গাজায় আরও ৬৩ নিহত, তীব্র খাদ্য সংকট

প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩৫ , অনলাইন ভার্সন
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৬৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এসব হামলায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এই হামলা এমন এক সময় ঘটলো যখন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ঘোষণা দিয়েছিল যে, কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে সাময়িক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে মানবিক সহায়তার পথ খুলে দেবে। খবর আল জাজিরার।

২৭ জুলাই (রবিবার) ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গাজা সিটির কিছু অংশ, দেইর আল-বালাহ ও আল-মাওয়াসিসহ মধ্য ও উত্তর গাজার কিছু এলাকায় সাময়িকভাবে সামরিক অভিযান স্থগিত থাকবে। একইসঙ্গে সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খাদ্য ও ওষুধবাহী গাড়ির জন্য করিডোর খোলা রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
কিন্তু এ ঘোষণা কার্যকরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুনরায় বিমান হামলা শুরু হয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি দেইর আল-বালাহ থেকে জানান, গাজা সিটিতে বিমান হামলা হয়েছে, অথচ এটি সেই অঞ্চলগুলোর একটি যা নিরাপদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল এবং যেখানে সামরিক অভিযান বন্ধ রাখার কথা ছিল। স্থানীয়দের মতে, একটি বেকারি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬ জন ক্ষুধাজনিত কারণে মারা গেছে। নিহতদের মধ্যে ২ শিশুও রয়েছে। এ নিয়ে অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে শুধুমাত্র অপুষ্টিতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৩ জনে।

মৃতদের মধ্যে ছিলেন পাঁচ মাস বয়সী জয়নাব আবু হালিব। নাসের হাসপাতালে অপুষ্টিতে মৃত্যু হয় শিশুটির।
তার মা ইসরা আবু হালিব বলেন, তিন মাস ধরে হাসপাতালে ছিলাম, আর এখন আমার সন্তান মৃত। শিশুটির বাবা ছোট্ট সাদা কাফনে মোড়া তার নিথর দেহ বুকে চেপে ধরে ছিলেন।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানায়, গাজার প্রতি তিনজন বাসিন্দার মধ্যে একজন কয়েকদিন ধরে কোনো খাবার পায়নি। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও সম্প্রতি সতর্ক করেছে, গাজায় ২০ শতাংশের বেশি গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মা অপুষ্টিতে ভুগছেন।

গাজার এক মা ফিলিস্তিন আহমেদ আল জাজিরাকে জানান, আমার ওজন ৫৭ কেজি থেকে কমে ৪২ কেজি হয়েছে। আমি ও আমার ছেলের মারাত্মক অপুষ্টি ধরা পড়েছে। ঘরে কোনো খাবার নেই। আর যা কিছু পাওয়া যায়, তার দাম আমাদের নাগালের বাইরে।

ইসরায়েল নতুন করে কিছু করিডোর খুলে দিয়েছে, আর সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডান আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহ করছে। তবে এসব সাহায্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং অত্যন্ত অপ্রতুল।
আল জাজিরার হানি মাহমুদ জানান, ত্রাণ ফেলে দেওয়ার সময় তা একদল বাস্তুচ্যুত মানুষের তাঁবুতে পড়লে অন্তত ১১ জন আহত হন।

এখনও গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে—এ অভিযোগ অস্বীকার করে যাচ্ছে ইসরায়েল। তারা দাবি করছে, মানবিক সহায়তা প্রবাহে সহযোগিতা করছে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন কিছু বলছে।
সামুদ ওয়াহদান নামে এক নারী আল জাজিরাকে বলেন, আমার সন্তানদের জন্য জীবন ঝুঁকি নিয়ে এতদূর এসেছি। তারা এক সপ্তাহ ধরে কিছু খায়নি। অন্তত এক টুকরো রুটি পেলেও চলতো।

আরেক বাস্তুচ্যুত মা তাহানি জানান, তার ক্যানসার আক্রান্ত শিশুটিও অনাহারে ভুগছে। তিনি বলেন, আমি ময়দা সংগ্রহ করতে এসেছি। সন্তানদের খাওয়ানোর জন্য খাবার চাই। আল্লাহ যেন এই দৃশ্য সবার চোখে এনে দেন—মানুষ মরছে!

‘মেডিকেল এইড ফর ফিলিস্তিনিয়ান্স’-এর প্রধান লিজ অলকক বলেন, আমি আগে কখনো গাজার এমন অবস্থা দেখিনি। রাস্তায় যেসব মানুষ দেখা যায়, তারা হাড়-জিরজিরে। এখানে টাকা দিয়ে কিছু কেনা যায় না, কারণ কেনার মতো কিছুই নেই।

তিনি সতর্ক করেন, গাজার এক-চতুর্থাংশ জনগোষ্ঠী তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে।
জাতিসংঘ বলেছে, ত্রাণ সহায়তা কেবল তখনই কার্যকর হতে পারে যখন ইসরায়েল তাদের চেকপয়েন্ট দিয়ে দ্রুত গতিতে কনভয় পাস করতে দেবে।

জাতিসংঘের সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, কিছু সীমাবদ্ধতা হয়তো শিথিল হয়েছে, তবে এই দুর্যোগ মোকাবিলায় অনেক বেশি পদক্ষেপ জরুরি।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, তিনি তুরস্ক ও মিসরের নেতাদের সঙ্গে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং নিউইয়র্কে একটি সম্মেলন আয়োজন করবেন দুই-রাষ্ট্র সমাধানের বিষয়টি সামনে রেখে।

ম্যাক্রোঁ বলেন, আমরা এটা মেনে নিতে পারি না যে মানুষ – বিশেষ করে শিশুরা – অনাহারে মারা যাচ্ছে। তিনি জানান, ফ্রান্স খুব শিগগিরই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে, যা এখন পর্যন্ত ১৪০টিরও বেশি রাষ্ট্র দিয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, ইসরায়েলের সাহায্য অবরোধ মানবতা ও নৈতিকতার লঙ্ঘন। এটা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী, যখন একটি রাষ্ট্র খাবার পৌঁছানো বন্ধ করে দেয়। তবে তিনি আরও জানান, অস্ট্রেলিয়া এখনই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত নয়।

যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের মাধ্যমে চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনা ‘অনেক দূর এগিয়েছে’।

রুবিও বলেন, আমরা আশাবাদী যে, খুব শিগগিরই একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হবে এবং অর্ধেক ইসরায়েলি বন্দি মুক্তি পেতে পারে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৮৮ জন নিহত ও ৩৭৪ জন আহত হয়েছেন।

গত অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৯ হাজার ৮২১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি।

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078