যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের দিনকাল

প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৫, ১১:১০ , অনলাইন ভার্সন
অভিবাসীর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এখন অভিবাসীদের জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শাসনকালে অভিবাসীদের, বিশেষ করে যাদের এ দেশে বসবাসের বৈধ কাগজপত্র নেই, তাদের সমস্যা সংকটের শেষ নেই। তাদের স্বস্তি হরণ করে নিয়েছে ট্রাম্পের নানা সংস্থার সদস্য। ঘরে-বাইরে কোনো স্বস্তি নেই কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের। শুধু কাগজপত্রহীন অভিবাসীরা নন, বিভিন্ন কার্যক্রমে ভিসা নিয়ে আসা অভিবাসীরাও মাঝেমধ্যে বিপদে পড়ছেন বলে বিভিন্নভাবে পাওয়া সূত্রে জানা যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের হালচাল নিয়ে প্রতিদিনই মিডিয়ায় খবর প্রচারিত হচ্ছে। সব খবরই কমবেশি অভিবাসীদের বিপক্ষে। ট্রাম্প প্রশাসনের পূর্বে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার খবর প্রকাশ পেত। মিডিয়া সে সব খবরের শিরোনাম করত : ‘অভিবাসীদের জন্য সুখবর’। এখন আর অভিবাসীদের পক্ষে কোনো সুসংবাদ প্রকাশিত হতে দেখা যায় না। ঠিকানার ১৬ জুলাই সংখ্যার শেষ পৃষ্ঠায় অভিবাসীদের নিয়ে চারটি খবর ছাপা হয়েছে। চারটিই দুঃসংবাদ। যেমন ‘নথিপত্রহীনদের অনেক সুযোগ-সুবিধা বাতিল’, ‘অপরাধে জড়িত হলে বৈধ নথিপত্রও রক্ষা করতে পারবে না’, ‘বাংলাদেশি স্টুডেন্টদের ব্যাপারে সতর্ক যুক্তরাষ্ট্র’ এবং ‘অনিয়মিত অভিবাসীরা জামিন শুনানির সুযোগ পাবেন না’।

প্রথম শিরোনামের খবর ‘আমেরিকানরা সরকারকে কর দিয়ে থাকেন। সে জন্য তারা বেশি বেশি সুবিধা পাওয়ার যোগ্য। তবে অবৈধ ও নথিপত্রহীনরা আমেরিকান করদাতাদের অর্থে পরিচালিত কোনো সুবিধা পাবেন না। আগে অনেক সুযোগ-সুবিধা পেলেও এখন থেকে আর সেই সব সুযোগ-সুবিধা তাদের দেওয়া হবে না।’ গত ১০ জুলাই হোয়াইট হাউজে পাঠানো এক পত্রে বলা হয়েছে, করদাতাদের অর্থায়নে পরিচালিত সুবিধাগুলো কেবল আমেরিকান নাগরিকদের জন্য, অবৈধদের জন্য নয়। গত ৩০ বছরের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবৈধদের বিরুদ্ধে এটাই সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ।

দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ‘অপরাধে জড়িত হলে বৈধ কাগজপত্রও কাউকে রক্ষা করতে পারবে না’। যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর বৈধতার কাগজপত্র পেয়ে গেলে অনেকেই মনে করেন, আর কোনো সমস্যা নেই। ফলে অনেকে ছোট-বড় অনেক অপরাধেই জড়িয়ে পড়েন। অনেক সময় জরিমানার অর্থ পরিশোধ করে মনে করেন, পার পেয়ে গেলেন। কিন্তু নৈতিক স্খলনকারীদের কোনভাবেই আমেরিকায় থাকতে দেওয়া হবে না। তাদের ওই স্খলন তাদের হিস্ট্রিতে থেকে যায়। যখন কেউ গ্রিনকার্ড বা সিটিজেনশিপের আবেদন করেন, ওই অপরাধ সামনে এসে দাঁড়ায়। এ জন্য অন্যান্য বৈধ কাগজপত্র থাকলেও তাদের আবেদন বাতিল হয়ে যেতে পারে।
তৃতীয়টি, বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ হোক বা অন্য যেকোনো দেশ হোক, যুক্তরাষ্ট্র চায় না, ওই রকম আন্দোলনে জড়িত কোনো তরুণ বা ছাত্র স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে এ দেশে আসুক। এ দেশে এসে ওই রকম আন্দোলন করুক। 

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে বাংলাদেশি অনেক ছাত্র ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্দোলন করেছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে, সমর্থন দিয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া সেই সব ছাত্রকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র চায়, এমন ছাত্র আসবে যারা পড়াশোনা করবে। পড়াশোনা শেষ করে এ দেশে সুযোগ পেলে কাজ করবে, নইলে দেশে ফিরে যাবে। অন্যান্য তথ্য আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করলে এবং তা পরীক্ষার সময় ধরা পড়লে সেই আবেদনও বাতিল হয়ে যাবে।

চতুর্থ খবর, অনিয়মিত অভিবাসীরা জামিন শুনানির সুযোগ পাবেন না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অনিয়মিত অভিবাসীরা আর কোনো জামিন শুনানির সুযোগ পাবেন না।
অধিক আর কিছু প্রয়োজন হবে না, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের সাম্প্রতিক হালচাল বুঝে নিতে হবে। তবে কথায় আছে, ‘যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ।’ অর্থাৎ যে দিনগুলো আমরা পার হয়ে আসি, সেই দিনগুলোর চেয়ে, সামনে যে দিনগুলো আসছে, তার চেয়ে কঠিন হবেÑমনে করা হয়। এ দেশে আগে অভিবাসীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সুযোগ যত অবারিত ছিল, সামনের দিনগুলো আর তত মসৃণ থাকছে না। কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু এদেশে রিপাবলিকানদের সময়ে ইমিগ্র্যান্টরা সর্বাধিক সুযোগ-সুবিধা এমনকি জেনারেল অ্যামনেস্টিও পেয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশের স্বার্থে যা করছেন, ঠিক আছে, কিন্তু তিনি যদি নির্দোষ, নিরীহ, দীর্ঘদিন এদেশে কাগজপত্রহীনভাবে বসবাস করছেন, এমন ইমিগ্র্যান্টদের জন্য তার পূর্বসূরীদের মত একটি অ্যামনেস্টি দিলে মনে হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতিহাসে উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকবেন। আমরা আন্তরিকভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছ থেকে এটা প্রত্যাশা করি। 

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য একবারই পূর্ণাঙ্গ সাধারণ অ্যামনেস্টি কার্যকর হয়েছে, যা ছিল অভিবাসন নীতির এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। ১৯৮৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান এর নেতৃত্বে পাস হয় Immigration Reform and Control Act (IRCA)-যা প্রায় ২৭ লক্ষ অবৈধ অভিবাসীকে বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা (Permanent Resident) হওয়ার সুযোগ দেয়।

রিগ্যান প্রশাসনের এই অ্যামনেস্টি নীতির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল- অবৈধ অভিবাসীদের আইনি কাঠামোর আওতায় এনে তাদের শ্রমের স্বীকৃতি দেওয়া, কর ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং ভবিষ্যতের জন্য কঠোর অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। এরপর বিগত প্রায় চার দশকে আর কোনো পূর্ণাঙ্গ সাধারণ অ্যামনেস্টি কার্যকর হয়নি। বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় এক কোটিরও বেশি অননুমোদিত অভিবাসী বসবাস করছেন- যাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। ১৯৮৬ সালের পর আজও আমেরিকান রাজনীতি ও অভিবাসন নীতিতে বড় আকারের অ্যামনেস্টির দাবি থাকলেও, রাজনৈতিক বিভাজন ও জনমত বিভ্রান্তির কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি।
রিগ্যান প্রশাসনের সাহসী সিদ্ধান্ত আজও একটি দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। এই ধরনের অ্যামনেস্টি শুধু মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রেও তাৎপর্যপূর্ণ। আজ যখন আমেরিকার অভিবাসন নীতি আরও কঠোর ও জটিল হয়ে উঠেছে, তখন ১৯৮৬ সালের সেই একটি সাধারণ অ্যামনেস্টির দৃষ্টান্ত নতুন করে ভাবনার খোরাক জোগায়।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078