
প্রতিটি ধর্মই শান্তি ও সম্প্রীতির শিক্ষা দেয়। কোনো ধর্মই সমাজে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার অনুমতি দেয় না। ইসলাম এবং সন্ত্রাস এ দুটির ধর্ম সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইসলাম শান্তির শিক্ষা দেয় আর সন্ত্রাস দেয় নৈরাজ্যের শিক্ষা। কেবল ইসলামই নয়, বরং কোনো ধর্মই সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অনুমতি দেয় না। সকল ধর্মই চায় সমাজ ও দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে। তাই সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই।
বিশ্বময় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই আল্লাহপাক ইসলাম নামক ধর্মকে মনোনীত করেছেন। ইসলামে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের স্থান নেই। এমনকি অমুসলিমদের উপাসনালয়েও হামলা চালানোকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। শুধু তা-ই নয়, বরং অমুসলিমরা যেসবের উপাসনা করে, সেগুলোকেও গালমন্দ করতে আল্লাহপাক বারণ করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যাদের উপাস্যরূপে ডাকে, তোমরা তাদের গালমন্দ করো না। নতুবা তারা শত্রুতাবশত না জেনে আল্লাহকেই গালমন্দ করবে।’ (সুরা : আন-আম, আয়াত : ১০৮)। এ আয়াতে শুধু প্রতিমা পূজারিদের সংবেদনশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য নির্দেশ দান করা হয়নি, বরং সকল জাতি এবং সকল সম্প্রদায়ের মাঝে বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্য স্থাপনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
কোনো ধর্মের উপাসনালয় বা ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার শিক্ষা ইসলামে নেই। ইসলাম ধর্মের মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব হলো, ইসলাম প্রত্যেক মানুষকে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করে। এই স্বাধীনতা কেবল ধর্মবিশ্বাস, লালন-পালন করার স্বাধীনতা নয়, বরং ধর্ম না করার বা ধর্ম বর্জন করার স্বাধীনতাও এই ধর্মীয় স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তুমি বলো, তোমার প্রতিপালক-প্রভুর পক্ষ থেকে পূর্ণ সত্য সমাগত, অতএব যার ইচ্ছা সে ইমান আনুক আর যার ইচ্ছা সে অস্বীকার করুক।’ (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ২৮)।
পবিত্র কোরআন পাঠে আমরা দেখতে পাই, মহান আল্লাহ তায়ালা যখন আদম সৃষ্টির মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন, তখন ফেরেশতাগণ আল্লাহ তায়ালাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তুমি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করতে যাচ্ছ, সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে আর রক্তপাত ঘটাবে?’ এর উত্তরে সর্বজ্ঞানী খোদা কেবল এটাই বলেছিলেন, ‘ইন্নি আ’লামু মা লা তা’লামুন’ অর্থাৎ আমি তা জানি, যা তোমরা জানো না।’ (বায়হাকি)। লক্ষণীয় বিষয় হলো, মহান আল্লাহ কিন্তু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা রক্তপাতের কথা অস্বীকার করেননি। সে কথার উল্লেখ না করে তার উত্তরে তিনি কেবল তাঁর মহাজ্ঞানের আর এ বিষয়ে ফেরেশতাদের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছিলেন।
ধর্ম জগতের ইতিহাসে একঝলক ভাসা ভাসা দৃষ্টি দিলে বাহ্যত ফেরেশতাগণের কথাই ঠিক বলে মনে হবে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে, যেখানেই ধর্ম সেখানেই অশান্তি, যেখানেই ধর্ম সেখানেই বিগ্রহ ও নৈরাজ্য। কিন্তু না, একটু মনোযোগ দিয়ে গভীর দৃষ্টিতে দেখুন। দেখতে পাবেন, এই বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য ধার্মিকদের পক্ষ থেকে নয় আর আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত সত্য ধর্মের অনুসারীদের পক্ষ থেকেও নয়। কিন্তু যারা সমাগত সত্য সুন্দর জ্যোতিকে অস্বীকার করে অন্ধকারের পূজারি হয়ে থাকতে চেয়েছে, যারা তাদের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা ও গলিত-মথিত সমাজ দর্শন পরিত্যাগ করতে চায়নিÑএসব অরাজকতা ও সন্ত্রাস সব সময় সর্বযুগে তাদের পক্ষ থেকে পরিচালিত হয়েছে।
পবিত্র কোরআনের ঐশী বাণীটি ভালোভাবে পড়লেই বিভিন্ন স্থানে হজরত আদম (আ.) থেকে আরম্ভ করে সর্বশেষ শরিয়তকে আর পূর্ণতম নবী খাতামান নাবিঈন ও শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত ইতিহাসের এই একই ধারার পুনরাবৃত্তি আমরা লক্ষ করব। মহানবী, বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র জীবনী সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে। তিনি সত্য প্রচার ও প্রসারের কারণে সারা জীবন মার খেয়েছেন, কিন্তু কারও প্রতি ধর্মের ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগ করেননি। বরং তার পক্ষ থেকে পরিচালিত সকল আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ ছিল সবার ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য। সুরা হজের দুটি আয়াত এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দান করে।
আল্লাহ তায়ালা বলছেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদেরকে (যুদ্ধ করার) অনুমতি দেওয়া হলো, কেননা তারা অত্যাচারিত। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সাহায্যকল্পে পূর্ণ ক্ষমতাবান। যাদেরকে তাদের নিজ বাড়িঘর থেকে অন্যায়ভাবে শুধু এ কারণে বের করে দেওয়া হয়েছে, তারা বলে, ‘আল্লাহ আমাদের প্রতিপালক প্রভু! আল্লাহর পক্ষ থেকে যদি মানুষের একদলকে মানুষের আরেক দল দিয়ে প্রতিহত না করা হতো, তাহলে সাধু-সন্ন্যাসীদের মঠ, গির্জা, ইহুদিদের উপাসনালয় (ধ্বংস করে দেওয়া হতো), যেখানে আল্লাহর নাম অধিক পরিমাণে স্মরণ করা হয়। আর আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন, যে তাঁকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাশক্তিধর ও মহাপরাক্রমশালী।’ (সুরা : আল হজ, আয়াত : ৩৯ ও ৪০)
মদিনায় অবতীর্ণ উল্লিখিত আয়াত দুটিতে স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, মহানবী (সা.)-এর অনুসারীরা দীর্ঘকাল মক্কায় অত্যাচারিত-নিপীড়িত থাকার পর যখন তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য আবারও মক্কায় কাফেররা যুদ্ধ চাপিয়ে দিল, কেবল তখনই আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এ কথা বলা হয়েছে, কেবল মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার্থে এই যুদ্ধ পরিচালিত হবে না। বরং মঠ, গির্জা, মন্দির ও মসজিদ তথা সকল ধর্মের উপাসনালয় রক্ষার্থে আল্লাহ এ ব্যবস্থা নিয়েছেন। সকল ধর্মীয় ও বিবেকের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার এর চেয়ে স্পষ্ট ঘোষণা আর কী হতে পারে!
যেখানে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ, সেখানে ইসলাম নেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম কল্যাণের ধর্ম। সারা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবীতে বিশ্বনবী এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ শরিয়তবাহী নবী হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শান্তির অমিয় বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন। অথচ মহানবী (সা.)-এর নামেই আজ বিশ্বজুড়ে চলছে বিশৃঙ্খলা। কখনো এক ফেরকার অনুসারীরা অন্য ফেরকার লোকদের ওপর আক্রমণ করছে আবার কখনো একে অপরকে হত্যা করতে পর্যন্ত দ্বিধা করছে না।
ইসলাম ধর্মে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। যারা সামাজিক পরিমণ্ডলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে, রক্তপাত ঘটায়, ধ্বংসযজ্ঞ ও নৈতিকতা-বর্জিত ইসলামিক কর্মকাণ্ড চালায়, তারা কখনো শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারী হতে পারে না। শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত হওয়ার দাবি সবাই করতে পারে, কিন্তু কার্যকলাপে শ্রেষ্ঠত্ব না দেখালে তারা কখনো প্রকৃত ইসলামের অনুসারী বলে আল্লাহর কাছে গ্রহণীয়তার মর্যাদা পাবে না।
ধর্মের নামে বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা, রক্তপাত ঘটানো, এসব শান্তির ধর্ম ইসলামে নেই। তাই যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনা করে এই শান্তির ধর্মের বদনাম করছেন, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক-এই কামনা করছি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে প্রকৃত ইসলাম বোঝার ও সে মোতাবেক নিজেদের জীবন পরিচালিত করার তওফিক দান করুন, আমিন।
লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
বিশ্বময় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই আল্লাহপাক ইসলাম নামক ধর্মকে মনোনীত করেছেন। ইসলামে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের স্থান নেই। এমনকি অমুসলিমদের উপাসনালয়েও হামলা চালানোকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। শুধু তা-ই নয়, বরং অমুসলিমরা যেসবের উপাসনা করে, সেগুলোকেও গালমন্দ করতে আল্লাহপাক বারণ করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যাদের উপাস্যরূপে ডাকে, তোমরা তাদের গালমন্দ করো না। নতুবা তারা শত্রুতাবশত না জেনে আল্লাহকেই গালমন্দ করবে।’ (সুরা : আন-আম, আয়াত : ১০৮)। এ আয়াতে শুধু প্রতিমা পূজারিদের সংবেদনশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য নির্দেশ দান করা হয়নি, বরং সকল জাতি এবং সকল সম্প্রদায়ের মাঝে বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্য স্থাপনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
কোনো ধর্মের উপাসনালয় বা ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার শিক্ষা ইসলামে নেই। ইসলাম ধর্মের মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব হলো, ইসলাম প্রত্যেক মানুষকে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করে। এই স্বাধীনতা কেবল ধর্মবিশ্বাস, লালন-পালন করার স্বাধীনতা নয়, বরং ধর্ম না করার বা ধর্ম বর্জন করার স্বাধীনতাও এই ধর্মীয় স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তুমি বলো, তোমার প্রতিপালক-প্রভুর পক্ষ থেকে পূর্ণ সত্য সমাগত, অতএব যার ইচ্ছা সে ইমান আনুক আর যার ইচ্ছা সে অস্বীকার করুক।’ (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ২৮)।
পবিত্র কোরআন পাঠে আমরা দেখতে পাই, মহান আল্লাহ তায়ালা যখন আদম সৃষ্টির মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন, তখন ফেরেশতাগণ আল্লাহ তায়ালাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তুমি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করতে যাচ্ছ, সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে আর রক্তপাত ঘটাবে?’ এর উত্তরে সর্বজ্ঞানী খোদা কেবল এটাই বলেছিলেন, ‘ইন্নি আ’লামু মা লা তা’লামুন’ অর্থাৎ আমি তা জানি, যা তোমরা জানো না।’ (বায়হাকি)। লক্ষণীয় বিষয় হলো, মহান আল্লাহ কিন্তু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা রক্তপাতের কথা অস্বীকার করেননি। সে কথার উল্লেখ না করে তার উত্তরে তিনি কেবল তাঁর মহাজ্ঞানের আর এ বিষয়ে ফেরেশতাদের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছিলেন।
ধর্ম জগতের ইতিহাসে একঝলক ভাসা ভাসা দৃষ্টি দিলে বাহ্যত ফেরেশতাগণের কথাই ঠিক বলে মনে হবে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে, যেখানেই ধর্ম সেখানেই অশান্তি, যেখানেই ধর্ম সেখানেই বিগ্রহ ও নৈরাজ্য। কিন্তু না, একটু মনোযোগ দিয়ে গভীর দৃষ্টিতে দেখুন। দেখতে পাবেন, এই বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য ধার্মিকদের পক্ষ থেকে নয় আর আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত সত্য ধর্মের অনুসারীদের পক্ষ থেকেও নয়। কিন্তু যারা সমাগত সত্য সুন্দর জ্যোতিকে অস্বীকার করে অন্ধকারের পূজারি হয়ে থাকতে চেয়েছে, যারা তাদের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা ও গলিত-মথিত সমাজ দর্শন পরিত্যাগ করতে চায়নিÑএসব অরাজকতা ও সন্ত্রাস সব সময় সর্বযুগে তাদের পক্ষ থেকে পরিচালিত হয়েছে।
পবিত্র কোরআনের ঐশী বাণীটি ভালোভাবে পড়লেই বিভিন্ন স্থানে হজরত আদম (আ.) থেকে আরম্ভ করে সর্বশেষ শরিয়তকে আর পূর্ণতম নবী খাতামান নাবিঈন ও শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত ইতিহাসের এই একই ধারার পুনরাবৃত্তি আমরা লক্ষ করব। মহানবী, বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র জীবনী সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে। তিনি সত্য প্রচার ও প্রসারের কারণে সারা জীবন মার খেয়েছেন, কিন্তু কারও প্রতি ধর্মের ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগ করেননি। বরং তার পক্ষ থেকে পরিচালিত সকল আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ ছিল সবার ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য। সুরা হজের দুটি আয়াত এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দান করে।
আল্লাহ তায়ালা বলছেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদেরকে (যুদ্ধ করার) অনুমতি দেওয়া হলো, কেননা তারা অত্যাচারিত। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সাহায্যকল্পে পূর্ণ ক্ষমতাবান। যাদেরকে তাদের নিজ বাড়িঘর থেকে অন্যায়ভাবে শুধু এ কারণে বের করে দেওয়া হয়েছে, তারা বলে, ‘আল্লাহ আমাদের প্রতিপালক প্রভু! আল্লাহর পক্ষ থেকে যদি মানুষের একদলকে মানুষের আরেক দল দিয়ে প্রতিহত না করা হতো, তাহলে সাধু-সন্ন্যাসীদের মঠ, গির্জা, ইহুদিদের উপাসনালয় (ধ্বংস করে দেওয়া হতো), যেখানে আল্লাহর নাম অধিক পরিমাণে স্মরণ করা হয়। আর আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন, যে তাঁকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাশক্তিধর ও মহাপরাক্রমশালী।’ (সুরা : আল হজ, আয়াত : ৩৯ ও ৪০)
মদিনায় অবতীর্ণ উল্লিখিত আয়াত দুটিতে স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, মহানবী (সা.)-এর অনুসারীরা দীর্ঘকাল মক্কায় অত্যাচারিত-নিপীড়িত থাকার পর যখন তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য আবারও মক্কায় কাফেররা যুদ্ধ চাপিয়ে দিল, কেবল তখনই আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এ কথা বলা হয়েছে, কেবল মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার্থে এই যুদ্ধ পরিচালিত হবে না। বরং মঠ, গির্জা, মন্দির ও মসজিদ তথা সকল ধর্মের উপাসনালয় রক্ষার্থে আল্লাহ এ ব্যবস্থা নিয়েছেন। সকল ধর্মীয় ও বিবেকের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার এর চেয়ে স্পষ্ট ঘোষণা আর কী হতে পারে!
যেখানে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ, সেখানে ইসলাম নেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম কল্যাণের ধর্ম। সারা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবীতে বিশ্বনবী এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ শরিয়তবাহী নবী হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শান্তির অমিয় বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন। অথচ মহানবী (সা.)-এর নামেই আজ বিশ্বজুড়ে চলছে বিশৃঙ্খলা। কখনো এক ফেরকার অনুসারীরা অন্য ফেরকার লোকদের ওপর আক্রমণ করছে আবার কখনো একে অপরকে হত্যা করতে পর্যন্ত দ্বিধা করছে না।
ইসলাম ধর্মে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। যারা সামাজিক পরিমণ্ডলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে, রক্তপাত ঘটায়, ধ্বংসযজ্ঞ ও নৈতিকতা-বর্জিত ইসলামিক কর্মকাণ্ড চালায়, তারা কখনো শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারী হতে পারে না। শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত হওয়ার দাবি সবাই করতে পারে, কিন্তু কার্যকলাপে শ্রেষ্ঠত্ব না দেখালে তারা কখনো প্রকৃত ইসলামের অনুসারী বলে আল্লাহর কাছে গ্রহণীয়তার মর্যাদা পাবে না।
ধর্মের নামে বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা, রক্তপাত ঘটানো, এসব শান্তির ধর্ম ইসলামে নেই। তাই যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনা করে এই শান্তির ধর্মের বদনাম করছেন, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক-এই কামনা করছি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে প্রকৃত ইসলাম বোঝার ও সে মোতাবেক নিজেদের জীবন পরিচালিত করার তওফিক দান করুন, আমিন।
লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট