প্রতিটি লোন রিভিউ হবে * প্রতারণা প্রমাণিত হলে জেল-জরিমানা * অর্থ ফেরত না দিলে সম্পত্তি ক্রোক

গোয়েন্দা নজরদারিতে পিপিপি জালিয়াতরা

প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৫, ২১:২২ , অনলাইন ভার্সন
কী ভাবছেন? জালিয়াতি করে ফেডারেল সরকারের অর্থ আত্মসাৎ করে পার পেয়ে যাবেন? এমনটি ভাবলে আপনি ‘বোকার স্বর্গে’ বাস করছেন। যদি অর্থ আত্মসাৎ করেই থাকেন, তাহলে আপনি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা নজরদারিতে আছেন। যে কোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস নতুন যে মেমো জারি করেছে, সেখানে পে চেক প্রোগ্রাম (পিপিপি) লোন আত্মসাৎকারীদের ব্যাপারে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে দীর্ঘমেয়াদে কারাদণ্ড হতে পারে। 
ফেরত দেওয়া লাগতে পারে লোনের অর্থ। অন্যথায় জেল-জারমানাসহ সম্পতি বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে। এমনকী হারাতে হতে পারে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব। 
গত ১১ জুন জারিকৃত মেমোতে ৭টি গুরুতর অপরাধের কথা তুলে ধরেছে ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস। ওই মেমোর ৬ নম্বর কলামে উল্লেখ করা হয়েছে- পে চেক প্রোগ্রাম বা পিপিপি সংক্রান্ত জালিয়াতির ক্ষেত্রে কেড়ে নেয়া হতে পারে নাগরিকত্ব। এছাড়া মেডিকেইড সংক্রান্ত প্রতারণা যেমন, মেডিকেইড কর্মসূচিতে ভুল তথ্য দেওয়া কিংবা ভুলভাবে সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের ঝুঁকি আছে। এ ছাড়া মেডিকেইডের অপব্যবহার করা প্রতিষ্ঠানও এর আওতায় পড়বে।
বর্তমানে ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থা (এফবিআই) পিপিপি লোন আত্মসাৎকারীদের শনাক্ত করার কাজ করছে। এফবিআই স্প্রিংফিল্ড শাখার বিশেষ এজেন্ট ইন চার্জ ডেভিড নানজ-এর মতামতধর্মী নিবন্ধটি স্টেট জার্নাল রেজিস্টারে প্রকাশিত হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারিজনিত অর্থনৈতিক দুরবস্থার মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের সহায়তা কর্মসূচি অনুমোদন করে। এই কর্মসূচিগুলোর মধ্যে ছিল: পেচেক প্রটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি)। ব্যবসাগুলো যাতে তাদের কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য খরচ বহন করতে পারে, এমন ঋণ গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়, যা নির্দিষ্ট শর্তে মাফযোগ্য ছিল। কম সুদের ঋণ দিয়ে ব্যবসাগুলোকে কার্যধারার খরচে সহায়তা করার জন্য দেওয়া হয়েছিল ইকোনমিক ইনজুরি ডিজাস্টার লোন (ইআইডিএল)। মহামারির কারণে চাকরি হারানো কর্মীদের জন্য দেওয়া হয়েছিল ফেডারেল প্যানডেমিক আনএমপ্লয়মেন্ট কম্পেনসেশন। দুঃখজনকভাবে, হাজার হাজার মানুষ প্রতারণামূলকভাবে আবেদন করে এই সহায়তা তহবিল থেকে অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এই চুরির পরিমাণ ছিল বিশাল।
যুক্তরাষ্ট্রের ছোট ব্যবসা প্রশাসনের (এসবিএ) ইন্সপেক্টর জেনারেল হিসাব করেছেন, জালিয়াতকারীরা ইআইডিএল থেকে প্রায় ১৩৬ বিলিয়ন ডলার এবং পিপিপি থেকে ৬৪ বিলিয়ন ডলার প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করেছে।
ফেডারেল প্যানডেমিক আনএমপ্লয়মেন্ট কম্পেনসেশন-এর ক্ষেত্রে, ইউএস গভর্নমেন্ট অ্যাকাউন্টেবিলিটি অফিসের (জিএও) অনুমান, ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি প্রতারণা হয়েছে। এটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সরকারি প্রতারণা। এসব ক্ষতির বোঝা পড়বে আমেরিকান করদাতাদের ওপর। যেহেতু এই অর্থ সরকারের ধার করা ছিল, তাই এর দায় পড়বে আমেরিকানদের সন্তান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর।
আত্মসাৎকারীদের কেউ কিনেছেন রিয়েল এস্টেট, কেউ ল্যাম্বরগিনি ও ফেরারির মতো বিলাসবহুল গাড়ি, রোলেক্স ঘড়ি, গয়না, সোনা ও হীরা। কেউ আবার খরচ করেছেন স্ট্রিপ ক্লাব, লাস ভেগাসের জুয়ার সফর, প্রাইভেট জেট ভাড়া ও ‘বাকেট লিস্ট’ ভ্রমণে।
এফবিআই এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে। তারা দেশের বিভিন্ন অংশে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত প্রতারণা নিয়ে হাজার হাজার তদন্ত শুরু করেছে। শুধুমাত্র এফবিআই স্প্রিংফিল্ড ফিল্ড অফিস, যা মধ্য ও দক্ষিণ ইলিনয় কভার করে, সেখানে আমাদের বিশেষ এজেন্ট, গোয়েন্দা বিশ্লেষক ও ফরেনসিক অ্যাকাউন্ট্যান্টদের দল বেশ কয়েক ডজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছে।
সম্প্রতি, একটি তদন্তে মধ্য ইলিনয়ের ১৯ জন বর্তমান ও সাবেক ইউএস পোস্টাল সার্ভিস কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ব্যয় দাবি করে পিপিপি থেকে প্রতারণামূলকভাবে টাকা নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। আরেক তদন্তে, পিওরিয়ার তিন ব্যক্তি নকল বার্বার শপ দেখিয়ে পিপিপি প্রতারণা করেছে। অথচ তাদের কোনো লাইসেন্স, দোকান, কর্মী বা ব্যবসায়িক খরচ ছিল না। এ ধরনের অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা শুধু ন্যায়ের প্রশ্ন নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়া, কোনোভাবেই করদাতার অর্থ চুরি করে পার পাওয়া যাবে না। তবে এখনো বহু প্রতারক রয়েছে যাদের বিচার করা বাকি, এবং এফবিআইর পক্ষে এই বিশাল কর্মপরিসর সামাল  দেওয়া অসম্ভব। 
ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের মেমো নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাচারালাইজেশনে নাগরিকত্ব পাওয়া নাগরিকদের। এই প্রক্রিয়াটি পরিচিত ডিন্যাচারালাইজেশন বলা হয়। অভিবাসীদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে গত ১১ জুন ডিওজে একটি মেমোতে এ বিষয়ে নজর দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে।
মেমোটি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক এ কারণে যে, এটি পাঠানো হয়েছে সিভিল ডিভিশনে। এতে বলা হয়েছে, সিভিল ডিভিশনের অ্যাটর্নিদের মূল নজর দিতে হবে ডিন্যাচারালাইজেশন বা নাগরিকত্ব বাতিলে। 
মেমোর নির্দেশনার উল্লেখযোগ্য দিক হলো- সিভিল প্রসেস বা দেওয়ানি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া। এর মানে হলো- এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হবে না। তার কারণ ফৌজদারি ব্যবস্থায় কারো নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া সময়সাপেক্ষ বিষয়। বিপরীতে দেওয়ানি প্রক্রিয়ায় সহজেই কোনো অপরাধের ঘটনায় যেকারো নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া যাবে।
দেওয়ানি আদালতে অভিযুক্ত ব্যক্তি আইনজীবী পাবেন না। এর ফলে আইনি প্রক্রিয়ায় আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও মিলবে না তার। মেমোর সাতটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- 
১. যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে, তারা আছেন নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে। ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- এফবিআই বা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট- আইস কাউকে গ্রেপ্তারের পর যদি বলে, তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের প্রমাণ আছে অথবা তার বিরুদ্ধে বিদেশি গুপ্তচর হিসেবে কাজ করার প্রমাণ আছে, সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি নাগরিকত্ব খোয়াতে পারেন।
২. যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সংবেদনশীল পণ্য, প্রযুক্তি রপ্তানি বা তথ্য পাচারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাগরিকত্ব বাতিল হতে পারে।
৩. কারো বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ থাকলে তিনি নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধ কিংবা মানবাধিকার লংঘনে জড়িত ব্যক্তিও আছেন একই ঝুঁকিতে।
৪. যেসব ব্যক্তি বেআইনি সংগঠনের (যেমন: অপরাধী গ্যাং, মাদক পাচারে জড়িত আন্তঃসীমান্ত সংগঠন) সঙ্গে যুক্ত, তাদের আমেরিকার নাগরিকত্ব বাতিল হতে পারে। এছাড়া মানব পাচার, যৌন অপরাধ ও সহিংস অপরাধে জড়িতরাও আছেন একই ঝুঁকিতে।
৫. যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের আবেদনের সময় যারা পূর্বের কোনো ফেলোনি বা গুরুতর অপরাধের বিষয়টি আড়াল করেছেন, তাদের নাগরিকত্বজনিত প্রতারণায় জড়িত হিসেবে ধরে নেয়া হবে। এটি ধরা পড়লে সাধারণত ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়। এ ধরনের ব্যক্তি আছেন নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে।
৬. পে চেক প্রোগ্রাম বা পিপিপি সংক্রান্ত জালিয়াতির ক্ষেত্রে কেড়ে নেয়া হতে পারে নাগরিকত্ব। এছাড়া মেডিকেইড সংক্রান্ত প্রতারণার (যেমন: মেডিকেইড কর্মসূচিতে ভুল তথ্য দেয়া কিংবা ভুলভাবে সুবিধা নেয়া) ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের ঝুঁকি আছে। এ ছাড়া মেডিকেইডের অপব্যবহার করা প্রতিষ্ঠানও এর আওতায় পড়বে।
৭. ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ লেনদেনের মতো প্রতারণায় জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের রয়েছে নাগরিকত্ব বাতিলের ঝুঁকি। এ বিষয়ে ডিওজের ব্যাখ্যা সুস্পষ্ট নয় বলে এটি জড়িত যে কারো বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে পারে।
৮. নাগরিকত্ব নেয়ার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতিতে জড়িত ব্যক্তি তথা ইচ্ছাকৃতভাবে জ্ঞাত অনেক তথ্য সরবরাহ না করা ব্যক্তি ডিন্যাচারালাইজেশনের তালিকায় পড়তে পারেন।
৯. অ্যাটর্নি অফিসে নিষ্পত্তি হয়নি এমন কোনো ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ থাকা ব্যক্তি রয়েছেন নাগরিকত্ব বাতিলের ঝুঁকিতে।
১০. কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সিভিল ডিভিশনে কোনো কেইস থাকলে এবং ডিভিশন এটিকে আমলযোগ্য মনে করলে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। এর চূড়ান্ত পরিণতি হতে পারে নাগরিকত্ব হারানো।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078