ভিসা প্রত্যাখান: প্রশ্নবিদ্ধ যেখানে বাংলাদেশের পাসপোর্ট

প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৫, ১০:০১ , অনলাইন ভার্সন
তায়েব মিল্লাত হোসেন : নিজ দেশের সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে সব বাংলাদেশির মধ্যেই আবেগ কাজ করে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে যখন বিড়ম্বনা তৈরি হয়, তখন বিবেকবানরা প্রশ্ন তুলতেও পিছপা হন না। হালে বাংলাদেশের পাসপোর্টের মান নিয়ে জোরেশোরেই আওয়াজ করছেন পর্যটকরা। কারণ একের পর এক দেশ নাকি বাংলাদেশিদের ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করছে।

নিজের এই তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে সদ্যই ভিডিও তৈরি করেছেন ভ্রমণ বিষয়ক ভিডিও ব্লগার নাদির নিবরাস। পরে এর কারণ ব্যাখা করে তিনি ‘নাদির অন দ্য গো-বাংলা’ ফেসবুজ পেজে ২৮ জুলাই সোমবার লিখেছেন, ‘গত এক বছরে আমি ১৭টি দেশে ভিসার জন্য আবেদন করেছি। এরমধ্যে সাতটি দেশ ভিসা দেয়নি। মজার ব্যাপার হলো, যেসব দেশ আগেও আমাকে ভিসা দিয়েছিল, তাদের মধ্যে তিনটি দেশ এবার আমাকে রিজেক্ট করেছে। এটা দেখায় যে অবস্থাটা আগের চেয়ে খারাপ হচ্ছে।’

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী পর্যটক বনি আমিন ফেসবুকে জানিয়েছেন বাংলাদেশি পাসপোর্টে এক তরুণের মালয়েশিয়ার ভিজিট ভিসা না পাওয়ার কথা। এই শিক্ষার্থীকে সেখানে নিজের ভ্রমণসঙ্গী করতে চেয়েছিলেন তিনি। এই ঘটনা তুলে ধরে বনি আমিন ২৩ জুলাই পোস্ট করেছেন, ‘জন্মদেশি পাসপোর্টের মান নেমে এখন হতদরিদ্র ইরিত্রিয়া ও ফিলিস্তিনের লেভেলে এসেছে। জন্মদেশিদের বিদেশ যাওয়া এখন স্বপ্নমাত্র। দায়ী কে?’

বাংলাদেশের পাসপোর্টে ভ্রমণ ভিসা প্রত্যাখানের ক্ষেত্রে আসলে এককভাবে কেউ দায়ী নয়। এর পেছনে রয়েছে বহরৈখিক সংকট। দূতাবাসে যারা কর্মরত থাকেন তারা বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে সেভাবে তুলে ধরেন না কখনোই। আবার অনেক বাংলাদেশি ভিনদেশে গিয়ে আইন-কানুনের ধার ধারেন না। এই নেতিবাচক কারণে ভূক্তভোগী হন অন্যান্য ভিসাপ্রত্যাশীরা। আর দালালদের দৌরাত্ম্যের ব্যাপারটি তো সবসময়ই থাকে। তারা সহজ-সরল মানুষদের কর্মী ভিসার কথা বলে ভ্রমণ ভিসায় বিদেশে পাঠিয়ে দেন। সেখানে গিয়ে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারলেও করার কিছুই থাকে না। কারণ কেউ জমি বিক্রি করে, কেউবা ধারদেনা করে বিদেশে যান। তাই অবৈধভাবে অবস্থান করে হলেও তারা দিনমজুরের খাতায় নিজেদের নাম লেখান সেখানে। কিন্তু যখন নিয়ম ভঙ্গ করে থাকা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দেশ অভিযান চালায় তখন বদনামের বড় ভাগীদার হয় বাংলাদেশ। ফলে নতুন করে বাংলাদেশি কাউকে ভিসা দিতে বাড়তি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।

গত এক বছর ধরে বৃহৎ প্রতিবেশি ভারত বাংলাদেশিদের ভ্রমণ ভিসা দিচ্ছেই না। এর পেছনে রয়েছে অবশ্য ভূরাজনীতি। কারণ ৫ আগস্টের পটপরিবর্তন তারা মানতেই পারছে না। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য তাদের দরজা বন্ধ। অন্যদিকে এশিয়ার বেশকিছু দেশ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রেখেছে। এ তালিকায় প্রথমেই আসে আরব আমিরাত ও বাহরাইনের কথা। এর জন্য কিছু কর্মীর ‘দুষ্কর্মই’ দায়ী- বলা হয়েছে সরকার থেকে। আর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার বিষয়টির জন্য দায়ী সেদেশ-এদেশের দালাল চক্র। তাদের সামনে যেন সরকারও অসহায়। তাই বাংলাদেশি কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় বাজারটি উন্মুক্ত হওয়ার বিষয়টি ঝুলেই থাকছে।

ভ্রমণের জন্য হোক, বিদ্যাশিক্ষার জন্য হোক কিংবা কাজের সন্ধানে হোক- উন্নত বিশ্বে বাংলাদেশিদের গমন কখনোই সহজ বিষয় নয়। বিশেষ করে ডনাল্ড ট্রাম্প এই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রা করার বিষয়টি আরো কঠিন হয়ে পড়েছে। সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেলেও ভিসা দেওয়ার আগে শিক্ষার্থীর সামাজিক যোগাযোগ্যমাধ্যম পর্যন্ত নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তাই বাংলাদেশি পাসপোর্ট বলে নয়, কেউ কেউ প্রত্যাখ্যাত হতে পারেন ফেসবুকে প্রচারিত নিজের মতাদর্শগত কারণেও।

সদ্যই শিক্ষার্থীদের জন্য দুঃসংবাদ এসেছে যুক্তরাজ্য থেকেও। সেখানে অভিবাসননীতিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এরফলে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসাপ্রাপ্তি আরো কঠিন হবে। এটা টের পেয়ে লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি ঘোষণা করেছে, নতুন কোনো বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করবে না তারা। কারণ ভর্তির পর কেউ যদি ভিসা না পায়, তাহলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচকও প্রশ্নের মুখে পড়বে। সেই ঝুঁকি এড়াতেই বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

পর্যটক যারা তাদের জন্য একটা তথ্য দিয়ে রাখতে হয়, বাংলাদেশের নাগরিকরা ৩৯টি দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ যেতে পারছেন এখনো। আর বাংলাদেশিদের ভিনদেশের ভিসাপ্রাপ্তি নিয়ে নেতিবাচক খবরের মধ্যে কিছুটা আশার বাণী মিলতে পারে হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্সের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকেও। সম্প্রতি প্রকাশিত তাদের শক্তিশালী পাসপোর্টের সূচকে ৩ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। আগের বছর অবস্থান ছিল ৯৭তম, এবার যা ৯৪তম। তবে পরিসংখ্যান বা সূচক সবসময় সত্যটা তুলে ধরতে পারে না। তাই ভূক্তভোগীদের কাছে এর তেমন মূল্য থাকে না।

বাংলাদেশ আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকার কারণে কী পাসপোর্ট অবমূল্যায়নের শিকার? গরিব দেশের বলেই কী বাংলাদেশিরা ভিসা-বঞ্চনার শিকার হন? এমনটি না-ও হতে পারে। এ প্রসঙ্গে জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর সালাহউদ্দীন সুমন লিখেছেন, কোনো দেশই আর ভিসা দিতে চাচ্ছে না বাংলাদেশিদের। বাংলাদেশের পাসপোর্ট দেখলেই তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে, সন্দেহ করছে। ভাবছে, নিশ্চয় পালানোর মতলব নিয়ে আসছে, আর ফিরবে না। দুনিয়াতে তো আরো অনেক গরিব দেশ আছে। তারা কী বিশ্ববাসীর সামনে নিজেদের এভাবে তুলে ধরেছে? নেপালের মতো স্বল্পোন্নত দেশকে অনেক দেশ সহজেই ভিসা দেয়। বাংলাদেশকে দেয় না কেন? এর উত্তর বের করতে না পারলে বাংলাদেশিদের জন্য হয়তো ধীরে ধীরে সব দরজাই বন্ধ হয়ে যাবে।

সংকট উত্তরণে সরকারের উদ্যোগ দাবি করে ইতিহাস-ঐতিহ্যভিত্তিক ভ্রমণ ভিডিও ব্লগার সালাহউদ্দীন সুমন লিখেছেন, “রাষ্ট্রযন্ত্রের সীমাহীন উদাসীনতা, চালাকি, এমনকি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদেই আমাদের ভালোবাসার সবুজ পাসপোর্ট আজ অপমানিত হচ্ছে দ্বারে দ্বারে।”

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078