স্বাধীনতা হোক মুক্তির খোলা জানালা

প্রকাশ : ০৪-০৪-২০২৩ ১২:০৩:১০ পিএম , অনলাইন ভার্সন
গেল ২৬ মার্চ ছিল বাঙালিদের ৫২তম স্বাধীনতা বার্ষিকী। স্বাধীনতা একটি জাতির জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন। এই অর্জন বিশ্বের কোনো দেশই আকস্মিকভাবে বা খুব সহজে অর্জন করতে পারেনি। সবারই স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে অনেক ত্যাগ, লড়াই, সংগ্রামের ইতিহাস থাকে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে ত্যাগটা একটু বেশিই করতে হয়েছে। অনেক দিনের লড়াই-সংগ্রাম, জেল-জুলুম, নিপীড়ন-নির্যাতন, ৩০ লাখ জীবনদান করেই তবে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়েছে। সম্পাদকীয়র ছোট পরিসরে দীর্ঘ সেই ইতিহাসে না গিয়ে স্বল্প পরিসরে যেটুকু বলা যায়, সেটুকুই এখানে বলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশের দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই মিলিতভাবে লড়াই-সংগ্রাম করে, জীবন দিয়ে ১৯৪৭ সালে দুটি স্বাধীন দেশ পেল। একটি ইন্ডিয়া বা ভারত, অন্যটি পাকিস্তান। পাকিস্তানের একটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান, আরেকটি অংশ পশ্চিম পাকিস্তান। ইন্ডিয়া অখণ্ড, পাকিস্তান খণ্ডিত। দুই অংশের মধ্যে হাজার হাজার মাইলের দূরত্ব। ভাষার বিভেদ, সংস্কৃতিতে অমিল, পোশাক-আশাক ও আচার-আচরণ-সবকিছুতেই অমিল। ধর্মের ভিত্তিতে দ্বিজাতিতত্ত্ব হাজির করে মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ প্রায় ১৫০০ মাইলের বিরাট দূরত্ব রেখে দুই ডানায় ভর করে যাত্রা শুরু করলেন পাকিস্তান নামের দেশটি নিয়ে।
পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা বেশি, আয় বেশি, উৎপাদন বেশি। তা সত্ত্বেও ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের অবাঙালির দ্বারা শোষণ-বঞ্চনা, নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকারে পরিণত হয়। প্রথমেই আঘাত আসে বাঙালির মায়ের ভাষা বাংলার ওপর। ৫৬ ভাগ জনসংখ্যার ভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়ার ঘোষণা দিলে জিন্নাহর মুখের ওপরই ‘না’ বলে প্রতিবাদ জানিয়ে দিল পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ। এবং সেই আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি পুলিশের গুলিতে ছাত্র-জনতার রক্তে ঢাকার রাজপথ ভেসে যায়।

এরপর একের পর এক বাঙালিদের শোষণ করা, ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, বাঙালি নেতাদের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়ে দেওয়া। বাঙালি এবং তাদের নেতারা নিপীড়ন সহ্য করে, জেল খেটে, জীবন দিয়ে অগ্রসর হতে থাকেন। ১৯৫৪ সালে সাধারণ নির্বাচনে সম্মিলিতভাবে শেরেবাংলা ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য বাঙালি নেতার জোট যুক্তফ্রন্ট মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেও ক্ষমতালাভ করতে পারে না। ষড়যন্ত্র করে যুক্তফ্রন্ট সরকারকে কদিন পরেই ৯২ক ধারা দিয়ে কেন্দ্র ক্ষমতা জোরপূর্বক কেড়ে নেয়।

এরপর বাঙালিরা স্পষ্ট বুঝে যায়, বাঙালিদের জন্য আরেকটা স্বাধীনতাযুদ্ধ ছাড়া মুক্তির পথ নেই। এরপর আন্দোলনের নানা বাক অতিক্রম করে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালিদের মুক্তির পথ দেখাতে ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দাবি জানিয়ে স্পষ্ট পথ বুঝিয়ে দিলেন-বাঙালিদের মুক্তির পথ কী। বঙ্গবন্ধুও সেই থেকে বাঙালিদের প্রধান নেতায় পরিণত হয়ে যান। তিনি ছয় দফার ভিত্তিতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় অর্জন করেন। একক দল হিসেবে আওয়ামী লীগই একমাত্র দল ছিল, শেখ মুজিবুর রহমান একমাত্র নেতা।
পাকিস্তানিরা বাঙালিদের সেই ঐতিহাসিক বিজয়কেও নস্যাৎ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে যোগসাজশ করে স্থগিত করে দেন। তখন থেকে পূর্ব পাকিস্তানে আগুন জ্বলে যায়। মূলত ১ মার্চ থেকেই পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে যায়। হয়ে যায় বাংলাদেশ। ঘরে ঘরে, শিক্ষা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে পতপত করে উড়তে থাকে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। তখন থেকেই শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে বাংলাদেশ চলতে থাকে।

আসে ৭ মার্চ। বাঙালিদের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। সব বাঙালি উত্তেজনায় কাঁপতে থাকে। ৭ মার্চ জাতির এই ক্রান্তিকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। কী বলবেন বঙ্গবন্ধু মুজিব? কী নির্দেশনা দেবেন তিনি বাঙালি জাতিকে? রেসকোর্স ময়দান প্রস্তুত নেতাকে স্বাগত জানাতে। অবশেষে নেতা এলেন। লক্ষ কোটি জনতার সামনে বললেন, ‘…এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তিনি সবাইকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিলেন। শুরু হয়ে গেল শেখ মুজিবুর রহমানের প্রকাশ্য ঘোষিত শাসন।

এর মধ্যে সংলাপের নাটক করতে বাংলাদেশে এলেন ইয়াহিয়া ও ভুট্টো। সংলাপের নামে তারা পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি বাহিনীকে বাঙালি নিধনের নির্দেশনা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে ফিরে গেলেন। ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে ঘুমন্ত বাঙালির ওপর শুরু হয়ে গেল ঘাতক বাহিনীর ‘অপারেশন সার্চলাইট’। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ-যাকে যেখানে পেল হত্যা করল। তারা এক নারকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করল। বাঙালিরাও সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে যার যা ছিল তা-ই নিয়ে ঘাতকদের প্রতিরোধ শুরু করে দিল। মুক্তিযুদ্ধ চলল নয় মাস। শহীদ হলো ৩০ লাখ মানুষ। সম্ভ্রম হারাল দুই লক্ষাধিক মা-বোন। অবশেষে এল ১৬ ডিসেম্বর। রেসকোর্স ময়দানে পরাজয় মেনে নিয়ে আত্মসমর্পণ করল প্রায় ৯৫ হাজার দখলদার বাহিনী। মিত্র বাহিনী হিসেবে ভারত আমাদের সর্বাত্মক সমর্থন দিল। তাদেরও অনেক সৈনিক শহীদ হলেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন। জয় বাংলা স্লোগানে বাংলার আকাশ-বাতাস মুখরিত। কিন্তু জাতির জনককে নিয়ে সবার মনে শঙ্কা-কী হয়, কী হয়! অবশেষে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ফিরে এলেন তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে। বাঙালির স্বাধীনতা পূর্ণতা পেল। এবার আমাদের মিলিত কর্মে স্বাধীনতা সার্থক হয়ে উঠুক।

স্বাধীনতা দিবসে ঠিকানা জানাচ্ছে সব পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের শুভেচ্ছা।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041