সানেম–একশনএইড জরিপ

বাংলাদেশের ৮৩ শতাংশ তরুণ রাজনীতিতে আগ্রহী নন

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৫, ১৩:৫৮ , অনলাইন ভার্সন
বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে রাজনীতির প্রতি আগ্রহের সংকট দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং একশনএইডের এক যৌথ জরিপ বলছে, ভবিষ্যতে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নিতে চান না দেশের প্রায় ৮৩ শতাংশ তরুণ।

‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’-পরবর্তী সময়ের শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে গত ২০ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত পরিচালিত এই জরিপের ফল প্রকাশ করা হয় ৮ জুলাই (মঙ্গলবার) রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ।

জরিপ অনুযায়ী, প্রশ্ন করা হয়েছিল—ভবিষ্যতে আপনি কি রাজনীতিতে অংশ নিতে আগ্রহী? এর জবাবে ৮২ দশমিক ৭ শতাংশ তরুণ স্পষ্ট করে ‘না’ বলেছেন। তরুণদের এই রাজনীতি বিমুখতার অন্যতম কারণ হিসেবে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংযোগহীনতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণের ঘাটতির কথা তুলে ধরেছেন।

জরিপে অংশ নেওয়া ৩৪ শতাংশ তরুণ মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তরুণদের সংযোগ একেবারেই অকার্যকর। আর ১৬ দশমিক ১ শতাংশ তরুণ একে বলেছেন ‘খুবই অকার্যকর’।

তবে রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে তরুণদের সঙ্গে সংযোগ বাড়াতে পারে—সে বিষয়ে কিছু প্রস্তাবও দিয়েছেন উত্তরদাতারা। এর মধ্যে রয়েছে ছাত্র-যুব সংগঠনগুলোর কর্মকৌশলে পরিবর্তন, কেন্দ্রীয় কমিটিতে তরুণদের অংশ বাড়ানো, প্রান্তিক তরুণদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, দলের এজেন্ডায় তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া এবং সামাজিক মাধ্যমে উপস্থিতি জোরদার করা।

জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রোফাইল অনুযায়ী, দেশের আট বিভাগের দুইটি করে জেলা এবং প্রতিটি জেলার দুটি উপজেলা থেকে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ২ হাজার তরুণ-তরুণীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নারী ও পুরুষের অনুপাত ছিল সমান, আর অন্তত ১০ শতাংশ উত্তরদাতা ছিলেন অমুসলিম।

গুণগত দিক বিশ্লেষণে ১৭টি কেস স্টাডির মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্ম, পেশা ও পটভূমির তরুণদের মতামত নেয়া হয়।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী ৮০ শতাংশের বেশি তরুণ। এর মধ্যে ৪০ দশমিক ৮৯ শতাংশ ‘মোটামুটি’, ২৭ দশমিক ৯১ শতাংশ ‘খুব’ এবং ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ ‘সম্পূর্ণ’ আশাবাদী বলে জানিয়েছেন।

তরুণনির্ভর নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন ৪২ দশমিক ১৪ শতাংশ উত্তরদাতা। এর বাইরে ৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ উত্তরদাতা এই বিষয়ে ‘খুব আশাবাদী’। রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে ভবিষ্যতে রাজনীতি উন্নত হবে বলে বিশ্বাস করেন ৫৬ শতাংশ তরুণ।

প্রথাগত দলের তুলনায় নীতিনির্ভর রাজনীতির পক্ষে ৫২ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা মত দিয়েছেন। নিয়মিত অভ্যন্তরীণ নির্বাচন, স্বচ্ছ দলীয় তহবিল ব্যবস্থাপনা, নেতৃত্বে তরুণ ও নারীর অংশগ্রহণ—এসব বিষয়েও আশাবাদ দেখিয়েছেন তারা।

তবে জাতীয় রাজনীতি সম্পর্কে সচেতনতার ঘাটতিও জরিপে উঠে এসেছে। ১৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ পুরুষ ও ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, তাদের জাতীয় রাজনীতি নিয়ে একেবারেই ধারণা নেই।

তথ্যপ্রাপ্তির উৎস হিসেবে ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কথা বলেছেন। এরপর রয়েছে টেলিভিশন (৪৭.৭ শতাংশ), সংবাদপত্র (১৩ শতাংশ) এবং রেডিও (১.৪ শতাংশ)।

ধর্মভিত্তিক রাজনীতি দেশের উন্নয়নে সহায়ক কি না—এই প্রশ্নে বিভক্ত মত দিয়েছে তরুণেরা। ৪৮ দশমিক ২৩ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ বললেও ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ দিয়েছেন ‘না’ সূচক উত্তর। মুসলিমদের মধ্যে ৫৮ দশমিক ১৪ শতাংশ ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে ইতিবাচক মনে করলেও অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এই সংখ্যা মাত্র ১২ দশমিক ২৩ শতাংশ।

ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশ, আর খুবই উদ্বিগ্ন ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে ২২ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণ মনে করেন, ধর্মভিত্তিক দল কখনোই ক্ষমতায় আসবে না। অন্যদিকে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ মনে করেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই তারা ক্ষমতায় যেতে পারে।

ধর্ম পালনে স্বাধীনতা নিয়ে অধিকাংশ তরুণ আশাবাদী হলেও, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। মুসলিম তরুণদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ ধর্ম পালনে নিরাপদ বলে মনে করলেও, অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এই সংখ্যা মাত্র ৪৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

সানেম-একশনএইডের এই জরিপের ফলাফল দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে তরুণদের মনোভাব স্পষ্ট করে। রাজনীতির মূলধারায় তরুণদের অনাগ্রহ যেমন দৃষ্টিগোচর, তেমনি তাদের মধ্যে সংস্কার, গণতন্ত্র ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষাও প্রবল। এই সংকেত রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক বার্তা হতে পারে।

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078