৩৬শে জুলাই ২০২৪

একটি সৃজনশীল গণঅভ্যুত্থান-১০

প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৫, ১১:৫৩ , অনলাইন ভার্সন
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘নারী’ কবিতার দুটি চরণ : ‘বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি, চিরকল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ বিশ্বের মহৎ কাজ সৃষ্টিতে নরনারীর ভূমিকার অনুপাত যা-ই হোক, উভয়ের সংখ্যানুপাত যে সমান সমান, তাতে সন্দেহ নেই। সংখ্যাতে ও সৃষ্টিকর্মে উভয়ের অবদান সমান হলেও নারীসমাজ কখনো সমান অধিকার ও মর্যাদা পায়নি, তার প্রধান কারণ পিতৃতান্ত্রিক পরিবারপ্রথা ও পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থা। সবকিছুর কৃতিত্ব পুরুষের ভাগে পড়ে, নারীরা হয় বঞ্চিত, আর না হয় অবহেলিত অথবা উপেক্ষিত। এরূপ বঞ্চনা, অবহেলা উপেক্ষা সব যুগে সব দেশে সব সমাজে অতীতে হয়েছে এবং এখনো সমানতালে বহাল আছে। ইতিহাসে পুরুষ কর্তৃক নারীর প্রতি নির্যাতন, বঞ্চনা, বৈষম্যের ভুরি ভুরি নিদর্শন রয়েছে। বিধির বিধান বলে নারীরাও মেনে নিয়েছে। নারীবাদী আন্দোলন করে প্রতিকার চেয়েছিল, পুরুষতন্ত্র ছাড় দেয়নি। আমরা জুলাই ’২৪ গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে কথাগুলো বললাম এ জন্য যে, চলমান আন্দোলনে পুরুষের পাশাপাশি নারীর ভূমিকার কমতি ছিল না, কিন্তু যথার্থ মূল্যায়ন হয়নি, স্বীকৃতিও পায়নি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রাষ্ট্রনীতির ও সমাজব্যবস্থার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিরাজমান বৈষম্যের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠা দূরের কথা, বৈষম্য বেড়ে চলেছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও জেঁকে বসেছে। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা বৈষম্যের শিকার হয়ে আন্দোলনোত্তর দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে ঘোষণা দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। সামনের সারিতে আঙুলে গোনা কয়েকজনের নাম ছাড়া রাজধানীর ও বাইরের অনেক অ্যাক্টিভিস্ট (সক্রিয় কর্মী) অন্তরালে রয়ে গেছেন। এরূপ প্রেক্ষাপটে জুলাই আন্দোলনে নারীদের ঐতিহাসিক ভূমিকা যাতে বিস্মৃত না হয়, সে জন্য তাদের অধিকার ও অবদানের কথা আলাদা করে বলতে হচ্ছে। সমুদ্রের বুকে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের মতো আন্দোলনের ভেতরে একটি শক্তিশালী আবর্ত তৈরি হয়েছিল, যার জন্য অন্য অনেকজনের মতো নারীরাও রাস্তায় নেমে এসেছেন। আমরা একেই বলেছি জুলাই আন্দোলনের সৃজনধর্মী প্রবর্তনা ও জাগরণ।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রতিদিনের কর্মসূচি পালনে মিছিল-সমাবেশে ছাত্রদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছাত্রীরাও ব্যানার-প্ল্যাকার্ড বহন করেছেন, হাত তুলে সোচ্চারে স্লোগান দিয়েছেন, তুখোড় বক্তব্য রেখেছেন, গান গেয়েছেন, গ্রাফিতি এঁকেছেন। প্রত্যক্ষদর্শী সবাই দেখেছেন, যেকোনো মিছিলে ছাত্রীরাই সামনের সারিতে রয়েছেন। সামাজিক, রাজনীতিক দলের মিছিলেও নারীদের সামনের সারিতে দেখা যায় অথবা রাখা হয়। এর একটি মনস্তাত্ত্বিক দিক আছে। মিছিলে এদের একপ্রকার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যাতে পুলিশ বা প্রতিপক্ষ সহজে চড়াও হতে না পারে। আন্দোলন চলাকালে পত্রপত্রিকার সংবাদ ও ছবি, টেলিভিশন, যোগাযোগমাধ্যম ইত্যাদি ‘ভিজিট’ করলে বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজের নারী শিক্ষার্থী ও শিক্ষিকা, কবি-সাহিত্যিক, সংগীত-চিত্র-অভিনয়শিল্পী, ডাক্তার ও নার্স, অভিভাবিকা ও নারীসংগঠনকে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। নরীদের এত অধিক ও ব্যাপক অংশগ্রহণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ন্যায় অন্য কোনো আন্দোলনে দেখা যায়নি। অধিকারবোধ ও প্রতিবাদী চেতনায় এখন তারা আগের তুলনায় অনেক বেশি সজাগ সবাক সক্রিয়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষ থেকে ৮ জুলাই ৬৫ জন সমন্বয়ক-সহসমন্বয়ক নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়; পরে ৩ আগস্ট বর্ধিত আকারে ৪৯ জন সমন্বয়ক ও ১০৯ জন সহসমন্বয়ক সর্বমোট ১৫৮ জন নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। দ্বিতীয় কমিটিতে যেসব নারীনেত্রীর নাম পাওয়া যায়, তাদের নিয়ে নিচে একটি তালিকা প্রদান করা হলো। তালিকায় ১২ জন সমন্বয়ক ও ১১ জন সহসমন্বয়ক মোট ২৩ জনের নাম পাওয়া যায়। নামের পাশে ব্র্যাকেটে যে সংখ্যার উল্লেখ রয়েছে, তা মূল তালিকার।
সমন্বয়ক : নুসরাত তাবাসসুম (২৩), শামসুননাহার হল, ঢাবি; রাফিয়া রেহনুমা হৃদি (২৪), বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হল, ঢাবি; তামিমা ফাতেমা (২৭), বেগম সুফিয়া কামাল হল, ঢাবি; মুমতাহীনা মাহজাবীন মোহনা (২৫), বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল, ঢাবি; আনীকা তাহসীন (২৬); নিশিতা জামান নিম (২৯); সানজানা আফিফা অদিতি (৩২); তানজিনা তানিম হাফসা (৩৩); স্বর্ণা রিয়া (৩৯), জাবি; শাহিনুর সুমি (৪৫), ইডেন মহিলা কলেজ; সিনথিয়া জাবিন আয়শা (৪৬), বদরুন্নেসা কলেজ; নাজিফা জান্নাত (৪৮), ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।

সহসমন্বয়ক : কুররাতুল আন কানিজ (৭); নাহিদা বুশরা (১০); দিলরুবা আক্তার পলি (২২); ফাতিমা শারমিন এনি (২৪); সামিয়া আক্তার (২৫); মাইসা মালিহা (২৬); সাদিয়া হাসান মুক্তা (২৭); সাদিয়া ইসলাম সাকাফি (২৯); সাবিরা উম্মে হাবিবা (৩০); সারজানা আক্তার লিমনা (৬০); মাহিয়ান ফারদিন সিফাত (৬২)।
আন্দোলনে সমন্বয়কের ভূমিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীনেত্রীদের মধ্যে নুসরাত তাবাসসুম ও উমামা ফাতেমার কথা সবার আগে বলতে হয়। নুসরাত তাবাসসুম রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী, ২০১৮-১৯ সেশনে ভর্তি হন। বাড়ি কুষ্টিয়ার বাগুয়ান গ্রামে। স্থানীয় স্কুল-কলেজে শিক্ষা শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রথম ঢাকায় আসেন। রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্রী হিসেবে তিনি রাজনীতিকে কেবল শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি, ছাত্ররাজনীতি-চর্চার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। ২০১৮ সালে তিনি ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে’ অংশগ্রহণ করেন। ২০১৯ সালে কোটা আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদে’র সঙ্গে যুক্ত হন। ২০২১ সালে পরিষদের ঢাবি শাখার নাট্যবিষয়ক সম্পাদক হন। ২০২৩ সালে ছাত্র অধিকার পরিষদের সদস্যপদ ত্যাগ করে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’র সঙ্গে যুক্ত হন এবং যুগ্ম সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালের ৬ জুন কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনি উপস্থিত ছিলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত মিটিং মিছিল সমাবেশে সম্মুখসারিতে উপস্থিত থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন ও পরিচালনা করেন। কেন্দ্রীয় কমিটির ছয়জন সমন্বয়কের মধ্যে নুসরাত তাবাসসুম ছিলেন একমাত্র নারী সমন্বয়ক। ডিবি কার্যালয়ে পাঁচজন সমন্বয়কের মতো তাকেও তুলে নিয়ে মানসিকভাবে নির্যাতন করে দুদিন আটকে রাখে। ১ আগস্ট ছাড়া পেয়ে আবার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি) গঠিত হলে তিনি দলের ‘যুগ্ম আহ্বায়ক’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

‘দৈনিক নয়া দিগন্তে’ (অনলাইন, ৯ জুলাই ২০২৫) নুসরাত তাবাসসুমের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়; নিশাত ফারজানা ছিলেন প্রতিবেদক। সেখানে ব্যক্তিগতভাবে তাবাসসুমের এবং ঢাবির ছাত্রীদের আন্দোলনে অংশগ্রহণের অন্তর-বাহিরের কিছু চিত্র পাওয়া যায়। তিনি বলেন, প্রথম দিকে সাধারণ ছাত্রীদের অংশগ্রহণ সীমিত ছিল। পরে বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা ছাড়িয়ে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘৬ তারিখে আমরা পুরো ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ পেরিয়ে বুয়েট, ইডেন হয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা মিছিল নিয়ে হেঁটেছি। এর পরের দিন ৭ তারিখ থেকে বাংলা ব্লকেড শুরু হয়। আমরা সবাই সকাল নয়টার মধ্যে গিয়ে উপস্থিত হতাম। সেখান থেকে মিছিল করে নানা স্থান ঘুরে শাহবাগে। ... শাহবাগে আমাদের ভরসায় রেখে ছেলেরা বাংলা মোটর, মৎস্য ভবনের এলাকাগুলোতে এগিয়ে যেত।’
১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে অপমান করলে ছাত্রছাত্রী সবার মধ্যে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার উদ্রেক হয়। তারা রাতের মধ্যেই হলগুলো থেকে রাজু ভাস্কর্যসহ নানা স্থানে জড়ো হয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। নুসরাত তাবাসসুম বলেন, ‘১৪ জুলাই শামসুননাহার হলের মেয়েরা দরজা ভেঙে বের হয়ে এসেছিল। ... আমাদের মেয়েদের একটা গ্রুপ ছিল। সেখানে প্রস্তাবনা ওঠানোর সাথে সাথেই অলমোস্ট সবগুলো হল তৈরি হয়ে বের হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি দেখে আমাদের শিক্ষকেরাও বেশি একটা বাধা দেননি।...প্রথমে শামসুননাহার হল ও রোকেয়া হল, তারপর একে একে সুফিয়া কামাল হল যোগ দেয়। আর বঙ্গমাতা, বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হলের মেয়েরা নীলক্ষেত পার হয়ে ওপাশে থাকে। আমরা রাজুতে (রাজু ভাস্কর্যে) এসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করি। সেখানে আমরা পাঁচশ’ মেয়ে ছিলাম। ... সবচেয়ে বেশি অদ্ভুত বিষয় ছিল, যারা জীবনে কোনো দিন রাস্তায় নামেনি, পড়ার টেবিল থেকে লাইব্রেরি আর ক্লাসরুমের বাইরে যাদের জীবনে অন্য কিছু ছিল না, তারাও যেভাবে নাগরিক দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে নেমে এসেছিল, তা খুবই চমকপ্রদ ছিল। এটাই জুলাই আন্দোলনকে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ের অন্যান্য আন্দোলন থেকে পৃথক করে।’ (ঐ)

তিনি অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘১৫ তারিখের হামলাটা এত বীভৎস ছিল, আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হয়েছিল যে, ১৬ তারিখে মেয়েরা আবার নামবে কি না। ... সেই রাতে আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে, যদি রাতেই তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করতে হয়, তাহলে আমাদের মশাল মিছিল করা উচিত। ... আমরা হলের মধ্যেই পুরোনো বেঞ্চ, টেবিল, গাছের ডাল ভেঙে অনেকগুলো মশাল বানাই। মশাল বানানো যখন শুরু করি, তখন যার রুমে পুরোনো কাপড় আছে, সবাই যে যার মতো এনে দিচ্ছিল। আমরা রাত জেগে প্রায় দুই-তিনশ’ মশাল তৈরি করি। এটা আবার সবাইকে সাহস দেয়, উজ্জীবিত করে। তারপর ১৬ তারিখে সকাল থেকে রাজুতে আমাদের অবস্থান ছিল। সেদিন সবাই খুব প্রতিরোধের মুডে ছিল, প্রতিরোধও হচ্ছিল। ... সত্যি কথা বলতে আন্দোলন হয়তো এভাবেই চলত যেভাবে চলছিল। ১৪ তারিখে রাজাকার বলে গালি দেওয়া, ১৫ তারিখে মেয়েদের ওপর হামলা, ১৬ তারিখে আবু সাঈদের খুন, ১৭ তারিখে হলগুলো বন্ধ করা এবং ১৮ তারিখে প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা পুরো আন্দোলনের সবচাইতে ক্লাইমেক্স ছিল। এই পাঁচ দিনের ঘটনা এটা চূড়ান্ত করে দিয়েছে যে, এ আন্দোলন আর কোটা বা বৈষম্যের বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটা এখন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে।’ (ঐ)

উমামা ফাতেমা অপর নারী সমন্বয়ক। তিনি ঢাবির প্রাণরসায়ণ ও অনুজীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী; আবাসিক হল ছিল কবি সুফিয়া কামাল হল। পিতৃভূমি চট্টগ্রাম। উমামা ফাতেমা ‘বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনে’র ঢাবি শাখার সম্পাদক ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে সংগঠনের আমন্ত্রণে ফেডারেশন ছেড়ে এতে যোগ দেন এবং প্রথমে কেন্দ্রীয় ‘সমন্বয়ক’ ও পরবর্তীকালে ‘মুখপাত্র’ নিযুক্ত হন। আন্দোলনের নানা কর্মকাণ্ডে তিনি বেশ ‘ভোকাল’ ও সক্রিয় ছিলেন। ‘প্রথম আলো’ পত্রিকায় (৪-১১-২৪) তার স্মৃতিচারণামূলক এক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি আন্দোলনে নারীর নেতৃত্ব ও কর্মকাণ্ড সম্বন্ধে কতক মূল্যবান তথ্য দেন। তিনি বলেন, “৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আন্দোলন শুরুর পর থেকেই ছিলাম। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। সে সময় ‘কোটা পুনর্বহাল চাই না’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে আন্দোলনের কার্যক্রম চলত। এখানে সে সময় মেয়েদের উপস্থিতি খুবই কম ছিল। তখন আমার মনে হলো মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। এ ব্যাপারে আমার হলের জুনিয়র রুকু আক্তার ও সায়মার সঙ্গে বসে পরিকল্পনা করলাম। পরে আমরা হলের অন্য মেয়েদের সঙ্গে কথা বললাম। সুফিয়া কামাল হলের জন্য একটি আলাদা হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জার গ্রুপ খুললাম। কিন্তু আন্দোলনের প্রতি সমর্থন থাকলেও মিছিল বা কার্যক্রমে অংশ নিতে মেয়েরা ছিল দ্বিধাগ্রস্ত। ... প্রথমে ২ জুলাই তিনজন মেয়ে নিয়ে এলাম হল থেকে। ৩ জুলাই হলো ১০ জন। ৬ জুলাই মেয়েদের একটা বড় দল নিয়ে এলাম হল থেকে। শরীর ও মাথায় বাংলাদেশের পতাকা জড়িয়ে মিছিল করলে একটা শিহরণ জাগত মনে। এ সময় নাহিদ ইসলাম ভাই বললেন, আন্দোলন পরিচালনার জন্য মেয়েদের হল থেকে পাঁচজন প্রতিনিধি লাগবে। আন্দোলনে সবাই থাকবে, কিন্তু কেউ প্রতিনিধি হতে চায় না। চারবার নাম পরিবর্তন করে এরপর প্রতিনিধিদল নির্বাচন করতে পেরেছিলাম। ... বাংলা ব্লকেড দিয়ে স্লোগান দিচ্ছি, গাইছি ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে।’ ... একসময় সুফিয়া কামাল হল থেকে সাড়ে সাত হাজার টাকা চাঁদ তুলে আন্দোলনের জন্য একটা মাইক কিনলাম, আর স্থায়ী ব্যানার বানালাম। আমাদের সাহস ও উৎসাহ তখন তুঙ্গে। ...
“১৯ জুলাই বিকেলে আমাকে ফোন করলেন আন্দোলনের সহযাত্রী ভুঁইয়া আসাদুজ্জামান। বললেন, ‘তুমি একটা বিবৃতি লেখো।’ এটিই ছিল ‘আন্দোলন চলবে’ শিরোনামে ৬২ জন সমন্বয়কের বিবৃতি, যা ২১ জুলাই পত্রিকায় ছাপা হয়। বিবৃতিটির উদ্দেশ্য ছিল টিভিতে দেখানো ৮ দফাকে খণ্ডন করা। ... ৬২ জন সমন্বয়কের তালিকা পাঠিয়েছিলেন আবদুল্লাহ সালেহীন অয়ন।”

বর্তমানে উমামা ফাতেমা দলের একপেশীয় নীতির সঙ্গে সহমত পোষণ না করে সংবাদমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে দলত্যাগ করেন।
বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অন্যতম সমন্বয়ক নাজিফা জান্নাত রাজধানীর ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী (ভর্তি-২০১৭); জন্মস্থান চট্টগ্রামে। তিনি ‘বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নে’র সহসভাপতি ছিলেন। ২০২১ সালে রাজনৈতিক কর্মী মুশতাক আহমেদের জেলহাজতে মৃত্যুর প্রতিবাদে মশাল মিছিল করে তিনি গ্রেপ্তার হন ও ১০ দিন কারাভোগ করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে তিনি রামপুরা এলাকায় সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেন। ৩০ জুন ২০২৫ ‘বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার অনলাইন পোর্টালে’ নাজিফা জান্নাতের এক সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদক ছিলেন মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি। তার লিখিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নাজিফা জান্নাত নিজ সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং নিজ এলাকা রামপুরায় অন্যদের সংগঠিত করে আন্দোলন পরিচালনা করেন। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি যা বলেন, তাতে এর একটি জীবন্ত চিত্র বেরিয়ে আসে। তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের এক প্রেস ব্রিফিং হয় মধুর ক্যান্টিনে। এর আগে মিছিলে টুকটাক হেঁটেছি, একধরনের সংশ্লিষ্ট ছিলাম। কিন্তু সংগঠনের সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত হওয়া হয়নি। ওইদিন প্রেস ব্রিফিং শেষে ক্লাস বয়কট আর বাংলা ব্লকেড ঘোষণা করা হয়। আমরা ওখান থেকে বেরিয়ে নীলক্ষেত মোড়ে, সায়েন্স ল্যাব মোড়ে যাই। সেদিন শিক্ষার্থীদের টেম্পারামেন্ট দেখে আমার মনে হয়েছিল, একটা কিছু হতে যাচ্ছে। ৭, ৮, ৯ তারিখ আমি ধারাবাহিকভাবে অংশ নিই। শাহবাগেও মিছিল নিয়ে যাই।

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিন মিছিল, সমাবেশে অংশ নিচ্ছি, কিন্তু আমার নিজের জায়গাÑবেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়Ñসেখানে তো কিছুই হচ্ছে না। তখন ঢাকা কলেজের রাকিব ভাই ও রামপুরার আন্দোলনকর্মী হান্নান মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ... এরপর আমি যোগাযোগ শুরু করি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বন্ধু, ব্র্যাকের এক ছোট ভাই, ছাত্র অধিকার পরিষদের আসাদ বিন রনিÑএদের নিয়ে একটা কোর গ্রুপ তৈরি করি। প্রথম মিটিংটা ছিল খুব ছোটÑমাত্র ৮-১০ জন। আমরা প্ল্যান করলাম ১০ জুলাই একটা বড় ডেমো (ডেমোস্ট্রেশন) দেব। সেদিন আমরা প্রথম রামপুরা ব্রিজে ইস্ট ওয়েস্টের সামনের এক পাশ ব্লক করি। ইম্পেরিয়াল কলেজের ছাত্ররাও তাতে যোগ দেয়। এরপর দুই পাশেই রাস্তায় নেমে পড়ি। পুলিশ আসে, থামাতে চায়। আমাদের মাথায় তখন একটাই কথাÑএই রাস্তা আমাদের, ‘আমাদের কণ্ঠ এখানেই শোনা যাবে।’

“পরদিন ১১ তারিখে পুলিশকে পাশে রেখে আমরা মানববন্ধন করি। ছাত্ররা আস্তে আস্তে জমতে থাকে। মিডিয়া আসে, ছবি তোলে। এর পর থেকে প্রতিদিনই ছাত্রছাত্রী বাড়তে থাকে। ইস্ট ওয়েস্ট ছাড়াও স্কলাস্টিকা, স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইম্পেরিয়ালÑএদের শিক্ষার্থীরাও এসে রামপুরা ব্রিজে আমাদের সঙ্গে একাত্মতা জানাতে শুরু করে। রামপুরা আর ইস্ট ওয়েস্টের শিক্ষার্থীরা মিলে একটা চেতনার কেন্দ্র হয়ে ওঠেÑযেখানে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাজনীতি বোঝে না’-এই অপবাদ মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
“১৪ তারিখে কুমিল্লায় হামলা হলো। সেদিন বিকেলে শেখ হাসিনা প্রেস ব্রিফিংয়ে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ বলে সম্বোধন করেন। এই বক্তব্য সবাইকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এরপর আমাদের প্রোগ্রামে উপস্থিতি বেড়ে যায়। ... ১৫ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা হলো। ১৬ তারিখে রামপুরা ব্রিজে ২০০০-এর বেশি মানুষÑস্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও আসল। ওইদিন চট্টগ্রামে ওয়াসিম, রংপুরে আবু সাঈদ মারা গেলেন, এই খবর পুরো মুভমেন্টকে ট্রান্সফর্ম করে দিল। ... ১৮ তারিখ আমার জীবনের ভয়াবহ দিন। ওইদিন মাইক দিতে রাজি হয় না কেউ। রামপুরা ব্রিজে গিয়ে দেখি, গোলাগুলি চলছে, ১০০ ফুট দূরে। পুলিশ গুলি করছিল, স্টুডেন্টরাও দৌড়াচ্ছিল। ... আমার সামনে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যায়।”
সাংগঠনিক নেতৃত্ব প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে নাজিফা জান্নাত বলেন, ‘আমি নিজে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হওয়ায় সেখানে আন্দোলন গড়ে তোলার দায়িত্ব নিয়েছিলাম। আমার পরিচিত বন্ধুদের ফোন করে ছোট ছোট গ্রুপ তৈরি করে ডেমনস্ট্রেশন করেছি। বেসরকারি ছাত্রদের মধ্যে অনেক অনীহা ছিল, সেটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছি। ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের সঙ্গেও সমন্বয় করেছিলাম। এভাবে ছাত্রদের একত্র করে আন্দোলন বড় করেছি।’ (ঐ)

ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী শাহিনুর সুমি প্রদত্ত একটি সাক্ষাৎকার ১৫ জুলাই ২০২৫ বাসস অনলাইন সংবাদে ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে নারী শিক্ষার্থীরা টার্গেটে ছিল’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদক ছিলেন ওবায়দুর রহমান। শাহিনুর সুমির পৈতৃক নিবাস কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায়। তিনি বামধারার রাজনীতি করেন। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ইডেন কলেজ শাখার সভাপতি এবং ঢাকা মহানগরীর দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে একজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তার উক্তি : “আমি প্রথমে কোটা সংস্কার আন্দোলনের খবর পাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আমি মূলত ২ জুলাই থেকে সরাসরি আন্দোলনে যুক্ত হই। সেদিন ইডেন কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে প্রথম মাঠে নামি। ৩ জুলাই আমরা নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিই। পরে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে আমরা ইডেন কলেজ ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা একত্রে মিছিল করি। আমাদের মধ্যে সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদের যে শক্তি ও ঐক্য তৈরি হয়, তা আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক ছিল। ... ঢাবি থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে যে সিদ্ধান্ত বা কর্মসূচি ঘোষণা করা হতো, আমরা সেগুলো পালন করতাম।

“৭ জুলাই বাংলা ব্লকেড কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক সাড়া দেয়। শিক্ষার্থীরা ন্যায্য দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে আন্দোলনে অংশ নেয়। ১৪ জুলাই বিকেলে কোটা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের রাজাকারের নাতিপুতি বলে অপমান করলে দেশের হাজারো শিক্ষার্থীর মনে তীব্র ক্ষোভের জন্ম হয়। এই মন্তব্য তাদের আত্মপরিচয়, সম্মান ও অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। ... ইডেন কলেজের প্রতিটি হলের শিক্ষার্থীরা নিজেদের হলের গ্রুপে আলোচনায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। সিদ্ধান্ত হয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাতে হবে। পরে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের বাধা উপেক্ষা করে রাতেই হল থেকে বেরিয়ে আসে। মিছিল, স্লোগান ও প্রতিবাদে রাতের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত থেকে আজিমপুর পর্যন্ত মিছিল করে। সেদিন শিক্ষার্থীরা জানিয়ে দেয়, আমরা রাজাকারের নাতি না, আমরা এই দেশের নাগরিক। আমাদের ন্যায্য অধিকার চাই। এটি ছিল একটি স্বতঃস্ফূর্ত, সংগঠিত এবং শক্তিশালী প্রতিবাদ।”

১৫ জুলাইয়ের ঘটনা সম্পর্কে সুমি বলেন, প্রথম হামলাটা হয় ইডেন কলেজে। ছাত্রলীগের মেয়েরা এই হামলা চালায়। কিন্তু তার পরও ৪০০-৫০০ জন ছাত্রী একত্রিত হয়ে রাজু ভাস্কর্যে যায়। সেদিন ছাত্রলীগ ঢাবির শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডেও হামলা চালায় তারা। সেদিন নারীদেরও রেহাই মেলেনি। সেই হামলায় নারীদের মাথা ফেটেছিল, মুখ থেঁতলে গেছে, বুক ও পিঠে লাঠির আঘাত ছিল। সেদিন পুরুষ বা নারী নয়, টার্গেট ছিল ‘প্রতিবাদী শিক্ষার্থী’।
১৮ জুলাই আন্দোলন সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য : “ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার পরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসে। ১৮ জুলাই সকালে পুলিশ শাহবাগ ঘিরে রাখে। কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল না। তখন শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নেয়, যেখানে আছি সেখান থেকেই আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা ইডেন কলেজ, ঢাকা কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ, মিরপুর ও আশপাশে মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের একত্রিত করে প্রেসক্লাবের সামনে নতুন করে আন্দোলন গড়ে তুলি। আমাদের সমর্থনে সাধারণ মানুষ, রিকশাচালক ও অভিভাবকেরা এগিয়ে আসেন। অনেকে খাবার, পানি পৌঁছে দেন। এই সহানুভূতিই আন্দোলনকারীদের মনোবল বাড়িয়ে দেয়। ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরের ওই সময়টা ছিল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অপ্রত্যাশিত জাগরণ। যাদের সম্পর্কে আগে ভাবা হতো ‘আত্মকেন্দ্রিক’, তারাই হয়ে উঠল সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া মুখ। তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ আন্দোলনে নতুন গতি আনে, যা ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে একটি সফল আন্দোলনে পরিণত হয়।”

৩০ জুলাই আন্দোলনের প্রকৃতি সম্পর্কে তার অভিমত : “৩০ তারিখ লাল প্রতিরোধ ছিল এক ঐতিহাসিক স্মৃতি। সরকারিভাবে সেদিন ‘কালো দিবস’ পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সরকার সেদিন কালো ব্যাচ ধারণের কথা বলে। কিন্তু আমরা যারা মাঠে ছিলাম, যারা রক্ত ঝরতে দেখেছি, আমাদের ভাই-বোনদের জীবন দিতে দেখেছি, আমরা প্রশ্ন করেছিলাম, ‘আমরা কেন কালো ব্যাচ পরে শোক জানাব?’ আমরা তো হারিনি। আমাদের ভাই-বোনেরা যে রক্ত দিয়েছে, সেই রক্তের রং তো লাল, যা প্রতিবাদের ও বিপ্লবের (প্রতীক)। আমরা সিদ্ধান্ত নিই, আমরা লাল ব্যাচ পরব, মুখে লাল কাপড় পরব, ফেসবুকে প্রোফাইল লাল করব। এটা ছিল সরকারের নির্ধারণ করা শোকের রাজনীতির বিপরীতে জনগণের দ্রোহের রং। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিটি প্রোফাইল, প্রতিটি মুখ হয়ে উঠেছিল লাল। এটা নিছক লাল কাপড় ছিল না, এটা ছিল একটা রায় এবং জনগণ কার পক্ষে, তা জানানোর এক সংগঠিত অভিব্যক্তি।”
৩১ জুলাই কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছিল ‘মার্চ ফর জাস্টিস’। এদিনের ভূমিকা সম্বন্ধে শাহিনুর সুমির বক্তব্য : “সেই সময়টাতে গণগ্রেপ্তার চলছিল। ছাত্র দেখলেই পুলিশ ধরছে, উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ... আমরা হাইকোর্ট চত্বরে মার্চ ফর জাস্টিস পালন করি। আমরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সবাইকে একত্রিত করতে সেগুনবাগিচা থেকে পল্টনের দিকে এগোচ্ছিলাম। আমাদের পরিকল্পনা ছিল আইনজীবীদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে একটা ন্যায়ের মিছিল করা। ন্যায়বিচার শুধু রাস্তায় নয়, আদালতের চত্বরে গিয়েও আমাদের দাবি তুলতে হবে। পুলিশ চারদিক ঘিরে রাখায় সকাল থেকে চেষ্টা করেও আমরা হাইকোর্টে ঢুকতে পারছিলাম না। এমন সময় তিন দিক থেকে একযোগে তিনটি মিছিল এসে হাজির হলো। সচিবালয়-সংলগ্ন এলাকা থেকে একটি মিছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের দিক থেকে একটি মিছিল এবং হাইকোর্টের ভেতর থেকেই আইনজীবীরা একটি মিছিল নিয়ে বের হয়ে এলে পুলিশ সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাাডভোকেট অরূপ দাস শ্যাম, রুবি আপা, মতিন ভাই সকলেই নেতৃত্বে ছিলেন।”
এখানে মাত্র চারজন নারীনেত্রীর কথা বললাম; অন্যদের অনুরূপ ভূমিকা আলোচনায় সংযুক্ত হলে জুলাই আন্দোলনের ভেতর-বাইরের একটা বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য চিত্র পাওয়া যাবে। এটি ঐতিহাসিকদের নৈতিক দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। [চলবে]
সংশোধনী : গত সংখ্যায় স্মৃতিচ্যুতির কারণে কার্টুন মুভির ও চরিত্রের নাম ভুল হয়। মুভির নাম হবে-ফাইন্ডিং নেমো, বাবার নামÑমার্লিন, ছেলের নামÑনেমো।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078