বঙ্গবন্ধুর ‘৪র্থ প্রজন্মে’ বাঙালিপনার ইতি

প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৫, ১০:০৪ , অনলাইন ভার্সন
 ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ বলা হয় ‘বঙ্গবন্ধু মুজিবকে’। ২০০৪-এ বিবিসি জরিপে তিনি ‘শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ও হন। ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদে’ বিশ্বাস করে তাঁর দল ‘আওয়ামী লীগ’। কিন্তু বাঙালিত্বের চরম বিপর্যয় ঘটেছে পরিবারে। ৪র্থ প্রজন্মের সন্তানেরা তেমন বাংলা জানে না। বাঙালি সংস্কৃতি ধারণও করে না উত্তর-প্রজন্ম। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের পর উত্তরসুরীরা বিদেশমুখী। কন্যা শেখ হাসিনা রাজনীতির হাল ধরেছিলেন। ‘ভোট-চালাকি’র নির্বাচনে ৪ বার প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে পতন হয় ৫ আগস্ট ২০২৪। সদলবলে পালিয়ে যান ভারতের দিল্লিতে। নানাবিধ শর্তে অতিবাহিত করছেন ‘আশ্রিত জীবন’। সবশেষ পশ্চিমবঙ্গে নিতে হয়েছে নতুন মিশন। ক্ষমতাসীন বিজেপির পক্ষে নেমেছে লীগের ‘পলাতক নেতারা’। রাজ্যের ক্ষমতাসীন ‘তৃণমূল কংগ্রেস’কে আসন্ন নির্বাচনে হারাতে চায়। 
২০২৬-এর ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচন। সে লক্ষ্যে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে প্রস্তুতি চলছে। ভোটে ‘আওয়ামীপন্থী’ জোট গড়ারও চেষ্টা চলে। জাতীয় পার্টির একাংশ এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার হুঁশিয়ারিতে ঘটে নাটকীয় ঘটনা।
 
১৫ আগস্ট ট্রাজেডি থেকে বেঁচে যায় দু’কন্যা। জামাতা ড. ওয়াজেদের আহ্বানে ইউরোপ সফর ছিলো। বঙ্গবন্ধুর খ্যাতিমান কন্যাদ্বয় শেখ হাসিনা, রেহানা। একাত্তরের যুদ্ধাবস্থায় ২৭ জুলাই হাসিনা-পুত্র জয়ের জন্ম। পুরো নাম সজীব ওয়াজেদ জয়, আইটি বিশেষজ্ঞ। কৈশোরে ১৯৭৬-৮৩ ভারতের নৈনীতালে লেখাপড়া। পরে আমেরিকায় হার্ভার্ড থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত। ক্রিস্টিন ওভারমায়ার নামের মার্কিন তরুণীকে বিয়ে করেন। ২০০২ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত খ্রিস্টান এই নারীর সঙ্গে সংসার। সোফিয়া ওয়াজেদ নামে একজন প্রবাসী কন্যা আছে। যে এখন মায়ের সঙ্গেই পাশ্চাত্য জীবনে। ফলে, বাঙালি সংস্কৃতির লালন-পালন নেই জীবনে। উল্লেখ্য, জয় মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়েছেন ২০২৫-এর মে মাসে। 
জন্ম ও বৈবাহিক সূত্রে রাজনৈতিক পরিবারের মেয়ে। কিন্তু রাজনীতিতে জড়াননি সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। অটিজম বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিকশিত করেছেন নিজেকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হয়েছিলেন। ২০২৩-এর পয়লা নভেম্বর নয়াদিল্লিতে যোগ দেন। কিন্তু ২০২৫-এর ১১ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের ছুটি। কারণ দুটি অনিয়ম বিষয়ে তদন্ত চলছে। প্রথমত ডকুমেন্ট গাফিলতি, দ্বিতীয়ত ‘সূচনা ফাউন্ডেশন’। পারিবারিক এনজিওর অ্যাকাউন্টে আড়াই মিলিয়ন ডলার জমা। ‘দুর্নীতি দমন কমিশন’ বা ‘দুদক’ মামলা দিয়েছে। পুতুলের প্রকৃত স্বামীর নাম খন্দকার মাশরুর হোসেন/মিতু। সাবেক মন্ত্রী, রাজনীতিক খন্দকার মোশাররফের সন্তান। মিতুর দাদু নূরুল ইসলাম ‘একাত্তরের রাজাকার’ ছিলেন। কথিত আছে, ২০১৫ সালে মিতু-পুতুলের বিবাহবিচ্ছেদ  ঘটে। এই সংসারে তাদের সন্তান সংখ্যা চার। তিনটি মেয়ে, একটি ছেলে। সবাই বিদেশে। একদা কানাডায় ছিলো বসবাস, পরে মধ্যপ্রাচ্যে। পুতুলের সঙ্গে দিল্লিতেও পরিবারের একাংশ। ফলে শেখ হাসিনার নাতি-নাতনিরা বাঙালিত্ব থেকে দূরে। মিতু-পুতুলের বড় মেয়ে আমরিন খন্দকার সেমন্তি। সম্প্রতি ছবি ও বৈবাহিক তথ্য ভাইরাল হয়েছে। বলা হচ্ছে সেমন্তি বিয়ে করেছেন দক্ষিণ ভারতের কেরালায়। খ্রিস্টান পরিবারে বিয়ে করে ধর্মান্তরিত হয়েছেন। নামও বদল করে ‘রেইন কদুভাত’ হয়েছেন। ফেসবুকে এই নামে আইডিও রয়েছে। যদিও এ বিষয়ে কিছু বিতর্কও বিরাজমান। সমালোচকেরা বলছেন- এটি ‘শেখ হাসিনার নাতনি বিপর্যয়’।

শেখ রেহানার তিন সন্তানের স্পাউজ-রা সবাই বিদেশি
রেহানা-শফিক দম্পতির তিনটি সন্তানই উচ্চ শিক্ষিত। বড় মেয়ে টিউলিপ রেজোয়ান সিদ্দিক। বৃটেনে জন্ম ১৯৮২-এর ১৬ সেপ্টেম্বর। আপন আলোয় আলোকিত টিউলিপ, রাজনীতিক, সুবক্তাও। বৃটেনে লেবার পার্টির একাধিকবারের এমপি। লন্ডনের হ্যামস্টেড ও কিলবার্ন থেকে নির্বাচিত। ৯ জুলাই ২০২৪ থেকে ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ‘সিটি মিনিস্টার’ ছিলেন। বাংলাদেশের ‘দুদক’ র্কতৃক মামলার মুখোমুখি তিনি। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের মুখে মন্ত্রিত্ব ছাড়েন। তবে দুদকের বিরুদ্ধে তিনিও দিয়েছেন আইনি নোটিশ। 
২০১৩ সালে ক্রিশ্চিয়ান উহলিয়ামকে বিয়ে করেন টিউলিপ। এই দম্পতির দুটি ফুটফুটে সন্তান। মেয়েটির নাম আঞ্জালিয়া জয় পার্সি। ছেলেটি- রাফায়েল মুজিব সেন্টজন পার্সি। অর্থাৎ মুজিবের নামের সম্পৃক্ততা রয়েছে। কিন্তু বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে দূরত্ব প্রায় শতভাগ। 
টিউলিপ সহোদরার নাম আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী। বৃটেনখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক। ব্যক্তিজীবনে বাংলাদেশেও বসবাস করতেন। তবে জন্ম, জীবন, সংসার মূলত বৃটেনে। দুদক থেকে অবৈধ সম্পদ অজর্নের মামলায় আক্রান্ত। ফলে, ভিনদেশী সংস্কৃতিতেই সংসার অভিযাত্রা। 
রেহানা-পতি ড. শফিক সিদ্দিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। একমাত্র ছেলে শেখ রেদোয়ান মুজিব ওরফে ববি। জন্ম বৃটেনেই, ১৯৮০-এর ১১ মে। লন্ডন স্কুল অব ইকনমিকস থেকে স্নাতক, মাস্টার্সও। দেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। নতুন প্রজন্মকে নিয়ে আধুনিক ধারার কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন। ২০১৮-এর নির্বাচনের পর ধানমন্ডি আসনে ঘটে পরিবর্তন। এমপি ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি ঢাকা দক্ষিণ-এর মেয়র হন। কথা ছিলো ধানমন্ডির এমপি হবেন ববি। কিন্তু একজন গার্মেন্টস মালিককে এমপিশিপ দেয়া হয়। অভিমান করে ববি চলে যান সুদূর ফিনল্যান্ড। সেখানেই ববির বিদেশিনী স্ত্রীর পৈতৃকবাস। সেখানেই বিদেশী চেহারার এক ছেলে, এক মেয়ে। 
২০২২-এর সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাদু দেখান। জাতিসংঘ যাত্রার প্রাক্কালে ফিনল্যান্ডে নেন স্টপওভার। ৩৫০ আসনের পুরো বিমানে ছিলো মাত্র ১২ জন। দু’দিন থেকে ভাগ্নে ববির মান ভাঙাতে সক্ষম হন। প্রচারণা রয়েছে, উপঢৌকন হিসেবে কয়েকটি স্যুটকেসও নেন। সেই ববির বিরুদ্ধে ‘দুদক’ অর্থ পাচারের মামলা দিয়েছে। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে অভিবাসন জীবন তাদের। যেখানে বাঙালিত্ব লালনের বিষয়টি সুদূর পরাহত। 

হাসিনাবাদী জাপা নেতাদের পত্রপাঠ বিদায়
জাতীয় পার্টির তিনজন শীর্ষ নেতা বহিস্কার হয়েছেন। ২০-এর ১ (ক) ধারাবলে গত ২৮ জুন এই বহিস্কারাদেশ। গঠনতন্ত্র মোতাবেক চেয়ারম্যান জিএম কাদের এটি করেছেন। ফলে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ছিটকে পড়েন। সাবেক মন্ত্রী ও মহাসচিব এবিএম রহুল আমিন হাওলাদারও। সঙ্গে চলমান মহাসচিব অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নুও বহিস্কৃত। অভিযোগ, সংগঠনে নেতৃত্ব বদলানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছিলেন। 
বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, ওনারা ‘সাংগঠনিক ক্যু’ করছিলেন। অতীতে আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনী ঘোঁট পাকিয়েছেন। দলনেতা এরশাদ না চাইলেও দলকে নির্বাচনে নিয়েছেন। শেখ হাসিনাকেই ওনারা প্রধান নেতা মানতেন। সেক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন। আবারও আওয়ামী লীগের অনুকূলে জোট গড়তে চেয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে তাদের বহিস্কার করা হয়। জাপার নতুন মহাসচিব হয়েছেন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।  
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078