একচেটিয়া ব্যবসা করছে ভারত ও পাকিস্তান

যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে ‘নাই’  হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশি পণ্য

প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৫, ২১:১৩ , অনলাইন ভার্সন
নানা কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে ‘নাই’ হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশি পণ্য। বিশেষ করে খাদ্য সামগ্রির একটি বড় বাজার রয়েছে দেশটিতে। মসলার বাজার ছিল একচেটিয়া। সেটি এখন কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে। বাংলাদেশি গ্রোসারি ছাড়া ভারত ও পাকিস্তানি মালিকানাধীন গ্রোসারিতে বাংলাদেশি মশলার ঠাঁই হচ্ছে না। অপেক্ষাকৃত দাম বেশী হওয়ায়  ভারত ও পাকিস্তানের মশলার দিকে ঝুঁকছে ক্রেতা। শুধু মশলা নয়, মিনিকেট, কাটারিভোগ ও চিনিগুড়া চালের বাজার ইতিমধ্যে দখল করেছে ভারত ও পাকিস্তান। 
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে দাম বাড়বে বাংলাদেশি প্রতিটি পণ্যের। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে আরো ছিটকে পড়তে পারে বাংলাদেশি পণ্য। বিশেষ করে বাংলাদেশি ড্রাই ফুডের যে বিশাল বাজার ছিল তা কমে যাবে আশঙ্কাজনক হারে। 
একাধিক সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় বাজার রয়েছে নিউইয়র্ক সিটিতে। এরপরই রয়েছে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের বাফেলো সিটি, মিশিগান, ট্রেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা ও জর্জিয়ায় রাজ্যের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলো। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশি ড্রাইফুডের বাজার কমতে শুরু করেছে। আগে বাংলাদেশি মশলার একচেটিয়া বাজার ছিল। কিন্তু দাম বেশী হওয়ায় মশলার বাজার হারিয়ে যাচ্ছে খুব দ্রুত। 
নিউইয়র্কে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশিদের আমব্রেলা সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার এখনো তুলনামূলক ভালো। কিন্তু এটি বাড়ার চেয়ে কমার লক্ষণ বেশী। বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান তাদের পণ্যের বিস্তারে শক্তিশালী বাজার ব্যবস্থাপনা মনিটরিং করে। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তাদের বিশাল বাজার রয়েছে। তাদের পণ্যের দাম কম। এ কারণে বাংলাদেশি পণ্য মার খাচ্ছে তাদের পণ্যের কাছে। 
কামরুজ্জামান কামরুল উদাহরণ টেনে বলেন, বাংলাদেশি ৫০০ গ্রাম জিরার দাম ৯-১০ ডলার। অথচ ভারতীয় জিরা মিলছে অর্ধেক দামে। এভাবে অনেক পণ্য প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না দামের কারণে। তিনি জানান, বাংলাদেশি মশলা প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও কৃষি বিভাগের (এফডিএ) পরীক্ষার মধ্যে পড়ে। খারাপ কিছু পাওয়া গেলে পুরো পণ্য বাতিল করে দেয়। তবে এর চেয়ে বড় কারণ দাম। বাংলাদেশি পণ্যের দাম কমাতে হবে। 
ব্যবসায়ী নেতা কামরুল আরো বলেন, আগে চিনিগুড়া চাল কম দামে পাওয়া যেত। এখন বাংলাদেশ থেকে এই চাল রপ্তানি করা হচ্ছে না। ফলে চালের এই বাজারটি দখল করছে ভারত ও পাকিস্তান। তারা অনেক কমে চিনিগুড়া চাল সরবরাহ করছে। 
তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে তিনশ’র বেশী খাদ্যপণ্য যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে আমদানি হয়। সম্প্রতি পণ্য আমদানি খরচ বহুগুণে বেড়েছে। জাহাজ প্রতি ৫ হাজার ডলার খরচ বেড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে প্রতিটি পণ্যের ওপর। তবে আশঙ্কার বিষয় হলো- ট্রাম্প প্রশাসন আরোপিত শুল্ক কার্যকর হলে বাংলাদেশি প্রতিটি পণ্যের দাম হু হু করে বাড়বে। আর এই বাড়ার ফলে আমদানিও কমে যাবে। তিনি বলেন, সরকারের উচিত এ বিষয়টি আলোচনা করে একটা মিমাংসা করা। কিন্তু আমরা যতদূর জেনেছি- সরকার এ ক্ষেত্রে সফল হতে পারছে না। ছাড় দিয়ে হলেও সরকারের উচিত এর সুরাহা করা। 
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্য আমদানি করে প্রায় ২০টির মত প্রতিষ্ঠান। তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঠিকানাকে বলেন, সরকারের সদিচ্ছার অনেক ঘাটতি দেখছি। ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত শুল্ক পুনর্বিবেচনা না করলে শুধু খাদ্যপণ্য নয়, গার্মেন্ট খাতেও বড় ধরনের ধস নামবে। 
আরেকজন আমদানিকারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রে ইলিশ আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। শতভাগ ইলিশ আমদানি হয় মায়ানমার থেকে। ফলে একজন আমদানিকারক ইলিশের সঙ্গে মায়ানমারের অন্যান্য পণ্যও আমদানি করছেন। বাংলাদেশ সরকারের উচিত এসব বিষয় সতর্কতার সাথে বিবেচনা করা। 
উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর প্রভাব নিয়ে ঢাকায় চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। অর্থনীতিবিদদের অনেকে বলছেন, এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে, বিশেষ করে পোশাক শিল্পে। পাশাপাশি খাদ্যসামগ্রীর যে বড় বাজার রয়েছে, তা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে। 
যুক্তরাষ্ট্র এটাকে রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক বলে অভিহিত করেছে। যেসব দেশ এতদিন মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক নির্ধারণ করে রেখেছিলো, সেইসব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউজের প্রকাশিত তালিকায় বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ মার্কিন পণ্যের ওপর ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে। এর প্রতিক্রিয়ায় এখন থেকে বাংলাদেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ নতুন অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর প্রযোজ্য শুল্কহার পর্যালোচনা করছে বাংলাদেশ।  
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078