‘মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি!’

প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৩ , অনলাইন ভার্সন
ছেলেবেলার ঘটনা। লিখতে ইচ্ছে হয়েছে। প্রতিবেশী মামার বাড়িতে আগুন। স্টোভ থেকে আগুনের সূত্রপাত। মামি আহত। অনেকাংশ পুড়ে যায়। আমার মা হাসপাতালে নেন। চিকিৎসা হয়। কিছুদিন পর ফিরে আসেন। অনেকটা অংশ ঝলসানো। মামি মেনে নেন। বাকিটা জীবন হাসিমুখে কথা বলেন। তখন চিকিৎসা এত উন্নত ছিল না। মামি এখন অনেক দূরে। মামির কথা এখনো মনে আছে। সেই দুঃসহ স্মৃতি আজও ভুলিনি।
অফিসে বসে কাজ করছি। কাজের মেয়ের ফোন। বিল্ডিংয়ে কোথাও আগুন লেগেছে। কিছুই করতে পারব না। আলাদিনের প্রদীপ হাতে নেই। আমার মেয়েকে নিয়ে চুপচাপ বসে থাকতে বলি। বাসায় ফিরি। অনেক কিছু জানতে পারি। কিছুই হয়নি। অনেক কিছুই হতে পারত। স্রষ্টাকে শুকরিয়া জানাই। মাঝেমধ্যে মনে হয়, এখনো সুস্থ আছি, বেঁচে আছি-এই তো যথেষ্ট।

দিয়াবাড়ির ঘটনা। দেশবাসী বাকহারা। বিশ্ববাসী শোকাহত। অনেক শিশু চলে গেছে না ফেরার দেশে। তারা জান্নাতের ফুল। অনেকেই আহত। অনেকেই মুমূর্ষু। তাদের জন্য প্রার্থনা করছি। সৃষ্টিকর্তা তাদের সুস্থ করুন। কষ্ট সইছে-মনোবল দিন। স্থির করুন-শান্তি দিন।

অনেকেই এ ঘটনাটি স্বচক্ষে দেখেছে। কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা ভীত। আকাশে তাকাবে-ভয় পাবে। মাঠে খেলবে-ভয় পাবে। অনেকে স্কুল-কলেজে যেতে চাইবে না। তারা ট্রমায় চলে যেতে পারে। অভিভাবক, শিক্ষক/শিক্ষিকা আর শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসার প্রয়োজন হবে। শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি মনোচিকিৎসাও চালাতে হবে। রাষ্ট্রের পাশাপাশি অনেক সামাজিক সংগঠন এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে। এই ট্রমা থেকে শিশুদের উদ্ধার করতে হবে। শিশুরা আগ্রহ-উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলতে পারে। সহানুভূতির সঙ্গে খোলামেলা কথা বলতে হবে।

মাইলস্টোন স্কুলের অনেকেরই স্বপ্ন ছিল-কেউ ডাক্তার হবে, কেউ ইঞ্জিনিয়ার হবে, কেউবা বৈমানিক হবে। এখন ওরা আকাক্সিক্ষত হতে পারে। পথ মসৃণ করতে হবে। আমাদের সবার এ দায়িত্ব নিতে হবে। ইংরেজিতে একটি কথা আছে-Bold futures begin with bright starts. সোনামণিরা সাহসী ছিল এবং আছে। সেই সাহস দেখাতে হবে এবং এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তরুণ মেধাবীর অপূরণীয় ক্ষতি। পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ। অবর্ণনীয় কষ্ট। নবপরিণীতা স্ত্রী! সবাইকে সমবেদনা জানাই।
নবম-দশম শ্রেণিতে ‘ছুটি’ গল্প পড়ি। ফটিকের জন্য মায়া হয়। গল্প তো গল্পই। কিন্তু গল্পও জীবনের কথা বলে। অনেক শিশু চলে গেছে। যেখানে কোনো বাঁধন নেই, শাসন নেই, নিয়ম নেই -পাখি হয়ে উড়ছে।
আর মাত্র ১০ মিনিট বাকি। বাবা-মা অপেক্ষা করছেন। কিন্তু ছুটির ঘণ্টা বেজে গেছে। শেষের সেই ঘণ্টা।
রবীন্দ্রনাথের কালজয়ী ছোটগল্প ছুটি, অসাধারণ গল্প। গল্পের চরিত্র কিশোর ফটিক। অসময়ে চলে যায়। আমাদের শিশুরাও নিয়তির নিষ্ঠুর শিকার। চোখের আড়াল হয়ে গেল। মায়ের বুক খালি হলো। কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়ল। শেষের সেই ঘণ্টা-‘ছুটির ঘণ্টা’-‘ছুটি’, গল্পের ফটিক বাস্তবে রূপায়িত হবে-আমাদের অসীম দুর্ভাগ্য! মেনে নিতে পারি না, ‘মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি!’
লেখক : ফরমার অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ (ঢাবি)। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, নিউইয়র্ক প্রবাসী।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078