনেক অনিয়ম হয়েছে। যদি সত্যিই তা-ই হয়, তাহলে এই এয়ারক্রাফটগুলোই হচ্ছে আমাদের জন্য ফ্লাইং কফিন। এখন দেশের জাতীয় নিরাপত্তা কোন অবস্থায় আছে, সহজেই অনুমেয়। এই পর্যায়ে সময় এসেছে বিমানবাহিনীকে আধুনিকায়ন করার। বিমানবাহিনীর বহরে আছে মোট ৪৪টি যুদ্ধবিমান। এর মধ্যে ৩৬টিই চীনের তৈরি, যেগুলোর উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে ২০১৩ সালে। বাকিগুলো সোভিয়েত মিগ-২৯। বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের এই জেটগুলো নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তির সামনে কার্যকারিতা হারাচ্ছে। এখন জরুরি হচ্ছে নতুন এয়ারক্রাফট ক্রয় করা। জিনিস পুরোনো হলে ঝুঁকি বাড়বেই। ফলে ঝুঁকি এড়াতে আমাদের বিমানবাহিনীতে নতুন এয়ারক্রাফট সংযোগ করা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত জীবন বাঁচাতে ও বিমানবাহিনীর হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ। দেশের মানুষ প্রশিক্ষণের নামে জনজীবনে হুমকি দেখতে চায় না। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রতিটি প্রাণের ক্ষতি পূরণ দেওয়া হোক ও সেই সঙ্গে কারণ অনুসন্ধানপূর্বক দায়ী ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক।
লেখক : কলামিস্ট ও কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট, নিউইয়র্ক।